গাজা স্ট্রিপ ও মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভয়ঙ্কর গেমপ্ল্যান

Daily Inqilab জামালউদ্দিন বারী

২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ এএম

নির্বাচনের মধ্য দিয়ে হামাস নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পর থেকেই গাজার জনগণের উপর সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করেছিল ইসরাইল। উদ্দেশ্য হচ্ছে, গাজার অর্থনীতি, হামাসের সক্ষমতা এবং প্রতিরোধ শক্তিকে দুর্বল করে দিয়ে এক সময় গাজার উপর আগ্রাসন চালিয়ে তা দখল করে নেয়া। ফিলিস্তিনিদের ভ’মির উপর সাড়ে ৭ দশকের দখলদারিত্ব এবং ক্রমবর্ধমান আগ্রাসনের এক পর্যায়ে আল আকসা মসজিদে নামাজরত মুসল্লিদের উপর জায়নবাদী সামরিক পুলিশের নির্মম হামলা, মসজিদের প্রবেশপথ বন্ধ রেখে মসজিদ কমপ্লেক্সে ইহুদিদের প্রবেশের অবাধ সুযোগদান এবং অবৈধ নির্মাণ কাজ চালিয়ে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের ঈমানের প্রতি আঘাতের চরম সীমা অতিক্রম করার পর হামাসের আল কাস্সাম ব্রিগেড প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের অপারেশন আল আকসা ফ্ল্যাড ছিল একটি অভিনব, অভাবনীয় ও সংক্ষিপ্ত গেরিলা অভিযান। ইসরাইলের দিকে কয়েক হাজার রকেট নিক্ষেপের সাথে সাথে উড়–ক্কু মেশিন দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে ইসরাইলে ঢুকে ২ শতাধিক ইসরাইলি সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে গাজায় নিয়ে আসে হামাস যোদ্ধারা। এসব এবং পরের ইতিহাস সবারই জানা। এর আগেও বেশ কয়েকবার গাজায় স্থল অভিযান চালিয়ে ইসরাইলী কোনো বন্দিকে মুক্ত করতে পারেনি আইডিএফ। বন্দিদের মুক্ত করতে এবং হামাসের নেটওয়ার্ক ধ্বংস করতে ঘনবসতিপূর্ণ ক্ষুদ্র গাজা উপত্যকায় হাজার হাজার টন বিধ্বংসী বোমা ফেলে পুরো গাজাকে ধ্বংসস্তুপে পরিনত করে এবারো একজন বন্দিকেও মুক্ত করতে পারেনি তারা। শুরু থেকেই সাধারণ ইসরাইলি এবং এবং পশ্চিমা বিশ্বের জনগণ যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করলেও যুদ্ধবাজ নেতানিয়াহু ১৫ মাস ধরে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞে মেতেছিল। এই ১৫ মাসের ভয়ঙ্কর যুদ্ধের পুরোটা সময় জুড়েই বিশ্বজনমত ছিল যুদ্ধবিরতি ও ফিলিস্তিনিদের পক্ষে। এমনকি ওয়াশিংটনে শত শত ইহুদি ইসরাাইলি আগ্রাসনের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশি নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েছে। ইসরাইলের সাধারণ নাগরিক বিশ্বজনমতের চাপের মুখে কাতার, মিশর ও মার্কিন মধ্যস্থতাকারীদের বছরব্যাপী অব্যাহত প্রচেষ্টায় জানুয়ারির মঝামাঝিতে এসে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যে কাঙ্খিত যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তার নেপথ্যে জো বাইডেন প্রশাসনের নিবিড় প্রচেষ্টার কথা বলা হলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প এর কৃতিত্ব দাবি করেছেন। ট্রাম্প আনুষ্ঠানিক শপথের মধ্য দিয়ে ওভাল অফিসের দায়িত্ব গ্রহণের একদিন আগে মধ্যস্থতাকারী কিংবা হোয়াইট হাউজের তরফ থেকে যুদ্ধবিরতির চুক্তির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রকাশিত হওয়ার আগেই ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের ব্যক্তিগত এক্স-অ্যাকাউন্টে পোষ্ট দিয়ে চুক্তির খবরটি প্রকাশ করেছিলেন। জো-বাইডেন দায়িত্ব হস্তান্তরের আগে হামাসের শর্ত মেনেই তড়িঘড়ি যুদ্ধবিরতিতে উপনীত হওয়া থেকে বোঝা যায়, এর পেছনে বাইডেন প্রশাসনের চাপ ছিল। অন্যদিকে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রভাবও অস্বীকার করা যাচ্ছে না। দায়িত্বগ্রহণের পর প্রথম সাক্ষাতে নেকতানিয়াহুর সাথে নেক্সাসের চিরায়ত অন্তরঙ্গতা ও অভাবনীয় ঘোষণা থেকে বোঝা যায়, ট্রাম্প ২০২০ সালের আগে ইসরাইল ও ফিলিস্তিন নিয়ে যে দূরভিসন্ধি করেছিলেন, এবার তা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও শক্তি প্রয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েই নেতানিয়াহুকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করিয়েছেন। বন্দিদের মুক্ত করতে এ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।

এবারের গাজা যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোড়লিপনার পুরনো সামরিক-কূটনৈতিক ভিত্তিকে নড়বড়ে করে দিয়েছে। জোবাইডেনের জায়নবাদি হয়ে ওঠা এবং একটি নির্মম গণহত্যার অংশীদার হয়ে ওঠার চিত্র বিশ্ববাসি দেখেছে। জর্জ বুশ থেকে বারাক ওবামা, ডোনাল্ড ট্রাম্প কিংবা জো বাইডেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে বাহ্যিক কিছু পরিবর্তন দেখা গেলেও তাদের মধ্যপ্রাচ্য নীতি এবং ইসরাইলের প্রতি অন্ধ সমর্থনে কখনো হেরফের ঘটেনি। মার্কিন ডিপস্টেটের উপর ইহুদি লবি ও থিঙ্কট্যাঙ্কগুলোর প্রভাব সে দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক চালিকাশক্তিতে পরিনত করেছে। আর মার্কিন ডিপস্টেটের প্রাণভোমরা যেন ওয়াশিংটনে নয়, তেলআবিবের আন্ডারগ্রাউন্ডে অবস্থান করছে। তা না হলে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সম্পদের উপর পশ্চিমানির্ভরতা এবং বিশ্বের ২০০ কোটি মুসলমানদের প্রত্যাশা, বৈশ্বিক কনভেনশন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ উপেক্ষা করে ইসরাইলের নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে ফিলিস্তিনিদের উপর আগ্রাসন-গণহত্যা, আরব উপদ্বীপের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে অগ্রাহ্য করে প্রতিবছর শত শত কোটি ডলারের সামরিক বাজেট ও কূটনৈতিক নিরাপত্তা দিয়ে ইসরাইলকে বিশ্বশান্তির জন্য এমন ফ্রাঙ্কেনস্টান দানবে পরিনত করতো না। নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার, পুঁজিবাদী বিশ্বের জ্বালানি নিরাপত্তা এবং ইসরাইলকে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে ডিস্ট্যাবিলাইজেশন এজেন্ডার বাস্তবায়ন যেন পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদের এক অবিচ্ছেদ্য সত্তা। পরিবর্তিত বিশ্ববাস্তবতায় পুরনো বন্দোবস্তে মার্কিনীদের সা¤্রাজ্যবাদী এজেন্ডা মার খেলেও তার সে পথ থেকে বেরিয়ে এসে উদীয়মান বিশ্বের নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন পন্থা গ্রহণের সাহস কিংবা ঝুঁকি নিতে পারেনি। ওরা এখনো ইসরাইলকে দিয়েই মধ্যপ্রাচ্যে মোড়লিপনা টিকিয়ে রাখতে চাইছে। অ্যামাজন, অ্যাপল, মেটা, অ্যালফাবেট, মাইক্রোসফ্ট ইত্যাদি টেক জায়ান্টদের আধিপত্য বাদ দিলে বিশ্ববাণিজ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূরাবস্থা ও অব্যাহত বাজেট ঘাটতির মধ্যেও সারাবিশ্বে শত শত মার্কিন সেনা ও নৌঘাটি ও ওয়ারফ্রন্ট চালু করে রেখে মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদ টিকিয়ে রাখার শেষ চেষ্টা হিসেবে মার্কিন ডিপস্টেট ইসরাইলের উপর অনেক বড় বাজি রেখে চলেছে। মার্কিন সমর্থনে গাজায় ইতিহাসের নজিরবিহিন গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েও হামাসের কাছে কার্যত পরাজিত হওয়ার পরও ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুরনো খায়েশ পুরনো নীতিতে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না।

প্রথমবার হোয়াইট হাউজে বসেই ট্রাম্পের একেকটি পাগলামিপূর্ণ সিদ্ধান্ত বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি ও আন্তর্জাতিক কনভেনশনগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন করতে শুরু করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের একমাত্র পারমানবিক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভুত হওয়ার বাস্তবতা এবং ¯œায়ুযুদ্ধোত্তর ইউনিপোলার বিশ্বের মোড়ল হয়ে ওঠার পর নাইন-ইলেভেন ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে দেশে দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর পরাজয়ের গ্লানি থেকে ইউক্রেনে পরাজয়ের বাস্তবতা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শিক্ষা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মত লোক আবারো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে এটাই প্রমাণিত হয়েছে, মার্কিন জনগণ এবং ডিপস্টেটের হাত জায়নবাদীদের শেকলে বাঁধা। পথমবার ক্ষমতায় বসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বসম্প্রদায়ের কমিটমেন্ট থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার মধ্য দিয়ে নিজেকে ট্রাম্প মার্কিন জনগণের কাছে অপাঙতেয় করে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিউটো জলবায়ু প্রটোকল, বেশ কয়েকটি বাণিজ্য অংশীদারিত্ব চুক্তি, ইরানের সাথে ৬ জাতির পরমাণু সমঝোতা চুক্তি, জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি সংস্থা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়ার পাগলামিপূর্ণ সিদ্ধান্তের কারণে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে বড় খেসারত দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রশ্নে দ্বিরাষ্ট্রকেন্দ্রিক সমাধান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাগুজে প্রতিশ্রুতি দীর্ঘদিন ধরে দেশটিকে মধ্যস্থকারীর ভূমিকায় রেখেছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প সে প্রতিশ্রুতি থেকে সরে গিয়ে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দান এবং জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে যে নতুন বাস্তবতার জন্ম দিয়েছিলেন, মূলত তা’ই হামাসের মত ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ইসরাইলে আল আকসা ফ্লাড অপারেশন ও গাজাযুদ্ধের পটভ’মি তৈরী করেছিল। অ্যাব্রাহাম অ্যাকর্ডের মত চাতুর্যপূর্ণ প্রলোভনে আরব দেশগুলো পা দেয়নি। ফিলিস্তিনিরা তাৎক্ষণিকভাবেই তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প থাকুন কিংবা বাইডেন, মার্কিন ডিপস্টেটের ভূমিকা অভিন্ন হলেও ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রভাববলয় আচরণগত পার্থক্য কিছুটা ভিন্নতা সৃষ্টি করেছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার স্বপ্নকে ধূলিস্মাৎ করে দিতে তিনি তাঁর পুরনো খায়েশ থেকে বিচ্যুত হননি। অর্থ ও উন্নয়নের চটকের বিনিময়ে ইসরাইলের সাথে আরবদের সর্ম্পক স্বাভাবিককরণ ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার স্বপ্নকে ডিপফ্রিজে তুলে রাখার প্রয়াস ব্যর্থ হওয়ার পর আত্মস্বীকৃত জায়নবাদী বাইডেনের গাজাযুদ্ধে হামাসের সাথে ইসরাইলের সামরিক ও কৌশলগত পরাজয়ের অভিজ্ঞতার পর ট্রাম্প গাজা দখল করে মালিকানা প্রতিষ্ঠার নির্লজ্জ পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেছেন। গাজা ও ফিলিস্তিন প্রশ্নে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনা নেতানিয়াহু ছাড়া সর্ব মহলে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের দুই সপ্তাহের মধ্যেই পুর্নগঠন, উন্নয়ন ও ইসরাইলের নিরাপত্তার নামে গাজা দখল ও মার্কিন মালিকানা প্রতিষ্ঠার উদ্ভট দাবি জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্সিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ভীতি ও উন্মাদনার নতুন এক মাত্রায় নামিয়ে এনেছেন।
‘বার্কিং ডগ শেলডম বাইটস’, ঘেউ ঘেউ করা কুকুর কদাচিৎ কামড়ায়, কিংবা যত গর্জে তত বর্ষে না’ এসব অভিধাগুলো সত্য হলেই ভাল। আগেরবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরান কিংবা মধ্যপ্রাচ্য নীতি কেন, কোনো নীতিই সফল হয়নি। ছয় জাতির সমঝোতা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিলেও ইউরোপের অংশীদাররা সে চুক্তি থেকে সরে যায়নি। এ সুযোগে ইরান ইউরেনিয়াম এনরিচমেন্টের মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়ে পারমানবিক অস্ত্র সক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। এখন তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনার প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করছে এবং মার্কিনী যে কোনো সামরিক হুমকি মোকাবেলায় চোখে চোখ রেখে কথা বলছে। আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর পরাজয়, হাজার হাজার টন বোমা ফেলে গাজা নগরীকে ধ্বংসস্তুপে পরিনত করার পরও হামাসের নেটওয়ার্ক ধ্বংস করতে না পারা এবং একজনও ইসরাইলি বন্দিকে মুক্ত করতে না পারা আইডিএফ’র ব্যর্থতা ও দুর্বলতা বিশ্বের কাছে পরিষ্কারভাবে ধরা পড়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেই সেনা পাঠিয়ে গাজা দখলের হুমকি দিয়ে ফিলিস্তিন প্রশ্নে মার্কিন অবস্থান আবারো পরিষ্কার করেছেন। এখন মুসলিম বিশ্বের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পালা। আল আকসাসহ পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বাধীনতা মেনে নিতে না পারলে আরবরা ইসরাইল রাষ্ট্রের অস্তিত্বের প্রশ্নে নতুন সিদ্ধান্তে উপনীত হবে। এটাই একমাত্র বিকল্প। গত ১৫ মাসে মার্কিন বোমায় ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। দেড় লক্ষাধিক মানুষকে আহত করা হয়েছে। হতাহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। গাজার সব বাসিন্দাকে উদ্বাস্তু করা হয়েছে। মৃত্যুর পরোয়না মাথায় নিয়েও গাজার নারী ও শিশুরা নিজের জন্মভ’মি ত্যাগ করেনি। অন্যদিকে হামাস-হুতি, হেজবুল্লাহর রকেট হামলার ভয়ে লাখ লাখ ইসরাইলী স্বদেশ ত্যাগ করে ইউরোপ-আমেরিকায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এসব হিসাব-নিকাশ ও রূঢ় বাস্তবতা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যুদ্ধবিরতিতে অনুপ্রাণিত করলেও ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের ভবিষ্যত প্রশ্নে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনুপ্রাণিত করেনি। তিনি আগের মতই প্রলোভন ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে গাজায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন।
দ্বিতীয়বার দায়িত্ব গ্রহণের এক মাসের মধ্যে ট্রাম্প শুল্ক আরোপের নামে বিভিন্ন দেশের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধ, মেক্সিকো, কানাডা, গ্রীনল্যান্ড নিয়ে যে সব মন্তব্য ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন, বিশ্ব পরিমন্ডলে তা রীতিমত তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। তার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর গেমপ্ল্যান হচ্ছে, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করে গাজা দখল করা। ধারাবাহিকভাবে ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন, গাজায় মানবিক সহায়তা পৌছাতে বাধাদান, টার্গেট কিলিং এবং ধ্বংসস্তুপ সরাতে বাঁধাদানের মধ্য দিয়ে নেতানিয়াহু যুদ্ধাবস্থা ফিরিয়ে আনতে চাইছে। ট্রাম্পের গাজা দখলের অজুহাত সৃষ্টির এটি প্রাথমিক পদক্ষেপ বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই সাথে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ অক্ষের প্রধান শক্তি ইরানে হামলা চালানোর হুমকি ও প্রস্তুতিও চলছে। ইউক্রেন থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে জেলনস্কিকে মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদের বলির পাঠা বানোনোর ইঙ্গিত দিচ্ছেন ট্রাম্প। বাণিজ্য ও আঞ্চলিক যুদ্ধে হুমকি ও সুযোগ সুবিধার বিনিময়ে রাশিয়া এবং চীনকে ম্যানেজ করে ইরানকে ঘায়েল করতে চাইছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অতীতের ধারাবাহিকতায় তিনি আরবদের ম্যানেজ করে ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি, আব্রাহাম অ্যার্কড ইত্যাদি প্রলোভনে ফেলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার ইস্যুকে আরব সাগরে বিসর্জনের আয়োজন করতে পারেন, ইসরাইলের প্রয়োজনে ও প্ররোচনায় তিনি এমন ঝুঁকি নিতেই পারেন। তবে ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যসহ পশ্চিমা বিশ্বেও একবাক্যে ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। রিজিমের শুরুতেই এটি তার জন্য অনেক বড় ধাক্কা। তিনি সুর কিছুটা নরম করলেও গো ধরে আছেন, গোয়ার্তুমি করছেন, গাজার ভাগ্য নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তের উপর ছেড়ে দেয়ার কথা বলেছেন। প্রতিরোধ অক্ষ ও ইরানকে ভড়কে দিতে গাজায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ ও দখলের হুমকি তাঁর একটি কৌশলও হতে পারে। ইউক্রেনে শত শত বিলিয়ন ডলার খরচ করে গোঁফ নামাতে বাধ্য হচ্ছে পশ্চিমারা। এবার তারা ফিলিস্তিন প্রশ্নে কষাই নেতানিয়াহুর ‘প্রমিজড ল্যান্ড’র মিথলজি থেকে বেরিয়ে বাস্তবে ফিরে আসলেই সব পক্ষের মঙ্গল। পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ১৯৬৭ সালের সীমারেখা অনুসারে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রই একমাত্র সমাধানের পথ। অন্যথায় যুদ্ধবাজ, গণহত্যাকারি, মানবতাবিরোধী অপরাধের হোঁতা ইসরাইলের অস্তিত্ব নিয়ে আরব ও চীন-রাশিয়াসহ ননওয়েষ্টার্ন ওয়ার্ল্ডকে নতুন সিদ্ধান্তে আসতে হবে। নতুন বিশ্ববাস্তবতায় ইউরোপের দেশগুলোও শান্তি ও দ্বিরাষ্ট্রকেন্দ্রিক সমাধানের পথে জোরালো ভ’মিকা নিয়ে এগিয়ে আসলে যুদ্ধের ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব। গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, মানবিক সহায়তা, পুর্নগঠন ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার প্রশ্নে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

bari_zamal@yahoo.com


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বই আত্মার মহৌষধ
পহেলা বৈশাখ শুধু একটি দিন নয়
সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে
শুভ নববর্ষ
আন্তঃধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব
আরও
X

আরও পড়ুন

নববর্ষ উদযাপনে মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আনন্দ শোভাযাত্রা

নববর্ষ উদযাপনে মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আনন্দ শোভাযাত্রা

মাজারের বার্ষিক ওরসের মেলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল স্বামী

মাজারের বার্ষিক ওরসের মেলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল স্বামী

কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পৌনে দুই কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত

কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পৌনে দুই কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত

সরকার নয়, আমরা একটি দেশ হিসেবে কাজ করছি: জ্বালানি উপদেষ্টা

সরকার নয়, আমরা একটি দেশ হিসেবে কাজ করছি: জ্বালানি উপদেষ্টা

মতলবে উপজেলা বিএনপির বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

মতলবে উপজেলা বিএনপির বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

ফিলিস্তিনবাসীদের শান্তি কামনায়   বিশেষ দোয়া মাহফিল

ফিলিস্তিনবাসীদের শান্তি কামনায়  বিশেষ দোয়া মাহফিল

বর্ণাঢ্য ‘ড্রোন শো’ দেখে মুগ্ধ লাখো মানুষ

বর্ণাঢ্য ‘ড্রোন শো’ দেখে মুগ্ধ লাখো মানুষ

নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক  : মঞ্জু

নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক : মঞ্জু

বুধবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বুধবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পুরোনো পদে ফিরলেন গাঙ্গুলি

পুরোনো পদে ফিরলেন গাঙ্গুলি

আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল

আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল

রূপায়ণ সিটিতে শতকন্ঠে বর্ষবরণ

রূপায়ণ সিটিতে শতকন্ঠে বর্ষবরণ

বর্ষবরণকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরে জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা

বর্ষবরণকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরে জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা

আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি: ফারুকী

আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি: ফারুকী

ভারতীয়দের হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমাল সৌদি

ভারতীয়দের হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমাল সৌদি

চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে ঢাকার আকাশে ব্যতিক্রমী ড্রোন শো

চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে ঢাকার আকাশে ব্যতিক্রমী ড্রোন শো

নাসিরনগর প্রশাসনের বর্ষবরণে উপস্থাপক ছাত্রলীগ কর্মী, সাংবাদিককে এসিল্যান্ড বললেন কিছু হবে না!

নাসিরনগর প্রশাসনের বর্ষবরণে উপস্থাপক ছাত্রলীগ কর্মী, সাংবাদিককে এসিল্যান্ড বললেন কিছু হবে না!

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আহমাদ মারা গেছেন

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আহমাদ মারা গেছেন

পহেলা বৈশাখ আমাদের সংস্কৃতি, ভালোবাসা আর আনন্দের  প্রতীক : সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা

পহেলা বৈশাখ আমাদের সংস্কৃতি, ভালোবাসা আর আনন্দের প্রতীক : সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা

নববর্ষে আইন শৃঙ্খলা সুরক্ষায়  প্রশংসনীয় ভূমিকায় র‍‍্যাব - ৯

নববর্ষে আইন শৃঙ্খলা সুরক্ষায়  প্রশংসনীয় ভূমিকায় র‍‍্যাব - ৯