মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে কেন উপদেষ্টা করতে হবে?
১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম
গত রবিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আরও তিনজন উপদেষ্টা যুক্ত হয়েছেন। তারা হচ্ছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারি মাহফুজ আলম, ব্যবসায়ী সেখ বশির উদ্দিন ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এই তিন জনের যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের পরিসর ২১ থেকে ২৪-এ উন্নীত হয়েছে। ইতোমধ্যে দু’জনকে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। রবিবার সারাদিনই মিডিয়ায় আলোচিত হতে থাকে, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী উপদেষ্টা হতে যাচ্ছেন। সন্ধ্যায় তার শপথ নেয়ার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অভিনেতা-অভিনেত্রী থেকে শুরু করে নির্মাতা ও অন্যন্যরা তাকে অভিনন্দিত করে পোস্ট দিতে থাকেন। কেউ কেউ তার অতীত কর্মকা- নিয়ে সমালোচনামূলক পোস্ট দেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, যারা তাকে অভিনন্দিত করে পোস্ট দিয়েছেন, তাদের বেশির ভাগই ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সমর্থক এবং কোনো না কোনোভাবে দালালি করে সুবিধা নিয়েছেন। তাদের উল্লাসের মাত্রা ছিল চোখে পড়ার মতো। একজন নির্মাতা পোস্টে লিখেছেন, ‘প্রিয় ফারুকী, আপনি চেয়েছিলেন, ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে ড. মুহম্মদ ইউনূস যাবেন এবং সেটি একদম আগের অবস্থানে নিয়ে যেতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।’ শেখ হাসিনাকে মা সম্বোধন করে রাজধানীতে প্লট বাগিয়ে নেয়া ও খুনের মামলার আসামী অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয় ফারুকীকে অভিনন্দন জানিয়ে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘অভিনন্দন ফারুকী ভাই। আমাদের মানুষ। আমাদের আস্থা। শান্তির বার্তা দিয়ে হোক শুরু আপনার নেতৃত্ব।’ উপস্থাপক আব্দুন নূর তুষার যাকে হাসিনার দালালদের মধ্যে ফেলা হয়, তিনি ফারুকীর সমালোচকদের তিরস্কার করে পোস্ট দিয়েছেন।
দুই.
শপথ নেওয়ার পর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, ‘এটা তো আমার জন্য এক ধরনের অভাবনীয় অভিজ্ঞতা। কারণ, আমি কখনোই কোনো পদ কিংবা চেয়ারে বসব, ভাবিনি। তবে প্রফেসর ইউনূসের সহকর্মী হওয়াটা বেশ লোভনীয়, যেখানে না বলাটা মুশকিল। আমি আশা করি, যে কয়দিন কাজ করব কিছু পরিবর্তন হয়তো ঘটাতে পারব। সেটা যদি করতে পারি, তাহলে বুঝব, যে উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছি সেটা সফল হয়েছে।’ তবে ফারুকী ‘পদ কিংবা চেয়ারে বসব, ভাবিনি’ বললেও তিনি উপদেষ্টা হওয়ার খায়েশ কিন্তু আগেই পোষণ করেছিলেন। অভিনেতা শিবলু তাকে অভিনন্দন জানিয়ে লিখেছেন, ‘অভিনন্দন! নতুন সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। কিছুদিন আগে নিজের ফেসবুক আইডিতে উপদেষ্টা হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেছিলেন, এবার সত্যিই উপদেষ্টা হয়ে গেলেন। কাজেই, তিনি পদ কিংবা চেয়ারে বসবেন, ভাবেননি বলাটা দ্বিচারিতা বা স্ববিরোধিতা ছাড়া কিছু নয়। ফারুকী অবশ্য ভক্ত ও সাধারণ মানুষের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, ‘যদি কোথাও কোনো ভুল করি, আশা করি, আপনারা সেটা ধরিয়ে দেবেন।’ হ্যাঁ, তিনি ভুল করেছেন কিনা, তা তাকে উপলব্ধি করেই ভুল স্বীকার করতে হবে। কারণ, তার কিছু মারাত্মক ভুল ছিল, যা পুরোপুরি ছাত্র-জনতার বিপ্লবের স্পিরিটবিরোধী ছিল। যেমন ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তাড়া খেয়ে হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ৭ আগস্ট ফারুকী ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছিলেন, ‘আমি মনে করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর একটা জরুরি কাজ হবে, ৩২ নম্বরের বাড়ির সংস্কার কাজ শুরু করা। এই বাড়িকে আগের চেহারায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা এবং এ বাড়ি সম্পর্কিত বিভিন্ন ছবি, স্মৃতিস্মারক যা যা পাওয়া যায়, তা দিয়ে যাদুঘর আবার চালু করা। এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান প্রফেসর ইউনূসের উচিৎ হবে, নিজেই বাড়িটা ভিজিট করা। তিনি এই বাড়ি ভিজিট করলে একটা সিগনিফিকেন্স তৈরি হবে, একটা বার্তা দেবে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গায় বীরশ্রেষ্ঠদের ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে। এগুলো সব ঠিকঠাক করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। বাংলাদেশের মন্দির থাকবে, মসজিদ থাকবে, প্যাগোডা থাকবে, গির্জা থাকবে, বোরকা থাকবে, জিনস থাকবে। সবকিছুই থাকবে বহুজনের এই সমাজে।’ ফারুকী যে ৩২ নম্বরের বাড়ি সংস্কার ও সেখানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে যাওয়ার কথা বলেছেন, এটা কি ছাত্র-জনতার বিপ্লবের স্পিরিটের সাথে যায়? এই বাড়ি কারা তছনছ করেছে? কেন করেছে? তারা কি শুধু বীরশ্রেষ্ঠদের ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছে? শেখ মুজিবের ভাস্কর্য ধুলোয় মিশিয়ে দেয়নি? কেন করেছে? কেন সৈনিকরা ক্যান্টমেন্টে শেখ মুজিবের বিশাল মূর্তি সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত সিনেমা ‘হীরক রাজার দেশে’র রাজার মূর্তির মতো দড়ি প্যাঁচিয়ে টেনে গুঁড়িয়ে দিয়েছে? কেন সারাদেশে ছাত্র-জনতা শেখ মুজিবের মূর্তি ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে? এসব প্রশ্নের উত্তর কি ফারুকী জানেন না? নিশ্চয় জানেন। এখন ছাত্র-জনতা যদি তাকে প্রশ্ন করে, যা আমরা গুঁড়িয়ে দিয়েছি, তা কেন ফারুকী পুনঃস্থাপন করতে চাচ্ছেন? তাহলে কি তিনি ছাত্র-জনতার বিপ্লব সমর্থন করেছেন কোনো লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে? তিনি কি আগে থেকেই নিশ্চিত ছিলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন ঘটবে এবং তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হবেন? এটা কি ছাত্র-জনতার মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে পুঁজি করে স্বার্থ হাসিল করা নয়? ছাত্র-জনতা কেন ৩২ নম্বরের বাড়ি ও শেখ মুজিবের মূর্তি গুঁড়িয়ে দিয়েছে, তা অতি সাধারণ মানুষও জানে। তারা মনে করেছে, হাসিনা যেমন ফ্যাসিস্ট ছিলেন, তেমনি তার পিতা শেখ মুজিবও ছিলেন ফ্যাসিজমের প্রতীক। ফারুকী কি এ ইতিহাস জানেন না? অবশ্য তিনি জেনে না জানার ভান করলেও ছাত্র-জনতা শেখ মুজিবের স্বৈরশাসনের ইতিহাস ঠিকই মনেপ্রাণে ধারন করে রেখেছে। রেখেছে বলেই তারা ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বিদায় করে তার বাবার মূর্তি ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। হ্যাঁ, ফারুকী শেখ মুজিবের ভক্ত হতে পারেন। এটা তার স্বাধীনতা। তবে তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনার সময় যখন তার চাটুকার-দালালদের চাটুকারিতা ও দালালির মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছাড়া সাধারণ মানুষের মতপ্রকাশের কোনো স্বাধীনতা ছিল না, তখন কি তিনি মত প্রকাশ করেছিলেন? সেটা কি ছাত্র-জনতার বিপ্লবের চেতনার সাথে সঙ্গতি ছিল, নাকি তিনিও ফ্যাসিস্ট হাসিনার সময়কে ধারণ করেছিলেন? সে সময়ে তার এক ফেসবুক পোস্টের দিকে তাকালেই তা পরিস্কার হয়ে যাবে। তিনি ২০১৭ সালের ১৫ আগস্ট এক পোস্টে লিখেছিলেন, ‘ইতিহাস বড় মানুষকে পরম মমতায় নির্মাণ করেন। এবং বড় মানুষও ততোধিক মমতায় ইতিহাসকে নির্মাণ করেন। যেমন বঙ্গবন্ধু। আশা করি, দ্রুতই বঙ্গবন্ধুকে আমরা ভাগাভাগির হাত থেকে রক্ষা করব। বড় মানুষ সবার হয়।’ তার এই আহ্বান ও অভিমত কি ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবে প্রত্যাখ্যাত হয়নি? নতুন ইতিহাস কি তারা রচনা করেনি, যে ইতিহাসে দাঁড়িয়ে তিনি উপদেষ্টা হয়েছেন? অনেকে তো বলছেন, তিনি দেড় হাজার শহীদ ও বিশ হাজার অন্ধ ও পঙ্গু হয়ে যাওয়া মানুষের রক্তাক্ত পথে উপদেষ্টা হয়েছেন। এর মর্মার্থ নিশ্চয়ই তিন বোঝেন। ইতোমধ্যে তিনি তার দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম কার্যদিবসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, আমি ফ্যাসিস্ট বিরোধিতা করেছি আমার বিবেকের কারণে। ফ্যাসিস্ট বিরোধিতার পুরস্কার হিসেবে আমার কোনো পদের প্রয়োজন নেই। তার এ বক্তব্য মিথ্যাচার ছাড়া কিছু নয়। কারণ, তিনি কিছুদিন আগে পোস্ট দিয়ে উপদেষ্টা হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। ফারুকী নিজের সাফাই গেয়ে আরও বলেছেন, আমার একটা-দুইটা পোস্ট না দেখে ১৫ বছরের পোস্ট দেখেন। তার কথা মেনে নিয়েও বলা যায়, যারা পাড় মিথ্যাবাদী, কখনো কখনো তাদের মুখ থেকে ফস্ করে সত্য কথা বের হয়ে যায়। তদ্রুপ, ফারুকী যে শেখ মুজিবকে ‘সবার’ করে নেয়া নিয়ে পোস্ট করেছেন, এটা যে তার ফ্যাসিবাদকে সমর্থনের অন্তর্নিহিত কথা, তাই প্রকাশ করে। তিনি যদি হাজারটা ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখাও লিখেন, তার মধ্যে ফ্যাসিস্টের পক্ষের একটা লেখাই তার ফ্যাসিবাদ সমর্থন প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তার ফ্যাসিবাদ সমর্থনকে হালকা করার জন্য বলেছেন, ‘ফ্যাসিস্টের দোসর, হ্যাঁ, বলতে পারেন, বলতে ভালো লাগতে পারে, যারা বলছেন।’ তবে তার স্ত্রী নুশরাত ইমরোজ তিশার মুজিব বায়োপিকে শেখ হাসিনার মা ফজিলাতুন নেসার চরিত্রে অভিনয় করা নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। কেন রাজি হননি? কারণ, এর উত্তর দিতে গেলে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে তাদের সমর্থনের বিষয়টি প্রকাশিত হয়ে পড়বে। হেফাজতে ইসলাম তাকে ‘শাহবাগী নাস্তিক্যবাদীদের দোসর’ আখ্যা দেয়ায় সংগঠনটির তৎকালীন আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে ‘তেঁতুল হুজুর বলে ব্যঙ্গ করে চরম ধৃষ্টতা’ দেখিয়েছেন, তার জবাব কী দেবেন? সৎসাহস থাকলে নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে কথা বলতেন। পূজার সময় কলকাতায় ইলিশ রফতানি নিয়ে যখন দেশের মানুষ নিজেরা ইলিশ কিনে খেতে পারে না বলে বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, তখন তিনি ইলিশ রফতানির পক্ষে কথা বলে অনেকের সমালোচনার পাত্র হয়েছিলেন। অথচ গণবিপ্লবের অন্যতম চেতনা ছিল ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে। ফলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনসহ অন্যান্য সংগঠন ও রাজনৈতিক দল যে তার বিরোধিতা করেছে, তা তো এমনি এমনি করেনি। ফ্যাসিস্ট হাসিনা, আওয়ামী লীগ ও ভারতের প্রতি তার সহানুভূতিসুলভ আচরণের কথা জেনেই তারা বিরোধিতা করছে। গণবিপ্লবের সময় একটি দুটি পোস্ট দিলেই কি ফ্যাসিস্টবিরোধী হওয়া যায়? এটা কি সুযোগ বুঝে সুবিধা নেয়া নয়?
তিন.
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর উপদেষ্টা হওয়া নিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের উল্লাসের কারণ থাকা স্বাভাবিক। কারণ, তিনি কোন মনোভাবের তা তারা জানে। তবে গণবিপ্লবে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতা এবং বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি যে এটা ভালভাবে নিচ্ছে না, তা ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ফারুকীকে উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া নিয়ে ফেসবুকে ফারুকীর অতীতের কিছু পোস্টের স্ক্রিণ শট দিয়ে লিখেছেন, ‘এই সরকার ত ভাল তালবাহানা শুরু করছে, একদিকে আমরা হাসিনা আর আওয়ামী লীগকে ঠেকানোর জন্য রাজপথে আন্দোলন করে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি! আর ওদিকে ওরা বঙ্গভবনে বসে আরামছে মুজিববাদী ও হাসিনার দোসরদের উপদেষ্টা বানাচ্ছে, বাহ কি চমৎকার? বিপ্লবের ¯িপরিট বাদ দিয়ে, জাতির চাওয়াকে উপেক্ষা করে আপনারা জাতির সাথে তামাশা করিয়েন না, হাসিনা তামাশা করেছিল, পরিনতি কি হয়েছে, ভাল করেই জানেন।’ সিনিয়র সাংবাদিক মহিউদ্দিন খান মোহন এক পোস্টে লিখেছেন, ‘হাসিনার পতন ও পলায়নের পর তার পক্ষে প্রথম মুখ খুলেছিলেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। বলেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের শেখ মুজিবের বাড়িটি মেরামত করে দেয়া। এখন তিনি সেই সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা। আর জাদুঘর হিসেবে সেই বাড়িটিও তার মন্ত্রণালয়ের স¤পদ। এবার মনে হয়, মেরামত কাজ অগ্রাধিকার পাবে।’ ফারুকীর বিরুদ্ধে এমন আরও অনেক স্যাটায়ার ও প্রতিক্রিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা গেছে, যাতে বোঝা যায়, ফারুকীর উপদেষ্টা হওয়ার বিষয়টি তারা ভালোভাবে নেয়নি। আমার পরিচিত মিডিয়ার অনেকে ফারুকীকে একজন ‘সুবিধাবাদী লোক’ বা ‘যেদিকে হাওয়া সেদিকে পাল তুলে দেয়া’ বৈশিষ্ট্যের মানুষ বলে মন্তব্য করেছেন। তাকে সময় বুঝে বিপ্লবী আর সময় বুঝে চাটুকারিতা করা ব্যক্তির সাথে তুলনা করেছেন। কেউ বলেছেন, দালালি কোটায় উপদেষ্টা হয়েছেন তিনি। তবে ফারুকীর অতীতের পোস্ট এবং শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় তার স্ত্রী অভিনেত্রী নুশরাত ইমরোজ তিশার ফজিলাতুন নেসার চরিত্রে অভিনয় করার মধ্য দিয়ে তাদের চেতনা কোনদিকে, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। ফারুকী যতই সার্কাজম করে বলেন না কেন, আমাকে ফ্যাসিস্টের দোসর বলতে যাদের ভালো লাগে, বলুক। এ ‘সার্কাজম’ দিয়ে তার ফ্যাসিস্টের সমর্থন ঢাকা যাবে না। তার ‘সার্কাজম’ আর গণবিপ্লবে জেনারেশন জি’র ‘সার্কাজম’ এক নয়। তাদের ‘সার্কাজম’ প্রতিবাদী শ্লোগানে পরিণত হয়েছে। এর মাধ্যমে বিপ্লব বেগবান হয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়েছে। ফারুকী কেবল বসে বসে ফেসবুকে দুয়েকটি পোস্ট দিয়েছেন। সারাবিশ্ব দেখেছে আমাদের সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকে ছাত্র-জনতার সাথে শামিল হয়ে রাস্তায় নেমে বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেছেন। সে সময় ফারুকীকে রাস্তায় নামতে দেখা যায়নি। কেন নামেননি?
চার.
গ্রীক মাইথলজিতে ‘সেন্টুরাস’ নামে এক হাইব্রিড প্রাণী ছিল, যার দেহের উপরের অংশ মানুষ, নিচের অংশ ঘোড়ার মতো। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর অবস্থা অনেকটা তেমন বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, যার মনের অর্ধেক ফ্যাসিস্ট সমর্থক, অর্ধেক ফ্যাসিস্টবিরোধী। অনেকটা শংকর বা হাইব্রিডের মতো। এমন হাইব্রিড ব্যক্তিদের নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের জন্য ছাত্র-জনতার বিপ্লব হয়নি। বিপ্লব করেছে সেসব ছাত্র-জনতা, যাদের মধ্যে ফ্যাসিস্ট হাসিনার প্রতি বিন্দুমাত্র সমর্থন বা ‘সফট কর্ণার’ ছিল না, ছিল ঘৃণা। হাসিনাকে হটিয়ে তারা এমন সরকারই প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে, যারাও তাদের এই স্পিরিট মনেপ্রাণে ধারন ও কাজেকর্মে তার প্রকাশ ঘটাবে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টাম-লীতে এমন কিছু উপদেষ্টা রয়েছেন, যাদের নিয়ে শুরুতেই বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সরকার এ বিতর্ক ও সমালোচনা আমলে না নিয়ে বরং আরও সমালোচিত ব্যক্তিদের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে। এর মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের উপর আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে জিইয়ে রাখার অপবাদ সেঁটে যাচ্ছে। ফলে ফারুকীর মতো হাইব্রিড, খুনের মামলার আসামি, শেখ হাসিনার প্রতি দুর্বলতা ও ভারতপ্রীতি থাকা, এমন ব্যক্তিদের উপদেষ্টা থেকে অপসারনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের দাবি যৌক্তিক। পর্যবেক্ষকদের মতে, দেশে ফ্যাসিস্টবিরোধী লোকের এমন কোনো অভাব পড়েনি যে, বিতর্কিতদের উপদেষ্টা করতে হবে। ফারুকী যতই ফ্যাসিবাদের পক্ষে ছিলেন না বা দুয়েকটি পোস্টের কথা উল্লেখ করে যুক্তি দেখান না কেন, তার আগেই ছাত্র-জনতার কাছে তার স্বরূপ উন্মোচিত হয়ে গেছে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
জানা গেল ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ব্রাজিলের একাদশ
বাংলাদেশে ন্যায্য রুপান্তরে অর্থায়নের জন্য ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান
গোপালগঞ্জে কারাগারে থাকা বাবার অবশেষে জামিন মঞ্জর
ওসমানী বিমান বন্দরে বিদেশী বিমান উঠা-নামার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী- প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে সিলেটে স্মারকলিপি
ময়মনসিংহে ফিলিং স্টেশনে আগুনের ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে ৬
জানুয়ারি পর্যন্ত ছিটকে গেলেন এনগিডি
দুবাইয়ে নবনিযুক্ত কনসাল জেনারেলের সাথে বাংলাদেশ রেডিমেড গার্মেন্টস ট্রেডার্স আজমানের নেতৃবৃন্দের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সুবিধা নিশ্চিতে দেওয়া হবে ইউনিক আইডি কার্ড
যে কারণে হারপিকে মেতেছে নেটিজেনরা
আ.লীগের মতো পরিবারতন্ত্র করবে না বিএনপি: তারেক রহমান
প্যারাগুয়ে ম্যাচে কেমন হবে আর্জেন্টিনার একাদশ
অর্থাভাবে ব্যক্তিগত বিমান ভাড়া দিয়েছেন শন ডিডি, বিক্রি করবেন বাড়ি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শ্রেনী কক্ষে অসুস্থ ১০ শিক্ষার্থী
ভারতীয় গণমাধ্যম আমাদের সম্পর্কে অপপ্রচার চালাচ্ছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
নরসিংদীতে ট্রেনের নীচে ঝাঁপ দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা
পুলিশ সংস্কার ও একটি কৌশলপত্র
শ্যামনগরে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক নিহত
অভ্যুত্থানে আহতদের প্রতি এই অবহেলা অমার্জনীয়
নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদ
ধামরাইয়ে দুই ইটভাটাকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা, ব্যাটারি কারখানার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন