স্বৈরাচারের দোসরদের হটাতে হবে
২১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব বিপ্লবে দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে। সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান হয়েছে। স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে। স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তার দোসররা এখনো প্রশাসনে, পুলিশে, সশস্ত্র বাহিনীতে, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে। তারা নানা রকম ষড়যন্ত্র করছে অন্তর্বর্তী সরকারেকে বেকাদায় ফেলতে। তারা সরকারের নির্দেশনা প্রতিপালনে গড়িমাসি ও অসহযোগিতা করছে, যাতে সরকার ব্যর্থ হয়। বৈপ্লবিক তৎপরতার মাধ্যমে কোনো দেশে পরিবর্তন ঘটলে বিপ্লবী সরকার পতিত সরকারের প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করে। সর্বত্র খোলনলচে পাল্টে ফেলে। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর প্রতিষ্ঠিত আমাদের অন্তর্বর্তী সরকার বিপ্লবী সরকারের আচরণ দেখাতে পারে নি। সব কিছু প্রায় আগের মতোই আছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখন যেসব নিয়োগ হচ্ছে, তার অধিকাংশই পতিত স্বৈরাচারের অনুগামী-অনুসারী। এমতাবস্থায়, ঘরে-বাইরে প্রশাসনে পতিত স্বৈরাচারের দোসররা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। তারা তাদের অবস্থানকে স্পষ্ট করছে সরকারকে অসহযোগিতা করে, নানাভাবে ঘোঁটি পাকিয়ে কিংবা চক্রান্ত করে। তাদের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের বিষবৃক্ষ উৎপাটন করতে না পারলে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের আকাক্সক্ষা ও অর্জন নিরাপদ হবে না। দ্বিতীয় স্বাধীনতার লক্ষ্য ও প্রত্যাশা অপূর্ণ থেকে যাবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। তাকে অবশ্যই সফল করে তুলতে হবে। সরকারের সফলতার প্রধান শর্ত প্রশাসনসহ সকল ক্ষেত্র ও পর্যায় থেকে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের বিদায় করে দেয়া এবং তাদের অনুপ্রবেশের ছিদ্রপথ সম্পূর্ণ বন্ধ করা। অন্তর্বর্তী সরকারের এখনো তিন মাস পূর্ণ হয়নি। এ সময়ে আমাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা সন্তোষজনক নয়। জনপ্রশাসন ঠিক মতো কাজ করছে না। ডিসি নিয়োগে বিতর্ক রয়েছে। নিয়োগ প্রাপ্ত ডিসিরা দায়িত্ব পালনে তেমন গরজ দেখাচ্ছে না। পুলিশ একটা ট্রমায় আক্রান্ত। স্বৈরাচারের ঠ্যাঙ্গাড়ে বাহিনী হিসাবে পুলিশের অখ্যাতি ও ক্ষতি হয়েছে অপূরণীয়। এখনো পুলিশের কিছু সদস্য পলাতক, নির্দেশ দেয়ার পরও তারা কাজে ফেরেনি। যারা কাজে আছে, তারাও ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছে না। গত পরশু চট্টগ্রামে পতিত স্বৈরাচারের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ক্যাডাররা সশস্ত্র মিছিল করেছে। অথচ, পুলিশ রহস্যজনকভাবে নিরব থেকেছে।
প্রশাসন যদি দায়িত্বে অবহেলা করে, পুলিশ যদি অসহযোগিতা করে তাহলে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া বিকল্প নেই। দায়িত্বে অবহেলাকারী, অসহযোগিতাকারী ও চক্রান্তকারী স্বৈরাচারের দোসরদের বিরুদ্ধে ড্রাস্টিক অ্যাকশনে যেতে হবে। এ প্রসঙ্গে আমরা বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুইয়াকে। তিনি অন্যন্ত সময়োপযোগী ও যৌক্তিক একটি অভিমত দিয়েছেন। বলেছেন, ‘আমাদের দেশে একটি বিপ্লব হয়েছে। বিপ্লবের পর কোনো কিছু আগের সিস্টেমে চলে না। কিন্তু আমরা এখনো সিস্টেম ধরে রেখেছি। প্রশাসনের কারো কারো অসহযোগিতার কারণে দেশে স্থবিরতার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে, সিস্টেম ভাঙ্গার প্রয়োজন হলে সিস্টেম ভাঙ্গা হবে। প্রয়োজন দেখা দিলে প্রশাসনে অসহযোগীদের স্থলে নতুন নিয়োগ নিয়ে ভাববে সরকার।’ এখানে বলা জরুরি যে, পতিত স্বৈরাচার তার ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্যে প্রশাসন থেকে শুরু করে কোথাও কোনো সিস্টেম অক্ষত ও অক্ষুণœ রাখেনি। সবকিছু ভেঙ্গেচুরে তছনছ করে দিয়েছে। কোনো ক্ষেত্রেই সিস্টেম কার্যকরযোগ্য নেই। কাজেই সিস্টেম পুনর্গঠন ও নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। অসহযোগিদের স্থলে নতুন নিয়োগের কথা সরকারকে ভাবতে হবে। সুষ্ঠুভাবে কাজ চালাতে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলোতে নতুন নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের দেশে শিক্ষিত, মেধাসম্পন্ন ও অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ লোকের অভাব নেই। অবসরে যাওয়া অনেক কর্মকর্তাও রয়েছে, যাদের পুনর্নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। বেসরকারি খাতে এমন বহু লোক কর্মরত রয়েছে, যারা সরকারের বিভিন্ন বিভাগ, দফতর ও প্রতিষ্ঠানে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারে। প্রবাসেও রয়েছে এমন অনেক বাংলাদেশি, যাদের ডেকে আনা যেতে পারে। দেশ ও গণবৈরী স্বৈরাচারের দোসরদের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত নস্যাত করে দেশকে গতিশীল, উন্নত ও সমৃদ্ধ করার গণপ্রত্যাশা বাস্তবায়নে যা দরকার, সেটা করতে পিছপা হলে চলবে না।
অস্বীকার করা যাবে না, অন্তর্বর্তী সরকারের সব উপদেষ্টা এক রকম নন। তাদের সবার পারফরমেন্সও সমান নয়। কারো কারো মধ্যে দ্বিধা, কাজের অনভিজ্ঞতা আছে, কমিটমেন্টের ঘাটতি আছে। কারো কারো বিরুদ্ধে পতিত স্বৈরাচারের হয়ে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা উপদেষ্টাদের মধ্যে সর্বজ্যেষ্ঠ হলেও তিনিই সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ও কমিটেডেট। বিপ্লবের মর্মবাণী তিনি যতটা ধারণ করতে পেরেছেন আর কেউ পেরেছেন বলে মনে হয় না। দুই তরুণ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া কথা ও কাজের মধ্যদিয়ে তাদের বিরল যোগ্যতা ও সক্ষমতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমও দেশের মানুষের প্রশংসাধন্য হয়েছেন তার কাজের জন্য। অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিনের কথাও এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। ব্যাংকসহ আর্থিক খাত সবচেয়ে ভঙ্গুর অবস্থায় ছিল, এটা কারো অজানা নেই। তিনি ব্যাংককে গণআস্থায় আনতে অনেকটাই সফল হয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এক্ষেত্রে উদ্দীপক ভূমিকা রেখেছেন। রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বেড়েছে এ সময়। রিজার্ভ স্থিতিশীল হয়েছে। দেনা পরিশোধও সম্ভবপর হয়েছে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের বিভিন্ন নিয়োগের ক্ষেত্রে সমালোচনা থাকলেও উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগ, পতিত স্বৈরাচারের সহযোগী বিচারপতিদের সরিয়ে দেয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে তার ভূমিকা প্রশংসা পেয়েছে। ইতোমধ্যে সর্বোচ্চ আদালত বিচারপতিদের অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহালের রায় দিয়েছেন। তবে, অধিকাংশ উপদেষ্টার পারফরমেন্স নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে। জনপ্রশাসন উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বিভিন্ন কাজ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। জনপ্রশাসন এখনো ঠিক না হওয়া উপদেষ্টার ব্যর্থতা চিহ্নিত করে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এখনো পুলিশকে পূর্ণ কার্যকর করতে পারেননি। পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের অনেকে উচ্চপদে পদায়িত হয়েছে। ছাত্রলীগের ৬২ এএসপির নিয়োগ পাওয়া এবং তাদের সমাপনী কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি হওয়ার দাওয়াত কবুল করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নতুন করে বিতর্কিত হয়েছেন। আরেকটি বিষয়ও এখানে বলা আবশ্যক। পদত্যাগকারী পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সুপারিশকৃত ৪৩তম বিসিএসের ২০৬৪ জন কর্মকর্তার নিয়োগ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইতোমধ্যে এ নিয়োগ বাতিলের দাবি উঠেছে, দাবি উঠেছে ৪৪, ৪৫ ও ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষার সকল প্রক্রিয়া বাতিল করার। এসব দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক। পতিত স্বৈরাচারের আমলে বিসিএস-এ অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দলপ্রীতি ইত্যাদি হয়েছে। সেই সরকারের ফেলে যাওয়া কাজ সম্পন্ন করার তাকিদ কীভাবে অন্তর্বর্তী সরকার অনুভব করতে পারে? অন্তর্বর্তী সরকারের সকল সিদ্ধান্ত ও কাজ যথাযথ ও সঠিক হবে, এটাই জনগণের একান্ত প্রত্যাশা।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া
জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল
মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন
'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
দেশের বাজারে ফের বাড়ল সোনার দাম
সবচেয়ে কম মূল্যে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিচ্ছে নেপাল: নেপাল রাষ্ট্রদূত
আগামী নির্বাচন নিয়ে দিল্লি ভয়ংকর পরিকল্পনা করছে: যুক্তরাষ্ট্র জাগপা