ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মহাসড়ক অবরোধ কেন?

Daily Inqilab ইনকিলাব

১২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম

দেশ কি মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে? না হলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত মহাসড়কে গার্মেন্ট শ্রমিকরা একটানা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে কীভাবে? এরপরও শ্রমিকরা অবরোধ প্রত্যাহার করেনি। জানিয়ে দিয়েছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে। অবস্থাদৃষ্টে প্রশ্ন উঠতে পারে, দেশে কি কোনো সরকার নেই? বলা বাহুল্য, সরকার আছে বটে, তবে এদিকে তার খেয়াল আছে বলে মনে হয় না। খেয়াল থাকলে অনেক আগেই উদ্ভূত পরিস্থিতির অবসান ঘটতো। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর মোতাবেক, গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকার টিএনজেড অ্যাপারেল নামের কারখানার শ্রমিকরা তিন মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ শুরু করে গত শনিবার সাড়ে ৯টা থেকে। এরপর ৪৮ ঘণ্টা পার হওয়ার পরও তাদের অবরোধ অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে ওই এলাকার ৩০টি গার্মেন্ট কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঘটনাপ্রবাহ তিল থেকে তালের দিকে ধাবমান, এটা বুঝা যাচ্ছে। সমস্যাটি মূলত একটি গার্মেন্ট কারখানা ও তার শ্রমিকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও তা এখন অন্যান্য কারখানা ও শ্রমিকদের মধ্যে প্রসারিত হয়ে পড়েছে। আবার সমস্যা গার্মেন্ট মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে হলেও তাতে অশেষ দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকের। রোববার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অন্তত ২০ কিলোমিটারে যানজট সৃষ্টি হয়। শত শত গাড়ি, হাজার হাজার যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিক আটকে থাকে মহাসড়কে। তারা খাদ্য, পানি, ঘুম এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ভয়াবহ সমস্যা-সংকটে পতিত হয়। ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’, বোধহয় একেই বলে। সমস্যা শ্রমিক-মালিকের আর তার অসহায় শিকার সাধারণ মানুষ। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক শুধু ময়মনসিংহ এলাকার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগের মাধ্যম নয়, দেশের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমও বটে। এ মহাসড়কে অচলাবস্থা দেখা দিলে গণযাতায়াত ও অর্থনীতির কী রকম অপূরণীয় ক্ষতি হয়, তা সহজেই অনুমেয়। গার্মেন্ট শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ, তাকে কেন্দ্র করে আন্দোলন, ভাংচুর, সড়ক অবরোধ, যানবাহনে হামলা ইত্যাদি নতুন ঘটনা নয়। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভারে গার্মেন্ট শ্রমিকদের আন্দোলনের নামে যে নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তা কাটতে না কাটতেই গাজীপুরে আবার অসন্তোষ মাথাচাড়া দিয়েছে। পর্যবেক্ষকদের অনেকের ধারণা, পতিত স্বৈরাচারের দোসররা পরিকল্পিতভাবে গার্মেন্ট শিল্পে অস্থিরতা তৈরি করে অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চাইছে। আমরা লক্ষ করেছি, সরকার গার্মেন্ট শিল্পে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি। পরিস্থিতি প্রলম্বিত হওয়াই তার প্রমাণ।

শ্রমিকদের মালিক কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি-দাওয়া জানানো এবং দাবি-দাওয়া আদায়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করা নিষিদ্ধ নয়। একে শ্রমিকদের অধিকার হিসেবেই গণ্য করা হয়। কিন্তু এই অধিকারের নামে, কারখানায় হামলা, সড়ক অবরোধ, গাড়ি ভাংচুর ইত্যাদি মোটেই সমর্থনীয় হতে পারে না। এটা অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপের শামিল। আমরা একাধিকবার বলেছি, শ্রমিকরা তাদের কারখানার অভ্যন্তরে বা কারখানার নিজস্ব এলাকায় বিক্ষোভ, সমাবেশ, অবস্থান ইত্যাদি কর্মসূচি নিতে পারে। যতদিন ইচ্ছা কর্মসূচি পালন করতে পারে, তাতে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু কর্মসূচি সড়কে আনা, সড়ক অবরোধ করা, মানুষকে অকথ্য দুর্ভোগের মধ্যে ফেলা তাদের অনধিকার চর্চা, অন্যায়। আমরা এও বলেছি, রাস্তাঘাট যাতায়াতের জন্য, মালামাল পরিবহনের জন্য। কারো তা অবরোধ বা বন্ধ করার অধিকার নেই। আন্দোলনকারীদের যেমন একথা স্মরণ রাখতে হবে, তেমনি সরকারকে রাস্তাঘাট বাধাহীন ও উন্মুক্ত রাখা নিশ্চিত করতে হবে। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, পতিত স্বৈরাচারের সময়ে পরিবহন ও সড়ক ব্যবস্থাপনা বলতে যা বুঝায়, তার কিছুমাত্র অবশিষ্ট ছিল না। সর্বক্ষেত্রে যথেচ্ছাচার স্থান দখল করে নিয়েছিল। সড়ক-মহাসড়কে ধীরগতির যান ও বিদ্যুৎচালিত অটো ও রিকশা ইত্যাদি চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও ছিল। কিন্তু দিব্যি নিষিদ্ধঘোষিত যান সড়ক-মহাসড়কে চলাচল করছে। ফলে মানুষকে দুর্ভোগ ও দুর্ঘটনার শিকার এবং যানজটে নাকাল হতে হয়েছে। রাজধানীতে বিদ্যুৎচালিত যান চলাচল বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হলেও তা পালিত হয়নি। বারবার লক্কড়ঝক্কড় মার্কা, লাইসেন্স ও রুট পারমিটবিহীন যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েও সরে আসা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে পতিত স্বৈরাচার ও তার ছোটবড় পাণ্ডাদের স্বার্থ ছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কারো কোনো স্বার্থ আছে বলে ধারণা হয় না। তারপরও সড়কে-পরিবহনে শৃংখলা আসছে না কেন? কেন সড়ক-মহাসড়কে নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচল করছে? ঢাকায় কেন ব্যাটারিচালিত যানের এত আধিক্য? দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা এই অনাচার, যথেচ্ছাচার, গণদুর্ভোগ ও বিড়ম্বনার দায় এড়াতে পারেন না।

সড়ক-মহাসড়কে অবাধ চলাচল নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। এটা শুধু জনসাধারণের যাতায়াতের জন্যই নয়, অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্যও অপরিহার্য। কারো অজানা নেই, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, এই মহাসড়ক দিয়ে আমাদের আমদানি-রফতানি পণ্যের তিন-চতুর্থাংশের বেশি পরিবাহিত হয়। অথচ, এ মহাসড়কে হরহামেশা দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হতে দেখা যায়। লেনের সংখ্যা বাড়িয়েও যানজট নিরসন সম্ভব হয়নি। যানজটের কারণগুলো জানা থাকলেও প্রতিকারের কোনো উদ্যোগ নেই। অন্যান্য সড়ক-মহাসড়কের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ক্ষুদ্র, ধীরগতির এবং নিষিদ্ধঘোষিত বিদ্যুৎচালিত অটো ও রিকশার চলাচল বন্ধ, অবৈধ বাজার-স্থাপনা উচ্ছেদ, যান চলাচলে শৃংখলা প্রতিষ্ঠা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমে যানজট সহনশীল পর্যায়ে স্থিতিশীল করা সম্ভব। এই সঙ্গে আন্দোলনের নামে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে প্রশাসনিক নির্দেশনা জরুরি এবং নির্দেশনা বাস্তবায়নে শূন্য সহিঞ্চুতা প্রদর্শন অত্যাবশ্যক। আমরা আশা করি, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ নেবে, যাতে মানুষ স্বাচ্ছন্দ ও নিরাপদে যাতায়াত করতে পারে। মালামাল পরিবহনও সহজ হয়।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

স্মৃতির দর্পণে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী
ডিকার্বনাইজেশনে আরো জোর দিতে হবে
ঐক্য ও সংহতি অটুট রাখতে হবে
আগামীর বাংলাদেশের স্বপ্ন
ইস্পাত কঠিন জাতীয় ঐক্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভারসাম্য জরুরি
আরও

আরও পড়ুন

ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র বৈঠক, হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনা থাকবে

ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র বৈঠক, হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনা থাকবে

রামু সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত

রামু সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত

এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার

এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার

প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া

প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া

জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল

জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল

মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল

মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল

"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"

"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"

ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল

ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল

নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা

নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা

আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি

আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি

দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন

দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন

'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'

'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ