পাহাড়িদের নিয়ে ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে হাসিনা-মোদি একজোট হয়ে তাদের দোসরদের দিয়ে একের পর এক ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছেন। সেসব ষড়যন্ত্র ছাত্র-জনতাকে সাথে নিয়ে সরকার সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করে যাচ্ছে। দেশ এখন অনেকটা স্থিতিশীল। তারপরও তাদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। সর্বশেষ ‘পাহাড়ি ছাত্র-জনতা’ নামক একটি সংগঠনকে মাঠে নামানো হয়েছে। এই সংগঠন পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ লেখা গ্রাফিতি পুনর্বহালের দাবিতে গত ১৫ জানুয়ারি মতিঝিলের পাঠ্যপুস্তক ভবন (এনসিটিবি) ঘেরাও করতে যায়। তাদের প্রতিহত করতে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরনটি’ নামে একটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা সেখানে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে কয়েকজন আহত হয়। পরদিন ‘পাহাড়ি ছাত্র-জনতা’ নামধারি সংগঠনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে মিছিল নিয়ে যেতে চাইলে শিক্ষাভবনের সামনে পুলিশ বাধা দেয়। এতে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, হঠাৎ করে পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ যুক্ত করার দাবিতে কারা এদের মাঠে নামিয়েছে? কারা একটি মীমাংসিত বিষয়কে নতুন করে সামনে এনে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চাইছে? কারা এদের নেপথ্যে থেকে উসকানি দিচ্ছে? পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী, কিছু এনজিও উক্ত ছাত্র সংগঠনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিবৃতি দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, কয়েকটি বাংলা ও ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা এসব ঘটনাকে বড় করে দেখিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এবং করছে। তাদের সংবাদ পরিবেশনের ধরন দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না, পত্রিকাগুলো হাঠাৎ উদ্ভুত ওই ছাত্র সংঠনের পক্ষাবলম্বন করে কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। অথচ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) গুলি করে পাখির মতো বাংলাদেশীদের হত্যা করলেও এসব সংবাদ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে না। এমনকি, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা যে গণহত্যা চালিয়েছে, তাও দায়সারাভাবে তুলে ধরতে দেখা যায়। ইতোমধ্যে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে চিহ্নিত পত্রিকাগুলো শেখ হাসিনা ও ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে বলে অনেকের অভিযোগ।
বাংলাদেশের ভূ-খ-ে ‘আদিবাসী’ বলে কিছু নেই। যেসব পাহাড়ি বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নিজেদের ‘আদিবাসী’ বলে দাবি করে, তারা মূলত শরনার্থী। মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড, ভারত থেকে এসে তারা পাহাড়ে বসতি স্থাপন করেছে। চারশ’-পাঁচশ’ বছর আগের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, পাহাড়ে তাদের কোনো বসতি বা অস্তিত্ব ছিল না। কাজেই, তারা ‘আদিবাসী’ এ দাবি সঠিক নয়। ‘আদিবাসী’, ‘সান অফ সয়েল’ বা ভূমিপুত্র বলতে যা বোঝায়, তা তারা নয়। ‘আধিবাসী’ দাবিকারিদের আগে অনাদিকাল থেকে এখন যারা বাঙালী বলে পরিচিত তারাই বাংলাদেশের আদিবাসী। যেমন অস্ট্রেলিয়ায় অ্যাররিজিন ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘রেড ইন্ডিয়ান’রা আধিবাসী। আজকে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রের যারা নাগরিক, তাদের সিংহভাগই অভিবাসী। প্রকৃত ‘আদিবাসী’রা অত্যন্ত ক্ষুদ্র জাতিতে পরিণত হয়েছে। তারা অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। এর বিপরীতে বাংলাদেশে পাহাড়ি বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী দেশের অন্যান্য নাগরিকদের তুলনায় অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। সরকারি চাকরিতে তাদের জন্য ‘কোটা’ও সংরক্ষিত রয়েছে। অথচ পাহাড়ে বসবাসরত বাঙালি বা সারা দেশের সাধারণ মানুষের জন্য এ ধরনের কোনো কোটা নেই। সেখানের বাঙালিরা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তুলনায় অনেক কম সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। অস্বীকার করার উপায় নেই, পাহাড়িরা এক সময় কিছু বৈষম্যের শিকার হয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পাহাড়ে বসবাসরত সকল নাগরিকের উন্নয়নে একটি ‘রোডম্যাপ’ নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। সে ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে এবং অনেক উন্নয়ন হয়েছে। সেখানে যাতায়াত ব্যবস্থাসহ পাহাড়িদের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী উন্নয়নমূলক অনেক কাজ করছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের সহায়তা দিচ্ছে। এত সুযোগ-সুবিধা লাভের পরও কেন তারা সাংবিধানিকভাবে মীমাংসিত একটি বিষয় নিয়ে নিজেদের ‘আদিবাসী’ দাবি করছে? এর পেছনে যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত রয়েছে, তা দেশের মানুষ বহু আগে থেকেই জানে। তারা ‘বিচ্ছিন্নতাবাদ’কে উসকে দিচ্ছে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, এর সাথে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কিছু পত্রপত্রিকা ভূমিকা রাখছে। পাহাড়িদের অযৌক্তিক দাবি, আন্দোলনের পক্ষাবলম্বন করছে। পান থেকে চুন খসলেই ‘গেল গেল’ বলে রব তুলছে।
পাহাড়ি বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কিছু মানুষ বুঝে হোক, না বুঝে হোক, ‘আদিবাসী’ ইস্যুতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের ফাঁদে পা দিয়ে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করে আসছে। তাদের ইতিহাসের দিকে তাকাতে হবে। বুঝতে হবে, তারা ‘আদিবাসী’ নন। এটা মীমাংসিত বিষয়। অন্যান্য নাগরিকদের মতো তারাও এদেশের নাগরিক। এটাও জানতে হবে, তারা অন্যসব নাগরিকের তুলনায় অনেক বেশি সুবিধা ভোগ করছে। এ বাস্তবতা তাদের মেনে শান্ত থাকা উচিত। ষড়যন্ত্রকারীরা ‘আদিবাসী’ ইস্যু তুলে ধরে দেশে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে, সে ফাঁদে পা দেয়া যাবে না। সরকারের উচিত, এর পেছনে যেসব ষড়ন্ত্রকারী রয়েছে, তাদের শনাক্ত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তাদের চক্রান্ত রুখে দিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান
ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল
অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের
গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা
রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি
বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান
২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭
প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু
কী আছে তৌফিকার লকারে?
ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা
অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা
শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা
৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি
৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ