সউদী আরব-ইরান সম্পর্ক বিশ্বের জন্য নতুন আশার বার্তা
০৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:৪৫ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০২:২৬ পিএম

দীর্ঘ দিনের বিভেদ ও বৈরিতার অবসান ঘটিয়ে সউদী আরব ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বেইজিংয়ে সউদী আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুবরাজ ফয়সাল বিন ফারহান ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান মধ্যে এ বৈঠক হয়। ২০১৬ সালের পর দুই দেশের মধ্যে এই প্রথম বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে ইরান ও সউদী আরব মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা আনতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার বিবৃতিতে জানিয়েছে, দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুই দেশে দূতাবাস ও কনস্যুলেট পুনরায় চালু করার পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছেন। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের আনুষ্ঠানিক পুনরুদ্ধার করার বিষয়ে নির্বাহী পদক্ষেপের ওপর জোর দিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত মাসে বেইজিংয়ে দুই দেশের প্রতিনিধিদের এক বৈঠকে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে সম্মত হয় ইরান ও সউদী আরব। ২০১৬ সালে সউদী আরব শিয়া সম্প্রদায়ের প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা নিমর আল নিমরের মৃত্যুদ- কার্যকর করলে তেহরানে অবস্থিত সউদী দূতাবাসে হামলা চালায় ইরানের বিক্ষোভকারীরা। এর জেরে ইরানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সউদী আরব।
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে সউদী আরব ও ইরানের মধ্যে পুনরায় সম্পর্ক স্বাভাবিকের উদ্যোগ অত্যন্ত ইতিবাচক এবং গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশের মধ্যকার দূরত্ব ঘুচিয়ে আনার ক্ষেত্রে চীন ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। সাধারণত কোনো বড় ধরনের কূটনৈতিক সমঝোতার ক্ষেত্রে ভেন্যু বা মিটিংয়ের স্থান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে। যে ভেন্যুতে মিটিং হয় তা নিয়ে উত্তেজনা তৈরি করা হয়ে থাকে এবং বিতর্কিত করার পাঁয়তারা চলে। চীনে সউদী আরব ও ইরানের এই মিটিংয়ের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি বা সৃষ্টি করার সুযোগ ছিল না। এটা পশ্চিমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বটে। কারণ, আন্তরিক ও কার্যকর উদ্যোগ নিলে যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়, তা সউদী আরব ও ইরানের মধ্যে পুনরায় সম্পর্ক স্থাপনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া থেকেই বোঝা যায়। অথচ বিশ্বের মোড়ল হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা বিশ্বে ছড়ি ঘোরালেও শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর কোনো ভূমিকা বা উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। যেখানে যুদ্ধ ও সংঘাত সেখানেই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলোর কোনো না কোনো সংশ্লিষ্টতা দেখা যায়। দশকের পর দশক ধরে বিশ্বে এক ধরনের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি জিইয়ে রাখতে তারা ভূমিকা রেখেছে। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের আগ্রাসী ভূমিকা ও নির্বিচারে ফিলিস্তিনিদের হত্যার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলো বরাবরই নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর উদ্যোগ না নিয়ে শুধু লিপ সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বে যুদ্ধ-বিগ্রহ লাগিয়ে রাখার ক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্বের স্বার্থ ও অস্ত্র ব্যবসা একটি বড় কারণ বলে ইতোমধ্যে বিশ্লেষকরা বলেছেন। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের নেপথ্যেও পশ্চিমাদের অস্ত্র বিক্রি ও স্বার্থ রয়েছে। ইতোমধ্যে যুদ্ধ বন্ধে বহু উদ্যোগ ও কথা বললেও যুদ্ধ বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ইউক্রেন যুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্ব যেভাবে ইউক্রেনকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে তার দশ ভাগের এক ভাগ সহযোগিা দিলে বা চেষ্টা করলে মধ্যপ্রাচ্যে এতদিনে শান্তি ফিরে আসত। পশ্চিমা দেশগুলো বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। বরং যুদ্ধ-বিগ্রহের ক্ষেত্রে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে।
কার্যকর উদ্যোগ নিলে যে শান্তি প্রতিষ্ঠার দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যায়, তা সউদী আরব-ইরানের মধ্যে পুনরায় সুসম্পর্ক স্থাপনে চীনের ভূমিকা থেকে বোঝা যায়। অত্যন্ত ত্বরিৎ ও মসৃণভাবে দুই বৈরি দেশকে এক টেবিলে চীন নিয়ে এসেছে। শান্তি প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক হলে কোনো কিছু অসম্ভব নয়, তা এই উদ্যোগ থেকে বোঝা গেছে। বলা বাহুল্য, সউদী আরব ও ইরানের মধ্যে শিয়া-সুন্নী বিভেদ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এ নিয়ে যুদ্ধ-বিগ্রহ ও টানাপড়েন রয়েছে। এখন শান্তি প্রতিষ্ঠায় দেশ দুটি যে এগিয়ে এসেছে, তা মুসলমান বিশ্বের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। এতে মুসলিম বিশ্ব আরও শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ হবে। বিশ্ব এখন স্পষ্টতই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। চীন, রাশিয়া, ইরান, সউদী আরব, তুরস্ক, পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশ নিয়ে বলয় তৈরি হয়েছে। ইউনিপোলার থেকে বের হয়ে বাইপোলারের দিকে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। এই পোলারাইজেশনের অংশ হিসেবে শান্তি প্রতিষ্ঠায় উল্লেখিত দেশগুলো দ্রুত ভূমিকা পালন করে চলেছে, যার বড় উদাহরণ সউদী আরব ও ইরান। এই দুই দেশের মধ্যে নতুন করে সুসম্পর্ক তৈরি বিশ্বশান্তির জন্য নতুন বার্তা।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ভারতে আবাসিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, যেভাবে নাটকীয়ভাবে বেঁচে গেল একটি পরিবার

অবশেষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেন উখিয়ার ১৩ এসএসসি পরীক্ষার্থী

পবিপ্রবি শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে আহত হওয়ার পরে চিকিৎসা অবহেলার মৃত্যুর অভিযোগ

শেরপুর জেলা উপজেলায় নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

নববর্ষ উদযাপনে মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আনন্দ শোভাযাত্রা

মাজারের বার্ষিক ওরসের মেলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল স্বামী

কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পৌনে দুই কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত

সরকার নয়, আমরা একটি দেশ হিসেবে কাজ করছি: জ্বালানি উপদেষ্টা

মতলবে উপজেলা বিএনপির বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

ফিলিস্তিনবাসীদের শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিল

বর্ণাঢ্য ‘ড্রোন শো’ দেখে মুগ্ধ লাখো মানুষ

নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক : মঞ্জু

বুধবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পুরোনো পদে ফিরলেন গাঙ্গুলি

আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল

রূপায়ণ সিটিতে শতকন্ঠে বর্ষবরণ

বর্ষবরণকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরে জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা

আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি: ফারুকী

ভারতীয়দের হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমাল সৌদি

চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে ঢাকার আকাশে ব্যতিক্রমী ড্রোন শো