ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার বিপ্লবী না হলে সফলতা আসবে না

Daily Inqilab সৈয়দ ইবনে রহমত

২১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৩ এএম

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার একের পর এক সমস্যা আর সংকটের মধ্য দিয়েই দিন পার করছে। একটা সংকট পার করতে না করতেই আরেকটা এসে হাজির হচ্ছে। কখনো কখনো একাধিক সংকট একত্রিত হয়ে পিশাচের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে নিঃশব্দে সরকার এবং রাষ্ট্রের গলা টিপে ধরতে চাইছে। পতিত স্বৈরাচারের দোসর সকল অপশক্তি সরকারকে ব্যর্থ করে দিয়ে প্রমাণ করতে চাইছে, ‘আগেই ভালো ছিল’। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও গত সাড়ে ১৫ বছরে তার অন্দর মহলে লালিত-পালিত অপশক্তি রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পূর্ণমাত্রায় ক্রিয়াশীল রয়ে গেছে। প্রশাসনের পরতে পরতে তারা আছে বহাল তবিয়তে। দাপটের সঙ্গেই ছড়ি ঘুরাচ্ছে সর্বত্র। সরকারের উপদেষ্টাদের কথা এবং কাজে সহযোগিতা দূরের কথা, ধরি মাছ না ছুঁই পানির মতো সময় পার করছে তারা। সুযোগ পেলে পেছন থেকে টেনে ধরছে। বিষয়টি আঁচ করতে পেরেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বলেছেন, ‘স্বৈরাচার সরকারের সুবিধাভোগীরা ঘরে-বাইরে, প্রশাসনে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে চায়। প্রশাসন থেকে ষড়যন্ত্রের বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলতে না পারলে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের অর্জন বিপন্ন হবে।’

তারেক রহমানের এই মন্তব্য যে কতটা বাস্তবসম্মত এবং দূরদর্শী সেটার প্রমাণ পাওয়া যায় পরের দিন শনিবার শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার মন্তব্য থেকে। চট্টগ্রাম নগরীর সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ এবং সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগ এবং জেলা দফতরসমূহের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় কালে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটা বিপ্লব হয়েছে। বিপ্লবের পরে কোনকিছু আগের সিস্টেমে চলে না, কিন্তু আমরা এখনো সিস্টেম ধরে রেখেছি। প্রশাসনের কারো কারো অসহযোগিতার কারণে দেশে স্থবিরতার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে, সিস্টেম ভাঙার প্রয়োজন হলে সিস্টেম ভাঙা হবে, প্রয়োজন দেখা দিলে প্রশাসনে অসহযোগীদের স্থলে নতুন নিয়োগ নিয়েও সরকার ভাববে।’ শুধু যে স্বৈরাচারের দোসররাই অসহযোগিতা করছে বিষয়টি তা নয়, বরং নানা শ্রেণিপেশার সুযোগসন্ধানীরাও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যখন যে যেভাবে পারছে, সে তার সুযোগ নিচ্ছে। অন্যদিকে বিরাট অজগরের মতো হা করে বিষাক্ত নিঃশ্বাস ছাড়ছে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি। কূটনীতির ভাষায় মিষ্টি-মধুর বাণী শোনালেও তাদের অন্তরের হিংসা-ক্ষোভ আগ্নেয়গিরির গলিত লাভার মতো মাঝে মধ্যেই বেরিয়ে আসছে দেশটির ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন নেতার মুখ দিয়ে।

সহস্ত্রাধিক ছাত্র-জনতা জীবন উৎসর্গ করে একটি দানবীয় সরকারের পতন ঘটিয়েছে। আরো হাজার হাজার মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছে, দৃষ্টি হারিয়েছে, পঙ্গু হয়ে এখনো মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে হাসপাতালের বিছানায়। এত ত্যাগ, এত বিসর্জন দিয়ে এদেশের মানুষ যে সরকারকে ক্ষমতায় নিয়ে এলো, সেই সরকারের কিছু কিছু কাজ বা উদ্যোগ মানুষকে হতাশ করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারের অতিসক্রিয়তা, কোথাও আবার অতিনির্লিপ্ততা জনগণের মনের জোর যেন কমিয়ে দিতে চাইছে। আর এর সুযোগ লুফে নিতে চাইছে পতিত স্বৈরাচারের দোসররা। যদিও দেশের মানুষ মনে-প্রাণে চাইছে, এই সরকার যেন কোনোভাবেই ব্যর্থ না হয়, বরং শত বাধা ডিঙ্গিয়ে সফলতার সিঁড়ি বেয়ে নতুন প্রভাতের আলো আসুক তাদের হাত ধরেই। কেননা, এই সরকারের ব্যর্থতা মানেই দেশের ব্যর্থতা, বিপ্লবী ছাত্র-জনতার ব্যর্থতা। তাই, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সরকারও চেষ্টা করছে, বিশেষ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রচেষ্টার কোনো কমতি যে নেই, তা বুঝা যায় তার প্রতিটি পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে। কিন্তু একার শক্তিতে তো একটি সরকারকে সফল করা যায় না, সরকারে থাকা অন্যদের মধ্যেও যদি না সেই উদ্যোম থাকে।

সর্বশেষ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নিয়ে যে সংকট ঘনীভূত হয়েছে, সেটি কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। কেননা, দুই মাসের বেশি সময় ধরে একটা একটা সংকট কীভাবে তৈরি হচ্ছে এবং সেগুলোর মোকাবিলার প্রক্রিয়ার একটা ধারাবাহিকতা কিন্তু এখানেও ছিল। এটাকে তাই আগে থেকেই নিরসনে যথাযথ গুরুত্ব দিলে শেষের অবস্থাটা হয়তো দেখতে হতো না। ওইদিকে আবার নতুন করে মাঠে নেমেছে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিভিন্ন দায়িত্ব পালনকারীরা। এমন সংকট সামনে আরো আসবে, শুধু আসবে না আরো শক্তিশালী হয়েই আসবে। তার প্রমাণ পাওয়া যায়, হাজার হাজার গুম-খুনের দায়ে পলাতক ফ্যাস্টিদের পক্ষে আদালত প্রাঙ্গণে স্লোগান, মধ্য রাতে বন্দরনগরীর কেন্দ্রবিন্দুতে সশস্ত্র ছাত্রলীগ কর্মীদের ঝটিকা মিছিল থেকে। দেশের বাইরে থেকেও যে আরো প্রবল শক্তির ইন্ধন ক্রমেই বাড়তে থাকবে, সেটারও প্রমাণ পাওয়া যায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীনদের পক্ষের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিতদের নানা বিশ্লেষণ থেকে। এদেশের মানুষ স্বাধীনচিত্তে একটি মুহূর্তের জন্যও নিশ্চিন্তে থাকুক, এটা তারা কোনোভাবেই মানতে পারছে না। এটা যেমন আগেও তারা মানতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। সে কারণেই তারা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া সকল ফ্যাসিস্টকে বেআইনিভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে সংঘটিত করছে। দেশের ভেতরে থাকা দোসরদেরও নানাভাবে উসকানি দিয়ে সংঘটিত করছে।

হিন্দুদের দুর্গাপূজা নির্বিঘেœ সম্পন্ন হলেও তারা হাল ছাড়েনি, যেকোনো প্রকারে হিন্দু বা অন্য কোনো গোষ্ঠিকে উসকে দেয়ার ধারাবাহিক চেষ্টা-তদ্বির চলছে। সারাদেশে বৌদ্ধরা তাদের প্রবারণা ও কঠিন চিবরদান পালন করলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তাহীনতার অজুহাতে কঠিন চিবরদান না করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে সেখানকার কতিপয় বৌদ্ধ সাধু। পাহাড়ে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ঘটনা ঘটেছে তার প্রত্যেকটির সূচনা করেছে অবাঙালি তথা বৌদ্ধ জনগোষ্ঠির কিছু চিহ্নিত মানুষ, সেখানকার অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের পরিকল্পনা এবং ইন্ধনে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাঁধানো হয়েছে। আর সেই অজুহাতে কতিপয় বৌদ্ধ সাধু ঘোষণা করেছেন, নিরাপত্তাহীনতার কারণে তারা এবার কঠিন চিবরদানোৎসব করবেন না। অথচ, এসব ঘটনার জন্য যারা দায়ী তাদের ব্যাপারে তারা নিরব। অন্যদিকে বৌদ্ধ সাধুরা ঘোষণা দেয়ার আগেই এটাকে নিজেদের বিজয় বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উল্লাস করতে দেখা গেছে সেই সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকদেরই? তাই, এর পেছনে কারা আছে, সে ব্যাপারে ধারণা করা কঠিন কোনো কিছু না। ত্রিপুরা, মিজোরাম, আসাম, পশ্চিমঙ্গ এবং দিল্লিতে এসব নিয়ে ঘোঁট পাকানো হচ্ছে, সেটাও কারো অজানা নয়। সারা দেশের ৬১টি জেলা পরিষদ একটি মাত্র ঘোষণাতেই বদল করা সম্ভব হলেও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ নিয়ে কেন ঝটিলতা সৃষ্টি হলো সেটাও ভাবতে হবে।

সরকারের সামনে আরেকটি বড় সমস্যা হলো নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির লাগামহীনতা। হঠাৎ করেই ডিমের দাম বাড়ে, সবজির দাম বাড়ে, মুরগির দাম বাড়ে, শাকের আঁটি ৪০-৫০ টাকা, কাঁচা মরিচ স্থানভেদে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি হয়ে যায়। কষ্ট করে সবজি ফলিয়ে কৃষক যেখানে পায় ২০ টাকা, সেই সবজিই ভোক্তাকে কিনে খেতে হয় ১২০ টাকা দরে! সবখানেই যেন তেলেসমাতি কারবার। দেশে ৪ কোটির বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এমনিতেই তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়, তার উপর যদি খাদ্যপণ্যের দাম এভাবে বাড়তে থাকে তাহলে তাদের আর বাঁচার উপায় থাকে না। বাস্তবতা এমন হয়ে দাঁড়ায় যে, শুধু নি¤œ আয়ের মানুষ নয়, এতদিন যারা মোটামুটি চলনসই ছিলেন তাদের অবস্থাও শোচনীয় হয়ে উঠে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলতে বাধ্য হতে হয়েছেন যে, ‘সরকার পরিস্থিতির উন্নয়নে কঠোর পরিশ্রম করছে এবং সম্মিলিত পদক্ষেপ নিচ্ছে। সিন্ডিকেট অত্যন্ত শক্তিশালী। আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমার খুব খারাপ লাগছে। এটা আমাদের জন্য অসহনীয়। আমরা কঠোর পরিশ্রম করছি। আমরা একসঙ্গে কাজ করছি।’

কিন্তু ক্ষমা চাইলেই কি পাওয়া সম্ভব? লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণে যারা তাদের প্রয়োজনীয় মাছ-গোশত, শাক-সবজি বা অন্য কোনো খাদ্যপণ্য কেনার সামর্থ্য হারিয়েছে, খেয়ে না খেয়ে কিংবা আধাপেটা দিন কাটাচ্ছে তাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার কি কোনো সুযোগ আছে? নাকি তাদের পক্ষে ক্ষমা করা সম্ভব? আগেও সিন্ডিকেট ছিল, এখনো আছে। তবে আগে রাস্তায় রাস্তায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি ছিল, কিন্তু এখন তো সেটা নেই। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠামাত্রই তাদের দল থেকে বহিষ্কার করে মানুষের আস্থা ধরে রেখেছে বিএনপি। কিন্তু তারপরও পণ্যের দাম কমছে না কেন, উল্টো বাড়ছেই-বা কোন যুক্তিতে? সিন্ডিকেটকে দায়ী করেই কি সবকিছুর দায় এড়ানো সম্ভব? সিন্ডিকেট কি রাষ্ট্র এবং সরকারের চেয়েও বড়? আর দেশে যে সিন্ডিকেট আছে, সেটা তো নতুন কোনো কথা না। বরং ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী সরকারকেও ডুবিয়েছিল এই সিন্ডিকেট। এ সরকারও যদি সেই সিন্ডিকেটের হাতেই অসহায় হয় তাহলে জনগণ ভরসা পাবে কোথায় ও কীভাবে? দেশের মানুষ চায় দৃঢ়তার সাথে সিন্ডিকেটের মোকাবিলা করা হোক, সম্ভব না হলে মানুষের কাছে সাহায্য চাওয়া হোক। মানুষ যেভাবে ফ্যাসিস্টকে বিদায় করেছে, তাদের সেই স্পৃহাকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে সিন্ডিকেট ভাঙ্গাও অসম্ভব হবে না।

২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সংকট ও সম্ভাবনার গভীরতা বুঝতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছি। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে সেই সময়কার পত্রিকা ঘাঁটতে গিয়ে দৈনিক সংবাদের একটি সম্পাদকীয়তে দৃষ্টি আটকে যায়। ওই বছরের ৯ নভেম্বর প্রকাশিত পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদকীয়ের শিরোনাম ছিল, ‘কোন্টা আসল সমস্যা?’ সম্পাদকীয়টি লেখা হয়েছে একই পত্রিকায় ৫ নভেম্বর প্রকাশিত দুটি খবরের উপর ভিত্তি করে। তার মধ্যে প্রথমটির শিরোনাম ছিল, ‘চাল নয় এখন তরিতরকারি কেনাই সমস্যা’। আর দ্বিতীয় খবরটির শিরোনাম, ‘ধান-চালের দাম কম, লবণ-সাবান ইত্যাদির দাম চড়া’। আজকের সমস্যা আর সেদিনের সমস্যার মধ্যে কোনো সম্পর্ক কি দেখা যাচ্ছে? মোটাদাগে সমস্যা ও সংকটের ধরন কিন্তু একই। বাস্তবতা সব সময়ই যেন প্রায় একই ধারাবাহিকতায় গাথা। কৃষক হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যা উৎপাদন করে, সে তার ন্যায্য মূল্য পায় না, আবার দরিদ্র মানুষ তার নিত্যপ্রয়োজনে যা কিনতে যায় তার জন্য আকাশ ছোঁয়া দাম দিতে হয়। আর সব সময় সব সমাজে মজা লোটে মধ্যস্বত্বভোগী, ধনিক শ্রেণি। সময় বদলায়, সরকার বদলায়, কিন্তু সংকটের রঙ এবং ধরন একই থাকে। এখনো তাই আছে।

এই পরিণতির জন্য তো বিপ্লব হয়নি। একই সংকটের আবর্তে ঘুরপাক খাওয়ার জন্য হাজার হাজার মানুষ জীবন উৎসর্গ করেনি। এখনো যারা দৃষ্টিহীন, অঙ্গহীন হয়ে কাতরাচ্ছেন তারা তো এই সরকারের ব্যর্থ দেখার জন্য তাদের সর্বস্ব ত্যাগ করেননি। তাহলে তাদের ত্যাগের বিনিময়ে যারা আজ ক্ষমতাসীন আছেন তাদের ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ কোথায়? তার উপর বিশ্ববরেণ্য এবং অদম্য কর্মস্পৃহাসম্পন্ন ড. ইউনূসের মতো একজন মানুষের নেতৃত্বের সরকারের সামনে ব্যর্থতার চিন্তা করারও তো অবকাশ নেই। বিশেষ করে, যখন দেশের ভেতরে তার রয়েছে দল-মত নির্বিশেষে একচেটিয়া গ্রহণযোগ্যতা, অন্যদিকে ভারত আর ইসরাইল ছাড়া সারাবিশ্বও তার সফলতার পথে সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে রেখেছে। সারাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসীরা তার ডাকে সাড়া দিয়ে বৈধ পথে বিপুল অংকের রেমিট্যান্স পাঠিয়ে রিজার্ভের পতন ঠেকিয়ে দিয়েছে। প্রবাসীরা যে শুধু রিজার্ভের পতন ঠেকিয়েছে তাই নয়, বরং তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স থেকে বিপুল অংকের বিদেশি ঋণের কিস্তিও পরিশোধ করা সম্ভব হয়েছে। চারদিক থেকে এত সহযোগিতার পরও যদি সরকারের দুর্বলতা প্রকাশ পায়, প্রশাসন যদি তাদের গণায় ধরতে না চায় এবং তার জন্য যদি জনগণকে ভুক্তভোগী হতে হয় তাহলে এর দায় কার?

দায় সরকারকেই নিতে হবে। তার জড়তা ঝেড়ে ফেলতে হবে। দরকার হলে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের পারফর্মেন্স পর্যালোচনা করে, পুনর্গঠনের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কেননা, এই সরকার ছাত্র-জনতার বিপ্লবের ফসল। তাই সফল হতে হলে সরকারকেও বিপ্লবী রূপ ধারণ করতে হবে। তারপর প্রশাসনে ছড়িয়ে থাকা ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের উপড়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে নতুন নিয়োগের মাধ্যমে বিপ্লবের স্পিরিট ছড়িয়ে দিতে হবে প্রশাসনের সর্বত্র। এক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়া চলবে না। বিপ্লবের সফলতার স্বার্থে, ১৭ কোটি মানুষের ভাগ্য বদলানোর স্বার্থে যত কঠিনই হোক, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে দৃঢ়তার সাথে।

[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

স্মৃতির দর্পণে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী
ডিকার্বনাইজেশনে আরো জোর দিতে হবে
ঐক্য ও সংহতি অটুট রাখতে হবে
আগামীর বাংলাদেশের স্বপ্ন
ইস্পাত কঠিন জাতীয় ঐক্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভারসাম্য জরুরি
আরও

আরও পড়ুন

এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার

এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার

প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া

প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া

জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল

জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল

মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল

মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল

"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"

"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"

ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল

ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল

নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা

নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা

আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি

আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি

দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন

দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন

'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'

'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

দেশের বাজারে ফের বাড়ল সোনার দাম

দেশের বাজারে ফের বাড়ল সোনার দাম

সবচেয়ে কম মূল্যে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিচ্ছে নেপাল: নেপাল রাষ্ট্রদূত

সবচেয়ে কম মূল্যে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিচ্ছে নেপাল: নেপাল রাষ্ট্রদূত