জাতীয় শোক দিবস

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৪ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৩২ পিএম | আপডেট: ১৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৭ এএম

আজ ১৫ আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস। লাখো প্রাণের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র ৪ বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের এইদিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিবারের সদস্যসহ শাহাদাত বরণ করেন। সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী, উচ্ছৃঙ্খল সদস্য তাদের নির্মমভাবে হত্যা করে। দেশের স্থপতি ও প্রেসিডেন্টকে এমন নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যার ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন। একজন রাষ্ট্রপ্রধান ও রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সাফল্য-ব্যর্থতার গঠনমূলক মূল্যায়ন হতেই পারে। তবে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার পরিবর্তে তাকে হত্যা করার মাধ্যমে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার মতো ভয়াবহ পন্থা অবলম্বন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। জাতি তা গ্রহণ করেনি, মেনে নেয়নি। বিলম্ব হলেও তার হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন হয়েছে। কয়েকজনের সর্বোচ্চ দ- কার্যকর হয়েছে। অন্যরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে। সরকার তাদের ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু না জন্মালে বাংলাদেশ নামের দেশ হতো কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এই অর্থেই বলা হয়, বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মানে বঙ্গবন্ধু। ব্যক্তিনাম ও দেশনাম এভাবে একাকার হয়ে যাওয়ার নজির বিশ্বে বিরল। তিনি ছিলেন জাতীয় জাগরণের তুর্যবাদক। জাতিকে উজ্জীবিত ও প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে তার অবদান বলতে গেলে একক। তিনি ভাষাভিত্তিক ও জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে আমাদের অশেষ ঋণে আবদ্ধ করে গেছেন। আজ গভীর শ্রদ্ধায় ও কৃতজ্ঞতায় আমরা তাকে স্মরণ করছি। বঙ্গবন্ধু নেই। কিন্তু তাঁর আদর্শ আছে, তাঁর স্বপ্ন-প্রত্যাশা আছে, আছে তাঁর প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। তাঁর আদর্শ, তাঁর জীবন ও কর্মের মধ্যেই বিধৃত হয়ে আছে। তাঁর স্বপ্নের কথা, প্রত্যাশার কথাও কারো অজানা নেই। কী ধরনের দেশ ও সমাজ তিনি কামনা করতেন, তাঁর আত্মজীবনী পড়লে তা সম্যক উপলব্ধি করা যায়। তিনি স্বাধীন দেশ এবং শান্তি ও সহাবস্থানমূলক সমাজের প্রত্যাশা করতেন। এ প্রত্যাশা পূরণের জন্যই তিনি জীবনব্যাপী রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। তিনি দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করার কাজ শুরু করেছিলেন, যা শেষ করে যেতে পারেননি। ঘাতকচক্র সে সুযোগ তাঁকে দেয়নি। সোনার বাংলা গড়তে সর্বাগ্রে প্রয়োজন ছিল জাতীয় ঐক্য ও সংহতি। জাতীয় ঐক্য ও সংহতি নির্মাণে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। বলা বাহুল্য, তাঁর নেতৃত্বে ও মাধ্যমে আমরা স্বাধীন স্বদেশের অধিকারী হয়েছি বটে, তবে এখনো তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা, শান্তিপূর্ণ ও সহাবস্থানমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য-সংহতিও নিশ্চিত করতে পারিনি। বরং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাতির মধ্যে নানা রকম বিভক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, যা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গঠনের জন্য ইতবাচক নয়। দুঃখজনক হলেও স্বীকার করতে হচ্ছে, তাঁর দল এবং যে দলটির নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে সেই আওয়ামী লীগ তাঁর আদর্শ ও স্বপ্ন প্রত্যাশার বাস্তবায়ন থেকে দূরে সরে গেছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, দর্শন ও কর্মকে নয়, তাঁর নাম ব্যবহার করে এই দল ও অঙ্গসংগঠনগুলোর কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। বঙ্গবন্ধুকে নিছক ছবির মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে তাঁর আদর্শ ও স্বপ্নের কথা বলা হচ্ছে। যারা তাঁর নামে রাজনীতি করছেন তারা তাঁর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথা মুখে বললেও কার্যক্ষেত্রে তার প্রতিফলন ঘটাতে পারছেন না। বঙ্গবন্ধু ত্যাগের রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর অনুসারীদের অনেকেই ত্যাগের বদলে ভোগের রাজনীতির দিকে ছুটে চলেছেন। বঙ্গবন্ধু সারাজীবন বঞ্চিত, নিপীড়িত, নির্যাতিত, অধিকারহারা ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য রাজনীতি করে গেছেন। তিনি গণতন্ত্রের জন্য লাগাতার সংগ্রাম করে গেছেন। তাঁর অনুসারীরা এখন ভিন্ন রাজনীতি করছেন।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন-প্রত্যাশা বাস্তবায়ন করতে হলে একনিষ্ঠভাবে তাঁর সেই দর্শন ও আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। দৃঢ়তার সঙ্গে সেই স্বপ্ন-প্রত্যাশা হৃদয়ে লালন করতে হবে এবং কর্মের মাধ্যমে তার বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা, সমৃদ্ধ বাংলা, মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো বাংলা, পরমুখাপেক্ষিতামুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার দায়ভার মূলত তাঁর দল ও অনুসারীদের ওপরই বর্তায়। প্রায় দেড় দশক ধরে ক্ষমতায় আছে বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ পরিচালিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সোনার বাংলা গড়া, অর্থনৈতিক মুক্তিসহ দেশের মানুষের কল্যাণে অকুণ্ঠচিত্তে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। তাঁর দূরদর্শী ও বিচক্ষণ নেতৃত্ব এবং সঠিক দিকনির্দেশনায় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিশ্বের জন্য অনুসরণযোগ্য দৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছে। উপমহাদেশ তো বটেই, বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। করোনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়া অর্থনীতি এবং একের পর এক বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাতের মধ্যেও অর্থনীতির ভিত্তি অন্য অনেক দেশের তুলনায় ভালো অবস্থাতেই ছিল। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সব কিছু ওলট-পালট হয়ে গেছে। জ্বালানি নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা, মানুষের সচ্ছন্দ জীবন যাপন হুমকির মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। এ অবস্থা মোকাবেলার চেষ্টাও চলছে। আশা করা যায়, বঙ্গবন্ধুকন্যার সুযোগ্য নেতৃত্বে জাতি এ ক্রান্তিকাল অতিক্রমে সমর্থ হবে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নজির রেখে যাবেন, এই প্রত্যাশা সবার। দেশের কাক্সিক্ষত উন্নয়নে পারস্পরিক শ্রদ্ধাপূর্ণ, সহনশীল এবং গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। এইসঙ্গে জরুরি সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য ও সংহতি। দেশের মানুষ বিশ্বাস করে, বঙ্গবন্ধুকন্যাই পারবেন গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার ও অর্থনৈতিক মুক্তির পথ বিনির্মাণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে। আমরা আজকের এই দিনে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্য, যারা সেদিন শহীদ হয়েছিলেন, তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

প্রসঙ্গ : অল্প সংস্কার ও দ্রুত নির্বাচন
সীমান্তে উত্তেজনা ও ঝুঁকি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
শিক্ষাপ্রশাসন জামায়াতিকরণ নয়
গাজাকে বাসোপযোগী করতে হবে
ড. মুহাম্মদ ইউনূসেই জনগণের আস্থা
আরও

আরও পড়ুন

প্রভাবমুক্ত নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর নতুন জ্বালানি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের দাবি : টিআইবি’র

প্রভাবমুক্ত নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর নতুন জ্বালানি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের দাবি : টিআইবি’র

হেপাটোলজি সোসাইটির নতুন সভাপতি প্রফেসর শাহিনুল আলম, মহাসচিব মো. গোলাম আযম

হেপাটোলজি সোসাইটির নতুন সভাপতি প্রফেসর শাহিনুল আলম, মহাসচিব মো. গোলাম আযম

এনসিটিবি চেয়ারম্যান ওএসডি

এনসিটিবি চেয়ারম্যান ওএসডি

জামিন পেলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম

জামিন পেলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম

নির্বাচন বিলম্ব করার কোনো সুযোগ নেই : আমীর খসরু

নির্বাচন বিলম্ব করার কোনো সুযোগ নেই : আমীর খসরু

দুই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বরখাস্ত

দুই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বরখাস্ত

মানসম্মত ও জীবনমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়নে শিক্ষক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে -বাউবি ভিসি

মানসম্মত ও জীবনমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়নে শিক্ষক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে -বাউবি ভিসি

চিত্রনায়িকা নিঝুমকে অপহরণ চেষ্টা

চিত্রনায়িকা নিঝুমকে অপহরণ চেষ্টা

দেশে মানসম্মত শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে

দেশে মানসম্মত শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে

ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডির পদত্যাগ

ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডির পদত্যাগ

সালথায় চলছে মাটিকাটা ও বালু উত্তোলনের মহোৎসব, নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক

সালথায় চলছে মাটিকাটা ও বালু উত্তোলনের মহোৎসব, নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক

ডিআরইউকে ৫ লাখ টাকা অনুদান দিলো দৈনিক ভোরের আকাশ

ডিআরইউকে ৫ লাখ টাকা অনুদান দিলো দৈনিক ভোরের আকাশ

ভোগাই নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের অভিযোগে ৩ জনের জেল, সরঞ্জাম ধ্বংস

ভোগাই নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের অভিযোগে ৩ জনের জেল, সরঞ্জাম ধ্বংস

চাঁদপুরে মেঘনায় ভেসে উঠছে মরা মাছ ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে

চাঁদপুরে মেঘনায় ভেসে উঠছে মরা মাছ ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে

সিলেটে ইউনিমার্টের প্রথম বর্ষপূর্তি, বিজয়ীরা পেলেন পুরস্কার

সিলেটে ইউনিমার্টের প্রথম বর্ষপূর্তি, বিজয়ীরা পেলেন পুরস্কার

ইসলামী আন্দোলনের আমিরের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিবের বৈঠক  কাল

ইসলামী আন্দোলনের আমিরের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিবের বৈঠক  কাল

দিনাজপুরে অনুর্ধ্ব-১৭ বালক-বালিকাদের জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্ণামেন্টে

দিনাজপুরে অনুর্ধ্ব-১৭ বালক-বালিকাদের জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্ণামেন্টে

এক অজু দিয়ে তিন ওয়াক্ত নামাজ পড়া প্রসঙ্গে?

এক অজু দিয়ে তিন ওয়াক্ত নামাজ পড়া প্রসঙ্গে?

মিথ্যা অপপ্রচারের প্রতিবাদে বিএনপির সাংবাদিক সম্মেলন

মিথ্যা অপপ্রচারের প্রতিবাদে বিএনপির সাংবাদিক সম্মেলন

মহড়ায় যোগ দিতে পাকিস্তানের পথেবানৌজা সমুদ্র জয়’

মহড়ায় যোগ দিতে পাকিস্তানের পথেবানৌজা সমুদ্র জয়’