ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ইউরোপীয় ডিজাইন চলবে না

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৬ এএম

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ ও আকার্যকর করে দেয়ার জন্য শেখ হাসিনা ও তার প্রভূ মোদি যৌথভাবে নানামুখী ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করে যাচ্ছে। এসব ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত অন্তর্বর্তী সরকার সফলভাবে মোকাবেলা করার পর, এখন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের কৌশল নিয়েছে দেশে থাকা তার দোসর এবং একশ্রেণীর সুশীল ব্যক্তি। তারা এখন সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করে আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তনের কথা বলছে। এটা যে আমাদের দেশ বা এই অঞ্চলের দেশগুলোর গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের সাথে সাংঘর্ষিক, তা বলা বাহুল্য। আমাদের দেশে এমন বামপন্থী ও ইসলামি দল রয়েছে, যাদের প্রার্থীদের জামানত সবসময়ই বাজেয়াপ্ত হয়। তারা জাতীয় সংসদে আসন পাওয়া দূরে থাক, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও পাস করতে পারে না। এমন এক পরিস্থিতিতে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার দলকে পুনর্বাসনের জন্য কিছু সুশীল ও হাসিনামিডিয়া আনুপাতিক নির্বাচনের কথা তুলে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে আওয়ামী লীগের যদি এখন দশ শতাংশ ভোটও থাকে, তাহলে সে জাতীয় সংসদে ৩০টি আসন পাবে। মহিলা আসন পাবে ৫টি। এখন হাসিনাকে পুনর্বাসন ও ফিরিয়ে আনার জন্য ভারত তার এদেশীয় দোসর ও সুশীলদের দিয়ে এই নয়া কৌশল নিয়েছে। যা ছাত্র-জনতার বিপ্লবের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

ভারত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে, পুনরায় তাকে বাংলাদেশে পুনর্বাসন করার জন্য। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন সে নির্বাচনী পদ্ধতি পরিবর্তনকে বেছে নিয়েছে। এজন্য মাঠে নামিয়েছে তার ও হাসিনার প্রতি সহমর্মী কিছু সুশীল ব্যক্তিকে। তারা ভারত ও ইউরোপের নির্বাচন পদ্ধতিকে সামনে এনে বাংলাদেশেও তা প্রয়োগ করতে চায়। এটা যে স্পষ্টতই ষড়যন্ত্র এবং ভারতের স্বার্থে করা হচ্ছে, তাতে সন্দেহ নেই। দিল্লীর থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হাসিনাকে পুনর্বাসনের জন্য এ কৌশল মোদিকে বাতলে দিয়েছে। তারা চাচ্ছে, যেকোনো উপায়ে হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরার পথ প্রশস্থ করে দিতে। এ লক্ষ্যে, সুশীলদের দিয়ে সভা-সেমিনার করে এবং হাসিনামিডিয়ার মাধ্যমে তা জনগণের সামনে তুলে ধরে জনমত সৃষ্টির কূটকৌশল শুরু করেছে। দুঃখের বিষয়, তাদের পাতা এই ফাঁদে পা দিয়েছে জামায়েতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি ও কিছু ইসলামী দল। তারা এটা বুঝতে পারছে না, এতে তাদের কোনো লাভ হবে না। লাভ হবে শেখ হাসিনার। অথচ, গণবিপ্লব হয়েছে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়ে তার ও তার দলের বিচার করার জন্য। এ বিচারকে পাশ কাটিয়ে এখন নির্বাচন কীভাবে হবে, সুশীলদের দেয়া ফর্মুলার সাথে তাল মেলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে এসব রাজনৈতিক দল। বিএনপি স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছে, ভোটের আনুপাতিক হারে নির্বাচন পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, বাংলাদেশে নির্বাচন পদ্ধতি একটি মীমাংসিত বিষয়। বিদ্যমান পদ্ধতি সার্বজনীন। এ পদ্ধতিতে জাতীয়সহ সব নির্বাচনে ভোটাররা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে। আনুপাতিক হারে হলে, তাদের ভোটের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়ে পড়বে। আনুপাতিক নির্বাচন একটি ‘ব্রেকেটবন্দি’ পদ্ধতি, যেখানে ভোট দেয়ার উন্মুক্ত সুযোগ কম। সুশীল শ্রেণী ইউরোপের ভোটের ডিজাইন বা প্রক্রিয়া উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে এর পক্ষে এখন সরব হয়েছে। ইউরোপের গণতন্ত্র ও ভোটের প্রক্রিয়া শত বছরের পুরনো। সেখানে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। তার সাথে আমাদের তুলনা চলে না। প্রত্যেক দেশেরই রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও জনগণের চরিত্র ভিন্ন। এ নিয়ে প্রত্যেক দেশের সাথে প্রত্যেক দেশের পার্থক্য রয়েছে। আমাদের দেশে উন্মুক্ত পরিবেশে নির্বাচন হয়ে থাকে। ঐতিহ্যগতভাবে ভোটাররা স্বাধীনভাবে যাকে খুশি তাকে ভোট দিয়ে থাকে। তাদের এই অধিকার কেড়ে নেয়ার জন্য হাসিনা ও ভারত সমর্থক কিছু সুশীল উঠেপড়ে লেগেছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার কমিশন গঠন করেছে। এ ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে সংবিধান সংশোধনেরও প্রয়োজন হতে পারে। সংবিধান সংশোধন, না পুনর্লিখন এ নিয়ে ইতোমধ্যে বিতর্ক উঠেছে। সংবিধান সংস্কারের জন্যও একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে, যার প্রধান অধ্যাপক আলী রিয়াজ, যিনি একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের নাগরিক। তাকে কমিশনের প্রধান করা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে মনে করছেন, কমিশন বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থা পরিবর্তন করে আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারে, যা হবে দেশের মানুষের সাথে বেইমানি। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন ও সতর্ক হতে হবে এবং কোনোভাবেই আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির মধ্যে যাওয়া যাবে না।

যেসব সুশীল ব্যক্তি আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি করা নিয়ে মাঠে নেমেছেন, তারা মূলত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে রক্ষা করার জন্য সুস্পষ্ট মিশন নিয়ে নেমেছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা যখন সাড়ে ১৫ বছরে দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে, তখন তারা কোথায় ছিল? হাসিনার ফ্যাসিজম ও ভুয়া ভোট নিয়ে তো তাদের কথা বলতে দেখা যায়নি। কোনো সভা-সেমিনার করে সরব হতেও দেখা যায়নি। এখন কেন নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন নিয়ে তাদের এত উৎসাহ? উদ্দেশ্য পরিষ্কার, পতিত স্বৈরাচারকে পুনর্বাসন করা। তারা রীতিমত পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে। তাদের উচিত ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসা। বিদ্যমান নির্বাচন পদ্ধতির মাধ্যমে কীভাবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করা যায়, তা নিয়ে তারা সভা-সেমিনার করুক। তাতে দেশ ও সরকারে উপকার হবে। তাদের মনে রাখতে হবে, জাগ্রত ছাত্র-জনতা ইঙ্গ-মার্কিন কোনো ফর্মুলাই কখনো বাস্তবায়ন হতে দেবে না। জামায়েতে ইসলামীসহ যারা আনুপাতিক নির্বাচন নিয়ে অতিউৎসাহ দেখাচ্ছে, তাদেরকেও এ ব্যাপারে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। নির্বাচন পদ্ধতি কেমন হবে এবং তার চিন্তাভাবনা কী, অন্তর্বর্তী সরকারকে এখনই তা পরিষ্কার করে জনগণকে বলতে হবে। নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সরকারকে বিএনপিসহ অন্যান্য জনভিত্তিসম্পন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাংলাদেশে ভারতীয় কিংবা অন্য কোনো দেশীয় কোনো ডিজাইন কিংবা প্রেসক্রিপশনের নির্বাচন চলবে না। সরকারকে মনে রাখতে হবে, বিদ্যমান ব্যবস্থায় থেকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কীভাবে নিশ্চিত করা যায় এবং তা করে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা তার দায়িত্ব।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

স্মৃতির দর্পণে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী
ডিকার্বনাইজেশনে আরো জোর দিতে হবে
ঐক্য ও সংহতি অটুট রাখতে হবে
আগামীর বাংলাদেশের স্বপ্ন
ইস্পাত কঠিন জাতীয় ঐক্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভারসাম্য জরুরি
আরও

আরও পড়ুন

প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া

প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া

জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল

জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল

মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল

মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল

"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"

"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"

ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল

ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল

নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা

নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা

আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি

আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি

দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন

দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন

'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'

'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

দেশের বাজারে ফের বাড়ল সোনার দাম

দেশের বাজারে ফের বাড়ল সোনার দাম

সবচেয়ে কম মূল্যে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিচ্ছে নেপাল: নেপাল রাষ্ট্রদূত

সবচেয়ে কম মূল্যে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিচ্ছে নেপাল: নেপাল রাষ্ট্রদূত

আগামী নির্বাচন নিয়ে দিল্লি ভয়ংকর পরিকল্পনা করছে: যুক্তরাষ্ট্র জাগপা

আগামী নির্বাচন নিয়ে দিল্লি ভয়ংকর পরিকল্পনা করছে: যুক্তরাষ্ট্র জাগপা