ভারতের ষড়যন্ত্রে কোনো কাজ হবে না
০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
ভিসা দেয়া না দেয়া ভারতের আভ্যন্তরীন বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বতী সরকারের ভূমি এবং বেসামরিক বিমান, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ এম হাসান আরিফ। তিনি কূটনৈতিক ভাষায় এর জবাব দিয়েছেন। তবে আমাদের আরো কিছু কথা থেকে যায়। ভিসা বন্ধ করে দেয়ার পেছনে কোন যৌক্তিক কারণ না থাকলেও বাংলাদেশের জনগণ খুব ভালো করেই জানে কোন অযৌক্তিক কারণে ভিসা বন্ধ রেখেছে। সেটি হলো, ভারত নিজেরা ফ্যাসিবাদ তাই ফ্যাসিবাদকে সহযোগিতা করাই তার কাজ। সে বাংলাদেশের জনগণের মতামতকে খুব কমই পরোয়া করে। সে প্রতিবেশীসুলভ আচরণ জানে না। এই কারণেই ভারত প্রতিবেশী দেশের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং দেশগুলো থেকে বিতাড়িত হয়েছে। এই ক’দিন আগেও তারা মালদ্বীপ থেকে অত্যন্ত লজ্জাজনকভাবে বিতাড়িত হতে হয়েছে।
ভারত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ফ্যসিবাদকে উৎসাহিত করেছে এবং ফ্যসিবাদের উন্নয়নের জন্য বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিদায়ের পর তাকে আশ্রয় দিয়েছে। প্রবিবেশীদের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে কি ধরনের কৃষ্টি-কালচার লালন করতে হয়, তা ভারতের অভিধানে নেই। ফলে জনগণের উপর সে স্বৈরাচারী ও অত্যাচারী শাসককে সমর্থন দিয়ে গেছে। গত সাড়ে ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে টিকিয়ে রেখে সে নিজের স্বার্থের ষোলকলা পূর্ণ করেছে। ভারত শুধু নিয়েছে, বিনিময়ে বাংলাদেশকে কিছুই দেয়নি। সে শুধু ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বাংলাদেশকে চোখ রাঙিয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ তার রক্তচক্ষুকে পরোয়া করে না।
বাংলাদেশকে বিশ^ দরবারে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য ভারত কি করেনি এবং করছে না? জঙ্গীবাদ ও সংখ্যালঘু নির্যাতনসহ বিভিন্ন কলাকৌশল করেও সফল হয়নি এবারও হবে না। বাংলাদেশের মানুষ ভুয়া জঙ্গীবাদ ও সংখ্যালঘু নির্যাতন রুখে দিয়েছে। দেশের মুসলমানরা হিন্দুদের মন্দির পাহাড়া দিয়ে নির্বিঘেœ তাদের পূজা-পার্বন পালন করতে সহযোগিতা করে বিশ^ দরবারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির স্থাপন করেছে। গত দূর্গাপূজাকে ফ্যসিবাদের কর্মীরা সুযোগ হিসাবে গ্রহণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু দেশপ্রেমিক জনগণ তা ভ-ুল করে দিয়েছে। প্রতিদিনই ফ্যসিবাদের দোসরা বিভিন্ন অজুহাত সৃষ্টির মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করতে তৎপর রয়েছে। বলা বাহুল্য, এর সবকিছুর পেছনে ভারতের ইন্ধন রয়েছে।
বাংলাদেশের মানুষ সাধারণত চিকিৎসার জন্য কলকাতা, চেন্নাই, দিল্লি ও মাদ্রাজ যায়। বাংলাদেশী রোগীদের টার্গেট করেই এসব এলাকায় বহু হাসপাতাল, ক্লিনিক, শপিংমল, হোটেল ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এ সমস্ত হাসপাতাল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ক্রেতা বাংলাদেশীরা। কয়েকদিন আগে একটি মিডিয়ার অনুসন্ধানী রিপোর্টে দেখা যায়, কলকাতার নিউমার্কেট এলাকা ক্রেতাশূন্য। একই অবস্থা সেখানকার ডক্টর চেম্বার, হাসপাতাল ও হোটেলগুলোর। এতে কার ক্ষতি হচ্ছে? একটি কথা মনে রাখতে হবে, ভিসা বন্ধ রাখার জন্য বাংলাদেশের এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়নি যে, এখনে মহামারি দেখা দিয়েছে এবং চিকিৎসার অভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে। বরং অর্থনৈতিকভাবে ভারতই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এবং বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়ে লাভ হচ্ছে।
ভারতের উচিৎ হবে, বিশেষত প্রতিবেশী দেশগুলোর সরকারের চেয়ে দেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করা এবং তাদের হৃদয়ে ঢোকার চেষ্টা করা। তাহলে যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, ভারতের সাথে সুসম্পর্ক বজায় থাকবে। এ জন্য ভারতকে গণতান্ত্রিক আচরণ করতে হবে। পারস্পরিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। প্রতিবেশীর সাথে অমিমাংসিত বিষয়গুলো মিমাংসা করতে হবে। ফারাক্কার বাঁধকে উভয় দেশের স্বার্থে ব্যবহার করতে হবে। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা দিতে হবে। সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে। প্রতিবেশীর সাথে প্রভুত্ব ভাব নয়, বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। তাহলে আঞ্চলিক বলয় সৃষ্টি হবে, যা ভারতের জন্যই অপরিহার্য। অন্যথায়, নিজেকে যতই শক্তিশালী মনে করুক না কেন, আঞ্চলিকভাবে তাকে দুর্বলই থাকতে হবে।
গত সাড়ে ১৫ বছর ভারত বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে কাজ করার সক্ষমতা তৈরীর পরিবর্তে ক্রমাগত ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে আন্ত:সম্পর্ক চালিয়ে যাবার নীতি চালিয়ে গেছে। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে কাজ করেছে। ভারতের প্রত্যক্ষ সমর্থনের কারণে বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছিল। বিরোধীদল সমূহ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও কোন রিস্ক নেয়নি আওয়ামীলীগ। তাই দিনের ভোট রাতে সংঘটিত হয়েছে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে দেখা গেছে, বিরোধীদল অংশ না নিলেও ফলাফল আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। নির্বাচন কমিশন, আদালত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো দলীয় ভূমিকা পালন করেছে। ভারত এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষ ট্রেনিং দিয়েছে। বাংলাদেশের সচেতন মহল, বুদ্ধিজীবি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তা জানেন।
সবচেয়ে মারাত্মক বিষয় ছিল, আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলেও দেশ চালাতো মুলত: ভারত। রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোগুলোতে কে বসবে তা নির্ধারণ করে দিতো ভারতের দূতাবাস। তাই আমলা, সামরিক- বেসামরিক বাহিনী, পুলিশ ও মন্ত্রী পরিষদে ভারত বন্ধনা বা ভারত তোষণের একটি ধারা চালু হয়েছিল। এমপি মনোনয়ন, মন্ত্রীসভায় কে স্থান পাবেন, মন্ত্রীত্ব কে হারাবেন, কোন সচিবাারয় কে চালাবেন, সামরিক-বেসামরিক বাহিনীর শীর্ষ পদে কে পদায়িত হবে, সেগুলো নির্ধারণে গণভবণকে প্রভাবিত করতো ভারতীয় দূতাবাস। রাজনৈতিক হত্যা, গুম, সবই ভারতের নির্দেশে হতো।
প্রতিবেশী প্রতিবেশী থেকে যে ধরনের আচরণ মানুষ আশা করে, তার কিছুই আমরা ভারতের কাছ থেকে পাইনি। প্রতিবেশীর সাথে প্রতিবেশীর সাধারণ সম্পর্ক হবে পারস্পরিক সম্প্রীতি, সমমর্যাদা, শ্রদ্ধা, ন্যায্যতা, ভালবাসা, সার্বভৌমত্বের যথাযথ স্বীকৃতি ও জনগণের মধ্যে গণতান্ত্রিক সম্পর্ক কাঠামোর ভিত্তিতে। পৃথিবীর দেশে দেশে উন্নয়ন, অগ্রগতি ও শান্তির জন্য প্রতিবেশী দেশ, সরকার ও জনগণের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা, সম্প্রীতি ও বোঝাপড়া অত্যন্ত আবশ্যক। যা হবে, সমমর্যাদা, শ্রদ্ধা ও সার্বভৌমত্বের যথাযথ স্বীকৃতি এবং সর্বোপরি বিভিন্ন দেশ ও জনগণের মধ্যে গণতান্ত্রিক সম্পর্ক কাঠামোর ভিত্তিতে। এই দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থান থেকেই ন্যায্যতা ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার দ্বি-পাক্ষিক সকল সমস্যার সমাধান প্রয়োজন বলে মনে করেন রাষ্ট্র চিন্তকরা। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দ্বি-পাক্ষিক সমস্যা সমাধানে ভারত কখনোই এ নীতি গ্রহণ করেনি। ভারতের সাথে বাণিজ্যিক ভারসাম্যে বাংলাদেশের যে বিশাল ঘাটতি, তা নিরসনে আশ^াসের বাইরে বাস্তবে কিছুই পাওয়া যায়নি।
গত পাঁচ দশক ধরে জিয়াউর রহমান ছাড়া বাংলাদেশের সরকারসমূহের ভারত তোষণ নীতি ও ক্ষমতা নিরাপদ রাখতে, দ্বিপাক্ষিক সমস্যার যৌক্তিক সমাধানের কার্যকরী উদ্যেগ না নিয়ে নিয়ে জাতীয় স্বার্থ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। বিশেষ করে স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী সরকারের নতজানু ভারত তোষণ নীতি ছিল মারাত্মক পর্যায়ের। তারা তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি প্রবাহে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যার সমাধান না করে ভারতের চাহিদামতো একতরফা ট্রানজিট-করিডোর সুবিধা দিয়েছে। অথচ এটিই ছিল ভারতের সাথে আমাদের কুটনৈতিক দরকষাকষির সবচেয়ে বড় অস্ত্র।
বাংলাদেশের অস্তিত্ব অগ্রগতির জন্য পানির ন্যায্য হিস্যার বিষয়টি যখন অনিশ্চিত, তখন ভারতের প্রধান এজেন্ডা ‘কানেকটিভিটির’ নামে বাংলাদেশের সড়ক রেলপথ ও নৌপথে ভারতের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে বেশ ক’টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার। এসব চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের প্রধান দুই সমুদ্রবন্দও চট্রগ্রাম ও মোংলা ভারত ব্যবহার করতে পারবে। এছাড়া, মোংলা ও ভেড়ামারায় কৃষিজমি অধিগ্রহণ করে ভারতকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের সুযোগ দিয়েছে। এ জন্যই ভারত ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সমর্থন দিয়ে এসেছে। ছাত্র-জনতার বিপ্লবে পলাতক ফ্যাসিস্টকে পুনর্বহাল করার জন্য ভারত এখন নানা ফন্দি-ফিকির ও ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করছে। তবে এসবে কোনো কাজ হবে না। বাংলাদেশের মানুষ তা রুখে দিয়েছে এবং দেবে।
লেখক: কলামিস্ট।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের নিরাপত্তা জোরদার
‘সাইবার মানডে’ উপলক্ষে ওয়েব হোস্টিংয়ে লিমডা হোস্টে চলছে ৬০% পর্যন্ত ছাড়!
ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী
ফ্যাসিস্ট সরকারের ৮ বছরের নিষেধাজ্ঞার পর অবশেষে মঞ্চে আসছে থিয়েট্রিক্যাল বাহাস ও কন্ঠনালীতে সূর্য
মিলেছে ‘হারিছ চৌধুরী’র ডিএনএ, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের নির্দেশ
নাম পরিবর্তনের দাবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের
গলায় ফাঁস দিয়ে বৃদ্ধের আত্মহত্যা
আইএসের নৃশংসতার বিচারে জাতিসংঘ ব্যর্থ : নাদিয়া মুরাদ
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হেফাজতের মানববন্ধন
মানিকগঞ্জে হাঙ্গার প্রজেক্টের গণতন্ত্র অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত
এবার ভারতের মালদহে বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল ভাড়া বন্ধ ঘোষণা
কিশোরগঞ্জের হাওর-অর্থনীতি বেগবান করতে চলছে কয়েকশ কোটি টাকার প্রকল্প
প্লাস্টিক ব্যবহার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম
দেশের ৬৯ কারাগারের ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ, ৭০ জঙ্গিসহ ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক
পায়রার রাজস্ব আয় বাড়বে তিনগুণ, দেশের অর্থনীতিতে রাখবে বড় ভূমিকা
মমতা ব্যানার্জির মনে গভীর কট্টরপন্থি হিন্দুত্ববাদ : রিজভী
কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা
কুড়িগ্রামে সাবেক এমপি পুত্র সবুজ গ্রেফতার
ভারতে ৫.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প
অমৃতসরে স্বর্ণ মন্দিরে পাঞ্জাবের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিং বাদালের ওপর গুলিবর্ষণ