যৌথবাহিনীর অভিযান জোরদার করতে হবে
১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম
রাজধানীর সবচেয়ে বেশি যানজটপ্রবণ গুলিস্তান ও ফার্মগেটের আশপাশের এলাকাকে হকার ও অবৈধ দখলমুক্ত করতে ডিএমপি (ট্রাফিক) সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে অভিযান পরিচালনা করেছে যৌথ বাহিনী। সেনাবাহিনীর সহায়তায় গুলিস্তানে হকারদের ৫শতাধিক গাড়ী ও ফার্মগেটে শত শত অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে। যানজট ও গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা অব্যবস্থাপনা রাজধানী ঢাকার নাগরিক সমস্যাগুলোর অন্যতম। সিটি কর্পোরেশন এবং প্রতিটি সরকারই ঢাকার যানজট কমিয়ে আনা এবং ফুটপাত, রাস্তা ও উন্মুক্ত স্থানগুলোকে অবৈধ দখলমুক্ত করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও কেউ তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে মাফিয়া স্বৈরচারের পতনের পর নির্দলীয় অর্ন্তবর্তী সরকারের কাছে দেশের মানুষ অতীতের দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও জনদুর্ভোগের চির অবসান প্রত্যাশা করে। অর্ন্তবর্তী সরকারও জনপ্রত্যাশা অনুসারে রাজধানীর ফুটপাতসহ পাবলিক প্লেস থেকে সব ধরণের অবৈধ দখল ও স্বেচ্ছাচারিতা উচ্ছেদে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ফুটপাত দখল করে সেখানে হকার বসিয়ে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয়। এসব চাঁদাবাজির সাথে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা এবং পুলিশ ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি হয়। এ কারণেই সরকারি জমি ও ফুটপাতের অবৈধ দখল উচ্ছেদের ক্ষেত্রে বরাবরই ইঁদুর-বেড়াল খেলা হয়েছে। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার পর রাতারাতি তা হাতবদল কিংবা পুনর্দখল হতে দেখা যায়। দখল উচ্ছেদের সাথে সাথে তা সংরক্ষণ মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা না করে পুনরায় দখলের সুযোগ দিয়ে চাঁদাবাজি অব্যাহত রাখার সুযোগ দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
রাজধানীর চারপাশের নদনদী, খাল, উন্মুক্ত স্থান ও ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত করতে বিভিন্ন সময়ে উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জনস্বার্থের এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলেও বিগত ১৬ বছর তা থোড়াই কেয়ার করা হয়েছে। সর্বক্ষেত্রে দলীয়করণ ও দলীয় ক্যাডারদের প্রভাবে সবকিছু পরিচালিত হওয়ায় জনস্বার্থ ও জনদুর্ভোগের বিষয়গুলো বরাবরই উপেক্ষিত হয়েছে। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই কারওয়ান বাজারের চাঁদাবাজির সাথে যুক্ত ছিলেন বলে সংবাদ বেরিয়েছে। একটি অনিবার্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়ে স্বৈরশাসন বিদায় করেছে। অর্ন্তবর্তী সরকার জনপ্রত্যাশা বাস্তবায়নে নির্মোহ ও আপসহীন ভ’মিকা পালন করবে, এটাই সকলের প্রত্যাশা। রাজধানীর ফুটপাট দখল ও চাঁদাবাজ মুক্ত করতে যৌথবাহিনীর চলমান অভিযান নিয়ে জনমনে যে স্বস্তি ও আশাবাদ দেখা যাচ্ছে তা আর অতীতের মত ইঁদুর-বেড়াল খেলায় পরিনত হবে না, এমনটাই সকলের প্রত্যাশা। অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করে হাল ছেড়ে দিলে হবে না। কেউ যাতে নতুন করে দখল-চাঁদাবাজি করতে না পারে সে লক্ষ্যে মনিটরিংসহ অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। আইন ও নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলে তার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব। অর্ন্তবর্তী সরকার এবং সেনাবাহিনীর উপর মানুষের আস্থা ও সমর্থনকে কাজে লাগিয়ে প্রভাবশালী মহলের দখল-চাঁদাবাজি বন্ধের পদক্ষেপ যে কোনো রাজনৈতিক সরকারের চেয়ে সুবিধাজনক হতে পারে। অর্থনৈতিক সংকট, লাখ লাখ বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের অজুহাত দেখিয়ে ফুটপাথ, রাস্তার দখল ছেড়ে দেয়ার খোঁড়াযুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
রাজধানীকে দূষণ-দখলমুক্ত ও বাসযোগ্য করতে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে। অর্ন্তবর্তী সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে মাঠ পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী সক্রিয় থাকায় এই সরকারের প্রশাসনের পক্ষে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তভাবে অনেক কিছূই করা সম্ভব। তবে ১৬ বছরে গড়ে ওঠা মাফিয়াতান্ত্রিক দখলবাজি, বিশৃঙ্খলা, অব্যবস্থাপনা থেকে রাতারাতি সব সমস্যার উত্তরণ হয়তো সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে। লাখ লাখ অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিক্সা, হাজার হাজার হকার ও অবৈধ অস্থায়ী দোকান বসানোর সাথে জড়িত দখলবাজ-চাঁদাবাজ চক্রের রাজনৈতিক হাতবদল ও পুনর্বাসনের সুযোগ স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে। তিনশ ফিট মহাসড়কে যৌথ বাহিনীর অভিযান জনমনে প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে। আর গুলিস্তান ও ফার্মগেটের ফুটপাত থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। ফিটনেসবিহিন লক্কড়ঝক্কড় মার্কা গাড়ীগুলোকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে হবে। তবে যৌথ বাহিনীর কাজ ট্রাফিকের দায়িত্বের চেয়ে অনেক বড়। নদী, খাল, ফুটপাত, উদ্যানসহ সরকারি বিভিন্ন সেক্টরের জমি পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি পানি ও বায়ূ দূষণ রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভিন্ন সময়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাগুলো রিভিউ করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসও এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রাজধানীর রাস্তা, বাসস্ট্যান্ড ও গণপরিবহনে বিদ্যমান মাফিয়াতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করে শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনা ও আধুনিকায়ন নিশ্চিত করতে হবে। যানজট প্রবণ এলাকা এবং ফ্লাইওভারের প্রবেশপথগুলোতে যানজট নিরসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র বৈঠক, হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনা থাকবে
রামু সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত
এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া
জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল
মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন
'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ