আন্তঃধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব
১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩০ এএম | আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩০ এএম

১০ এপ্রিল ২০২৫, ঢাকার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হলো এক ঐতিহাসিক আন্তঃধর্মীয় সংলাপ। এই অনুষ্ঠান ছিলো এক অনন্য দৃষ্টান্ত, যেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতারা একত্রিত হয়ে শান্তি, সম্প্রীতি ও সহনশীলতার বার্তা নিয়ে আলোচনা করেন। উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অব চার্চের মহাসচিব রেভারেন্ড প্রফেসর ড. জেরি পিল্লে, ন্যাশনাল চার্চ কাউন্সিল অব বাংলাদেশের মহাসচিব রেভারেন্ড ডেভিড অনিরুদ্ধ দাস, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আ. ছালাম খান, ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেনসহ দেশের বিশিষ্ট ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ।
বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় সহিংসতা, অসহিষ্ণুতা এবং উগ্র মতবাদের ক্রমবর্ধমান প্রেক্ষাপটে আন্তঃধর্মীয় সংলাপ হয়ে উঠেছে সময়ের দাবি। ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘর্ষ, সিরিয়া ও ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ, আফ্রিকার নাইজেরিয়া, সুদান ও মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে দাঙ্গাÑ সবই নির্দেশ করে যে, ধর্মের অপব্যাখ্যা কীভাবে মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনছে। এছাড়া ইউরোপ ও আমেরিকায় ইসলামভীতি (ইসলামোফোবিয়া) ও বর্ণবিদ্বেষ এবং ভারতে ধর্মনির্ভর জাতীয়তাবাদ ও সহিংস উগ্রবাদ সমাজকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় আন্তঃধর্মীয় সংলাপ একটি আলোচনাভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে, যেখানে সহনশীলতা, বোঝাপড়া ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে সমাধানের পথ খোঁজা যায়।
দক্ষিণ এশিয়া দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় সম্প্রীতির ঐতিহ্য বহন করে আসছে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কাÑ সব দেশেই একাধিক ধর্মাবলম্বী মানুষের সহাবস্থান বিদ্যমান। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও ধর্মীয় বিভাজনের ঘটনা বাড়ছে। ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, গরু-রক্ষার নামে সহিংসতা, কাশ্মীর ইস্যুতে ধর্মীয় উত্তেজনা এবং শ্রীলঙ্কায় গির্জায় বোমা হামলা দক্ষিণ এশিয়ার সামাজিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলছে।
এই অঞ্চলে আন্তঃধর্মীয় সংলাপ শুধু শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য নয়, সামাজিক ঐক্য, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং মানবিক সহাবস্থানের জন্য অপরিহার্য। দক্ষিণ এশিয়ার তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ধর্মীয় সহনশীলতা গড়ে তুলতে মিডিয়া, শিক্ষাব্যবস্থা এবং সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের মাধ্যমে সংলাপের পরিধি বিস্তৃত করতে হবে।
ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম শব্দের মধ্যেই রয়েছে শান্তি ও আত্মসমর্পণের অর্থ। ইসলামে ধর্মীয় স্বাধীনতার একটি স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, যা কুরআনের বহু আয়াতে প্রতিফলিত হয়েছে।
‘লাকুম দীনুকুম ওয়া লিয়া দীন।’ (সূরা কাফিরুন: ৬) অর্থ: ‘তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম, আমার জন্য আমার ধর্ম।’
এই আয়াত ইসলামের ধর্মীয় সহনশীলতার ভিত্তি। রাসূলুল্লাহ (সা.) মদিনায় একটি বহুধর্মীয় সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। মদিনা সনদ একটি যুগান্তকারী দলিল, যার মাধ্যমে মুসলিম, ইহুদি ও খ্রিস্টানরা শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থানের ভিত্তি রচনা করেছিল।
বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আমাদের সংবিধানে প্রত্যেক নাগরিকের ধর্ম পালনের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। এই দেশে ইসলাম, হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্ম ও খ্রিস্টধর্মের অনুসারীরা দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্প্রীতির পরিবেশে বসবাস করছে।
ঢাকায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এই আন্তঃধর্মীয় সংলাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। অনুষ্ঠানে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা অংশ নিয়ে আলোচনা করেছেন ধর্মীয় সহাবস্থান ও সমাজে ধর্মীয় নেতাদের ইতিবাচক ভূমিকা নিয়ে। এই সংলাপে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল, ধর্মীয় নেতারা কীভাবে উগ্রতা দমনে ভূমিকা রাখতে পারেন, কীভাবে তাঁরা তরুণ সমাজকে মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন এবং কীভাবে ধর্মকে ভালোবাসা, সহানুভূতি ও সম্প্রীতির বাহনে রূপান্তর করা যায়।
ধর্মীয় সম্প্রীতির সবচেয়ে শক্তিশালী বাহক হলো তরুণ প্রজন্ম। বাংলাদেশের শিক্ষিত, প্রযুক্তিপ্রবণ ও সৃজনশীল যুবসমাজ ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও বিভাজনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে। তাদের মাঝে আন্তঃধর্মীয় বোঝাপড়া গড়ে তুলতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলে আন্তঃধর্মীয় কর্মশালা, নাটক, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও সেমিনার আয়োজন করা যেতে পারে। পাঠ্যপুস্তকে সম্প্রীতির ইতিবাচক ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ধর্মীয় বিষয়গুলো যেন বিদ্বেষের নয়, মানবতার শিক্ষা দেয়, এটা নিশ্চিত করতে হবে।
গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ার দায়িত্ব গণমাধ্যম একটি সমাজের দর্পণ। আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ও সম্প্রীতির পক্ষে গণমাধ্যমকে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে। নিউজ রিপোর্ট, টকশো, ডকুমেন্টারি এবং ব্যক্তিগত গল্পÑ সব মাধ্যমেই সহনশীলতা ও মানবিকতার বার্তা ছড়াতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়াতে গুজব, উস্কানিমূলক বক্তব্য ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। তরুণরা যেন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে ইতিবাচক বার্তা প্রচার করে, এ জন্য প্রশিক্ষণ ও কনটেন্ট ক্রিয়েশন কর্মসূচি চালু করা প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে কিছু জরুরি কর্মপরিকল্পনা নেয়া যেতে পারে। যেমন: ১. ধর্মীয় নেতাদের প্রশিক্ষণ, ২. পাঠ্যক্রমে সম্প্রীতির অন্তর্ভুক্তি, ৩. সম্প্রীতির সামাজিক আন্দোলন, আইনের প্রয়োগ এবং ৪. মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ার ইতিবাচক ব্যবহার।
লেখক: কবি, কলামিস্ট ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গণসংযোগ কর্মকর্তা।
bbqif1983@gmail.com
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

তারেক রহমান: নতুন প্রজন্মের জাতীয়তাবাদী নেতৃত্বের প্রতীক - ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. একেএম শামছুল ইসলাম, পিএসসি, জি (অব.)

বিশ্বনাথে বাক প্রতিবন্ধি কৃষকের ৪টি গরু চুরি

‘মঙ্গল শোভাযাত্রার’ স্বীকৃতির জন্য নতুন অনুমোদন লাগবে: ইউনেস্কো

সরবরাহ কমে যাওয়ায় হিলিতে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা

বাংলাদেশে মানবিক সহায়তা বাড়িয়েছে সুইডেন

নাঙ্গলকোটে পরীক্ষায় নকল সরবরাহের দায়ে এক যুবকের ৬ মাসের কারাদন্ড, ১৫ পরীক্ষার্থী বহিস্কার

আদালত অবমাননার অভিযোগ, ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে তদন্তের হুমকি বিচারকের

ট্রেবল জয়ের স্বপ্ন দেখছে ইন্টার

১১ তলা থেকে পড়ে ফুটবলারের মৃত্যু

জনতা ব্যাংকের নতুন ডিএমডি মো. নজরুল ইসলাম

চাকরি হারানোর ভয় পাচ্ছেন না আনচেলত্তি

আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক চেয়ারম্যান’স অ্যাওয়ার্ড প্রদান

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশীদের জন্য মক্কা ও মদিনায় চালু হচ্ছে ‘হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার’

লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আটক

নিবন্ধন আবেদনের সময় বাড়াতে ইসিকে চিঠি দিলো এনসিপি

আমদানি বন্ধের অজুহাতে হিলিতে বেড়েছে চালের দাম,বিপাকে পাইকাররা

হাজীগঞ্জে বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু

যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানের করুণ চিত্র তুলে ধরলেন বাসিন্দারা

শর্ত পূরণে জুনে মিলতে পারে আইএমএফ এর ঋণের দুই কিস্তি