চীনের বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম

অন্তর্বর্তী সরকারের সাত মাস হতে চলেছে। দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল কারার জন্য এ সময় কম নয়। দেখা যাচ্ছে, দেশের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করাতে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টাসহ অন্য উপদেষ্টাদের সক্ষমতা পরিদৃষ্ট হচ্ছে না। এখন অর্থ চুরি বা লুটপাট হচ্ছে না বটে, তবে অর্থনীতিতে গতি বলতে কিছু নেই। রফতানি ও রেমিট্যান্স বাড়লেও এতে সরকারের কৃতিত্ব নেই। খাত দুটি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই চলে। এ দুটি খাত ছাড়া অর্থনীতির প্রায় সব সূচক নিম্নগামী। শেখ হাসিনার শাসনামল থেকে যে টাকার সংকট চলছে, তার উত্তরণ ঘটানো সম্ভব হয়নি। বিনিয়োগ না হওয়া এবং শিল্পকারখানা বন্ধ হওয়ায় বেকারত্বের হার হু হু করে বাড়ছে। সাধারণ মানুষের আয় কমে গেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে তাদের জীবনযাপন দুরুহ হয়ে পড়েছে। আয়ের সাথে ব্যয় সংকুলান করতে পারছে না। অর্থনীতিতে সরকারের কোনো সুখবর নেই। উল্টো তাকে ঋণ করে চলতে হচ্ছে। টাকার অভাব সামাল দিতে নতুন টাকা ছাপতে হচ্ছে। এতে টাকার মান কমে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তি পেতে দেরি হবে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। আরও দুঃসংবাদ হচ্ছে, আসন্ন রোজা এবং গ্রীষ্মে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট চরম আকার ধারন করবে। সরকারকে ব্যাপক লোডশেডিং করতে হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফওজুল কবির খান বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য গরমে এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপদেষ্টা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের দিকে যতটা মনোযোগী, বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে ততটা মনোযোগী নন। ইতোমধ্যে টাকার অভাবে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ভারতের আদানি গ্রুপ বকেয়া পাওনার অজুহাতে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক করে দিয়েছে। বিদ্যুৎ উপদেষ্টা আদানিকে পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহের অনুরোধ করলে প্রতিষ্ঠানটি যান্ত্রিক ত্রুটির কথা বলে নানা টালবাহানা শুরু করেছে। এ নিয়ে পর্যবেক্ষকরা বিদ্যুৎ উপদেষ্টার সমালোচনা করছেন। তারা বলেছেন, তিনি নতুন উদ্যোগ ও পদক্ষেপ না নিয়ে হাসিনার মতোই ভারতের পারপাস সার্ভ করার জন্য তোষামোদি করছেন। তার উচিৎ ছিল, কীভাবে দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায়, এ ব্যাপারে বেশি তৎপর হওয়া। এ ব্যাপারে তিনি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন।
অর্থনীতিকে দ্রুত সচল করতে উপদেষ্টাদের যে ধরনের উদ্যোগ নেয়ার দরকার ছিল, তা করতে পারেনি। অর্থনীতিবিদদের মতে, সাত মাস সময় একটি সরকারের জন্য কম সময় নয়। ২০২২ সালের ১৩ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শ্রীলঙ্কার রাজাপাকসে সরকার পালিয়ে যাওয়ার পর নতুন সরকার ব্যাপক উদ্যোগ নিয়ে দেশটির শূন্য হয়ে যাওয়া অর্থনীতিকে দুই-তিন মাসের মধ্যেই দাঁড় করিয়েছে। এমনকি, বাংলাদেশ থেকে ২০২১ সালের জুনে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে পরিশোধও করে দিয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে, শ্রীলঙ্কার সে সময়ের সরকারের দ্রুত উদ্যোগ ও সক্ষমতার পরিচয় দেয়ায়। অন্তর্বর্তী সরকার এ কাজটি করতে পারেনি। এটি সরকারের চরম ব্যর্থতা হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টাসহ অন্যান্য উপদেষ্টদের উদ্যোগ ও উদ্যমের অভাব রয়েছে। তা নাহলে, ছয় মাস পার হওয়ার পরও অর্থনীতির দৈন্যদশা কাটবে না কেন? প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আন্তরিকতা ও উদ্যোগের ঘাটতি নেই। বিশ্বব্যাপী তাঁর গ্রহণযোগ্যতা দিয়ে ইতোমধ্যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন। তবে, এসব প্রতিশ্রুত অর্থ কীভাবে দ্রুত আদায় করে অর্থনীতিকে সচল করা যায়, সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাসহ অন্য উপদেষ্টারা তা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। যদি এই ছয় মাসে সহায়তার অর্থ আনা যেত, তাহলে বিদ্যমান অর্থ সংকট অনেকটাই কেটে যেত। গত বছর নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের অধিবেশন চলাকালে ২৫ সেপ্টেম্বর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র এক সাইডলাইন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ওয়াং ই বাংলাদেশে ব্যাপক পরিসরে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসও চীনের এ আগ্রহে সাড়া দিয়ে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। শুধু বিদ্যুৎ খাতে নয়, ওয়াং ই জানান, চীন বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক বিনিয়োগের মাধ্যমে শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়। এমনকি, বাংলাদেশী পণ্য শূন্য শুল্কে চীনে রফতানি করতে পারবে বলেও তিনি জানান। অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে চীনের এই আগ্রহ বাংলাদেশের জন্য বড় সুযোগ হয়ে এসেছে। আগামী মাসে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের কথা রয়েছে। এ সফর বাংলাদেশের সাথে চীনের সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে। দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। তারা মনে করেন, এ সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। এজন্য, উপদেষ্টাদের প্রস্তুতি, উদ্যোগ ও দুই দেশের মধ্যে নিবিড় যোগাযোগ জরুরি। চীনের মতো অর্থনৈতিক পরাশক্তির আগ্রহকে কাজে লাগানোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো উচিৎ। পরিতাপের বিষয়, এ ব্যাপারে সরকারের নীতিনির্ধারক, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো উদ্যোগ আছে বলে মনে হয় না। বর্তমানে যে বিদ্যুৎ সংকট চলছে, চীনের সাথে দ্রুত ও জরুরিভিত্তিতে সোলার প্রজেক্ট শুরু করলে, তাতে আশার আলো হয়ে দেখা দিত। তা না করে, বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ভারতের আদানির কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহের অনুরোধ করছেন। অথচ এক চীনের সাথে বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তুললে দেশের অর্থনৈতিক সংকট অনেকটাই কেটে যেত। শূন্য হয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কাও তাই করেছিল। দেশটি ভারতকে গিয়ে অনুরোধ করেনি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের উপদেষ্টারা কী করছেন? কী সক্ষমতার পরিচয় দিচ্ছেন? ছয় মাসে তাদের আমলনামায় ব্যর্থতা ছাড়া কি কিছু আছে?
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যে স্বপ্ন, তা অন্য উপদেষ্টারা কতটা ধারন করেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি দেশকে যে অবস্থানে দেখতে চান, তার চিন্তাধারার ধারেকাছেও তারা আছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। তাঁরা যদি তাঁর স্বপ্ন ও চিন্তা এবং বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতার সিকিভাগও ধারন করে উদ্যোগী হতেন, তাহলে এই ছয় মাসে দেশ অনেকদূর এগিয়ে যেত। চলমান যে অর্থ সংকট, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট, জনজীবনের বিপর্যস্ততা : এসব অনেকাংশ কেটে যেত। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এক চীনের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে পারলে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে বেশি সময় লাগবে না। চীন যেখানে নিজেই আগ্রহী, সেখানে আমাদের আড়ষ্ট হয়ে থাকার কোনো কারণ নেই। কাজেই, উপদেষ্টাদের সক্রিয় হয়ে চীনা বিনিয়োগ কীভাবে বাড়ানো যায়, এ ব্যাপারে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের তাবৎ দেশ চীনের বিনিয়োগ ও সহযোগিতা ব্যাপকভাবে গ্রহণ করছে, সেখানে চীনের আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও অমাদের হাতগুটিয়ে বসে থাকার কোনো কারণ নেই।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

নববর্ষ উদযাপনে মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আনন্দ শোভাযাত্রা

মাজারের বার্ষিক ওরসের মেলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল স্বামী

কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পৌনে দুই কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত

সরকার নয়, আমরা একটি দেশ হিসেবে কাজ করছি: জ্বালানি উপদেষ্টা

মতলবে উপজেলা বিএনপির বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

ফিলিস্তিনবাসীদের শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিল

বর্ণাঢ্য ‘ড্রোন শো’ দেখে মুগ্ধ লাখো মানুষ

নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক : মঞ্জু

বুধবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পুরোনো পদে ফিরলেন গাঙ্গুলি

আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল

রূপায়ণ সিটিতে শতকন্ঠে বর্ষবরণ

বর্ষবরণকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরে জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা

আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি: ফারুকী

ভারতীয়দের হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমাল সৌদি

চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে ঢাকার আকাশে ব্যতিক্রমী ড্রোন শো

নাসিরনগর প্রশাসনের বর্ষবরণে উপস্থাপক ছাত্রলীগ কর্মী, সাংবাদিককে এসিল্যান্ড বললেন কিছু হবে না!

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আহমাদ মারা গেছেন

পহেলা বৈশাখ আমাদের সংস্কৃতি, ভালোবাসা আর আনন্দের প্রতীক : সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা

নববর্ষে আইন শৃঙ্খলা সুরক্ষায় প্রশংসনীয় ভূমিকায় র্যাব - ৯