ভাষা সৈনিক অধ্যাপক আব্দুল গফুরের জীবনের শেষ দিনগুলো
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম

আমার আব্বা ভাষা সৈনিক অধ্যাপক আব্দুল গফুর বেঁচে থাকলে আজ তার বয়স হতো ৯৬ বছর। আজ তার জন্মদিন। ২০২৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটে গেন্ডারিয়ার আজগর আলী হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়সজনিত নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। ২০২২ সালের জানুয়ারির শুরুতেই আব্বা শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। বাথরুমে গিয়ে আর উঠতে পারছিলেন না। এরপর থেকে তিনি আর হাঁটাচলা করতে পারেননি। প্রথম কয়েকদিন আমরা নিজেরা দেখলেও পরে পালাক্রমে একজন করে সহকারী নিয়োগ দেওয়া হয় আব্বার সার্বক্ষণিক দেখাশোনার জন্য। জানুয়ারির শেষের দিকে বাসা শিফট করে কোনাপাড়ায় নিজ বাড়িতে চলে যাওয়ার কথা। বাসা শিফট করার ঠিক দুদিন আগে আব্বার কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। আব্বাকে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে নিয়ে যাই। ২০১০ সালে আব্বার হার্টে একটা রিং পরানো, এবং পরের বছর ডাবল চেম্বার পেসমেকার বসানো হয়েছিল, তাই আমরা ওখানেই নিয়ে যাই। কিন্তু ওখানে হার্টের কোনো সমস্যা নয়, বরং ইউরিনে ইনফেকশন, সাথে ব্রেইনের কিছু ড্যামেজও সনাক্ত হয়। ইনফেকশনের ট্রিটমেন্ট বাসায় গিয়েও সম্ভব, তাই হসপিটাল থেকে দুদিন পরেই রিলিজ দেওয়া হয়। তিনদিন পরে ইউরিনের কালচারের রিপোর্ট পেয়ে ডাক্তারের পরামর্শে আব্বাকে অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন শুরু করা হয়। বাসার পাশের ক্লিনিকের একজন সিস্টার কয়েকবার করে বাসায় এসে ইনজেকশন দিয়ে ে তেন। আব্বা দক্ষিণ খিলগাঁওয়ের ভাড়া বাসা থেকে হসপিটালে যান, কিন্তু হসপিটাল থেকে রিলিজ পেয়ে ওঠেন কোনাপাড়ায় নিজ বাসভবনে। নতুন পরিবেশে তিনি কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। বাসায় এসেও বারবার বাসায় যেতে চাইতেন। নতুন বাসাকে তিনি হসপিটাল ভাবছিলেন। ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষায় আব্বার ডিমেনশিয়াসহ আরও কিছু সমস্যা ধরা পড়ে। তবে বয়সজনিত কারণে এগুলে স্বাভাবিক ধরে নিয়ে এটার জন্য বিশেষ কোনো চিকিৎসা দেননি ডাক্তার। ডিমেনশিয়ার জন্য আব্বাকে একটু ভালো সেবাযতেœর গুরুত্ব বুঝিয়ে আন্তরিকভাবে সেবাযতœ করার পরামর্শ দেন। ইউরিনের ইনফেকশন কাটিয়ে ওঠার কয়েকমাস পরে আব্বার রক্তে ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। সোডিয়াম লেভেল বিপজ্জনকভাবে কমে মাত্র ১০৭-এ নেমে আসে। ইয়ামাগাতা হাসপাতালের ডা. ইখলাসুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে, উনি তাৎক্ষণিকভাবে কিছুটা লবণ পানি পান করাতে বলেন। আর পরদিন সকালেই হসপিটালে ভর্তি করাতে বলেন। লবণ পানি খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে আব্বা কিছুটা চাঙা হয়ে ওঠেন। আমাদের সাথে কথাও বলেন। এর আগে কয়েকদিন নিস্তেজ হয়ে পড়েছিলেন, কথাটথাও বিশেষ বলতেন না। হাসপাতালে কয়েকদিন চিকিৎসায় সোডিয়াম লেভেল কারেকশন হলে, আব্বাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। এরমধ্যে আব্বার শরীরে বেডসোর ধরা পড়ে।
২০২২-এর শুরু থেকে ২০২৪-এর এপ্রিল পর্যন্ত আব্বাকে কয়েকবার এই হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করা হয়। ইয়ামাগাতা ঢাকা ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকসহ খুব আন্তরিকভাবে ট্রিটমেন্ট ও সেবাযতœ করেন। এমনকি, আমরা হসপিটাল বিলের বড়ো অংক বকেয়া রেখেও আব্বাকে রিলিজ করে এনেছি কয়েকবার, যা বেশ কিছুদিন পরে পরিশোধ করা হয়েছে। মাঝে মাঝেই ইউরিন ইনফেকশন, রক্তে ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতাসহ আব্বার বিভিন্ন সমস্যার যথাসাধ্য চিকিৎসা করানো হয়। এরমধ্যে ২০২৩-এর শেষের দিকে আব্বার বেডসোর-এ ভয়াবহ ইনফেকশন ধরা পড়ে, যা সেপটিক পর্যায়ে চলে যায়। তখন একটানা প্রায় ছয়মাস আব্বা এই হসপিটালে ভর্তি ছিলেন। ২০২৪-এর এপ্রিল মাসে রোজার ঈদের কয়েকদিন আগে আব্বা বাসায় ফেরত আসতে পারেন। এই ছয়মাসে বেডসোরের সেপটিক এবং ইনফেকশন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও মাঝে মাঝেই সোডিয়াম এবং পটাসিয়াম ঘাটতি হতে থাকে। এগুলো নিয়ন্ত্রণে আব্বার খাদ্যতালিকায় লবণ এবং ডাব ছিল নিয়মিত।
আব্বাকে প্রতিবার হাসপাতালে নেওয়ার সময় মনের মাঝে আশঙ্কা জাগত, ‘আব্বাকে কি বাসায় ফেরত আনতে পারব?’ আল্লাহর অসীম রহমতে প্রতিবারই আব্বা চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরতে পারতেন। ডিমেনশিয়ার প্রভাবে আব্বা মাঝে মাঝেই ঘোরের মাঝে চলে যেতেন। টাইম মেশিনে চড়ে আশি-পঁচাশি বছর পিছিয়ে একেবারে শৈশবে চলে যেতেন। আমাদের গ্রামে। আমাদের পুরোনো বাড়িতে। হড়াই নদীর পাড়ে। মক্তবে বা ঈদগাহ ময়দানে। কোনো কোনোদিন আব্বা বলতেন তিনি গ্রামের বাড়ি থেকে ঘুরে এসেছেন। আমরা যেখানে থাকতাম সেটাকেই তিনি গ্রামের বাড়ি ভাবতেন। তিনি শুয়ে শুয়েই দোওয়ালে দাগ কেটে দেখিয়ে দিতেন, বাড়ির লোকেশন। আব্বার ছোটোবেলার কত কথা মনে হতো। কবে কোন শিক্ষক অনৈতিকভাবে আব্বার গায়ে হাত তুলেছিলেন। জুনিয়র মাদরাসা তালিমনগর যেতে একবার পদ্মার চরে নৌকা মিস করে একা একা ভীষণ ভয় পেয়েছিলেন। ভয়ে জোরে জোরে কাঁদছিলেন, এমন অনেক কিছু। মাঝে মাঝে ছোটোবেলার মুরুব্বিদের নাম ধরে ধরে জানতে চাইতেন, কার কী খবর! আমরা হয়তো উনাদের নামই শুনিনি। আমাদের জন্মের আগেই যারা মারা গিয়েছেন, তাদের কথা জিজ্ঞেস করতেন, কে কেমন আছে। উত্তরে আমরা কিছু একটা বলে দিতাম। একদিন হঠাৎ করে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ স্যার কি মারা গেছেন?’ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আব্বার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন। এমন অনেকের নাম ধরে আব্বা জানতে চাইতেন। মাঝে মাঝেই আব্বা বাড়ি যেতে চাইতেন। আমাদের গ্রামের বাড়ি দাদপুর গ্রামে। উনাকে বোঝাতাম, এটাই উনার নিজের বাড়ি। উনার জমির উপরে নির্মিত। আমরা একসাথে এক বাড়িতেই থাকি। আব্বা থাকেন পাঁচতলায়, আমার বড় ভাই থাকেন চার তালায় আর আমি ছয় তালায়। এভাবে বোঝালে আব্বা যেন কিছুটা মেনে নিতেন। একটু সুস্থ থাকলে আব্বা গান শুনতে চাইতেন। নজরুলের গান, হামদ-নাত, এগুলো খুব পছন্দ করতেন। বিশেষ করে আব্বাসউদ্দীনের কণ্ঠে নজরুলের গান শুনতে আব্বা খুব পছন্দ করতেন। আমরা মোবাইল থেকে আব্বাকে গান শোনাতাম। আব্বা শুয়ে শুয়েই উপভোগ করতেন।
কোনাপাড়ায় একবার আমার ছোটোফুপু আব্বাকে দেখতে আসেন। ভাইবোনের দীর্ঘদিন পরে দেখা হওয়ায় দুজনেই ভীষণ খুশি হন। আত্মীয়-স্বজন অনেকেই আসতেন। সবাইকে সবসময় আব্বা চিনতে পারতেন না, আবার কাউকে চিনতে পারলে খুব খুশি হতেন। তাদের কুশল জানতে চাইতেন। আব্বা মাঝে মাঝেই সামাদ চাচার কথা বলতেন। ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে আব্বার প্রিয় ছাত্র ছিলেন তিনি। আমাদের বাসাতেও কিছুদিন ছিলেন তিনি। ইনকিলাব পত্রিকা নিয়েও আব্বা ভাবতেন। কোনাপাড়া গিয়েও আব্বা ভাবতেন ইনকিলাব অফিসে কোন রাস্তা দিয়ে গেলে সুবিধা হবে। আব্বার একজন সহকর্মী সাংবাদিক নাকি কোনাপাড়া থাকেন, একসাথে দুজনে অফিসে যেতে পারবেন, এমন অনেক কথা। এভাবে কিছুদিন চলার পরে শেষবার ২৫ সেপ্টেম্বর ভোরবেলা আব্বাকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশে বের হয়ে যাত্রাবাড়ী ইবনে সিনায় সিটি স্ক্যান করানো হলে ব্রেইনে মাইল্ড স্ট্রোক ধরা পড়ে। ইয়ামাগাতা হসপিটালে নেওয়া হলে ব্রেইনের পাশাপাশি হার্টের সমস্যাও ধরা পড়ে। ব্রেইন ও হার্ট দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হলে, আব্বাকে আসগর আলী হাসপাতালে ট্রান্সফার করা হয়। ওখানে ধরা পড়ে, আব্বার শরীরে বসানো পেসমেকার ঠিকমতো কাজ করছে না। টে¤েপারারি পেসমেকার বসিয়ে কো¤পানির সাথে যোগাযোগ করা হয় এবং তারা এসে চেক করে দেখেন পেসমেকারের ব্যাটারির কার্যকারিতা প্রায় শেষ, তাই ব্যাটারি রিপ্লেস করার কথা বলেন।
২৬ সেপ্টেম্বর বৃহ¯পতিবার বিকেলেই আজগর আলী হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের হেডের সাথে আলাপ করে শনিবার সকালে পেসমেকারের ব্যাটারি রিপ্লেস করার সিদ্ধান্ত হয়। আমরা বাসায় এসে পেসমেকারের মডেল নম্বর পাঠিয়ে দেই কো¤পানির কাছে, যাতে উপযুক্ত ব্যাটারি পাওয়া যায়। বৃহ¯পতিবার, শুক্রবার আইসিইউতে ধীরে ধীরে আব্বার শারীরিক অবস্থার সামান্য উন্নতি হচ্ছিল। আমরা দিনে দুবার করে আব্বাকে দেখতে যেতে পারতাম। শুক্রবার বেলা বারোটার দিকে যখন শেষবার আব্বাকে দেখতে যাই, তখন আমার মনে হলো, আব্বা কিছু একটা বলতে চাচ্ছেন। আব্বার কণ্ঠ দিয়ে ¯পষ্ট কোনো স্বর বের হচ্ছে না, তবে তিনি কিছু বলতে চাচ্ছেন। আমরা কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি, আব্বা কিছু বলছেন? আব্বা শব্দ করতে পারছিলেন না, তবে বারবার চেষ্টা করছিলেন কিছু বলতে। নিঃশব্দেই অনেককিছু বলার চেষ্টা করছেন তিনি। ডাক্তাররা আব্বার এই মুভমেন্টের প্রয়াসকেই ইতিবাচকভাবে নেন এবং আমাদেরকেও বলেন, পেশেন্ট ধীরে ধীরে উন্নতি করছে, ব্যাটারি রিপ্লেস করা হলে আরও উন্নতি হতে পারে, এমনকি কেবিনেও শিফট করা যেতে পারে। আমরা হাসপাতালে বসে রইলাম। হঠাৎ করে মাইক্রোফোনে আব্বার নাম উচ্চারণ করে বলা হলো, উনার বাসার কোনো লোক আছে কিনা। আমরা ভেতরে গেলে দায়িত্বরত ডাক্তার বলেন, পেশেন্টের অবস্থা হঠাৎ করে খারাপ হয়ে গেছে, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। যেহেতু আমরা আগেই ডাক্তারদের সাথে আলাপ করে লাইফ সাপোর্ট না নেওয়ার কথা নিশ্চিত করেছিলাম, তাই ওটা ছাড়া সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন ডাক্তাররা। আমাদেরকে শান্ত থাকতে বলেন এবং ভাইবোন যারা আছেন, তাদেরকেও আসতে বলেন। এর কিছুক্ষণ পর বেলা ২ট ৪৩ মিনিটে নিশ্চিত করা হয়, আব্বা আর আমাদের মাঝে নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আব্বা জীবনের শেষ দিনগুলোতে পুরোপুরি সজ্ঞানে ছিলেন না। এটা শুরু হয় আমার মা মারা যাওয়ার পর থেকেই। আমার মা ২০২০ সালের ১০ জুন ইন্তেকাল করেন ব্রেইন স্ট্রোকে। মা মারা যাওয়ার পর থেকে আব্বা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যেতে থাকেন। এমনকি রাতে একা ঘুমোতেও ভয় পেতেন। আমরা তিনভাই পালা করে আব্বার সাথে ঘুমাতাম। আব্বা এসময় দিনদিন শিশুর মতো হয়ে যান। শিশুর মতো সরল, কিছুটা ভীতু আর ভীষণ কৌতূহলী। ডিমেনশিয়ার ইফেক্টে নিকট অতীত ভুলে যেতেন, কিন্তু সত্তর আশি বছর আগের কথা অবলীলায় বলে যেতেন। আব্বার শৈশব-কৈশোরর অনেক অজানা কথা আমরা জানতে পারি। আমার দাদা প্রায় ছিয়ানব্বই বছর বেঁচেছিলেন, আব্বার ধারণা আব্বারও মৃত্যুর সময় হয়তো এসে গেছে। একদিন রাতে আমাকে খুব ঠান্ডা মাথায় বললেন, আমার মনে হচ্ছে, আমি এখন মারা যাব। কিন্তু আমার কোনো খারাপ লাগছে না। কথাগুলো কয়েকবার বললেন। তিনি মৃত্যু পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়েও বেশ চিন্তিত ছিলেন। আব্বা মারা গেলে আমাদের কী হবে, এটা ছিল তার মূল চিন্তা। তমদ্দুন মজলিসের ভবিষ্যৎ কী হবে, এটা নিয়েও আব্বা বেশ চিন্তিত ছিলেন। কোনাপাড়ায় আব্বার নিজের বাড়িতে শিফট করার ব্যাপারেও আব্বা বেশ আগ্রহী ছিলেন। আমাকে বারবার বলতেন, আমি যেন অবশ্যই তার সাথে কোনাপাড়া শিফট করি। আব্বা মাঝে মাঝে সবকিছু ভুলে যেতেন। আবার মাঝে মাঝে সবকিছু মনে করতে পারতেন। যখন কোনোকিছু ভুলে যেতেন, তখন ঠিক শিশুর মতো মিষ্টি সরল হাসি দিতেন। একসময়ে সবচেয়ে বড়ো যে ঘটনা ঘটে, তা হলো আব্বা লেখালেখির ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। বিছানায় পড়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আব্বা সপ্তাহে অন্তত একটি করে লেখা দৈনিক ইনকিলাবে পাঠিয়ে দিতেন, যদিও মা মারা যাওয়ার পর থেকে আব্বার লেখার ধার কমে যেতে থাকে। শয্যাশায়ী হবার পরে এটা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
আব্বার শেষ দুতিন বছরে খাওয়ার রুচি বদলে যায়। শাকসবজি জাতীয় খাবার আব্বা সারাজীবন পছন্দ করলেও শেষ দিনগুলোতে আব্বা এগুলো খেতে চাইতেন না। মিষ্টি, সুজি সেমাই, ডাবের পানি, কলা, এগুলো ছাড়া আব্বা কিছু খেতে চাইতেন না। ভাত, মাছ, গোশত সজ্ঞানে খেতে চাইতেন না। অনেক বুঝিয়ে খাওয়ানো হতো। আব্বা বেশি অসুস্থ হলে মাঝে মাঝে কাউকেই চিনতে পারতেন না, এমনকি আমাদেরকেও না। আবার কিছুক্ষণ বা কিছুদিন পরে ঠিকই সবাইকে চিনতে পারতেন। নামাজের সময় হলে তয়াম্মুম করে নামাজ আদায় করতেন। মাঝে মাঝে ভুল করে, একবার নামাজ পড়ার পরে আবার পড়তে চাইতেন। আবার কোনো কোনো সময় নামাজের কথা মনেই করতে পারতেন না। কিছুটা সুস্থ থাকলেও আব্বা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতেন। বিশেষ করে ব্রিটিশ আমল বা পাকিস্তান আমলের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের কথা বলতেন। আমরা ছিলাম শ্রোতা। বিছানায় পড়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আব্বা অনলাইনে তমদ্দুন মজলিসের বিভিন্ন আলোচনায় অংশ নিতেন। চেতন অবচেতনের মাঝামাঝি আব্বা একা একাই যেন ভাষণ দিতেন।
মৃত্যুুর আগে প্রায় তিন বছর আব্বা শয্যাশায়ী ছিলেন। এসময়ে উনি বেশ কষ্টও সহ্য করেন। পরম করুণাময় আল্লহ রাব্বুল আলামিন হয়তো তার বান্দার দুনিয়াবি ভুল-ভ্রান্তির শাস্তি দুনিয়ার বুকেই দিয়ে, চিরস্থায়ী জান্নাতের জন্যই আব্বাকে মনোনীত করেন। পরম করুণাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে আব্বার জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব ফরিয়াদ করি এবং সকল পাঠকবৃন্দের কাছে আব্বার জন্য দোয়া দরখাস্ত করি। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার প্রতি সমর্পিত একজন বান্দা হিসেবে আব্বাকে কবুল করে নিবেন। পরম করুণাময়ের কাছে আমাদের আকুল ফরিয়াদ।
লেখক: অধ্যাপক আব্দুল গফুরের পুত্র।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

নববর্ষ উদযাপনে মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আনন্দ শোভাযাত্রা

মাজারের বার্ষিক ওরসের মেলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল স্বামী

কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পৌনে দুই কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত

সরকার নয়, আমরা একটি দেশ হিসেবে কাজ করছি: জ্বালানি উপদেষ্টা

মতলবে উপজেলা বিএনপির বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

ফিলিস্তিনবাসীদের শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিল

বর্ণাঢ্য ‘ড্রোন শো’ দেখে মুগ্ধ লাখো মানুষ

নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক : মঞ্জু

বুধবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পুরোনো পদে ফিরলেন গাঙ্গুলি

আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল

রূপায়ণ সিটিতে শতকন্ঠে বর্ষবরণ

বর্ষবরণকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরে জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা

আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি: ফারুকী

ভারতীয়দের হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমাল সৌদি

চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে ঢাকার আকাশে ব্যতিক্রমী ড্রোন শো

নাসিরনগর প্রশাসনের বর্ষবরণে উপস্থাপক ছাত্রলীগ কর্মী, সাংবাদিককে এসিল্যান্ড বললেন কিছু হবে না!

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আহমাদ মারা গেছেন

পহেলা বৈশাখ আমাদের সংস্কৃতি, ভালোবাসা আর আনন্দের প্রতীক : সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা

নববর্ষে আইন শৃঙ্খলা সুরক্ষায় প্রশংসনীয় ভূমিকায় র্যাব - ৯