ভারতের উস্কানির ফাঁদে পা দেয়া যাবে না
০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
লাগামহীন হুমকি-ধামকি ও অপপ্রচারের পর গত ২৮ নভেম্বর কলকাতা ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ এবং গত সোমবার ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে ভারতের উগ্রবাদী হিন্দুরা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই ভারতীয় মিডিয়া বাংলাদেশের অর্ন্তবর্তী সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার উস্কানিমূলক অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের প্রোপাগান্ডা এবং শেখ হাসিনা ও মোদির যৌথ প্রযোজনায় তাদের দোসর ও ইসকনের মতো ধর্মীয় সংগঠন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটা অংশকে বিভ্রান্ত করে বিভিন্ন রকম হুমকি ও কর্মসূচি গ্রহণের মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙা বাঁধিয়ে দেশকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। শাহবাগে হিন্দু জমায়েত থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম ও রংপুরে ইসকনের সমাবেশ থেকে দেশবিরোধী উস্কানিমূলক কর্মকা-ের বিরুদ্ধে দেশের শিক্ষার্থী, আলেম-ওলামা ও সাধারণ মানুষ বিক্ষুব্ধ হলেও তারা সচেতনভাবে তাদের উস্কানি এড়িয়ে দেশে শান্তি ও সহাবস্থানের পরিবেশ অক্ষুন্ন রাখতে সক্ষম হয়েছে। ইতোমধ্যে ইসকন থেকে বহিষ্কৃত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তি হবে, আর ভিত্তিহীন হলে আইনগত প্রক্রিয়ায় খালাস পাবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু চিন্ময়ের মুক্তির দাবিতে চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় ইসকনের একশ্রেণীর সন্ত্রাসী সহিংস দাঙ্গা সৃষ্টি করে প্রকাশ্যে একজন আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যার মধ্য দিয়ে তারা বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের হিন্দুদের বিরুদ্ধে সহিংস হয়ে উঠার অপচেষ্টা করেছে। তবে দেশের মানুষ অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে তা মোকাবেলা করেছে এবং সাম্প্রদায়িক দাঙা বাঁধানোর ফাঁদে পা দেয়নি। তারা একজন ইসকন সদস্য কিংবা কোনো সনাতন ধর্মাবলম্বীকে আক্রমণ করেনি।
ভারতীয়দের বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা, উস্কানি ও আগ্রাসী মনোভাব এখন উলঙ্গভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। ভারত রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লেগেছে। হিন্দু নির্যাতনের মিথ্যা ও বানোয়াট খবর হিন্দুত্ববাদী মিডিয়া প্রচার করে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। বিজেপির বাংলাদেশবিরোধী ভূমিকার সাথে সে দেশের প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেস এবং পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জিকেও সুর মিলাতে দেখা যাচ্ছে। ভারতের বিধান সভায় মমতা ব্যানার্জি একধাপ এগিয়ে গিয়ে বাংলাদেশে হিন্দুদের রক্ষায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব করেছেন। বলা বাহুল্য, তারা প্রতিদিন বাংলাদেশে হিন্দুদের হত্যা-নির্যাতনের ঢালাও অভিযোগ করলেও কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য বা প্রামাণ্য পরিসংখ্যান হাজির করতে পারছে না। ইসকন সদস্যদের হাতে চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা এবং ত্রিপুরায় বাংলাদেশ হাইকমিশন কার্যালয়ে উগ্রবাদী হিন্দুদের আক্রমণের মধ্য দিয়ে এটাই প্রতিভাত হচ্ছে, ভারত বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙা লাগাতে অবিরাম অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সহকারি হাইকমিশনে উগ্র হিন্দুদের হামলা মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের উপর ভারতের হামলার শামিল। হামলার শঙ্কা থাকা সত্ত্বেও ভারত সরকার কমিশনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এটি আর্ন্তজাতিক (ভিয়েনা) কনভেনশনের লঙ্ঘন।
ভারতের পররাষ্ট্রনীতি এবং গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের অপতৎপরতা অঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গণে তাদের জন্য একদিকে কূটনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে, অন্যদিকে অন্য দেশগুলোতে অস্থিরতা ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করছে। ভারতের কোনো প্রতিবেশীর সাথেই আস্থাপূর্ণ সম্পর্ক নেই। গোয়েন্দাদের মাধ্যমে বিদেশের মাটিতে মানুষ হত্যার দায়ে কানাডার সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রায় ভেঙ্গে পড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও টানাপোড়েন চলছে। ভারতের হেজিমনি ও আগ্রাসী-আধিপত্যবাদী পররাষ্ট্রনীতির সবচেয়ে বড় শিকার বাংলাদেশ। বাংলাদেশে পুতুল সরকার বসিয়ে এ দেশের মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘণ, গণতন্ত্র নস্যাৎ ও চোরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অর্থনৈতিক লুন্ঠনের সুবিধাভোগী ছিল ভারত। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সে লুন্ঠনব্যবস্থা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় ভারতের একশ্রেণীর গণমাধ্যম ও শাসকশ্রেণী অনেকটা উন্মাদের মতো আচরণ করছে। তারা একের পর এক বাংলাদেশবিরোধী নানা ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করে যাচ্ছে, যা কোনো দায়িত্বশীল দেশের কাজ হতে পারে না। ভারতের এমন আচরণ সত্ত্বেও বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা অত্যন্ত সচেতন ও সহনশীল ভূমিকা পালন করছে। আমরা দেখেছি, ৫ আগস্টের পর কীভাবে মসজিদের ইমাম, মাদরাসার শিক্ষক, ছাত্র, রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ দিনরাত মন্দির পাহারা দিয়েছে। হাজার হাজার ম-পে নির্বিঘেœ দূর্গাপূজা উদযাপিত হয়েছে। এরপরও কয়েকটি স্থানে প্রতিমা ভাঙ্গা ও নাশকতার সময় স্থানীয়দের হাতে ভারতীয় এবং হিন্দু যুবক ধরা পড়েছে। এ থেকেই বোঝা যায়, বাংলাদেশে হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে তা বিশ্ব মিডিয়ায় প্রচারের পরিকল্পনা করে হিন্দুত্ববাদীরা। ছাত্র-জনতার প্রতিরোধে একের পর এক ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে যাওয়ার পর ইসকনের হত্যাকা-, সীমান্তে উগ্রবাদী হিন্দুদের আস্ফালন এবং আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এতকিছুর পরও বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট ও অক্ষুণœ রয়েছে। বাংলাদেশের সাধারণ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন, তারা ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের চেয়ে হাজার গুণে ভালো আছেন। বাংলাদেশের হিন্দুদের বুঝতে হবে, তারা এদেশের নাগরিক, এখানে সংখ্যালঘু বলে কিছু নেই, সবাই বাংলাদেশি। বাংলাদেশবিরোধী যেকোনো ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিরুদ্ধে তাদেরও সচেতন হতে হবে। কোনো ধরনের ফাঁদে পা দেয়া যাবে না। এসব ষড়যন্ত্র এবং ভারতের উস্কানিমূলক প্রচার-প্রচারণা এবং পরিকল্পিতভাবে দূতাবাসে হামলার প্রতিবাদ দেশের মানুষ করবে, তবে তা হতে হবে শান্তিপূর্ণ। কোনো ধরনের সহিংসতা ও আক্রমণাত্মক কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করা যাবে না।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সউদী আরবকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ৩৬
যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রফতানিতে চীনের নিষেধাজ্ঞা
বিক্ষোভের মুখে প্রত্যাহার দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক আইন
সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করে যা বললেন এরদোগান
নভেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৫.৬৩ শতাংশ
সৈয়দপুরে পিকআপের ধাক্কায় এক শ্রমিক নিহত
শিক্ষার্থীদের মারধর ও শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে শ্রমিকদের সঙ্গে খুবি শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা হবে না : বিক্ষোভ মিছিলে খেলাফত আন্দোলন
আগরতলায় সহকারি হাইকমিশনে উগ্রবাদীদের হামলার প্রতিবাদে চাঁদপুরে খেলাফত মজলিস বিক্ষোভ
বগুড়ায় ম্যাজিষ্ট্রেটের সিল-স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগে ৩ প্রতারক গ্রেফতার
পিলখানা হত্যা, শাপলা চত্বরে গণহত্যা ও ২৪'র গণহত্যার বিচারের জন্য ছাত্র ঐক্যের প্রয়োজন: শিবির সভাপতি
‘কুটনীতিকদের উপর আক্রমণ করে ভারত নিজেদের অসভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছে’
ষড়যন্ত্র রুখতে সরকারের পাশে থাকবে বিএনপি
ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে ব্যাপক মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়ানোয় বিএফইউজে ও ডিইউজের উদ্বেগ
স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য
ইনকিলাব সাংবাদিকের বাসায় দুর্ধর্ষ চুরি
পঞ্চগড়ে বিএনপির আনন্দ মিছিল
অব্যবহৃত মসজিদ বা তার জায়গা সংরক্ষণ করা প্রসঙ্গে?
চা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করুন