নির্বাচন কমিশন কী করছে?
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম

অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব কী, তা নিয়ে মতভেদ থাকতে পারে, তবে সকলেই স্বীকার করবেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে এ সরকারের দায়িত্বের ইতি ঘটবে। নির্বাচন গণতন্ত্রের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র হয় না। আমরা যখন গণতন্ত্রের কথা বলি, তখন নির্বাচনের কথা বাদ দিয়ে বলি না। গণতন্ত্র একটি ব্যবস্থা, নির্বাচন তার অনিবার্য অংশ। সুতরাং, নির্বাচন অনুষ্ঠান অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য কতটা গুরুত্ববহ, তা সহজেই অনুমেয়। স্বৈরাচারের পতন ও বিদায়ের পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নিয়েছে। সেই থেকেই নির্বাচন কবে হবে, এমন প্রশ্ন ঘুরে-ফিরে উঠছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে নির্বাচনের সময় রেখা জানানোর দাবি করা হয়েছে। সরকারের তরফে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ বছরের শেষ দিকে কিংবা আগামী বছরের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন আগেই। এতে সব দল সন্তুষ্ট হতে পারেনি। বিশেষ করে, বিএনপি এবছরের মধ্যেই নির্বাচন দাবি করেছে। এখন অবশ্য বিএনপিই নয়, অন্যান্য দলও এ বছরই নির্বাচন চাইছে। এই প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টা সম্প্রতি জাপানি সংবাদ মাধ্যম এনএইচকে’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এ বছরের শেষ দিকে নির্বাচন হতে পারে। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল গত শনিবার জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে অতিজরুরি সংস্কারগুলো করার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। প্রসঙ্গত তিনি প্রধান উপদেষ্টাঘোষিত সময়রেখা এবং তার প্রেস সেক্রেটারির দেয়া ব্যাখ্যাও উল্লেখ করেছেন। জরুরি সংস্কারে কতদিন লাগবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি উল্লেখ করেছেন, বড় জোর ৬ মাস লাগবে। তার এ বক্তব্য থেকে বুঝা যায়, এ বছরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া সম্ভব বা হতে পারে। এদিকে নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণাসহ বিভিন্ন দাবিতে বিএনপি জেলা, মহানগরসহ সারাদেশে সভা-সম্মেলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বিএনপির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, মূল্যস্ফীতি রোধ, আইন-শৃঙ্খলা সুরক্ষা এবং ফ্যাসিবাদের চক্রান্ত মোকাবিলা। বলা হয়েছে, এসব দাবিতে পর্যায়ক্রমে সভা-সমাবেশগুলো অনুষ্ঠিত হবে।
জরুরি সংস্কার, দ্রুত নির্বাচনÑ এমন সিদ্ধান্তই হতে যাচ্ছে। পতিত স্বৈরাচার রাষ্ট্রের সব ব্যবস্থা, কাঠামো ও প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ধ্বংস করে গেছে। এসব সংস্কার বা পুনর্গঠন ছাড়া রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম সচল রাখা অত্যন্ত দুরূহ। সংস্কার আগাপাছতলা বা ব্যাপকভাবেই হওয়া দরকার এবং তার জন্য দীর্ঘ সময়ও প্রয়োজন। অনেকের অভিমত ছিল, পূর্ণসংস্কার শেষে নির্বাচন, তা যত সময়ই লাগুক না কেন। এ অভিমত টেকেনি। পরে প্রয়োজনীয় সংস্কার, পরে নির্বাচনের ধারণা সামনে আসে। সেটাও পরিবর্তিত হয়েছে। এখন নির্বাচনের জন্য যতটা জরুরি ততটাই সংস্কার। অন্তর্বর্তী সরকার মোট ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, যার মধ্যে প্রথম ধাপে গঠিত হয় ৬টি কমিশন। যথা: সংবিধান, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, পুলিশ, নির্বাচন কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন। এই ৬টি কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার বরাবরে ইতোমধ্যে পেশ করা হয়েছে। এই ৬টি বিষয় বা ক্ষেত্র নির্বাচনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত। এসব বিষয়ে সংস্কারের জন্য যে সব প্রস্তাব রাখা হয়েছে, তা রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মত অনুমোদনের ভিত্তিতে গৃহীত হবে। গৃহীত প্রস্তাবগুলোর সবই আবার অন্তর্বর্তী সরকার বাস্তাবায়ন করতে পারবে না। এখানে এখতিয়ার ও সময়ের প্রশ্ন জড়িত। সেক্ষেত্রে যা না হলেই নয়, এমন সংস্কার শেষে নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। আইন উপদেষ্টার বক্তব্যে এ অভিমতই প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি এও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, অযথা সময়ক্ষেপণ করে সরকারে থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই অন্তর্বর্তী সরকারের। সঙ্গতকারণেই এ প্রশ্ন উঠতে পারে, নির্বাচন যদি এবছরের শেষ নাগাদ অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে সেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের সক্ষমতা কি নির্বাচন কমিশন দেখাতে পারবে? সে প্রস্তুতি ও আয়োজন কি তার আছে? আছে কি কোনো তৎপরতা? ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার একটা পদক্ষেপ নির্বাচন কমিশন নিয়েছিল। বলেছিল, ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটার করা হবে। অভিযোগ রয়েছে, অনেক বাড়িতেই নির্বাচন কমিশনের লোকদের দেখা যায়নি। কাজটি যে ঠিকভাবে হয়নি, সেটা না বুঝতে পারার কিছু নেই। নির্বাচন যদি এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে করতে হয় তাহলে উপযুক্ত যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন নিশ্চিত করতে হবে। এইসঙ্গে অতিজরুরি হিসাবে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া এবং নির্বচানের সীমানা পুনর্নির্ধারণ কার্যক্রম সম্পাদন করতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো কাজই শুরু হয়নি। এ দুটি বিষয়ে দুটি আইন আছে। আইন দুটি সংশোধন হবে, নাকি সংস্কার হবে, নির্বাচন কমিশন তার কিছুই জানে না। দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে সময়ক্ষেপণ হলে নির্বাচনপ্রস্তুতিতে পিছিয়ে যাবে নির্বাচন কমিশন। সেক্ষেত্রে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা কঠিন হয়ে পড়বে।
দীর্ঘদিনের জনআকাক্সক্ষা ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে একটি ভালো নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে, যে কমিশন কিনা একটা জননন্দিত নির্বাচন উপহার দেবে। এএমএম নাসিরউদ্দীনের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে বটে; কিন্তু তার কার্যক্রমে জনআকাক্সক্ষা পরিপূরণের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনের সৎ, দক্ষ ও যোগ্য লোক হিসেবে পরিচিত; কিন্তু তার কাজে-কর্মে কোনো উদ্যম ও গতিশীলতা দেখা যাচ্ছে না। প্রশ্ন উঠেছে, যার দায়িত্বে ও কর্তৃত্বে জাতির গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেই নির্বাচন কমিশন কেন নির্বাচন বিষয়ে কিছু জানবে না। বলতে পারবে না কখন নির্বাচন হবে। কার নির্দেশের অপেক্ষায় বসে আছে নির্বাচন কমিশন? তাহলে কি এ কমিশনও স্বৈরাচারের আমলে গঠিত নির্বাচন কমিশনগুলোর মতো সরকারের আজ্ঞাবহ পরাধীন? যদি তার কাজের ক্ষেত্রে অন্যায় হস্তক্ষেপ থাকে, সীমাবদ্ধতা থাকে, তবে কমিশন তা বলতে পারবে না কেন? সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন বিধিবদ্ধ আইনের অধীন এবং তার কার্যক্রমের ব্যাপারে স্বাধীন। প্রশ্ন উঠেছে, নতুন দল নিবন্ধনের ব্যাপারে গণবিজ্ঞপ্তি দিতে বিলম্ব হচ্ছে কেন? কেন তা আটকে আছে? নির্বাচন কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা গণমাধ্যমে বলেছেন, ছাত্ররা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করবে বলে গণবিজ্ঞপ্তি জারিতে বিলম্ব হচ্ছে। এটা কি নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতার প্রমাণ বহন করে? এ ব্যাপারে সরকারের পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ কোনো নির্দেশনা আছে কি না, থাকলেও নির্বাচন কমিশন তা মানতে বাধ্য কিনা, সেটাই প্রশ্ন। সরকারের আজ্ঞাবহ ও নতজানু নির্বাচন কমিশনের দ্বারা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান যে সম্ভব নয়, স্বৈরাচারের আমলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোই তার সাক্ষী। দ্রুততম সময়ে নির্বাচন যেহেতু জাতীয় আকাক্সক্ষা, সুতরাং তা বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম দ্রুত শুরু ও শেষ করতে হবে। সর্বজনগ্রাহ্য একটা নির্বাচন তাকে নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য তার স্বাধীন সত্তার প্রকাশ ও ন্যায়ানুগ ভূমিকা প্রত্যাশা করি।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

মতলব মুন্সীর হাট বাজারে আগুনে পুড়েছে ১৭ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

আর্টেমিস অ্যাকর্ডে যুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশকে স্বাগত জানাল যুক্তরাষ্ট্র

দেশের চার অঞ্চলে দুপুরের মধ্যেই ঝড়ের শঙ্কা, নদীবন্দরগুলোকে সতর্ক বার্তা

সাগরে ডাকাতি: ২ কোটি টাকার মালপত্র লুট, ২৫ ঘণ্টা পর ৬৮ জেলে উদ্ধার

ইসরাইলি অবরোধে অপুষ্টিতে ভুগছে গাজার ৬০,০০০ শিশু : জাতিসংঘ

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গোপন ঢাকামুখী যাত্রা, গোয়েন্দা তথ্যে চাঞ্চল্য

ঢাকায় তাপমাত্রা কমার আভাস, শীতল দিনে স্বস্তির সম্ভাবনা

হঠাৎ বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল, ভারতের উদ্দেশ্য কী ছিল?

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৯ জিএমকে ডিএমডি পদে পদোন্নতি

নোয়াখালীতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনের দাবিতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি ডিসি'র

ইসরায়েলের বর্বরতার প্রতিবাদে রাজধানীতে মোটরসাইকেল র্যালি

সৈয়দপুরে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার বাড়ি থেকে বোমা সাদৃশ্য বস্তু উদ্ধার

বিনিয়োগকারীদের চোখ আগামী নির্বাচিত সরকারের দিকে: খসরু

ভারতজুড়ে ওয়াকফ আইন নিয়ে তীব্র বিক্ষোভ ও আইনি লড়াই

ভক্ত, দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখোরিত মোরেলগঞ্জের লক্ষীখালি বারুনী স্নানোৎসব ও ধর্মীয় মাতুয়া মেলা

ইসরায়েলি অবরোধে ত্রাণহীন গাজায় মানবিক বিপর্যয়

ড. ইউনূসের নেতৃত্ব বাংলাদেশের সমৃদ্ধি আনবে, প্রত্যাশা আমিরাত প্রেসিডেন্টের

নদীতে গোসল করতে নেমে প্রাণ গেল দুই বোনের

জীবিত অভিবাসীদের ‘মৃত’ ঘোষণা করে তাড়াচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন

বঙ্গোপসাগরে ৪ ট্রলারে ডাকাতি, গুলিবিদ্ধসহ আহত ৮