পাকিস্তান-ভারতের উত্তেজনা কমাতে পারস্পরিক আলোচনা জরুরি
২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৯ এএম

গত মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পেহেলগামের আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র বৈসারণ উপত্যকায় বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন। এই হামলার জন্য ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। ভারতের দাবি, হামলা করার দায় স্বীকার করা সশস্ত্র গোষ্ঠী দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে স্বল্প পরিচিত গোষ্ঠীটি পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তাইয়েবের সঙ্গে যুক্ত। এই হামলা নিয়ে এখন দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা ও যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। ভারত শুরুতেই পাকিস্তানকে দায়ী করে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, সিন্ধুর পানি চুক্তি স্থগিত ঘোষণা, পাকিস্তানের নাগরিকদের ভিসা বাতিল, নয়াদিল্লীতে পাকিস্তানি হাইকমিশনে নিযুক্ত সামরিক কর্মকর্তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা ইত্যাদি। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তান ভারতের নাগরিকদের ভিসা বাতিল, ইসলামাবাদে ভারতের হাইকমিশনে নিযুক্ত সামরিক কর্মকর্তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা ও সিন্ধুর পানি চুক্তি স্থগিতে ভারতের ঘোষণাকে যুদ্ধের শামিল বলে আখ্যায়িত করেছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী ভারতের স্যাটেলাইট চ্যানেল এনডিটিভি জানিয়েছে, গত বৃহ¯পতিবার (২৪ এপ্রিল) রাতে জম্মু ও কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর পাকিস্তানি সেনারা কিছু ভারতীয় পোস্টে গুলি চালানোর পর ভারতীয় সেনাবাহিনী পাল্টা জবাব দিয়েছে। তবে গোলাগুলিতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। অন্যদিকে, ভারত ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে। পাল্টা জবাব হিসেবে পাকিস্তানও ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করবে বলে জানা গেছে। কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলা ও নিহতের ঘটনা যেমন অত্যন্ত দুঃখজনক, তেমনি এ নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও শান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ।
একটা বিষয় বরাবরই লক্ষ্যণীয়, ভারতে যখনই কোনো সন্ত্রাসী হামলা ও ঘটনা ঘটেছে, কালবিলম্ব না করে ভারত এর জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। আনুষ্ঠানিক তদন্তের আগেই তাৎক্ষণিকভাবে পাকিস্তানের ওপর দোষ চাপিয়েছে। অতীতে এ ধরনের নজির দেখা গেছে। কাশ্মীরের এ হামলার ঘটনার ক্ষেত্রেও তাই দেখা গেছে। স্বল্প পরিচিত দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে সশস্ত্র গোষ্ঠী দায় স্বীকার করলেও এর ভিত্তি ও কীভাবে গড়ে উঠেছে, তার কোনো হদিস না করেই গোষ্ঠীটিকে পাকিস্তান মদদ দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ সশস্ত্র গোষ্ঠী ভারতে থেকেই হামলা চালিয়েছে। পর্যবেক্ষকরা প্রশ্ন তুলেছেন, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাহলে কি করেছে? কেন তারা এ গোষ্ঠীর খবর ও হামলা চালানোর আগাম কোনো তথ্য জোগাড় করতে পারেনি? ফলে এ হামলার সঙ্গে স্বয়ং ভারত জড়িত কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হওয়া অমূলক নয়। সন্দেহ সৃষ্টির আরও কারণ রয়েছে। এ বছরের মধ্যে উত্তর প্রদেশ ও বিহারে রাজ্যসভা নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে এক বছর পর নির্বাচন হবে। উত্তর প্রদেশ ও বিহারে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। এই দুই প্রদেশে মুসলমানদের ওপর ব্যাপক নিপীড়ন, নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। উত্তর প্রদেশে বুলডোজার দিয়ে মুসলমানদের অনেক বাড়িঘর ও স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মুসলমান বিদ্বেষ চরম আকার ধারন করেছে। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ চরম মুসলমান বিদ্বেষী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। বলা হয়ে থাকে, মোদির পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অন্যতম দাবিদার তিনি। সেই তিনি উত্তর প্রদেশে বিজেপির জয় ধরে রাখার জন্য মুসলমান বিদ্বেষ কাজে লাগাচ্ছেন। বিহারেও বিজেপি সরকার একই কাজ করছে। পশ্চিমবঙ্গেও মুসলমান বিদ্বেষ কাজে লাগিয়ে বিজেপিকে বিজয়ী করার নান পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এসব নির্বাচনে বিজেপির বিজয় নিশ্চিত করার জন্য এ ধরনের ঘটনা বড় রকমে কাজে আসতে পারে বলে বিজেপি মনে করতে পারে। বলা বাহুল্য, মোদি ক্ষমতায় এসেছেন উগ্র হিন্দুত্ববাদকে পুঁজি করে। ভারতকে একটি হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করার নানা উদ্যোগও তিনি নিয়েছেন। বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন করে মুসলমানদের ভারতছাড়া করাসহ উগ্র হিন্দুদের প্রশ্রয় ও উসকে দিয়েছে। এখন তার এবং তার এই নীতি ভারতে ক্রমেই অজনপ্রিয় হয়ে পড়ছে। আগামী নির্বাচনে তার ক্ষমতায় আসা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বিশ্বেও তার গ্রহণযোগ্যতা কমছে। সম্প্রতি তিনি সউদী আরব সফরে গিয়ে শূন্য হাতে ফিরেছেন। আগে সউদী আরব প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও সে বিনিয়োগ করেনি। দেশে এবং বিদেশে মোদির গ্রহণযোগ্যতায় ধস নামায় তা পুনরুদ্ধারে এবং পুনরায় ক্ষমতায় আসার জন্য নানা কৌশল তিনি অবলম্বন করছেন। এর মধ্যে নেতিবাচক বিষয়গুলোকে পুঁজি করে জনদৃষ্টি তার দিকে নিবদ্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। যেসব নেতিবাচক ইস্যুতে দলমত নির্বিশেষে সরকারের পাশে দাঁড়ায়, সেসব ইস্যুকেই তিনি সামনে এনে দাঁড় করান। এর মধ্যে ভারতের চিরশত্রুতে পরিণত হওয়া পাকিস্তানের প্রতি আক্রমণাত্মক যেকোনো ইস্যুতে সকলে একমত হয়। পাকিস্তানের ওপর কোনো কিছু উপলক্ষে দোষ চাপাতে পারলেই যেন নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে সহজ হয়ে যায়। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলায় জম্মু-শ্রীনগর হাইওয়েতে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী বহনকারি গাড়িবহরে আত্মঘাতী বোমায় ৪০ জন সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের সদস্য নিহত হয়। এ হামলার জন্যও ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে। বলা হয়ে থাকে, এ হামলাকে মোদি তার নির্বাচনী সুবিধা লাভের কাজে লাগান। ভারতের নির্বাচনে পাকিস্তানবিরোধী ইস্যুকে পুঁজি করে মোদি নির্বাচনী বৈতরণী পার হন বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। এবারও তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য কাশ্মীরের হামলাকে পুঁজি করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পাকিস্তান ও ভারতের মতো দুই নিউক্লিয়ার শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠা উপমহাদেশ তো বটেই, বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি বলে বিশেষজ্ঞরা বিবেচনা করছেন। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনও যুদ্ধ চলছে। ইউক্রেণ যুদ্ধ, ফিলিস্তিনে ইসরাইলের বর্বর গণহত্যাসহ জাতিসংঘের মিশন থাকা বিভিন্ন দেশে সংঘাত চলছে। এতে বিশ্ব শান্তি যেমন বিনষ্ট হচ্ছে, তেমনি অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে তার বিরূপ প্রভাব পড়ছে। আমরা দেখেছি, ইউক্রেন যুদ্ধে কীভাবে বিশ্ব অর্থনীতি পর্যুদস্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। নতুন করে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা এবং পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ ও হুমকি বিশ্ব শান্তি ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এতে কেউই উপকৃত হবে না। ভারতের অর্থনীতি যেমন নি¤œগামী, তেমনি পাকিস্তানের অর্থনীতিও চরম মন্দাবস্থার মধ্যে রয়েছে। উভয় দেশের মানুষই ক্ষতির মুখে রয়েছে। এমতাবস্থায়, যুদ্ধ বেঁধে গেলে জনজীবনে বিপর্যয় নেমে আসবে। বিশ্বের মানুষ যুদ্ধ চায় না, তারা শান্তি চায়। আমরা দেখেছি, গাজায় ফিলিস্তিনীদের ওপর বর্বর হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে ইসরাইলের অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপোষক যুক্তরাষ্ট্রের জনগণসহ সারাবিশ্বের মানুষ কীভাবে প্রতিবাদ করেছে। যুদ্ধ বন্ধ ও শান্তির পক্ষে তারা দাঁড়িয়েছে। এ প্রেক্ষিতে, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার যুদ্ধ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। পারস্পরিক অভিযোগ ও উত্তেজনা ছড়ায় এমন বাগযুদ্ধ না করে উভয় দেশের সরকারের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তিময় পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। আমরা আশা করি, দু’দেশের মধ্যে অবিলম্বে আলোচনা শুরু হবে। মনে রাখা প্রয়োজন, যুদ্ধ কেবল ধ্বংস বয়ে আনে। এতে কোনো পক্ষেরই লাভ হয় না।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত

ওষুধের দাম কমাতে পদক্ষেপ ট্রাম্পের

চীনা বিমানের কাছে পরাস্ত রাফাল সোশ্যাল মিডিয়ায় হাসির খোরাক ভারত

এরদোগানের সঙ্গে ফোনালাপ পুতিনের

ফের বিটকয়েনের দাম ১ লাখ ৫ হাজার ডলার ছাড়াল

মার্কিন-চীন বাণিজ্যের অবনতি রোধ করতে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে নেক্স গ্লোবাল

গাজা যুদ্ধ সামরিক আগ্রাসনের মাধ্যমে সমাধানযোগ্য নয় : জার্মানি

ইউরোপে বন্দি থেকেও ফিলিপাইনে জয়ী হতে যাচ্ছেন দুতার্তে

ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা

ফ্যাসিস্ট এমপি মমতাজ বেগম গ্রেফতার

কোটচাঁদপুরে আম সংগ্রহ শুরু

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অচল: দক্ষিণাঞ্চল অচলের ঘোষণা

সুন্দরবনের চারপাশে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা জারী করে প্রজ্ঞাপন

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির এক দশক পূর্তিতে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজন

করিডোর নিয়ে গোটা দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ, বিপন্ন হতে পারে সার্বভৌমত্ব: দরকার জাতীয় ঐক্য

সিলেটে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক নেতাকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

মাগুরায় আওয়ামী লীগ এর সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় জামায়াতের শুকরানা মিছিল

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের কোরআন বিরোধী প্রস্তাব বাতিল করতে হবে

জকিগঞ্জে আ. লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ২৬ নেতা কারাগারে

জেপি মরগান পেমেন্টসের ‘ওয়্যার ৩৬৫’ চালু করলো ব্র্যাক ব্যাংক