ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ | ৯ মাঘ ১৪৩১

গাজায় যুদ্ধবিরতি: জায়নবাদীদের প্রাথমিক পরাজয়

Daily Inqilab জামালউদ্দিন বারী

২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৩ এএম

ইসরাইলের যুদ্ধবাজ জায়নবাদি নেতারা ভেবেছিল, তারা ১৫ দিনেই গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের তাড়িয়ে সেখানকার ভূমি দখল করে নেবে এবং হামাসের হাতে বন্দি ইসরাইলিদের মুক্ত করে নিয়ে আসবে। এরপর তারা হামাসের টানেল নেটওয়ার্ক ধ্বংস করবে এবং হামাসকে নির্মূল করে গাজার উপর দখলদারিত্ব কায়েম করে গ্রেটার ইসরায়েল গঠনের বন্দোবস্ত নিশ্চিত করবে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের অপারেশন আল আকসা ফ্লাড ছিল এ ভূখ-ের প্রতিরোধ যুদ্ধের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা। এর আগে ২০০৬ সালের নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের মধ্য দিয়ে গাজা উপত্যকার উপর হামাসের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। পশ্চিম তীরে মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফাত্তাহ’র নিয়ন্ত্রণ অক্ষুণœ থাকার মাধ্যমে ফিলিস্তিনের নিয়ন্ত্রণ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বিতর্কিত অসলো চুক্তির আওতায় পশ্চিম তীর ইসরাইলের ইচ্ছাধীন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও হামাসের প্রতিরোধ শক্তি গাজাকে ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখতে বদ্ধপরিকর হয়। ফিলিস্তিনি নির্বাচনের আগে থেকেই গাজা ও হামাস ইসরাইলের সিরিজ আগ্রাসনের সম্মুখীন হয়। ইসরাইলী সেনা কমান্ডার গিলাদ শালিত হামাসের যোদ্ধাদের হাতে বন্দি হলে তাকে মুক্ত করতে ব্যাপক বোমা হামলা ও স্থল অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর হামাসের শর্ত অনুসারে, ৭ শতাধিক ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তির বিনিময়ে শালিতকে মুক্তি দেয়ার জন্য তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা, অনেক দর কষাকষি এবং নতুন নতুন যুদ্ধাভিযান পরিচালিত হয়। বন্দি বিনিময়ের দর কষাকষিতে বনিবনা না হওয়ায় ইসরাইলের ডিফেন্স ফোর্স ৫ বছরেও গিলাদ শালিতকে মুক্ত করতে পারেনি। হামাসের সাথে সম্পাদিত বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় ২০১১ সালের ১৮ অক্টোবর গিলাদ শালিত তার পরিবারের কাছে ফিরে যায়। এর মধ্যে হামাস ও হিজবুল্লাহর সাথে একাধিক যুদ্ধে স্থল অভিযানে ইসরাইলী বাহিনীকে পর্যুদস্ত হয়ে ফিরে যেতে হয়েছিল। উল্লেখ্য, ২০০৮ সাল থেকেই গাজা উপত্যকার উপর স্থল, নৌ ও আকাশপথে অবরোধ আরোপ করে গাজার ২৩ লাখ মানুষকে কার্যত একটি উন্মুক্ত কারাগারে বন্দি করে ফেলে ইসরাইল। গাজাকে অবরুদ্ধ রেখে এর অর্থনীতি এবং মুক্ত বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিনিময়ের অংশীদারিত্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে এর নিয়ন্ত্রক ও প্রতিরোধ শক্তিকে দুর্বল করে এক সময় গাজা দখল করে নেয়া; এটাই ছিল গাজার উপর অবরোধ প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য। হামাস ও প্রতিরোধ অক্ষগুলো ইসরাইলের এই অভিসন্ধি বুঝতে ভুল করেনি। তবে মধ্যপ্রাচ্যের পশ্চিমা বশংবদ একনায়ক ও রাজারা ফিলিস্তিনিদের পাশে না থাকলেও ইরান সরকার ও রেভ্যুলেশনারি গার্ড বাহিনীর অধিনায়ক কাসেম সুলাইমানির সুতীক্ষè মেধা ও সামরিক পরিকল্পনায় অভূতপূর্ব সাফল্যের হাত ধরে হামাসের আল কাসসাম ব্রিগেড ভেতরে ভেতরে এক অজেয় শক্তিতে পরিনত হয়। প্রায় দেড় দশক ধরে অবরোধের পাশাপাশি পশ্চিম তীর ও আশপাশে ফিলিস্তিন অথরিটি নিয়ন্ত্রিত জমিতে নতুন ইহুদি বসতি গড়ে তোলার পাশাপাশি আল আকসা মসজিদের অভ্যন্তরে ইহুদি পুলিশ ও সেনাদের অনুপ্রবেশ ও নামাজরত মুসল্লিদের উপর আক্রমন,নির্যাতন-নিগ্রহের ঘটনাগুলো ফিলিস্তিনসহ মুসলিম বিশ্বকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। হামাসের আল কাসসাম ব্রিগেডের ‘অপারেশন আল আকসা ফ্লাড’ সেই বিক্ষুব্ধতারই বহি:প্রকাশ ঘটেছে। বলা হয়, হামাসের ৭ অক্টোবর আল আকসা ফ্লাড অপারেশনের স্থল অভিযান শুরুর প্রথম ২০ মিনিটে ইসরাইলী লক্ষ্যবস্তুতে প্রায় ৫ হাজার রকেটের ব্যারাজ ছোঁড়া হয়। ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এসব রকেটের অর্ধেকের বেশি প্রতিহত করার দাবি করলেও তাৎক্ষনিক ক্ষয়ক্ষতি এবং হামাসের আকষ্মিক স্থল অভিযানে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল। এরপর ইসরাইলের যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী ও সামরিক কমান্ডাররা রেগে গিয়ে পাগলের মত আচরণ শুরু করে। যুদ্ধের প্রথম একমাসে সংকীর্ণ গাজা উপত্যকায় তার যে পরিমান বোমা হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায় তা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ইউরোপের প্রধান চারটি শহরে ফেলা বোমার চেয়েও বেশি। গাজায় ইসরাইলী গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ বেশ কয়েকটি পারমানবিক বোমার সমান।

হামাস নির্মূল ও বন্দি হওয়া ইসরাইলীদের মুক্ত করার অজুহাত দেখিয়ে গত ১৫ মাস ধরে ইসরাইলী বাহিনী যে ধ্বংসযজ্ঞ, যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যা চালিয়েছে, তা ইতিহাসে নজিরবিহিন। সাতচল্লিশ হাজার নিরপরাধ ফিলিস্তিনিকে হত্যা, ১ লাখ ২০ হাজার মানুষকে আহত, পঙ্গু ও অন্ধ করে দিয়ে, ২০ লক্ষাধিক মানুষকে গৃহহীন করে গাজা উপত্যকাকে ধ্বংসস্তুপে পরিনত করার পর কোনো লক্ষ্য অর্জন করতে ব্যর্থ হয়ে হামাসের শর্ত মেনে নিয়ে যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তিতে উপনীত হওয়ার বাস্তবতাকে কার্যত হামাসের কাছে আইডিএফ’র সামরিক ও কৌশলগত পরাজয়। গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ফিলিস্তিনের অকুতোভয়-বিপর্যস্ত জনগণকে ধ্বংসস্তুপের পাশে রাস্তায় নেমে বিজয়ের উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে হামাসের শর্ত মেনে যুদ্ধ বিরতি চুক্তিকে ইসরাইলের পরাজয় হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইতমার বেন গাভিরসহ তিন মন্ত্রী যুদ্ধকালীন মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন। যুদ্ধবিরতির প্রথম দফায় ৬ সপ্তাহে ৩৩ ইসরাইলী বন্দিকে মুক্তি দেয়ার বিনিময়ে কয়েক শ’ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়ার কথা রয়েছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার প্রথম দিন ৩ জন ইসরাইলী বন্দির বিনিময়ে ৯০জন ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পেয়েছে। হামাসের হাতে জিম্মি ৩ ইসরাইলীর মুক্তির পর ইসরাইলের শহরগুলোতে একদিকে মুক্তি অন্যদিকে পরাজয়ের গ্লানির মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। আর গাজা উপত্যকার ২০ লাখের বেশি মানুষই যেন একটি চরম বিভীষিকাময় বন্দিত্ব থেকে মুক্তির আস্বাদ লাভ করেছে। রবিবার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর রাস্তায় বের হওয়া হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নারী-পুরুষ-শিশু হামাসের আল কাসাম ব্রিগেডের যোদ্ধাদের প্রতি বীরত্বপূর্ণ অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে দেখা গেছে। গত সোমবার কয়েকজন ফিলিস্তিনি তাদের প্রতিক্রিয়ায় জানিয়ে বলেছেন, গত ১৫ মাসের মধ্যে গতরাতে তারা প্রথম নিরাপদে শংকাহীনভাবে ঘুমাতে পেরেছেন। গাজা উপত্যকাকে ধ্বংসস্তুপে পরিনত করা হলেও হলেও হামাস ও গাজার অধিবাসিদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়া যায়নি। তবে গাজা পুর্নগঠনের পাশাপাশি ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুদের উপর যুদ্ধের প্রভাব ও ট্রমাটিক সিনড্রোম লাঘব হতে অনেক সময় লাগতে পারে। একইভাবে ইসরাইলীদের মধ্যেও এই যুদ্ধ এক গভীর ট্রমা বা মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব সৃষ্টি করেছে। পার্থক্য হচ্ছে, হামাস যোদ্ধাদের নেটওয়ার্ক ও জীবনীশক্তি ধ্বংস করতে না পারলেও যুদ্ধের সময় আইডিএফ হাজার হাজার যোদ্ধার মনোবল ভেঙে পড়েছে, আহত হাজার হাজার সেনা ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পারছে না। অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। মিডিয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ ও সেন্সরশিপের কারণে যুদ্ধে ইসরালের অভ্যন্তরে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র পাওয়া সম্ভব নয়। এ থেকে বোঝা যায়, প্রকাশিত তথ্যের চেয়ে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি। ব্যাপক বোমা হামলায় মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে ফিলিস্তিনিরা গাজা উপত্যকা ত্যাগ না করলেও লাখ লাখ ইহুদি ইসরাইল ত্যাগ করে এ সময় ইয়োরোপ-আমেরিকায় পালিয়ে গেছে। স্থায়ী যুদ্ধ বিরতি প্রতিষ্ঠিত না হলে পালিয়ে যাওয়া এসব ইসরাইলির দেশে ফিরে আসা অনিশ্চিত।

মানবসভ্যতার ইতিহাসে ফিলিস্তিন ও গাজা উপত্যকা এক অনন্য অজেয় বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে। গাজা, লেবানন তথা বৃহত্তর সিরিয়ার জনগণ নিজেদের সম্পদ, বাস্তু, রক্ত ও জীবনের বিনিময়ে দাম্ভিক-পরাক্রমশালী ও আগ্রাসি শক্তিকে রুখে দেয়ার বিপুল ঐশ্বর্যের দৃষ্টান্ত রেখেছে বার বার। এটা শুধু জায়নবাদী ইসরাইল রাষ্ট্র গঠনের পরের ইতিহাস নয়, চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ ও আগ্রাসনের মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনের ভাঙ্গা-গড়ার ইতিহাস হাজার হাজার বছরের। মিশরীয়,এসিরিয়া-বেবিলন, গ্রীক-রোমান, বাইজান্টাইন সা¤্রাজ্যের সময় থেকে গাজা উপত্যকা প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক শক্তির দ্বন্দ্ব-সংঘাতের লীলাভূমিতে পরিনত হয়। রোমান যুগে ইহুদিÑখৃষ্টানদের দ্বন্দে টেম্পলের ধ্বংস ও ইহুদিরা দেশ ছেড়ে ইউরোপ-রাশিয়া পালিয়ে যেথে বাধ্য হয়। গত ২ হাজার বছরেও ইহুদিরা বিশ্বের কোথাও একটি রাষ্ট্র গঠন করতে পারেনি। তবে আইবেরিয়ান পেনিনসুলায় মুসলমানদের রাজত্ব কালে সেখানে ইহুদিরা তাদের সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়েছিল। খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে সংঘটিত ক্রুসেডের আগ পর্যন্ত আন্দালুসিয়ার ইহুদিরা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় বসবাসের সুযোগ পেয়েছিল। ক্রুসেডারদের পরাজয়ের পর জেরুজালেম আবারো মুসলমানদের অধিকারে আসে। সেখানে ইহুদিদের নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি ছিল না। তবে ১৪৯২ সালে আলহামরা ডিক্রির মাধ্যমে স্পেনের খৃষ্টান যাজক রাজারা সেখানকার ইহুদিদের বিতাড়ন কিংবা খৃষ্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার পথ বেছে নেয়ার নির্দেশ দেয়। ক্রুসেডের সময়ে আট দশক বাদ দিলে সপ্তম শতাব্দী থেকে প্রথম মহাযুদ্ধের আগ পর্যন্ত হাজার বছর জেরুজালেমের উপর মুসলমানদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ অক্ষুন্ন ছিল। সেখানে ইহুদি খৃষ্টান ও মুসলমানদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণœ ছিল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় হিটলারের কথিত ইহুদি গণহত্যা বা হলোকস্টের দায় মুসলমানদের বর্তায় না। প্রথম মহাযুদ্ধের পর অটোমান সা¤্রাজ্যকে ভেঙ্গে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়ার ইউরোপীয় সা¤্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ফিলিস্তিনের আরব মুসলমানদের জমি দখল করে জায়নবাদি ব্লুপ্রিন্ট অনুসারে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যের উপর ইঙ্গ-মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মূল এজেন্ডায় পরিনত হয়। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রশ্নে পশ্চিমা বিশ্বের দ্বিরাষ্ট্রকেন্দ্রিক সমাধানের প্রতিশ্রুতি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতারণামূলক ভূমিকা নিয়ে ইসরাইলকে কার্যত একটি সামরিক ফ্রাঙ্কেনস্টাইন দানবে পরিনত করার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যকে একটি স্থায়ী যুদ্ধক্ষেত্রে পরিনত করা হয়েছে। ১৯৪৮ সাল থেকে ফিলিস্তিনের উপর জায়নবাদি দখলদারিত্ব একটি ক্রমবর্ধমান প্রক্রিয়া হয়ে উঠেছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ডায়াসে বক্তব্য দিতে দাঁড়িয়ে ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আরব দেশগুলোর ভূমি দখল করে গ্রেটার ইসরাইল প্রতিষ্ঠা এবং ইরান ও সিরিয়ায় রিজিম চেঞ্জ ও সম্ভাব্য সামরিক হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

গাজায় আইডিএফ-এর নাস্তানাবুদ অবস্থায় ইঙ্গ-মার্কিন এজেন্ডায় সিরিয়ার বিদ্রোহীরা বাশার আল আসাদের রিজিম পরিবর্তনে দশক ব্যাপি প্রক্সি যুদ্ধে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করে। প্রায় বিনাযুদ্ধে কথিত তাহরির আল শামের দামেস্ক দখলের পর ইসরাইলে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। ইসরাইলী বাহিনী গোলান মালভূমির বাফার জোনসহ সিরিয়ার অভ্যন্তরে ঢুকে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করার পাশাপাশি সিরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ আকাশ প্রতিরক্ষাসহ সামরিক স্থাপনাগুলোর উপর বিমান হামলা চালিয়ে ধ্বংস করা হলেও তাহরির আল শামের কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বা প্রত্যাঘাতের চিহ্ন কিংবা প্রকাশ্য ঘোষণাও শোনা যায়নি। একইভাবে আইএস’র উত্থানের সময় সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেনসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি হয়ে দাঁড়ালেও তারা ইসরাইলের সীমান্তের দিকে একটি পাথরও ছুঁড়েনি। অথচ আইএস জুজু দেখিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে হাজার হাজার কোটি ডলারের সামরিক কন্ট্রাক্ট আদায় করে নেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সিরিয়ায় নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারো ওভাল অফিসের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। ইউক্রেন ও গাজাযুদ্ধ বন্ধে জোবাইডেনের ব্যর্থতাকে প্রধান ইনকামবেন্সি ফ্যাক্টর হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার করেই ডোনাল্ট ট্রাম্প অসেতাঙ্গাদের ভোট টানার চেষ্টায় অনেকটা সফল হয়েছেন। তিনি শপথ গ্রহণের দু’দিন আগে গাজায় যুদ্ধ বিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও হোয়াইটহাউজের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি বা বা জোবাইডেনের প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত হওয়ার আগেই ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে এই চুক্তির কৃতিত্ব দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছিলেন। স্মরণ করা যেতে পারে, ইরানের সাথে ৬ জাতির পরমানু চুক্তি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহার এবং কথিত ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি ও আব্রাহাম অ্যাকর্ডের নামে ডোনাল্ড ট্রাম্পই প্রথম ফিলিস্তিনে স্বাধীনতার দ্বিরাষ্ট্রকেন্দ্রিক সমাধানের প্রতিশ্রুতি ভেস্তে দিয়েছিলেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যগত অবস্থান ত্যাগ করে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। গ্রেটার ইসরাইল প্রতিষ্ঠার জায়নবাদি এজেন্ডা এগিয়ে চলেছে। হামাস, হিজবুল্লাহ, হুতি ও ইরাকের প্রতিরোধ যোদ্ধারা ইরানের সহায়তায় ইঙ্গ-মার্কিন প্রক্সি ইসরাইলকে পর্যুদস্তু করে যুদ্ধ বিরতিতে বাধ্য করতে পারলেও একটি নৃশংস গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ ঠেকানো যায়নি। মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী দেশগুলো যেন নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছিল। মাঝে মধ্যে মৃদু হুমকি, ভর্ৎসনা করা ছাড়া তাদের ভূমিকা ছিল ইসরাইলকে শুধু ম্যানেজ করার জন্য। ফিলিস্তিনি নেতারা এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির ভঙ্গুরতা ও অনিশ্চয়তা সম্পর্কে সচেতন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে শক্ত ভূমিকা নিতে পারলে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের ভিত্তিতে এবার আল কাকসার মুক্তি ও ফিলিস্তিন সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পথ সুগম হতে পারে।

[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

মাদক বর্জন করুন
খাদ্যপণ্যে ভ্যাট নয়
গাজায় ইসরাইলের পরাজয়
স্বৈরাচারের পতনে অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে
খুনি-দুর্বৃত্তদের রাজনীতির সুযোগ রহিত করতে হবে
আরও

আরও পড়ুন

সিংগাইরে অজ্ঞাত এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার

সিংগাইরে অজ্ঞাত এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার

শহীদ রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ছিলেন গণমানুষের নেতা-মোরেলগঞ্জে বিএনপি নেতা কাজী মনির

শহীদ রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ছিলেন গণমানুষের নেতা-মোরেলগঞ্জে বিএনপি নেতা কাজী মনির

মতিউরের স্ত্রী লায়লার আয়কর নথি জব্দ

মতিউরের স্ত্রী লায়লার আয়কর নথি জব্দ

স্বতন্ত্র বিধিমালা ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান

স্বতন্ত্র বিধিমালা ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান

দুর্নীতির অভিযোগে ইফার কর্মকর্তা শফিকুর সাময়িকভাবে বরখাস্ত

দুর্নীতির অভিযোগে ইফার কর্মকর্তা শফিকুর সাময়িকভাবে বরখাস্ত

উপদেষ্টারা কেউ রাজনীতি করলে সরকার থেকে বের হয়ে করবে : আসিফ মাহমুদ

উপদেষ্টারা কেউ রাজনীতি করলে সরকার থেকে বের হয়ে করবে : আসিফ মাহমুদ

চীনকে মোকাবেলা করতে ভারতের দিকে ঝুঁকছে যুক্তরাষ্ট্র

চীনকে মোকাবেলা করতে ভারতের দিকে ঝুঁকছে যুক্তরাষ্ট্র

বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে দুদকের অভিযান, মিলেছে নানা অনিয়মের প্রমাণ

বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে দুদকের অভিযান, মিলেছে নানা অনিয়মের প্রমাণ

ফাঁকা বাসায় ডেকে নিয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা, অতঃপর

ফাঁকা বাসায় ডেকে নিয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা, অতঃপর

বিশ্বের প্রথম উড়ন্ত বৈদ্যুতিক বাইক উন্মোচন

বিশ্বের প্রথম উড়ন্ত বৈদ্যুতিক বাইক উন্মোচন

মাদক ব্যবসায়ের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হলেন শিক্ষক

মাদক ব্যবসায়ের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হলেন শিক্ষক

সোনারগাঁওয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রধান কার্যালয় উদ্বোধন

সোনারগাঁওয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রধান কার্যালয় উদ্বোধন

চাটখিলে থানার পুকুরে পড়ে ছিল লুট হওয়া চায়না রাইফেল

চাটখিলে থানার পুকুরে পড়ে ছিল লুট হওয়া চায়না রাইফেল

২৬ জানুয়ারি গুলশান-২ এলাকা এড়িয়ে চলার অনুরোধ

২৬ জানুয়ারি গুলশান-২ এলাকা এড়িয়ে চলার অনুরোধ

লাকসামে সমবায়ের বার্ষিক সাধারণ সভায় -এড.সুজন

লাকসামে সমবায়ের বার্ষিক সাধারণ সভায় -এড.সুজন

সৈয়দপুরে ঘন কুয়াশার কারনে বিমান ওঠা-নামা বন্ধ

সৈয়দপুরে ঘন কুয়াশার কারনে বিমান ওঠা-নামা বন্ধ

ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে রাজনৈতিক দল ঘোষণা: আখতার হোসেন

ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে রাজনৈতিক দল ঘোষণা: আখতার হোসেন

সৈয়দপুরে ঘন কুয়াশার কারনে বিমান ওঠা-নামা বন্ধ

সৈয়দপুরে ঘন কুয়াশার কারনে বিমান ওঠা-নামা বন্ধ

কুয়াশার চাদরে ঢাকা সিলেটে, শীতের দাপটে কাহিল জনজীবন

কুয়াশার চাদরে ঢাকা সিলেটে, শীতের দাপটে কাহিল জনজীবন

মুজিবনগর উপজেলা বিএনপির কর্মী সমাবেশ

মুজিবনগর উপজেলা বিএনপির কর্মী সমাবেশ