মুনাফাবাজির সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে হবে
১৮ জুলাই ২০২৩, ০৮:০১ পিএম | আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম
সাধারণ মানুষের আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। করোনা মহামারির কারণে অর্থনৈতিক মন্দার অজুহাত, অত:পর জ্বালানি, খাদ্যসহ সব ধরণের পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির অজুহাত হিসেবে ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলা হলেও ইউক্রেন যুদ্ধের দেড় বছরের মাথায় এখন বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও কয়লা ও খাদ্যশস্যের দাম যুদ্ধের আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। যুদ্ধের প্রথম থাক্কায় কিছুটা মূল্যবৃদ্ধি ঘটলেও আস্তে আস্তে তা অর্ধেকে নেমে আসলেও আমাদের বাজারে তার কোনো প্রভাব পড়ছে না। যদিও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য কমলে মূল্য সমন্বয় করা হবে। আদতে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যায় না। যেনতেন প্রকারে, যেঈকানো অজুহাতে কারসাজি করে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে রাতারাতি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়াই যেন কথিত ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মূল টার্গেট। অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতির যাঁতাকলে নিস্পিষ্ট সাধারণ মানুষের হাহাকার চলছে। তারা আয়ের সাথে ব্যয় সংকুলান করতে পারছে না। অনেকে খাবার কমিয়ে দিয়েছে। সরকারের মন্ত্রী এমপিদের কণ্ঠেও বাজারের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য ও অসহায়ত্বের কথা শোনা যাচ্ছে। শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে গিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে না পেরে দরিদ্র মানুষের কান্না দেখেছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে বড় সংকটের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বাজার সিন্ডিকেটের কাছে সরকারের সংশ্লিষ্টদের অসহায়ত্ব অনেকটাই স্পষ্ট। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সামনের কিছুদিনের মধ্যে বাজার সিন্ডিকেটের যোগসাজশে চাল, আটা, ডালসহ বিভিন্ন পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই আশঙ্কার কথা জানা যায়। অতীতের মত কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে বাড়তি শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে সামনের নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের জন্য ফান্ড গঠণ করাই এই কারসাজির মূল লক্ষ্য বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে ঢাকার বঙ্গবন্ধু কনভেনশন সেন্টারে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করে আবারো ক্ষমতায় আনতে ভূমিকা পালনের অঙ্গিকার ব্যক্ত করেছেন। শিল্প প্রতিমন্ত্রীর ভাষ্য মতে, বাজারের সিন্ডিকেটেড কারসাজির সাথে নাকি সরকারের মন্ত্রীদের কেউ কেউ জড়িত আছেন। এসব বিষয়ে আরো খোলাখুলি কিছু বললে তিনি নিজের নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কাও ব্যক্ত করেছেন। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ওঠে, বাজার সিন্ডিকেটের মূল শক্তি কোথায়? সরকারের মন্ত্রীদের কণ্ঠে কেন অসহায়ত্বের সুর। তাদের হাত কি সরকার কিংবা রাষ্ট্রের চেয়েও লম্বা? অর্থনৈতিক সংকটের এই ক্রান্তিকালে অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি ও বাজার সিন্ডিকেট সম্পর্কে অস্বচ্ছতা ও আশঙ্কা দূর করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
সরকার বরাবরই নিজেকে ব্যবসায়ীবান্ধব সরকার হিসেবে দাবী করে আসছে। বাণিজ্যমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ উপদেষ্টাসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন অনেকেই দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী। তাদের নেতৃত্ব ও দায়িত্বের বাইরে কোনো ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কারসাজি করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখে কিনা, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের বক্তব্য থেকে তাদের অক্ষমতা ও অসহায়ত্ব আন্দাজ করা যায়। ভোক্তা অধিকারের পক্ষ থেকেও মূল্যবৃদ্ধি সিন্ডিকেটের কারসাজির চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে। তাদের ভাষ্য মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো পণ্যের ১০ ভাগ মূল্যবৃদ্ধি ঘটলে দেশীয় বাজারে তা ৮০-৯০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। কোনো কারণ ছাড়াই, শ্রেফ গুজব ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেও মূল্য কয়েকগুন বাড়িয়ে ফায়দা লোটার প্রবণতা রয়েছে। সম্প্রতি কাঁচা মরিচের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি এবং ভারত থেকে হাজার হাজার টন মরিচ আমদানির তৎপরতা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে। ভারত থেকে আমদানির সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার আগেই বাজারে কাঁচা মরিচের মূল্য অর্ধেকে নেমে আসে। সাধারণ জনগণের সাথে সুর মিলিয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরাও পণ্যমূল্যে কারসাজি ও সিন্ডিকেটের কথা বললেও বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধার কোনো লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতির কারণে সমাজে দারিদ্র্য ও পুষ্টিহীনতা বেড়ে যাচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ মানুষের জীবনযাত্রা ও জীবনমানে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করছে। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেঙে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। তাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শ্রীলঙ্কায় ইসলাম বিদ্বেষী বক্তব্যের অভিযোগে বৌদ্ধ ভিক্ষু গনানসারার কারাদণ্ড
ট্রাম্পের ঘুষের মামলায় সাজা স্থগিতের আবেদন খারিজ
সৎ ভাইকে ফাঁসাতে বাকপ্রতিবন্ধী মেয়েকে হত্যায় অভিযুক্ত বাবার আত্মসমর্পণ
৭ ডিগ্রীতে পঞ্চগড়ের তাপমাত্রা,বইছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ
শতাধিক পণ্য ও সেবায় শুল্ক-কর বাড়িয়ে অধ্যাদেশ জারি
সীমান্তে বাংলাদেশি নিহত : পতাকা বৈঠকে বিএসএফকে বিজিবির কড়া প্রতিবাদ
নিকোলাস মাদুরোর তৃতীয় শপথ, রাজনৈতিক দমন-পীড়নের আশঙ্কা
সুপার কাপ ফাইনালে বার্সা-রিয়াল মহারণ
কার সাথে সংসার করছেন জয়া?
২৪ বিপ্লবের শহীদদের মতো বিডিআরের নিহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে
টানা চার ম্যাচে রোনালদোর গোল,নতুন বছর জয় দিয়ে শুরু নাসেরের
শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র দেওয়া সম্ভব নয় : উপদেষ্টা মাহফুজ
টঙ্গীবাড়ীতে মসজিদের ইমামকে কুপিয়ে জখম
জার্মানিতে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ গৃহহীন
চীনে ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে এনআইডি : আইন পর্যালোচনায় রোববার বৈঠকে বসছে ইসি
কুমিল্লায় জনসম্মুখে শিশুকে দুগ্ধপান
যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চূড়ান্ত লড়াই
টিউলিপ সিদ্দিককে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর কথা ভাবছেন কিয়ার স্টারমার
আগুনে পুড়ল ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ, চলছে লুটপাট