ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১২ পৌষ ১৪৩১

সউদী আরব-ইরান সম্পর্ক বিশ্বের জন্য নতুন আশার বার্তা

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:৪৫ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০২:২৬ পিএম

দীর্ঘ দিনের বিভেদ ও বৈরিতার অবসান ঘটিয়ে সউদী আরব ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বেইজিংয়ে সউদী আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুবরাজ ফয়সাল বিন ফারহান ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান মধ্যে এ বৈঠক হয়। ২০১৬ সালের পর দুই দেশের মধ্যে এই প্রথম বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে ইরান ও সউদী আরব মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা আনতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার বিবৃতিতে জানিয়েছে, দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুই দেশে দূতাবাস ও কনস্যুলেট পুনরায় চালু করার পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছেন। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের আনুষ্ঠানিক পুনরুদ্ধার করার বিষয়ে নির্বাহী পদক্ষেপের ওপর জোর দিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত মাসে বেইজিংয়ে দুই দেশের প্রতিনিধিদের এক বৈঠকে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে সম্মত হয় ইরান ও সউদী আরব। ২০১৬ সালে সউদী আরব শিয়া সম্প্রদায়ের প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা নিমর আল নিমরের মৃত্যুদ- কার্যকর করলে তেহরানে অবস্থিত সউদী দূতাবাসে হামলা চালায় ইরানের বিক্ষোভকারীরা। এর জেরে ইরানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সউদী আরব।

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে সউদী আরব ও ইরানের মধ্যে পুনরায় সম্পর্ক স্বাভাবিকের উদ্যোগ অত্যন্ত ইতিবাচক এবং গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশের মধ্যকার দূরত্ব ঘুচিয়ে আনার ক্ষেত্রে চীন ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। সাধারণত কোনো বড় ধরনের কূটনৈতিক সমঝোতার ক্ষেত্রে ভেন্যু বা মিটিংয়ের স্থান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে। যে ভেন্যুতে মিটিং হয় তা নিয়ে উত্তেজনা তৈরি করা হয়ে থাকে এবং বিতর্কিত করার পাঁয়তারা চলে। চীনে সউদী আরব ও ইরানের এই মিটিংয়ের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি বা সৃষ্টি করার সুযোগ ছিল না। এটা পশ্চিমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বটে। কারণ, আন্তরিক ও কার্যকর উদ্যোগ নিলে যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়, তা সউদী আরব ও ইরানের মধ্যে পুনরায় সম্পর্ক স্থাপনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া থেকেই বোঝা যায়। অথচ বিশ্বের মোড়ল হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা বিশ্বে ছড়ি ঘোরালেও শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর কোনো ভূমিকা বা উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। যেখানে যুদ্ধ ও সংঘাত সেখানেই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলোর কোনো না কোনো সংশ্লিষ্টতা দেখা যায়। দশকের পর দশক ধরে বিশ্বে এক ধরনের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি জিইয়ে রাখতে তারা ভূমিকা রেখেছে। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের আগ্রাসী ভূমিকা ও নির্বিচারে ফিলিস্তিনিদের হত্যার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলো বরাবরই নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর উদ্যোগ না নিয়ে শুধু লিপ সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বে যুদ্ধ-বিগ্রহ লাগিয়ে রাখার ক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্বের স্বার্থ ও অস্ত্র ব্যবসা একটি বড় কারণ বলে ইতোমধ্যে বিশ্লেষকরা বলেছেন। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের নেপথ্যেও পশ্চিমাদের অস্ত্র বিক্রি ও স্বার্থ রয়েছে। ইতোমধ্যে যুদ্ধ বন্ধে বহু উদ্যোগ ও কথা বললেও যুদ্ধ বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ইউক্রেন যুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্ব যেভাবে ইউক্রেনকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে তার দশ ভাগের এক ভাগ সহযোগিা দিলে বা চেষ্টা করলে মধ্যপ্রাচ্যে এতদিনে শান্তি ফিরে আসত। পশ্চিমা দেশগুলো বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। বরং যুদ্ধ-বিগ্রহের ক্ষেত্রে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে।

কার্যকর উদ্যোগ নিলে যে শান্তি প্রতিষ্ঠার দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যায়, তা সউদী আরব-ইরানের মধ্যে পুনরায় সুসম্পর্ক স্থাপনে চীনের ভূমিকা থেকে বোঝা যায়। অত্যন্ত ত্বরিৎ ও মসৃণভাবে দুই বৈরি দেশকে এক টেবিলে চীন নিয়ে এসেছে। শান্তি প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক হলে কোনো কিছু অসম্ভব নয়, তা এই উদ্যোগ থেকে বোঝা গেছে। বলা বাহুল্য, সউদী আরব ও ইরানের মধ্যে শিয়া-সুন্নী বিভেদ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এ নিয়ে যুদ্ধ-বিগ্রহ ও টানাপড়েন রয়েছে। এখন শান্তি প্রতিষ্ঠায় দেশ দুটি যে এগিয়ে এসেছে, তা মুসলমান বিশ্বের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। এতে মুসলিম বিশ্ব আরও শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ হবে। বিশ্ব এখন স্পষ্টতই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। চীন, রাশিয়া, ইরান, সউদী আরব, তুরস্ক, পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশ নিয়ে বলয় তৈরি হয়েছে। ইউনিপোলার থেকে বের হয়ে বাইপোলারের দিকে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। এই পোলারাইজেশনের অংশ হিসেবে শান্তি প্রতিষ্ঠায় উল্লেখিত দেশগুলো দ্রুত ভূমিকা পালন করে চলেছে, যার বড় উদাহরণ সউদী আরব ও ইরান। এই দুই দেশের মধ্যে নতুন করে সুসম্পর্ক তৈরি বিশ্বশান্তির জন্য নতুন বার্তা।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের যত্ন নিতে হবে
সংবিধান সংশোধন-পুনর্লিখন প্রসঙ্গে
বিশ্ব পরিস্থিতি কেমন
পিলখানা ট্রাজেডির বিচারে আশার আলো
বই আত্মার মহৌষধ
আরও

আরও পড়ুন

গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করলেন উপদেষ্টা

গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করলেন উপদেষ্টা

বগুড়ার ধুনট পল্লীতে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ব্যবসায়ীর ৩৫ হাজার টাকা ছিনতাই

বগুড়ার ধুনট পল্লীতে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ব্যবসায়ীর ৩৫ হাজার টাকা ছিনতাই

দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ

দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ

সিদ্দিরগঞ্জে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বিদ্যুতায়িত, দুই  শ্রমিকের মৃত্যু

সিদ্দিরগঞ্জে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বিদ্যুতায়িত, দুই শ্রমিকের মৃত্যু

নাচোলে পিয়ারাবাগানে এক গৃহবধূ খুন

নাচোলে পিয়ারাবাগানে এক গৃহবধূ খুন

৫ জানুয়ারি থেকে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু

৫ জানুয়ারি থেকে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মোটর থেকে বৈদ্যুতিক তার খুলতে প্রাণ গেল যুবকের

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মোটর থেকে বৈদ্যুতিক তার খুলতে প্রাণ গেল যুবকের

কারখানায় আগুন, পরিদর্শনে  হাতেম

কারখানায় আগুন, পরিদর্শনে হাতেম

নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যা জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার

নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যা জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার

কবি জসীমউদ্দিনের মেজ ছেলে ড. জামাল আনোয়ার আর নেই

কবি জসীমউদ্দিনের মেজ ছেলে ড. জামাল আনোয়ার আর নেই

ভাঙ্গায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ আহত- ১০

ভাঙ্গায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ আহত- ১০

আমাদের সংস্কৃতির অংশ হলো সব ধর্মের মাঝে সম্প্রীতি ও সহাবস্থান: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

আমাদের সংস্কৃতির অংশ হলো সব ধর্মের মাঝে সম্প্রীতি ও সহাবস্থান: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

রাতের আধারে অসহায় ব্যাক্তিদের বাড়ির দরজায় গিয়ে কম্বল দিলেন ইউএনও

রাতের আধারে অসহায় ব্যাক্তিদের বাড়ির দরজায় গিয়ে কম্বল দিলেন ইউএনও

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রশংসা করলেন রাহাত, জানালেন নিজ অনুভূতি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রশংসা করলেন রাহাত, জানালেন নিজ অনুভূতি

সাবেক দুদক কমিশনার জহরুল হকের পাসপোর্ট বাতিল, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

সাবেক দুদক কমিশনার জহরুল হকের পাসপোর্ট বাতিল, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

শ্রীপুরে ভুয়া মেজর আটক

শ্রীপুরে ভুয়া মেজর আটক

প্রশ্ন: কিসব কারণে বিয়ের বরকত নষ্ট হয়ে যায়?

প্রশ্ন: কিসব কারণে বিয়ের বরকত নষ্ট হয়ে যায়?

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অনুপম দৃষ্টান্ত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সা:)

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অনুপম দৃষ্টান্ত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সা:)

আল-কুরআন তাজকেরায়ে মীলাদ নামায়ে আম্বিয়া (আ:)

আল-কুরআন তাজকেরায়ে মীলাদ নামায়ে আম্বিয়া (আ:)

ভারত উপমহাদেশে মুসলিম সভ্যতার জাগরণে আবুল হাসান আলী নদভির শিক্ষাচিন্তা

ভারত উপমহাদেশে মুসলিম সভ্যতার জাগরণে আবুল হাসান আলী নদভির শিক্ষাচিন্তা