ছোট দলগুলোর ভবিষ্যৎ
২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৯ এএম

বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে দুই রাজনৈতিক দলের আধিপত্য অব্যাহত ছিল। একদিকে আওয়ামী লীগ, অন্যদিকে বিএনপি। এই দুই শক্তিকে কেন্দ্র করেই দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক পালাবদল ও উত্তাপ ঘটে থাকে। তবে সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে ৬৫টি নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের আবেদন এবং আরও ৪৬টি দলের সময় বৃদ্ধির আহ্বান রাজনীতির প্রথাগত এই চিত্রে সম্ভাব্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি নিছক একটি তথ্য নয়, বরং এক নতুন রাজনৈতিক ধারার উন্মেষও হতে পারে।
যেসব দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে, তাদের মধ্যে রয়েছে সম্মিলিত ইসলামি ঐক্যজোট, বাংলাদেশ সংস্কারবাদী দল, বাংলাদেশ শান্তির দল, বাংলাদেশ জনপ্রিয় পার্টি, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), বেকার সমাজ, বাংলাদেশ গণমুক্তি পার্টি, আমজনতার দল, বাংলাদেশ সমতা পার্টি, এবং আরও অনেক দল। অন্যদিকে, সময় বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে জাস্টিস পার্টি, জনতা কংগ্রেস দল, ফরায়েজী আন্দোলন, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি, নৈতিক সমাজ, বাংলাদেশ সংরক্ষণবাদী পার্টি (বিসিপি), কৃষক শ্রমিক পার্টি, ফরোয়ার্ড পার্টি, অহিংস গণঅভ্যুত্থান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (শাজাহান সিরাজ), তৃণমূল জনতা পার্টি, মুশকিল লীগ, নতুন বাংলা। এদের অনেকের নাম হয়তো সাধারণ মানুষের কাছেও একেবারে অপরিচিত।
প্রশ্ন হলো, এতগুলো নতুন দল বাস্তবে কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে? বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক কাঠামোয় কি এদের কোনো অবস্থান তৈরি হতে পারে?
রাজনৈতিক দল গঠনের অধিকার সংবিধানস্বীকৃত। দেশে রাজনৈতিক মত ও মতাদর্শের বহুত্ব থাকাটা একটি সুস্থ গণতন্ত্রের জন্য আবশ্যক। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই নতুন দলগুলোর আবির্ভাব বেশ কিছু বাস্তবতার প্রতিফলন। একদিকে জনগণের একাংশের মধ্যে প্রচলিত রাজনীতিতে আস্থাহীনতা, অন্যদিকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক উচ্চাকাক্সক্ষা এবং রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদার হওয়ার আকাক্সক্ষা।
অনেকে বিশ্বাস করেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ঘিরে দেশের রাজনীতি গতানুগতিক হয়ে পড়েছে। এই বাস্তবতায় নতুন দলগুলো বিকল্প রাজনীতির বার্তা দিতে চায়। কেউ কেউ ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ব্যতিক্রমী ব্যাখ্যা হাজির করছেন, কেউ শ্রমিক বা বেকারদের পক্ষ থেকে কথা বলার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, আবার কেউ জাতীয়তাবাদ ও আঞ্চলিক স্বার্থকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
তবে নিবন্ধনের আবেদন করা যতটা সহজ, রাজনীতিতে কার্যকরভাবে টিকে থাকা ততটাই কঠিন। নতুন দলগুলোর বেশিরভাগই সংঘবদ্ধ নয়, শক্তিশালী জনভিত্তি নেই, এমনকি জেলা পর্যায়ে কোনো কার্যকর সংগঠনও নেই। এই দলগুলোর প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো হলো:
১. সাংগঠনিক দুর্বলতা: বেশিরভাগ দল কেন্দ্রভিত্তিক কিছু নেতার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তৃণমূল পর্যায়ে কার্যকর নেটওয়ার্ক না থাকলে জনসম্পৃক্ততা গড়ে ওঠে না।
২. অর্থনৈতিক সমস্যা: রাজনৈতিক কার্যক্রম, সভা-সমাবেশ ও প্রচার চালাতে অর্থ প্রয়োজন। বড় দলগুলো কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ও প্রবাসীদের অনুদান পায়। নতুন দলগুলোর সেই সুযোগ নেই।
৩. মিডিয়া কাভারেজের ঘাটতি: প্রধান গণমাধ্যমগুলো নতুন দলগুলোর কার্যক্রম প্রচার করে না। ফলে তারা জনমানসে পরিচিতি গড়তে ব্যর্থ হয়।
৪. প্রশাসনিক সহায়তার অভাব ও রাজনৈতিক বৈরিতা: নতুন দলের কর্মসূচিতে অনুমতি না দেওয়া বা দলীয় পরিচয়ে হয়রানি নতুনদের জন্য বড় বাধা।
৫. ভোটার মানসিকতা: অধিকাংশ ভোটার এখনো ‘নির্বাচনে জেতার সম্ভাবনা আছে এমন দলকেই ভোট’ দেওয়ার মানসিকতায় অভ্যস্ত। নতুন দলকে ভোট দেওয়া মানেই ‘ভোট নষ্ট’, এই ভুল ধারণাও রয়ে গেছে।
এই প্রতিকূলতার মধ্যেই, যদি নতুন দলগুলো কিছু কৌশল অনুসরণ করে ধীরে ধীরে গণমানুষের আস্থাভাজন হয়ে উঠতে পারে।
১. ইস্যুভিত্তিক রাজনীতি: দুর্নীতি, বেকারত্ব, শিক্ষাব্যবস্থা, কৃষকের অধিকার, পরিবেশ সংকট, এসব বাস্তব ইস্যুতে সোচ্চার হয়ে জনমনে বিশ্বাস তৈরি করা যেতে পারে।
২. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার: মূলধারার গণমাধ্যমে সুযোগ না পেলেও, ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স (টুইটার), টিকটকসহ নানা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় হলে বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার সম্ভব।
৩. স্থানীয় পর্যায়ে প্রভাব বিস্তার: জাতীয় রাজনীতির আগে ইউনিয়ন ও পৌরসভা পর্যায়ে সেবা ও সংগঠনের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন জরুরি।
৪. ছোট দলের মধ্যে ঐক্য: এককভাবে টিকে থাকা কঠিন হলেও যদি একইমতাবলম্বী দলগুলো একটি প্ল্যাটফর্মে এসে ঐক্যবদ্ধ হয়, তবে তারা বড় দলের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে।
৫. রাজনৈতিক শিক্ষার প্রসার: বিশেষ করে তরুণদের রাজনীতির প্রতি আগ্রহী করে তোলার মাধ্যমে একটি দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তি গড়া সম্ভব।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির উত্থান স্বাভাবিক। বর্তমান নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা ৬৫টি দল এবং আরও ৪৬টি দল সেই বিকল্প রাজনীতির সম্ভাবনা তৈরি করেছে। যদিও বাস্তবতা কঠিন, প্রতিকূলতা অসংখ্য, তবু যদি এই দলগুলো আদর্শিক শক্তি, সাংগঠনিক কাঠামো, ইস্যুভিত্তিক কার্যক্রম ও জনসম্পৃক্ততা গড়ে তুলতে পারে, তাহলে একদিন হয়তো তারা দেশের রাজনীতিতে প্রভাব রাখতে পারে।
লেখক: কলামিস্ট।
mdyamin.khan1983@gmail.com
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত

ওষুধের দাম কমাতে পদক্ষেপ ট্রাম্পের

চীনা বিমানের কাছে পরাস্ত রাফাল সোশ্যাল মিডিয়ায় হাসির খোরাক ভারত

এরদোগানের সঙ্গে ফোনালাপ পুতিনের

ফের বিটকয়েনের দাম ১ লাখ ৫ হাজার ডলার ছাড়াল

মার্কিন-চীন বাণিজ্যের অবনতি রোধ করতে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে নেক্স গ্লোবাল

গাজা যুদ্ধ সামরিক আগ্রাসনের মাধ্যমে সমাধানযোগ্য নয় : জার্মানি

ইউরোপে বন্দি থেকেও ফিলিপাইনে জয়ী হতে যাচ্ছেন দুতার্তে

ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা

ফ্যাসিস্ট এমপি মমতাজ বেগম গ্রেফতার

কোটচাঁদপুরে আম সংগ্রহ শুরু

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অচল: দক্ষিণাঞ্চল অচলের ঘোষণা

সুন্দরবনের চারপাশে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা জারী করে প্রজ্ঞাপন

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির এক দশক পূর্তিতে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজন

করিডোর নিয়ে গোটা দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ, বিপন্ন হতে পারে সার্বভৌমত্ব: দরকার জাতীয় ঐক্য

সিলেটে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক নেতাকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

মাগুরায় আওয়ামী লীগ এর সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় জামায়াতের শুকরানা মিছিল

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের কোরআন বিরোধী প্রস্তাব বাতিল করতে হবে

জকিগঞ্জে আ. লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ২৬ নেতা কারাগারে

জেপি মরগান পেমেন্টসের ‘ওয়্যার ৩৬৫’ চালু করলো ব্র্যাক ব্যাংক