খাল উদ্ধারসহ পানির প্রাকৃতিক উৎসসমূহ রক্ষা করতে হবে
১০ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:২৫ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৩৭ এএম
রাজধানী ঢাকায় খালের সংখ্যা কত, তার সঠিক হিসাব দেয়া সম্ভব নয়। আগে এমন অনেক খাল ছিল, এখন তাদের অস্তিত্ব নেই। আবার অনেক খাল বা খালের অংশবিশেষ দখল হয়ে গেছে। ঢাকা জেলা প্রশাসনের হিসাবে দুই সিটি করপোরেশনের খালের সংখ্যা ৪৭টি। রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের মতে, খালের সংখ্যা ৫৬টি হলেও অধিকাংশ মৃতপ্রায়। এর মধ্যে দখল হয়ে গেছে ২৬টি। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ঢাকা ও আশেপাশে মোট ৭৭টি খালের অস্তিত্ব চিহ্নিত করে। খাল ছাড়াও এ শহরে অসংখ্য পুকুর ছিল। ১৯৮৫ সালেও পুকুর ছিল প্রায় দু’হাজার। এখন তার সংখ্যা একশ’তে এসে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া যত্রতত্র বহু জলাভূমি দৃষ্ট হতো। প্রায় সাড়ে তিন দশকে ১০ হাজার হেক্টরের মতো জলাভূমি হারিয়ে গেছে। খালগুলোর সঙ্গে জলাভূমির সংযোগ ছিল। ঢাকার চারদিক দিয়ে প্রবাহিত বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীর সঙ্গেও খালগুলো ছিল সংযুক্ত। ফলে পানি নিকাষে কখনোই কোনো সমস্যা দেখা দিতো না। শুকনায় পানির কোনো অভাব হতো না। বর্ষায় পানি কোনো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারতো না। প্রাকৃতিক পরিবেশের এই অসাধারণ স্থিরচিত্র অবলোকন করেই এক সময় ঢাকাকে রাজধানী হিসাবে নির্বাচন করা হয়েছিল। ঢাকা ছিল চার নদীর বেষ্টনীতে ঘেরা নিরাপদ একটি রাজধানী শহর। এখানে ছিল প্রচুর গাছপালা ও তৃণভূমি। সেই শহরে এখন দুই কোটির বেশি মানুষের বসবাস। পরিবেশ দূষণের দিক দিয়ে বিশ্বের মধ্যে শীর্ষে এ শহর। দখল-দূষণ ও অব্যবস্থাপনায় এ শহর বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। উন্নয়নের নামে, নগর সম্প্রসারণের নামে শহরের পানির প্রাকৃতিক উৎসসমূহই ধ্বংস করে ফেলা হয়নি, এর বনভূমি ও বৃক্ষ নিচয় মুছে ফেলা হয়েছে। ফলে জীব-জন্তু ও পক্ষীকুলও উৎখাত হয়ে গেছে। একদা পানির অফুরান সংস্থান যেখানে ছিল, সেখানে এখন পানির অভাব। পানির অভাবে আগুন নেভানো পর্যন্ত সম্ভব হয় না। কদিন আগে বঙ্গবাজার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অথচ, আগুন নেভানোর মতো পানি খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুর থেকে পানি আনতে হয়েছে।
বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনায় নতুন করে পানির বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এর আগে অগ্নিকা-ের যেসব ঘটনা ঘটেছে তাতেও পানি সংকট দেখা দিয়েছে। রাস্তার অপ্রশস্ততায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যেতে না পারার বাস্তবতাও প্রত্যক্ষ করা গেছে। সম্প্রতিককালে অগ্নিকা- যেভাবে একের পর এক ঘটতে দেখা যাচ্ছে, তাতে নগরবাসীর মধ্যে উদ্বেগ-দুশ্চিন্তা ভর করেছে। তারা ভীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। পর্যবেক্ষক মহলেও পানির প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে অনভূত হতে দেখা যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে হারিয়ে যাওয়া খাল উদ্ধার, জলাশয় সুরক্ষা, নতুন জলাধার তৈরি, চার নদীর দখল উচ্ছেদ করে সংস্কার, দূষণ রোধ ইত্যাদির বিকল্প নেই। দুই সিটি করপোরেশন ২৬টি হারিয়ে যাওয়া খাল উদ্ধারের পরিকল্পনা নিয়েছিল। তার কী হয়েছে, মানুষ তা জানে না। সিটি করপোরেশনদ্বয়কে সেটা জানাতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব খাল উদ্ধার করতে হবে। খালে ফেলা আবর্জনা পরিষ্কার, ভরাট হয়ে যাওয়া খাল খনন ও নাব্য করার কাজও জোরদার করতে হবে। জলাশয় ভরাট ও দখল আইনে বারিত করা আছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষকে এ আইন কঠোরভাবে কার্যকর করতে হবে। জলাশয় সংস্কার করে তাদের পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। মহল্লায় মহল্লায় নতুন পুকুর বা জলাধার খনন করতে হবে। একই সঙ্গে চার নদীর দখল উচ্ছেদ, প্রয়োজনীয় খনন-সংস্কার, দূষণ প্রতিরোধ ও নাব্য করতে হবে। এসব করা হলে পানির যাবতীয় প্রয়োজন পূরণ করা অসম্ভব হবে না। নিরাপদ পানির প্রাচুর্য প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। লক্ষ করা গেছে, যখন বৃষ্টিপাত হয় তখন ঢাকা শহরের গাছপালা যেমন সবুজ-শ্যামল হয়ে ওঠে, তেমনি বায়ু-দূষণসহ অন্যান্য দূষণও কমে যায়। এটা পানির অনিবার্য ভূমিকা ও কার্যকারকতারই প্রমাণ। পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া কোনো জীবনই বাঁচতে পারে না। বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানির সংস্থান নিশ্চিত করা তাই জরুরি। মনে রাখা দরকার, ঢাকার চারপাশের চার নদীর পানি দূষিত ও পানযোগ্যতার বাইরে চলে যাওয়ার কারণে পানের পানির জন্য ভূগর্ভস্থ পানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় পানির বৃহদাংশ আসছে ভূগর্ভ থেকে। এতে পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে, যা ভূগর্ভের স্থিতিস্থাপকতার জন্য হুমকি স্বরূপ।
পানির প্রাকৃতিক উৎসসমূহ, এখনো যা অবশিষ্ট আছে, যদি তা রক্ষা করা যায়, উন্নত করা যায় এবং দখল ও দূষণ থেকে বাঁচানো যায় তবে এই শহরে প্রয়োজনীয় পানির অভাব হবে না। এ ব্যাপারে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের যেমন দায়িত্ব আছে, নগরবাসীরও তেমনি দায়িত্ব আছে। খালে, জলাশয়ে ও নদীতে কঠিন ও তরল বর্জ্য নিক্ষেপের জন্য নগরবাসী বিশেষভাবে দায়ী। নাগরিক চেতনা ও দায়িত্বশীলতার অভাব তাদের এ ধরনের গর্হিত কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করে। আমাদের চারপাশের পরিবেশ রক্ষা করতে, প্রিয় শহর ঢাকাকে বসবাসের উপযোগী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত রাখতে আমাদের অবশ্যই সচেতন ও সক্রিয় হতে হবে। পাশাপাশি এর ওপর থেকে জনচাপসহ সব ধরনের ভার হালকা করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান