ধর্মীয় সম্প্রীতির এদেশ : যার মূলে আছে ইসলামের আদর্শ
১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৯ এএম
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে সমাদৃত। আবহমানকাল থেকে এ ভূখ-ে নানা জাতি-গোষ্ঠী-বর্ণ ও ধর্মমতের অনুসারীরা পারস্পরিক সুসম্পর্ক রজায় রেখে মিলেমিশে একত্রে বসবাসের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষা করে চলেছে। ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক থেকে ভিন্নতা থাকলেও মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সুদৃঢ় সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ। প্রাচীন, মধ্য, আধুনিকÑ কোনো যুগেই এই সহঅবস্থানের বন্ধন ছিঁড়ে যায়নি। ইতিহাস-ঐতিহ্য, সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা এবং পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত হওয়ার জন্য বিদেশি ও জালিম শাসকবিরোধী আন্দোলনে, মুক্তিযুদ্ধে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে মানুষ বরাবর একাত্মতা পোষণ করেছে। সেসব সংগ্রামে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানÑ কোনো আলাদা পরিচয়ই তাদের ছিল না। সবাই ছিল এদেশের মানুষ, এই পরিচয়ে পরিচিত।
বাংলাদেশের নৈসর্গিক দৃশ্য যেমন সৌন্দর্যম-িত, তেমনি এর অধিবাসীদের ধর্মীয় চেতনা ও বিশ্বাসও সৌহার্দ্যপূর্ণ ও বৈচিত্র্যময়। আমাদের বাংলাদেশের জনগণ মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মাচারে বিশ্বাসী। এ অধিবাসীরা বাঙালি, পাহাড়ি, মণিপুরি, রাখাইন, গারো, কোচ, মান্দি, বংশী, সাঁওতাল, চাকমা, মারমা প্রভৃতি নৃগোষ্ঠীতে বিভক্ত হলেও একক পরিচয়ে সবাই বাংলাদেশি। এদেশের প্রধান সংস্কৃতি বাঙালি হলেও এ দেশের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে চাকমা, ত্রিপুরা, সাঁওতাল, হাজং, মণিপুরিসহ অন্যান্য সংস্কৃতি। সাংস্কৃতিক এ সম্প্রীতির কারণে এদেশে মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুই ঈদ, হিন্দুদের দুর্গাপূজা, বৌদ্ধদের বুদ্ধ পূর্ণিমা এবং খ্রিস্টানদের ক্রিস্টমাস ডে বা বড় দিন উদযাপনকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এসব ধর্মীয় উৎসবের দিনগুলোতে সারাদেশে সরকারি ছুটি থাকে; যা ধর্মীয় সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ।
বাংলাদেশে একজন মুসলমান যতটুকু অধিকার সংরক্ষণ করে, ঠিক ততটুকু অধিকার সংরক্ষণ করে একজন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীও। এ দেশে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান পরস্পরের প্রতি যে সৌহার্দ্য রয়েছে, বিশ্বের অন্য কোনো দেশে তার দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাইতো আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ব্যক্ত করেছেন,Ñ ‘গাহি সাম্যের গান/ যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাঁধা ব্যবধান,/ যেখানে মিশেছে হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিষ্টান।’
মানুষ হিসেবে আমরা সবাই এক জাতি। হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়া (আ.) থেকে সৃষ্ট মানবম-লীর সদস্য হিসেবে সবাই আল্লাহ্ তায়ালার কাছে সমমর্যাদার অধিকারী। মহান আল্লøাহ্ সূরা হুজুরাতের ১৩ নং আয়াতে ইরশাদ করেছেন, ‘হে মানবজাতি! আমি নর ও নারী থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছি। আর আমি বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী ও গোত্রে তোমাদের বিভক্ত করেছি যেন তোমরা একে অপরকে চিনতে পারো।’ মহানবি (সা.) বিদায় হজ্জের ভাষণে সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘হে মানবম-লী! তোমাদের আল্লাহ্ এক ও অদ্বিতীয় এবং তোমাদের আদিপিতাও এক। একজন আরব একজন অনারব থেকে কোনো মতেই শ্রেষ্ঠ নয়। তেমনি একজন আরবের ওপরে একজন অনারবেরও শ্রেষ্ঠত্ব নেই। একজন সাদা চামড়ার মানুষ একজন কালো চামড়ার মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়, কালোও সাদার চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়। শ্রেষ্ঠত্বের মূল্যায়ন করতে বিচার্য বিষয় হবে, কে আল্লাহ্ ও বান্দার হক কতদূর আদায় করলো। এর দ্বারা আল্লাহ্র দৃষ্টিতে তোমাদের মধ্যে সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী সেই ব্যক্তি, যিনি সর্বাপেক্ষা বেশি ধর্মপরায়ণ (বায়হাকি)। তিনি আরো বলেছেন, ‘হে মানবম-লী, সাবধান! তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না। কেননা তোমাদের পূর্বের জাতিগুলো ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কারণেই ধ্বংস হয়ে গেছে’ (সুনানে ইবনে মাজাহ্)।
ধর্মে যদি বলপ্রয়োগের বিধান থাকতো, তাহলে মহানবি (সা.) মক্কা বিজয়ের পর অমুসলমানদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য বাধ্য করতেন এবং মক্কায় বসবাসের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। এতে প্রমাণিত হয়, ধর্মের জন্য বলপ্রয়োগ ইসলামের শিক্ষা নয় অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম কখনও ভিন্ন ধর্মের লোকদের ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করে না। ইসলামের আদর্শ হলো শত্রুর সাথেও বন্ধুসুলভ আচরণের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। এ মর্মে আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ২৫৬ নং আয়াতে ইরশাদ করেছেন, ‘ধর্ম (ইসলাম) গ্রহণে কাউকে বাধ্য করা হবে না।’
কোনো ধর্মই অন্যায়কে সমর্থন করে না। মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানÑ সব ধর্মের মূলমন্ত্র হচ্ছে শান্তি। সব ধর্ম অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আদর্শকে অনুকরণীয় বলে ভাবে। বাংলাদেশের মানুষ ধার্মিক বলেই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহনশীলতার আদর্শ এদেশে মূর্তমান। আমরা সবাই জানি, ইসলাম শান্তি-সম্প্রীতি ও মানবতার ধর্ম। কোনোরূপ সহিংসতা, বিবাদের স্থান ইসলামে নেই। পবিত্র কুরআনুল কারিমের সূরা বাক্বারার ১৯১ নং আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘ফিতনা-ফাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ।’
ইসলাম এমন এক শান্তিপ্রিয় ধর্ম যেখানে সব ধর্মের অনুসারীদের সম্মানের শিক্ষা দেয়। প্রেমপ্রীতি, সৌহার্দ্য আর শান্তি ও সম্প্রীতির এক পরিম-ল বিশ্বজুড়ে প্রতিষ্ঠিত করাই ইসলামের মূল লক্ষ্য। প্রকৃত ইসলামের আকর্ষণীয় শিক্ষার প্রচার ও প্রসার জোর-জবরদস্তি এবং বল প্রয়োগে নয় বরং সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির দ্বারা মানুষের হৃদয় জয় করার মাধ্যমে সম্ভব। বল প্রয়োগ করলে অন্যের অধিকার যেমন সংরক্ষণ হয় না, তেমনি আল্লাহ্ তায়ালার নৈকট্য লাভও এর দ্বারা সম্ভব নয়। ইসলামে মুসলমান ও অমুসলমানের সমঅধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। ইসলাম শত্রুদের সাথেও দয়ার্দ্র আচরণ করে, তা শান্তিকালীন সময়ই হোক বা যুদ্ধাবস্থায়ই হোক। সর্বাবস্থায় ইসলাম অমুসলমানদের অধিকার মর্যাদার সাথে সংরক্ষণ করে। বিদ্বেষ ছড়ানো, কারো ওপর চড়াও হওয়া বা আক্রমণ করার অধিকার ইসলামে নেই। নবি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো অমুসলিমকে অন্যায়ভাবে হত্যা করবে আল্লাহ্ তায়ালা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন’ (সুনানে নাসাঈ: ৪৭৪৭)।
যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে ও এক ধর্মাবলম্বী অন্য ধর্মাবলম্বীকে সম্মান করবেÑ এটাই ধর্মের শিক্ষা। অতএব, মুসলিম-হিন্দু, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান যে ধর্মের অনুসারী হোক না কেন, মানুষ হিসেবে সবাই সম্মানিত। আল কুরআনের সূরা আল ইসরার ৭০ নং আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘আর আমি অবশ্যই আদম সন্তানকে সম্মানিত করেছি।’ এজন্য ইসলামের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) একজন ইয়াহুদির লাশের প্রতিও সম্মান প্রদর্শন করেছেন। একবার রাসূল (সা.) এর পাশ দিয়ে এক ইয়াহুদির লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন তিনি উঠে দাঁড়ালেন। সাহাবায়ে কিরাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এটা তো একজন ইয়াহুদির লাশ, আপনি কেন দাঁড়ালেন? নবি (সা.) উত্তর দিলেন, ‘এটা কী একটি মানুষের লাশ নয়?’ (সহিহ্ বুখারী : ১২৫০)
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ইসলাম এতোই সোচ্চার যে, রাসূল (সা.) নিজেদের জানমালের পাশাপাশি সংখ্যালঘু অমুসলিম সম্প্রদায়ের জানমাল রক্ষায় সচেষ্ট থাকার জন্যও মুসলমানদের প্রতি তাগিদ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, অন্য ধর্মাবলম্বী ও তাদের উপাসনালয়ের ওপর আঘাতও ইসলামে চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
কোনো ধর্মই অধর্ম তথা মারামারি-কাটাকাটি, ফিতনা-ফাসাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকা- করার শিক্ষা দেয়নি। প্রত্যেকটি লোকেরই ধর্মীয় স্বাধীনতা রয়েছে; এটা তার মৌল-মানবিক অধিকার। ধর্মপালন কিংবা বর্জন একান্তই তার নিজস্ব ব্যাপার। এ ব্যাপারে অবৈধভাবে হস্তক্ষেপ করা অধর্মের শামিল। মহান আল্লাহ্ কুরআনুল কারিমের সূরা কাহাফের ৩০ নং আয়াতে ইরশাদ করেছেন, ‘তুমি বল, তোমার প্রতিপালক প্রভুর পক্ষ থেকে পূর্ণ সত্য প্রেরিত, অতএব যার ইচ্ছা সে ঈমান আনুক, আন যার ইচ্ছা সে অস্বীকার করুক’। নবি (স.) বলেছেন, ‘যুদ্ধকালীন সময়ে বা যুদ্ধের পর কোনো মন্দির-গীর্জা-উপাসনালয় ভেঙে ফেলবে না’ (মুসান্নিফ আবি শায়বা: ৩৩৮০৪)। অথচ আজ সারা বিশ্বে চলছে ধর্মের নামে অধর্মের কাজ। মানুষের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ, মারামারি, হানাহানি এবং যুদ্ধবিগ্রহ প্রতিনিয়ত লেগেই আছে। এক ধর্মের অনুসারী অপর ধর্মের অনুসারীকে অন্যায়ভাবে হত্যার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। এক জাতিগোষ্ঠী অপর জাতির ওপর হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে আক্রমণ চালাচ্ছে। সংখ্যাগুরুরা চালাচ্ছে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন। ইসলামে এসবের কোনো স্থান নেই। কবি নজরুল বলেছেন, ‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই নহে কিছু মহিয়ান/ নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি,/ সব দেশে, সব কালে, ঘরে ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।’
অমুসলিমদের প্রতিও কোনো অন্যায় আচরণ ইসলাম অনুমোদন করে না। শান্তি-সৌহার্দ্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সুরক্ষায় ইসলামের রয়েছে শাশ্বত আদর্শ ও সুমহান ঐতিহ্য। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মহানবি (সা.)-এর প্রতিটি আচরণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরল দৃষ্টান্ত। শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলাম মানবজাতির পারিবারিক-সামাজিক সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে।
ইসলামের নবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) সব সময় অমুসলিমদের কেউ অসুস্থ বা বিপদগ্রস্ত হলে তাকে দেখতে যেতেন এবং যথাসাধ্য সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হতেন। হজরত আনাস বিন মালিক (রা.) হতে বর্ণিত এক হাদিসে তিনি বলেছেন, নবি (সা.)-এর খিদমতে এক ইয়াহুদি দাস কাজ করত। একদিন সেই ইয়াহুদি দাস ভীষণ অসুস্থ হলে নবি (সা.) তাকে দেখতে তার বাড়িতে যান। মহানবি (সা.) তার মাথার দিকে বসে অসুখ-বিসুখের খোঁজ-খবরের পাশাপাশি তাকে (দাসকে) ইসলামের দাওয়াত দেন। সে সময় দাস তার পিতার দিকে তাকালে পিতা তাকে বলেন, তুমি মুহাম্মদ (সা.)-কে অনুসরণ করো এবং দাস তৎক্ষণাৎ ইসলাম গ্রহণ করলো। তখন মহানবি (সা.) বলেন, আল্লাহ্র শুকরিয়া আদায় করছি, যিনি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিলেন’ (সহিহ্ বুখারী)।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী ব্যক্তিত্ব হলেন মহানবি (সা.)। তিনি কেবল মুসলমানদের স্বার্থ বিবেচনা করতেন না, অমুসলিমদের অধিকারের প্রতিও সজাগ দৃষ্টি রাখতেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মপালন ও বসবাসের ক্ষেত্রে তিনি যে নিরাপত্তা দিয়েছেন, অন্য কেউ তা আজ পর্যন্ত দিতে পারেননি। নবি করিম (সা.)-এর সময়ে প্রায় সমগ্র আরব উপদ্বীপ ইসলামি রাষ্ট্রের অধীনে চলে এসেছিল। অমুসলিম প্রজাদের সঙ্গে তার সর্বপ্রথম মিত্রতামূলক চুক্তি সম্পাদিত হয় নাজরানের খ্রিষ্টানদের সঙ্গে। খ্রিষ্টানদের সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রেখে নবিজী চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন। চুক্তির বর্ণনায় স্পষ্ট লেখা রয়েছেÑ ‘নাজরান ও তার আশপাশের অধিবাসীদের জীবন, তাদের ধর্ম, তাদের ভূমি, তাদের সম্পদ, তাদের উপস্থিত-অনুপস্থিত লোকজন, তাদের দূতবৃন্দ, তাদের উপাস্য প্রতিমাসমূহ আল্লাহ্র নিরাপত্তা এবং তার রাসূলের হেফাজতে থাকবে। তাদের বর্তমান অবস্থার কোনো পরিবর্তন সাধন করা হবে না। তাদের কোনো অধিকারেও হস্তক্ষেপ করা হবে না। তাদের মূর্তিসমূহ ধ্বংস করা হবে না। তাদের কোনো ধর্মগুরুকে ও সন্ন্যাসীকে তার সাধনা থেকে এবং গির্জার কোনো ফাদারকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হবে না। যা কিছু তাদের দখলে রয়েছে, তা সেভাবেই থাকবে। তাদের জাহিলিয়াতের যুগের কোনো অপরাধ বা খুনের বদলা নেওয়া হবে না। তাদেরকে কোনো সামরিক দায়িত্ব পালন করতে হবে না। ইসলামি ফৌজ তাদের জনগণকে পদদলিত করবে না। তাদের কেউ নিজের কোনো অধিকার দাবি করলে তার সঙ্গে সুবিচার করা হবে। তাদেরকে অত্যাচার করার সুযোগ দেওয়া হবে না এবং তাদের ওপর কোনো অত্যাচার করা হবে না।’
ইসলাম সব দিক দিয়ে সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করেছে। তাদের প্রাণকে মুসলমানদের প্রাণের সমান সম্মান দিয়েছে। ইমাম বায়হাকি (র.) বলেছেন, ‘নবি করিম (সা.)-এর সময় একজন মুসলমান জনৈক আহলে কিতাবিকে হত্যা করেছিল। নবিজীর নিকট মুকাদদমা পেশ করা হলে তিনি বললেন, আমার ওপর জিম্মির অঙ্গিকার পালন করার অধিক জিম্মাদারি এসেছে। এই বলে তিনি ওই মুসলিমের প্রাণদ- কার্যকরের নির্দেশ দেন’ (বায়হাকি ৮ম খ-, পৃষ্ঠা-৩০)
ইসলামে অমুসলমানদের উপাসনালয়ে হামলা-ভাঙচুর এবং অমুসলমানরা যে সব প্রতিমার উপাসনা করে সেগুলোকেও গালমন্দ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনের সূরা আনআম এর ১০৯ নং আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা তাদেরকে (মূর্তিপূজকদের) গালি দিও না, যাদের তারা আল্লাহ্কে ছাড়া উপাস্যরূপে ডাকে, নতুবা তারা অজ্ঞতার কারণে শত্রুতাবশত আল্লাহ্কে গালি দেবে।’
তবে ইসলাম ধর্মে অন্য ধর্মের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যেতে মুসলিমদের কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যখন মক্কার মুশরিকরা নবিজীর কাছে প্রস্তাবনা পেশ করলো যে, এসো আমরা একবছর আমাদের মূর্তিগুলোর পূজা করি, আর পরের বছর আল্লাহর ইবাদত করি।’ নবিজী দৃঢ়তার সাথে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তখন আল্লাহ্ তায়ালা সূরা কাফিরুন নাজিল করেন; এ সূরায় আল্লাহ্ পাক বলেন, ‘(হে নবি) বলুন, হে কাফিরগণ! তোমরা যার (মূর্তি) ইবাদত কর, আমি তার ইবাদত করি না। আমি যার (আল্লাহ্) ইবাদত করি, তোমরা তার ইবাদত কর না। আমি ইবাদতকারী নই, যার ইবাদত তোমরা কর। তোমরা তার ইবাদতকারী নও, যার ইবাদত আমি করি। তোমাদের দীন তোমাদের জন্যে, আমার দীন আমার জন্যে।’
রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন, ‘যে যেই জাতির সাদৃশ্য বা সাযুজ্য অবলম্বন করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত বলে গণ্য হবে’ (আবু দাউদ: ৪০৩১)। খলিফা হজরত উমর (রা.) বলেছেন, ‘তোমরা কাফির-মুশরিকদের উপাসনালয়ে তাদের উৎসবের দিনগুলোতে প্রবেশ করো না। কারণ সে সময় তাদের ওপর আল্লাহর গযব নাযিল হতে থাকে’ (আবদুর রাযযাক, আলমুসান্নাফ: ১৬০৯)।
লেখক: কবি, প্রাবন্ধিক ও সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, শেরপুর সরকারি মহিলা কলেজ, শেরপুর
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?
মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,
আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ
তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!
সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,
গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা
দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত
শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ
চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২
স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব
শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস
শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম
ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ
ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন
পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১
ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ
চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না
ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫
বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড
ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক