সিন্ডিকেটবাজরা কি এতই শক্তিশালী?

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৩ জুলাই ২০২৩, ০৮:২৭ পিএম | আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম

হঠাৎ করেই কাঁচা মরিচ অভিজাত পণ্যে পরিনত হয়েছে। কিছুদিন আগে যখন কাঁচা মরিচের কেজি একশ’ টাকা হয়ে যায়, তখন অনেকেই আন্দাজ করতে পারেনি, তা ঈদের আগে- পরে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায় উঠে যাবে। জানা মতে, এর আগে আর কখনো কাঁচা মরিচের দাম এত বাড়েনি। বর্ষাকালে কাঁচা মরিচের ফলন কমে যায় এবং গাছও অনেক ক্ষেত্রে মরে যায়। এ সময় অন্য সময়ের চেয়ে কাঁচা মরিচের দাম একটু বেশিই থাকে। দাম যতই বাড়–ক, এ যাবৎ কখনোই ২০০-৩০০ টাকা কেজির বেশি তা উঠতে দেখা যায়নি। এবারই ব্যতিক্রম। দাম বাড়তে বাড়তে রীতিমত আকাশে উঠেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সুত্রমতে, এপ্রিল- মে মাসে খরার পর হঠাৎ অতিবৃষ্টিতে মরিচ গাছ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে কারণে অধিকাংশ গাছে ফলন নেই বললেই চলে। এর উপর টানা বর্ষনে মরিচ সংগ্রহ বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেয়া এ বক্তব্য আংশিক সত্য; পূর্ণ সত্য নয়। বাংলাদেশ সংলগ্ন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম প্রভৃতি রাজ্যে বাংলাদেশের চেয়েও বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। অথচ জানা গেছে, ওই সব এলাকায় কাঁচা মরিচের কেজি ২৫ টাকার বেশি নয় এবং সরবরাহেও কোনো সংকটের কথা শোনা যায়নি। শুধু রাজধানী ঢাকায় নয়, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও কাঁচা মরিচের দাম অপ্রতিরোধ্য গতিতে বেড়েছে। কাঁচা মরিচের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি এখন সমাজে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রধান আলোচ্যে পরিনত হয়েছে। হঠাৎ কাঁচা মরিচের দাম এভাবে বাড়ার আসল কারণ কি, সংগত কারণেই সে প্রশ্ন উঠে এসেছে। বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, কাঁচামরিচ কৃষিজাত পণ্য। এর দাম কেন বাড়লো, তা কৃষি মন্ত্রণালয় বলতে পারবে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় গত ২৫ জুন কাঁচা মরিচ আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভারত থেকে ৩৬ হাজার ৮৩ টন কাঁচামরিচ আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৯৩ টন আমদানি হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে দাম কমতে শুরু করেছে। রাজধানীতে এখন ৬০০ টাকা কেজিতে কাঁচা মরিচ বিক্রী হচ্ছে।

জানা গেছে, ভারত থেকে আমদানিকৃত কাঁচা মরিচের দাম বাংলাদেশী মূদ্রায় শুল্কসহ প্রতি কেজি ৩২.২০ টাকা। অথচ এই কাঁচা মরিচই সর্বোচ্চ ১২০০ টাকা দরে কিনতে হয়েছে। ক্রেতাদের শংকা, কাঁচা মরিচের বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেটের কারসাজিতে আবারও দাম বাড়তে পারে। ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে একটি বড় সিন্ডিকেট কাজ করছে। বলা বাহুল্য, এ সিন্ডিকেট কারসাজি করে এরই মধ্যে ভোক্তাদের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সুযোগ পেলে তারা আবারো নেবে না, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। ইনকিলাবের খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা এ সিন্ডিকেট চাচ্ছে, কিছুদিন সিন্ডিকেট করে বড় অংকের মুনাফা লোটার পরে আমদানি করে দাম কমানো। দাম বাড়িয়ে আমদানিই সিন্ডিকেটের মূল লক্ষ্য বলে অনেকে মনে করেন। আমদানির পরও যে কোনো পণ্যের বাজার সিন্ডিকেটের কব্জায় থাকার কারণে মূল্যনিয়ন্ত্রণের এখতিয়ারও তার হাতেই থাকে। দাম বাড়ানো-কমানোর মাধ্যমে সিন্ডিকেট মুনাফা লুণ্ঠন করে। পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়। প্রচুর পেঁয়াজ আমদানি করা হলেও বাজারে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। কেজিতে ৫-১০ টাকা কমলেও এখনো পেঁয়াজের মূল্য প্রকৃতি ভেদে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা কেজি। তাহলে এত পেঁয়াজ গেল কোথায়? সিন্ডিকেট পেঁয়াজের বাজার, মূল্য, আমদানিসহ সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে। একইভাবে ডিম, ব্রয়লার মুরগী, চাল, তেলসহ নিত্যপণ্যের বাজার কথিত সিন্ডিকেটের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। কতিপয় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের একাংশ স্ব স্ব সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকার ব্যবসায়ী বান্ধব, তাই তারা বেপরোয়া, দলানুগত ব্যবসায়ী ও দলীয় লোকদের নিয়ে সিন্ডিকেট গঠিত হলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে।

ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দমন ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কি সরকারের নেই? বাণিজ্যমন্ত্রী ক’দিন আগে জাতীয় সংসদে বলেছেন,সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে বিপদে পড়তে হবে। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে তিনি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলে কিছুই করতে পারেননি। এতে তার অক্ষমতা, অপরাগতাই প্রমানিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি রাখ-ঢাক না রেখেই বলেছেন, বড় গ্রুপগুলো একসঙ্গে অনেক বেশি ব্যবসা করে। চাইলে জেল-জরিমানাসহ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব। তবে লক্ষ্য রাখা দরকার, আমরা সিন্ডিকেটের হোতাদের জেলে ভরলাম, জরিমানা করলাম; সেটা হয়তো সম্ভব। কিন্তু হঠাৎ করে ক্রাইসিসটা হলে, সেটাও তো সইতে আমাদের কষ্ট হবে। তাহলে কি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে না? এভাবেই কি বাজার দখল করে, নিয়ন্ত্রণ করে সিন্ডিকেটবাজরা জনগণকে ঠকিয়ে, শোষণ করে পার পেয়ে যাবে? আমরা মনে করি, সরকার যত দুর্বলই হোক, সিন্ডিকেট দমন করার মতো শক্তি তার আছে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে দৃঢ়তা দেখাতে পারলে সিন্ডিকেট অধরা থাকার কথা নয়। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কি করে? তারা কি সিন্ডিকেটবাজদের অনুসন্ধান ও পাকড়াও করতে পারেনা? জনগণের সেবক হিসেবে তাদের দায়িত্ব হচ্ছে, জনকল্যাণে কাজ করা। আমরা আশা করব, কারসাজি ও সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও মুনাফাবাজির বিরুদ্ধে সরকার কার্যকর প্রতিরোধ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল

দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১

নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে

নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে

অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন

অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন

ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের

ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ

মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি

মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি

রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী

রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী

বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের

বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের

আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া

আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া

ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী

দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী

সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির

সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির

রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার

সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার

উন্মুক্ত মঞ্চে তরুণদের উচ্ছ্বাস

উন্মুক্ত মঞ্চে তরুণদের উচ্ছ্বাস