ড্রেজিংয়ের মাটি ও বর্জ্য অপসারণ নিশ্চিত করতে হবে
০৮ মে ২০২৩, ০৮:০৪ পিএম | আপডেট: ০৯ মে ২০২৩, ১২:০৪ এএম

নদী নৌচলাচল উপযোগী করতে বা রাখতে ড্রেজিংয়ের বিকল্প নেই। দেশের বেশিরভাগ নদী প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট বিবিধ কারণে ভরাট হয়ে নৌচলাচলের উপযুক্ততা হারিয়েছে। একদা নৌপথের পরিধি ছিল ২৪ হাজার কিলোমিটারের বেশি। এখন তা কমে বর্ষায় প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার এবং সারা বছর প্রায় চার হাজার কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে এক সময় নৌপথ ছিল এক নম্বরে। এখন এসে ঠেকেছে তিন নম্বরে। নদী নাব্য হারানোর কারণে কম খরচে যাতায়াত ও ব্যবসা-বাণিজ্য বলতে গেলে একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। মৎস্য উৎপাদন, নদীনির্ভর জীবিকা অবিশ্বাস্য রকমে হ্রাস পেয়েছে। এসবই ফেরৎ আসতে পারে যদি নদী নাব্য ও নৌচ্যানেলগুলো পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়। এজন্য ড্রেজিং অপরিহার্যই শুধু নয়, জরুরিও। সরকার বিভিন্ন নৌচ্যানেল ড্রেজিং করার কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে এবং এর মধ্যে বেশ কিছু চ্যানেলে ড্রেজিং সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু কতদিন এই ড্রেজিং কার্যকর ও চ্যানেল নাব্য থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দেখা গেছে, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে উত্তোলিত মাটি ও বর্জ্য চ্যানেলের অদূরেই ফেলে রাখা হয়েছে বা হচ্ছে, যা পুনরায় নদীতে পতিত হওয়া স্বাভাবিক। শুকনার সময় যেমন তেমন, বর্ষায় তা নদীবক্ষেই অবস্থান নিতে বাধ্য। এ ধরনের অপরিকল্পিত, বিশেষ করে উত্তোলিত মাটি ও আবর্জনার দূরবর্তী স্থানে নিরাপদ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করলে ড্রেজিং করার কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জিত হতে পারে না। এটা প-শ্রম ও জনগণের অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। বরাবরই নদী ড্রেজিং কিংবা নদীবক্ষ থেকে বর্জ্য উত্তোলন করার ক্ষেত্রে এটাই দেখা গেছে। অনেকেরই হয়তো স্মরণ আছে, বুড়িগঙ্গার বর্জ্য অপসারণের একটা প্রকল্প নেয়া হয়েছিল, যা কোনো কাজে আসেনি। প্রথমত, বর্জ্য বিশেষ করে পলিথিন নদীবক্ষে এমনভাবে আটকে আছে যে, তা তোলা প্রায় অসম্ভব। দ্বিতীয়ত, উত্তোলিত বর্জ্য নদী তীরেই ফেলা হয়, যা পরবর্তীতে স্বস্থানেই প্রত্যাবর্তন করে। সম্প্রতি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। সংসদীয় কমিটি ড্রেজিং কার্যক্রমে জড়িতদেরই মাটি ও বর্জ্য অপসারণের দায়িত্ব নিতে সুপারিশ করেছে।
সংসদীয় কমিটির এই সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠতে পারে, উত্তোলিত মাটি ও বর্জ্য অপসারণের দায়িত্ব তাহলে এতদিন কার ছিল? যারা ড্রেজিংয়ের সঙ্গে যুক্ত, এ দায়িত্ব তো তাদের ওপরই থাকার কথা এবং এটাই বাস্তবোচিত ও যৌক্তিক। এ দায়িত্ব যদি এতদিন কারো ওপর না-ই থাকে, তবে তা ড্রেজিং কার্যক্রমে নিয়োজিতদের ওপরই অর্পণ করা হোক। ড্রেজিংয়ের সঙ্গে মাটি ও বর্জ্য অপসারণের বিষয়টি তীক্ষ্ম নজরদারি ও তদারকির আওতায় আনা হোক। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, নদীসংক্রান্ত কোনো উদ্যোগ, কার্যক্রম ও প্রকল্পই প্রশ্নাতীত নয়। নদী দখল একটি সাধারণ ঘটনা। কারা নদী দখল করে বা কাদের দখলে আছে নদী, কারো অজানা নেই। কিন্তু দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া কিংবা নদী দখলমুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। জাতীয় নদী রক্ষা কর্তৃপক্ষ নদী দখলকারীদের একটি তালিকা করেছে। ওই পর্যন্তই। আর কিছু হয়নি। হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। নদী থেকে বেপরোয়া বালি উত্তোলনের অবৈধ কারবারের কথাও সবার জানা। এর সঙ্গে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীনরাই জড়িত। যেমন, তারাই নদী দখলের সঙ্গেও জড়িত। বালুদস্যুরা এতই বেপরোয়া যে, নদীর গতিপথ পরিবর্তন এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজের অস্তিত্ব পর্যন্ত বিপন্ন করে দিচ্ছে। ইনকিলাবে অকালে নদী ভাঙনের ওপর একটি দীর্ঘ প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে ক’দিন আগে। ওই প্রতিবেদনে এই শুকনো মওসুমে অপ্রতিরোধ্য নদী ভাঙনের অন্যতম কারণ হিসেবে বালুদস্যুদের অপকর্মকে দায়ী করা হয়েছে। নদী দখলকারী ও বালুদস্যুরা কি সরকারের চেয়েও শক্তিশালী যে, সরকার তাদের ধরতে ও আইনামলে আনতে পারে না?
সরকারের ক্ষমতার হাত দীর্ঘ ও শক্ত। রাষ্ট্রের আর কোনো সংস্থার, গোষ্ঠীর বা কর্তৃপক্ষের ক্ষমতার সঙ্গে তা তুলনীয় হতে পারে না। সরকার ইচ্ছা করলে, দৃঢ় হলে যে কোনো কাজ করতে পারে। নদী দখলকারী ও বালুদস্যুদের জব্দ করার মাধ্যমে নদীর অবাধ মুক্তি নিশ্চিত করা সরকারের পক্ষে কোনো কঠিন কাজ নয়। সরকারকে এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে, রাজনৈতিকভাবে দৃঢ় হতে হবে। এদের দমনে স্থিরপ্রতিজ্ঞ হতে হবে। একই সঙ্গে নদীর নাব্য ও জীবন পুনরুদ্ধার করতে ড্রেজিংয়ের পরিকল্পনা ও প্রকল্প আরো সম্প্রসারিত করতে হবে। নদী থেকে উত্তোলিত মাটি ও বর্জ্যরে ব্যবস্থাপনা এমনভাবে করতে হবে, যাতে ড্রেজিংয়ের কার্যকারিতা দীর্ঘ ও স্থায়ী হয়। আমরা সঙ্গতকারণেই আশা করবো, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ অবিলম্বে কার্যকর করার পদক্ষেপ নেয়া হবে। নদী বাঁচাতে ও নাব্য রাখতে দেশবাসী ড্রেজিংকে ব্যাপকভিত্তিক, নিয়মিত ও ফলপ্রসূ দেখতে চায়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

রাজনৈতিক দলের বিভেদের কারণে গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত : শওকত রাসেল

পহেলগামে সেনার অনুপস্থিতি নিয়ে যা বলছে ভারত সরকার

ব্রিটিশ আমল থেকে এই এলাকার মানুষের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো

যে হাসিনা পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গেছে, সে কখনো নেতা হতে পারে না : আব্দুস সালাম

নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বাতিলের দাবিতে কুমিল্লায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

গফরগাঁওয়ে ৪ দফা দাবী আদায়ে হেফাজতের সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল

গফরগাঁওয়ে ৪ দফা দাবী আদায়ে হেফাজতের সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল

অটোরিকশাচালকের ছেলে আরাফাত, রাবির ‘বি’ ইউনিটে প্রথম হয়ে তাক লাগাল দেশকে

জকিগঞ্জে পতিত জমি চাষে আগ্রহী চাষীরা: এসডিএস-এর উদ্যোগে মতবিনিময় সভা

নারী সংস্কার কমিশনের ইসলাম বিরোধী প্রস্তাবনা বাতিলের দাবিতে কক্সবাজারে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ মিছিল

ঈশ্বরগঞ্জে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

খুব বেশি প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে এই রাষ্ট্রটি মেরামত করার : খন্দকার মুক্তাদির

সিলেটের দুই কিশোরীকে কক্সবাজারে নিয়ে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ!

বাংলাদেশ নিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে : ব্যারিস্টার ফুয়াদ

পুরুষদের পর্দার বিধান প্রসঙ্গে।

সাভারে টানা ৪০ দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে সাইকেল উপহার পেল ১২ শিশু

ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিএনপি সঙ্কটে: গণতন্ত্র জয়ী হবে, না সিন্ডিকেট?

আখাউড়া সীমান্তে ফের গুলি চালাল বিএসএফ, বাংলাদেশি আহত

ছোট দলগুলোর ভবিষ্যৎ

ভারতের সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র