ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৬ মাঘ ১৪৩১

রাজধানীর জলাধার ও বৃক্ষ রক্ষা করতে হবে

Daily Inqilab আর কে চৌধুরী

১২ আগস্ট ২০২৩, ০৮:১৪ পিএম | আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম

ঢাকা মহানগরী ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। বৈশ্বিক বিভিন্ন জরিপেও তার প্রমাণ মেলে। সেসব জরিপে দেখা যায়, পরিবেশের দিক থেকে ঢাকার অবস্থান সর্বনিম্নে গিয়ে ঠেকেছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) ২০১৭ সালে বসবাসযোগ্যতার বিচারে বিশ্বের ১৪০টি শহরের যে তালিকা প্রকাশ করে তাতে ঢাকার অবস্থান ছিল ১৩৭তম।

দুই মাসে উন্নয়নের নামে শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটিতে। আরও কিছু গাছ রয়েছে কাটার অপেক্ষায়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র যেখানে পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় ২ লাখ গাছ লাগানোর ঘোষণা দিয়ে পরিবেশ সচেতন নাগরিকদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন সেখানে উন্নয়নের অজুহাতে শতাধিক গাছ কেটে ফেলা স্ববিরোধী কি না, প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।

বিভিন্ন সময়ে বলা হয়েছে, পৃথিবীর নিকৃষ্টতম কয়েকটি শহরের একটি ঢাকা মহানগরী। পরিকল্পনা যদি বাস্তবসম্মত না হয়, পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তাহলে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ থাকে না। বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৩ উপলক্ষে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের উদ্যোগে এবং নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সহযোগিতায় আয়োজিত ‘২৮ বছরে রাজধানীর জলাধার ও সবুজ নিধন: বাস্তবতা ও উত্তরণের পথনকশা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ ও গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠানে যেসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে তা রাজধানী শহরের জন্য মোটেও সুখকর নয়। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, একটি আদর্শ শহরে ১০ থেকে ১২ শতাংশ জলাভূমি এবং ১৫ শতাংশ সবুজ থাকা প্রয়োজন।

১৯৯৫ সালে ঢাকায় সবুজভূমি ছিল ১৩.৪৫ শতাংশ। গত ২৮ বছরে এটি কমতে কমতে ৭.৯ শতাংশে নেমেছে। জলাভূমি এসে ঠেকেছে মাত্র ২.৯১ শতাংশে। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ঢাকা শহরের জলাধার ভরাট ও সবুজ নিধনের পেছনে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ, বনায়ন না করাসহ বহু কারণ রয়েছে।

একই সঙ্গে জনসাধারণের জন্য পার্ক ও খেলার মাঠ তৈরি করা, জলাশয় ও নদীর যথাযথ প্রবাহ ও সীমানা নির্ধারণ নিশ্চিত করা, জলাধার ও সবুজ এলাকা সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রণীত সব আইনের বাস্তবায়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ঢাকার জলাধার ও সবুজ নিধন সমস্যা দূর করা সম্ভব বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।

রাজধানীর সবুজ নিধনের উদাহরণ হতে পারে সাতমসজিদ রোড ও মহাখালী-গুলশান সড়কটি। রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন সড়ক বিভাজক থেকে কেটে নেওয়া হয়েছে শত শত গাছ।

উত্তর সিটির মহাখালী-গুলশান সড়কের বিভাজক থেকে কেটে নেওয়া হয়েছে শতাধিক গাছ। এই গাছ কাটা চলছে ছয় মাস ধরে। সড়ক উন্নয়নের নামে এসব গাছ কাটা হয়েছে, যেটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

রাজধানীর সবুজ, খোলা জায়গা আর জলাশয় নষ্ট করার ফল আমরা পাচ্ছি। এই মহানগরীকে বাসযোগ্য করে তুলতে হলে নতুন করে সবুজায়ন করতে হবে।

ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম পরিবেশ রক্ষায় নিজের অবস্থান জানিয়ে বলেছেন, গাছ কেটে কোনো উন্নয়ন নয়। ডিএনসিসি এলাকায় বিনা অনুমতিতে গাছ কাটলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু ঢাকা উত্তর সিটির মহাখালীর আমতলী থেকে গুলশান-১ পর্যন্ত সড়ক বিভাজ থাকা কৃষ্ণচূড়া, বটসহ শতাধিক পুরনো গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। গাছ কাটায় ছায়া-সুশীতল সড়কটি এখন দিনভর তপ্ত হয়ে থাকে। স্থানীয়রা বলছেন, একদিকে মেয়র গাছ লাগানোর প্রকল্প নিচ্ছেন, অন্যদিকে বড় বড় গাছ কেটে ফেলা দুর্ভাগ্যজনক। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৯৫ সালে ঢাকায় সবুজ ও ফাঁকা জায়গা ছিল ৩৫.৭১ শতাংশ। ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২০.৩১ শতাংশে। ফলে গ্রীষ্মের দাবদাহে রাজধানীর দুই সিটিতে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। মরুভূমি এলাকার মতো অসহ্য গরমে ভুগতে হচ্ছে নাগরিকদের। রাজধানী থেকে নির্বিচারে গাছপালা কেটে ফেলা এবং জলাশয় ভরাট এ অস্বস্তিকর অবস্থার উদ্ভব ঘটিয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র সবুজ পরিবেশ সৃষ্টির যে অঙ্গীকার ঘোষণা করেছেন তা প্রশংসার দাবিদার। তবে এ বিষয়ে শুধু মেয়র নয়, সবাইকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।

লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, উপদেষ্টা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ভূমি ও নদী দখল
আইসিটি খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে
গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে চরমোনাইর পীরের দল
ট্রাম্পের কর্মকাণ্ড ব্যাপক আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে
আবাসন খাত উন্নয়নে জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে
আরও

আরও পড়ুন

সরকারের সমর্থন ছাড়া ব্যাংক লুটপাট করা সম্ভব হতো না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সরকারের সমর্থন ছাড়া ব্যাংক লুটপাট করা সম্ভব হতো না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

শিল্পে উৎপাদন খাতের অবদান কমেছে

শিল্পে উৎপাদন খাতের অবদান কমেছে

জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করলে রাজনীতির অধিকার হারাবে শিবির: ছাত্রদল

জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করলে রাজনীতির অধিকার হারাবে শিবির: ছাত্রদল

ভারতে কুম্ভ মেলায় পদদলিত হয়ে প্রায় ৪০ জনের মৃত্যু

ভারতে কুম্ভ মেলায় পদদলিত হয়ে প্রায় ৪০ জনের মৃত্যু

কারিগরির সাড়ে ৩ হাজার জনবল নিয়োগে কোনো বাঁধা নেই

কারিগরির সাড়ে ৩ হাজার জনবল নিয়োগে কোনো বাঁধা নেই

স্ত্রীসহ ইভ্যালির রাসেলের দুই বছরের কারাদণ্ড

স্ত্রীসহ ইভ্যালির রাসেলের দুই বছরের কারাদণ্ড

আদালতের পৃথক নিরাপত্তা বাহিনী গঠনের দাবি বিচারকদের

আদালতের পৃথক নিরাপত্তা বাহিনী গঠনের দাবি বিচারকদের

সমন্বিত অনলাইন সত্যায়ন ব্যবস্থাপনার উদ্বোধন সাশ্রয় হবে ৫শ’ থেকে ৭শ’ কোটি টাকা

সমন্বিত অনলাইন সত্যায়ন ব্যবস্থাপনার উদ্বোধন সাশ্রয় হবে ৫শ’ থেকে ৭শ’ কোটি টাকা

আওয়ামী লীগের অপকর্ম জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে :  নাসের রহমান

আওয়ামী লীগের অপকর্ম জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে : নাসের রহমান

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্ত্রী-সন্তানকে হত্যায়  ঘাতকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্ত্রী-সন্তানকে হত্যায়  ঘাতকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

নেতারা 'পলাতক', কীভাবে হরতাল-অবরোধ পালন করবে আওয়ামী লীগ?

নেতারা 'পলাতক', কীভাবে হরতাল-অবরোধ পালন করবে আওয়ামী লীগ?

হায়ার পার্টনার্স মিট ২০২৫ এ ট্রিপল সম্মাননায় ভূষিত টিভি হাট

হায়ার পার্টনার্স মিট ২০২৫ এ ট্রিপল সম্মাননায় ভূষিত টিভি হাট

ডাকসু নির্বাচনে কারচুপি পুনঃতদন্ত চেয়ে ঢাবি উপাচার্যকে স্মারকলিপি

ডাকসু নির্বাচনে কারচুপি পুনঃতদন্ত চেয়ে ঢাবি উপাচার্যকে স্মারকলিপি

মস্কোর কাছে আসাদকে ফেরত চাইলেন আল-শারা

মস্কোর কাছে আসাদকে ফেরত চাইলেন আল-শারা

দেশের বাজারে আরো বাড়ল সোনার দাম

দেশের বাজারে আরো বাড়ল সোনার দাম

ভূমি ও নদী দখল

ভূমি ও নদী দখল

বিদেশগামী কর্মীদের দক্ষতা  অর্জনে গুরুত্বারোপ রাবিডের সেমিনারে নেতৃবৃন্দ

বিদেশগামী কর্মীদের দক্ষতা অর্জনে গুরুত্বারোপ রাবিডের সেমিনারে নেতৃবৃন্দ

আইসিটি খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে

আইসিটি খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে

গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে চরমোনাইর পীরের দল

গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে চরমোনাইর পীরের দল

আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ৮ সদস্যের দল

আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ৮ সদস্যের দল