ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার মোদির স্বপ্ন কি ফিকে হয়ে গেল?
১৫ জুন ২০২৪, ১২:১৪ এএম | আপডেট: ১৫ জুন ২০২৪, ১২:১৪ এএম
![](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/1-20240614205048.jpg)
ভারতের এবারের লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীর ‘হিন্দুত্ববাদী’ নীতি বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। মোদী ভারতকে একটি নিখাদ হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য বিগত একদশক ধরে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। এর ফলে দেশটিতে উগ্র হিন্দুত্ববাদের যেমন জন্ম হয়েছে, তেমনি সংখ্যালগিষ্ঠ মুসলমানদের উপর নেমে এসেছে হত্যা, নিপীড়ন, নির্যাতন এবং দেশছাড়া করার প্রক্রিয়া। গত ১০ বছরে বিজেপি জোটগতভাবে সরকার গঠন করলেও তার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় মোদী বাধাহীনভাবে এ কাজটি করতে পেরেছেন। কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলো মৃদুস্বরে প্রতিবাদ করলেও তাতে তিনি কর্ণপাত করেননি। মোদী ভারতকে মুসলমানমুক্ত একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার অভিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে গেছেন। এজন্য যারাই তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাদের দুর্বল করতে যত ধরনের পদক্ষেপ নেয়া দরকার, তা নিয়েছেন। এমনকি, দেশটির প্রভাবশালী মিডিয়াকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে কিংবা অর্থলগ্নি করে নিজের করায়ত্তে নিয়েছেন। মোদী এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, তৃতীয় মেয়াদেও তার দল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করবে এবং ভারতকে এ মেয়াদে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা থাকবে না। নির্বাচনী প্রচারণাকালে তার শ্লোগান ছিল, ‘আবকি বার চারশ’ পার’। নির্বাচনে তার দল ও জোট চারশ’ আসনে বিজয় লাভ করবে। এমনকি, নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করার দুইদিন আগে বুথ ফেরত জরিপে বলা হয়, এবারের নির্বাচনেও বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। এ জরিপের ফলাফল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া জোট’ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে। অভিযোগ উঠে, বিজেপি তার করতলে থাকা প্রতিষ্ঠান দিয়ে জরিপ করিয়ে আগাম বিজয়ের বার্তা দিয়েছে। এর মাধ্যমে ভোটের ফলাফলে কারচুপি করার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। শেষ পর্যন্ত ভোটের ফলাফলে বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও বিজেপি এককভাবে সরকার গঠনের যে ম্যাজিক ফিগার ২৭২, তা ছুঁতে পারেনি। ২৪০ আসনে থেমে গেছে। এতে মোদীর ধ্যান ও স্বপ্ন ধুলিস্যাত হয়ে গেছে। বরং কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট প্রবলভাবে ফিরে এসেছে। এ জোট পেয়েছে ২৩৩টি আসন। এর মধ্যে কংগ্রেস এককভাবে পেয়েছে ৯৯টি আসন। বিরোধীদলের এই পুনর্জাগরণে মোদীর একদলীয় বা কর্তৃত্ববাদী সরকারের স্বপ্ন অনেকটাই উবে গেছে।
দুই.
ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার উগ্রপন্থী ও পরাক্রমশালী মোদীর যে উদগ্র বাসনা, এবারের নির্বাচনে ভারতের সাধারণ জনগণ তা পূরণ করতে দেয়নি। এতে যে, দেশটির মুসলমানদের খুব বেশি লাভ হবে, তা নয়। কারণ, ভারতে যে সরকারই আসুক না কেন, সেটা কংগ্রেস কিংবা বিজেপি বা অন্য কোনো সরকার, তাতে মুসলমানদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না। তারা যে তিমিরে আছে, সে তিমিরেই থেকে যায়। তবে মোদীর শাসনাধীন ভারতে মুসলমানরা যেভাবে নির্যাতিত হচ্ছে, তা অন্য কোনো সরকারের আমলে এতটা দেখা যায়নি। এমনকি, ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বিজেপি ক্ষমতায় থাকাকালেও মুসলমানদের এতটা দুর্দশায় পড়তে হয়নি। সে সময় বিজেপির অটল বিহারী বাজপেয়ি প্রধানমন্ত্রী এবং এল কে আদভানি উপ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তারা মোদীর মতো ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদী নীতি ও হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার মতো পদক্ষেপ নেননি। তবে এবারের নির্বাচনে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় মোদীর হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠা কিছুটা হলেও বাধার মুখে পড়তে পারে। বিজেপি বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করলেও মোদীর জন্য তা অত্যন্ত পীড়াদায়ক হয়েই থাকবে। মোদী এতটাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলেন যে, ফলাফল ঘোষণার কয়েকদিন আগে বলেছিলেন, তার জন্ম আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো কোনো জৈবিক প্রক্রিয়ার ঘটনা নয়, তিনি ‘ঈশ্বর প্রেরিত’ একজন মানুষ। অর্থাৎ ঈশ্বর তাকে সরাসরি পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। এমনকি, ফলাফলের দুইদিন আগে তিনি ধ্যানে বসে তা বোঝাতেও চেয়েছিলেন। এই ‘ঈশ্বর প্রেরিত’ মানুষটি তার কাক্সিক্ষত ফলাফল বয়ে আনতে পারেননি। এটা তার একধরনের পরাজয়। এতে মোদী ঈশ্বরের প্রতি অভিমান করতেই পারেন। তবে তার স্বপ্নভঙ্গ, ভারত তো বটেই বিশ্বে গণতন্ত্রের বিকাশ এবং গণতন্ত্রকামী মানুষের জন্য উৎসাহব্যাঞ্জক হয়ে দেখা দিয়েছে। ভারতের যে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি, তা কিছুটা হলেও সুরক্ষিত হবে। কারণ, মোদী এখন চাইলেই ভারতকে একটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার খায়েশ সহজে পূরণ করতে পারবেন না। শক্তিশালী বিরোধীদল এবং ভারতের প্রগতিশীল শ্রেণী ও বুদ্ধিজীবী, যাদের বাকস্বাধীনতা মোদী সংকুচিত করে রেখেছিলেন, তারা সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে পারবেন। ভারতের গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং প্রশাসনিক কাঠামোর যে বৈশিষ্ট্য, গত দশ বছরে মোদী তা প্রায় ভেঙে দিয়েছেন। দমন-পীড়ন করে বিরোধীদলকে দুর্বলকরণ, প্রশাসনকে দলীয়করণ, আদালতে হস্তক্ষেপ, মিডিয়াকে কব্জায় নেয়াসহ ভারতের মূল চরিত্র বদলে ফেলেছিলেন। মোদী এ কাজ করেছেন, শুধুমাত্র তার হিন্দুত্ববাদকে প্রতিষ্ঠিত করে ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য। অন্য ধর্মের প্রতি তার বিন্দুমাত্র সহনশীলতা নেই। বিশেষ করে ইসলাম ও মুসলমানকে তিনি আজন্ম শত্রু হিসেবে মনে করেন। তার এই চরিত্রের প্রকাশ ঘটে ২০০২ সালে গুজরাটে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে দাঙ্গা বাঁধিয়ে মুসলমানদের হত্যা করার মধ্য দিয়ে। সে দাঙ্গায় উগ্র হিন্দুরা যেভাবে মুসলমানদের উপর ঝাপিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালায়, তা সভ্যতার ইতিহাসে বর্বরতম ঘটনা। মুসলমানদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস, নারীদের ধর্ষণ এবং হত্যা, শিশুদের পেট্রল খাইয়ে আগুনে পুড়িয়ে মারা, গর্ভবতী মায়ের পেট কেটে সন্তান বের করে পা দিয়ে পিঁষে মারার মতো বর্বরতা তারা দেখিয়েছে। মুসলমানরা থানায় গিয়েও কোনো আশ্রয় পায়নি। এই দাঙ্গার ‘মাস্টারমাইন্ড’ ছিলেন মোদী। এজন্য তিনি আদালতে অভিযুক্তও হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রও তাকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। তবে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি ভারতকে মুসলমানমুক্ত করে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করতে মুসলমানদের উচ্ছেদ ও বিতাড়নে এনআরসি এবং সিএএ’র মতো নাগরিকত্ব আইন পাশ করেন। মুসলমানদের উপর এন্তার নিপীড়ন, নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালান। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও মদদে উগ্রপন্থী হিন্দু সংগঠনগুলো মুসলমানদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। শুধু মুসলমানদের নির্মূলীকরণ নীতি নয়, ভারত থেকে মুসলমানদের শাসনামলের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও নাম-নিশানা মুছে ফেলার জন্য বিভিন্ন মসজিদ, স্থাপনা, নির্দশন ভেঙে হিন্দু নামে নামকরণ করা শুরু হয়। ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদ ভেঙে ফেলার পর নির্বাচনের আগে সেখানে ঘটা করে রামমন্দির উদ্বোধন করেন মোদী। উদ্দেশ্য, এই সেন্টিমেন্ট কাজে লাগিয়ে ভোটারদের মন জয় করা। বিস্ময়ের ব্যাপার, বাবরী মসজিদ যে আসনে ছিল, সে আসনে মোদীর প্রার্থী পরাজিত হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণাকালে মোদী মুসলমানদের সরাসরি আক্রমণ করে বিভিন্ন জনসভায় বক্তব্যও দেন। তার বিগত একদশকের শাসনামলে মুসলমানদের কীটপতঙ্গের সাথে তুলনা করা হয়। ‘উইপোকা’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। মুসলমানদের তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা বিলোপ ও সংকুচিত করা হয়। কোনো কোনো অঙ্গরাজ্যে মুসলমানদের জন্য বরাদ্দকৃত চাকরির কোটা তুলে দেয়া হয়। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সুযোগ প্রায় বন্ধ করে দেয়া হয়। বলা যায়, মোদীর একদশকের শাসনামলে মুসলমানদের এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে এবং হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, জোটবদ্ধ হয়ে মোদী নতুন সরকার গঠন করলেও ভারতকে তার স্বপ্নের ‘হিন্দু রাষ্ট্রে’ পরিণত করতে কী পদক্ষেপ নেন। যদিও ইতোমধ্যে তার জোটের অংশীদার তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) বলেছে, অন্ধ্র প্রদেশে মুসলমানদের জন্য শিক্ষা ও সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন করা হবে না। দলটি বলেছে, এর লক্ষ্য হচ্ছে, রাজ্যের মুসলমানদের দারিদ্র্যসীমা থেকে টেনে তোলা এবং সমাজের মূল ¯্রােতে নিয়ে আসা। অথচ বিজেপি মুসলমানদের সংরক্ষণের বিরোধী। সে এ প্রথা তুলে দেয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিজেপির অন্যতম জোটসঙ্গী টিডেপির এ অবস্থান নিশ্চিতভাবেই মোদীর মুসলমানবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে। অর্থাৎ নতুন সরকার গঠনের শুরুতেই বিজেপি তারই জোটসঙ্গীর কাছ থেকে একটি ধাক্কা খেল। আশা করা যায়, মোদীর মুসলমানমুক্ত ভারত গড়ার স্বপ্ন বিরোধীদলের কাছেও ধাক্কা খাবে।
তিন.
ভারতকে বরাবরই মনে করা হতো, অবাধ গণতন্ত্র চর্চার দেশ। তবে ২০১৪ সালে মোদী ক্ষমতায় আসার পর এ ধারণা বদলে যেতে থাকে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ফ্রিডম হাউসের হিসাবে, ২০১৪ সালে ভারতে বিবেচনা করা হতো মুক্ত দেশ হিসেবে। কারণ, দেশটিতে গণতন্ত্রের চর্চা ছিল অবাধ এবং নাগরিকে অধিকার ছিল শক্তিশালী। ২০২৪ সালে এসে বলা হচ্ছে, আংশিক মুক্ত এবং ত্রুটিপূর্ণ বা ফ্লড ডেমোক্রেসি। সুইডেনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভ্যারাইটিস অফ ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউট বা ভি-ডেম ২০১৮ সালে ভারতকে ‘ইলেকটোরাল অটোক্রেসি’ বা নির্বাচনের মধ্যে জেঁকে বসা স্বৈরতন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করে। ভারতকে সবচেয়ে ‘খারাপ স্বৈরাচারকরণকারী’ দেশগুলোর মধ্যে একটি বলে আখ্যায়িত করে। অর্থাৎ দশ বছরে ভারতের গণতন্ত্রের অবনমন ও নাগরিক অধিকার খর্ব এবং স্বৈরতান্ত্রিক করার প্রক্রিয়া চলেছে এবং তা করেছেন নরেন্দ্র মোদী। ভারতের ইতিহাসে এর আগে ১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধীর জারি করা জরুরি অবস্থাকে বলা হতো, গণতন্ত্রের অব্যাহত চর্চার ইতিহাসে একটি ‘কালো অধ্যায়’। মোদীর শাসন আমল সেই কালো অধ্যায়কেও ছাড়িয়ে গেছে। তৃতীয় দফায় যদি মোদী আবারও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করতেন, তাহলে ভারত একটি পুরোপুরি স্বৈরতান্ত্রিক দেশে পরিণত হতো বলে নির্বাচনের আগে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। এবারের নির্বাচনে মোদীর একচ্ছত্র ও কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থার প্রতি ভোটাররা সমর্থন দেয়নি। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটকে শক্তিশালী বিরোধীদল হিসেবে তারা দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। তবে এতে মোদীর স্বৈরশাসনের যে ইচ্ছা, তা রাতারাতি বদলে ফেলা না গেলেও, তার সে পথ কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্ত হবে। কারণ, মোদীর নতুন সরকার আগের তুলনায় একটি দুর্বল সরকারে পরিণত হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশটির জনগণের মধ্যে গণতন্ত্র নিয়ে আশাবাদের সঞ্চার হয়েছে। পাশাপাশি বিশ্বে যেসব গণতান্ত্রিক দেশ ‘স্বৈরাচারীকরণ’ ও ‘কর্তৃত্ববাদের’ মধ্যে রয়েছে, তাদের জন্য এটি একটি বার্তা। কারণ, গণতান্ত্রিক দেশের ধারায় আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে ভারত অন্যতম বড় দেশ। প্রশ্ন হচ্ছে, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত ভারতকে মোদী কেন, একটি স্বৈরতান্ত্রিক দেশে পরিণত করতে চেয়েছেন বা চাচ্ছেন? এর মূল কারণ হচ্ছে, ভারতকে একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার বিজেপি ও মোদীর ব্যক্তিগত আকাক্সক্ষা। ব্যক্তিগত জীবনেও মোদী কট্টর হিন্দুত্ববাদী। যে কারণে তিনি বলেছেন, তিনি ‘ঈশ্বর প্রেরিত’ মানুষ, তথা নিজেকে হিন্দুদের দেবতুল্য মনে করেন। প্রাত্যাহিক জীবনেও তিনি হিন্দুত্ববাদকে কঠোরভাবে মেনে চলেন। নিজেকে দেবতুল্য মনে করার কারণে ভেবেছিলেন, হিন্দুরা তাকে পূজা করে ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। আধুনিক যুগে এটা যে তার একধরনের অন্ধত্ব এবং পৌরানিক ধ্যানধারণা, একদশক পেরিয়ে ভারতের ভোটাররা তা ভেঙে দিয়েছে। বলা হয়ে থাকে, আমাদের দেশে ‘ইলেকটোরাল অটোক্রেসি’ কিংবা কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠায় ভারত তথা মোদীর শাসনামল জোরালো ভূমিকা পালন করেছে। মোদী সরকার কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠায় পরীক্ষাগার হিসেবে বাংলাদেশকে বেছে নিয়েছে। তারপর নিজ দেশে তা ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন শুরু করেছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র সংকুচিত করা, নামকাওয়াস্তে নির্বাচন করা, বিরোধীদলকে দমন-পীড়ন, হামলা-মামলা, গ্রেফতার, মানবাধিকার লঙ্ঘন, প্রশাসনযন্ত্রকে দলীয়করণ করা, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণে বল প্রয়োগ ও নিজের প্রচার মাধ্যমে পরিণত করা, আদালতকে প্রভাবিত করা, ভিন্নমত দমনে পীড়নমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে সবকিছু হাতের মুঠোয় নেয়ার মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী সরকার প্রতিষ্ঠার যেসব অভিযোগ, তার পেছনে ভারতের ভূমিকা রয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী শাসনের একটি মডেল দাঁড় করিয়ে মোদী ভারতেও তা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছেন। কিংবা নিজ দেশকে কর্তৃত্ববাদে পরিণত করার পাশাপাশি বাংলাদেশকেও সঙ্গী হিসেবে একই শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন, যাতে উপমহাদেশের একটি বৃহৎ অঞ্চল কর্তৃত্ববাদী শাসনের আওতায় থাকে। তবে মোদীর এ খায়েশ পূরণ হওয়ার ক্ষেত্রে এবারের নির্বাচন বড় ধরনের ছেদ টেনে দিয়েছে। এই ছেদ পড়া শুরু হয়েছে মালদ্বীপ থেকে। মালদ্বীপের নির্বাচনে ভারত সমর্থিত দলের শোচনীয় পরাজয় হয়। নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ভারতের কর্তৃত্ববাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এর মাধ্যমে মোদীর ‘নেইবারহুড ফার্স্ট’ বা ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতি ‘নেইবারহুড লস্ট’-এ পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে, মোদী নিজ দেশের জনগণের কাছ থেকেও একক সমর্থন পাননি। ফলে উপমহাদেশে ভারত এখন একটি ক্ষয়ীষ্ণু রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়া তার আধিপত্যবাদকে অন্য দেশগুলো পাত্তা দিচ্ছে না। ভারতকে তার কর্তৃত্ববাদী শাসন দিয়ে অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহারের যে প্রক্রিয়া মোদী অবলম্বন করেছেন, তা এখন বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়বে।
চার.
মোদীর কর্তৃত্ববাদ ও উগ্রহিন্দুত্ববাদ রাতারাতি বদলে যাবে, তা মনে করার কারণ নেই। তবে ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার তার যে স্বপ্ন, তা অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। মুসলমান নির্মূল করে ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার অভিলাষ পূরণ করা তার পক্ষে সহজ হবে না। এতে ভারতের মুসলমানরা খুব বেশি সুবিধা না পেলেও নির্মূলীকরণের তীব্রতা থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পেতে পারে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, ভারতে মোদীর কর্তৃত্ববাদ খর্ব হবে এবং গণতন্ত্র মূল ধারায় ফেরার পথ খুঁজে পাবে। মোদীর শারীরিক ভাষার দম্ভ ও অহংকারকে নিচে নামিয়ে আনবে। ভারতের এবারের নির্বাচনে ভোটারদের মনোভাব বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ভোটারদের উৎসাহী করবে এবং গণতন্ত্রের অবনমন ঠেকাতে প্রেরণাদায়ক হয়ে উঠবে। আমাদের দেশের জনগণকেও তা ভাবাতে সহায়তা করতে পারে। সরকারকেও সতর্ক হতে সহায়তা করবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
![পেসমেকার বসানোর পর কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে খালেদা জিয়াকে](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/khaleda-zia-20240624-172616717-20240624174531.jpg)
পেসমেকার বসানোর পর কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে খালেদা জিয়াকে
![ওয়ান ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিংসহ সব ধরণের সেবা দিয়ে সুনাম অর্জন করেছে](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/untitled-1-copy-20240624172631.jpg)
ওয়ান ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিংসহ সব ধরণের সেবা দিয়ে সুনাম অর্জন করেছে
![মারা গেছেন ৬০ জনের ফাঁসি কার্যকর করা জল্লাদ শাহজাহান](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/shajahan-20240624163107-20240624173142.jpg)
মারা গেছেন ৬০ জনের ফাঁসি কার্যকর করা জল্লাদ শাহজাহান
![আমিরাতে আওয়ামীলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে বক্তারা](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/img-20240624-wa0012-20240624172305.jpg)
আমিরাতে আওয়ামীলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে বক্তারা
![রাজবাড়ীতে ইউপি উপ-নির্বাচন নিয়ে বিরোধে আ.লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ-ভাংচুর , আহত ২০](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/common/-default.jpg)
রাজবাড়ীতে ইউপি উপ-নির্বাচন নিয়ে বিরোধে আ.লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ-ভাংচুর , আহত ২০
![ভারত-অস্ট্রেলিয়া মহারণে বৃষ্টির হুমকি](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/ind-f-20240624171225.jpg)
ভারত-অস্ট্রেলিয়া মহারণে বৃষ্টির হুমকি
![বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরিতে বিসিপিএসকে কার্যকরী ভূমিকা রাখার তাগিদ প্রেসিডেন্টের](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/image-142778-1719219982-1-copy-20240624171138.jpg)
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরিতে বিসিপিএসকে কার্যকরী ভূমিকা রাখার তাগিদ প্রেসিডেন্টের
![পদ্মা নদীতে তিন শিশুর সলীল সমাধি](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/image-142791-1719226276-1-copy-20240624170748.jpg)
পদ্মা নদীতে তিন শিশুর সলীল সমাধি
![বাংলাদেশের সামনে উজ্জীবিত আফগানিস্তান](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/bd-wicket-bcb-20240624164715.jpg)
বাংলাদেশের সামনে উজ্জীবিত আফগানিস্তান
![কুলাউড়ায় বন্যার পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/common/-default.jpg)
কুলাউড়ায় বন্যার পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
![বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের রেল যোগাযোগ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক উদ্বেগ](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/images-5-20240624163236.jpeg)
বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের রেল যোগাযোগ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক উদ্বেগ
![আইজেনহাওয়ারের পরিণতি দেখে রুজভেল্ট-ক্রুরা শিক্ষা নিন: ইয়েমেন](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/4c6e38a57b2e002iax9-800c450-20240624155331.jpg)
আইজেনহাওয়ারের পরিণতি দেখে রুজভেল্ট-ক্রুরা শিক্ষা নিন: ইয়েমেন
![‘যুদ্ধ শুরু হলে ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ৫ লাখ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়বে হিজবুল্লাহ’](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/4c6e19e1ba98e92iayl-800c450-20240624155244.jpg)
‘যুদ্ধ শুরু হলে ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ৫ লাখ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়বে হিজবুল্লাহ’
![ডানপন্থিদের সাফল্যে উদ্বেগ জার্মানিতে](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/untitled-1-copy-20240624154124.jpg)
ডানপন্থিদের সাফল্যে উদ্বেগ জার্মানিতে
![ডিমলায় বুড়ি তিস্তা নদীর বাঁধ ভেঙে ১০ গ্রাম প্লাবিত](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/1719221790288-20240624154018.jpg)
ডিমলায় বুড়ি তিস্তা নদীর বাঁধ ভেঙে ১০ গ্রাম প্লাবিত
![চৌদ্দগ্রামে পানিতে পড়ে আরও এক শিশুর মৃত্যু](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/common/-default.jpg)
চৌদ্দগ্রামে পানিতে পড়ে আরও এক শিশুর মৃত্যু
![আবারো ইসরাইল-সংশ্লিষ্ট দুটি জাহাজে হুথিদের হামলা](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/4c6ee0a13c19f22iaww-800c450-20240624152442.jpg)
আবারো ইসরাইল-সংশ্লিষ্ট দুটি জাহাজে হুথিদের হামলা
![সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে আলোচনা করবে সম্মত ইরান ও বাহরাইন](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/4c6e896525f2792iave-800c450-20240624152221.jpg)
সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে আলোচনা করবে সম্মত ইরান ও বাহরাইন
![মাদক ব্যবসায়ীর ছুরিকাঘাতে সরিষাবাড়িতে ভ্যান চালক ও তার স্ত্রী হাসপাতালে মৃত্যু শয্যায়](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/500-321-inqilab-white-20240624150232.jpg)
মাদক ব্যবসায়ীর ছুরিকাঘাতে সরিষাবাড়িতে ভ্যান চালক ও তার স্ত্রী হাসপাতালে মৃত্যু শয্যায়
![মঠবাড়িয়ায় পিক আপের চাপায় গৃহবধূ ও শিশুর মৃত্যু আহত ৪](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/500-321-inqilab-white-20240624145602.jpg)
মঠবাড়িয়ায় পিক আপের চাপায় গৃহবধূ ও শিশুর মৃত্যু আহত ৪