বাংলাদেশ ক্রিকেট কি কেনিয়ার পথে হাঁটছে?
০৫ মার্চ ২০২৫, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৫, ১২:০৫ এএম

ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশ এখন র্যাংকিং ৯ এ আছে। নিকট অতীতে অন্তত ওডিয়াইতে আমরা ৭-এ ছিলাম। কিন্তু ২০২৩ সাল থেকে ওডিয়াই-এ পারফরমেন্স গ্রাফও নি¤œমুখী। মূলত বাংলাদেশ ক্রিকেটের সোনালী সময় বলতে ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়কে ধরা যায়। এসময়ে বাংলাদেশ একাধিকবার এশিয়া কাপের ফাইনাল সহ ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়াটার ফাইনাল এবং ২০১৭ সালের চ্যা¤িপয়নস ট্রফীর সেমিফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করে, যদিও বড় কোনো বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট জেতার সৌভাগ্য এখনো হয়নি তবে ঐ পাঁচ ছয় বছর বাংলাদেশ মোটামুটি একটি শক্তিশালী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তবে এসময়কার সাফল্যকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশ ক্রিকেটের পঞ্চপা-ব খ্যাত সাকিব, তামীম, মুশফিক, মাশরাফি ও রিয়াদ সময়ের সেরা ফর্মে ছিলেন। বিশেষ করে ২০১৭ চ্যা¤িপয়নস ট্রফীতে সেমিফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জনের পিছনে ভূমিকা রাখেন টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা রান সংগ্রাহক তামীম ইকবাল এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বিপর্যয়ের মুখে সাকিব রিয়াদের জোড়া শতক দলকে সেমিফাইনালে নিয়ে যায়।
অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, মাশরাফির অবসর, তামীম-সাকিব দ্বন্দ্ব, রিয়াদকে দল থেকে দীর্ঘদিন বাইরে রাখা সব মিলে টালমাটাল অবস্থা দেশের ক্রিকেটের! তামীম অবসর নিয়েছেন, সাকিবের জাতীয় দলে হয়তো আর ফেরা হচ্ছে না। দ্রুতই হয়তো বিদায় বলতে পারেন রিয়াদ ও মুশফিক। পঞ্চপা-বেরর বিদায়ের পর বড় চিন্তা এদের রিপ্লেস হচ্ছেন কারা? চলমান চ্যা¤িপয়ন ট্রফির বাজে পারফর্মের পর সবাই মুশফিক রিয়াদ কে নিয়ে সমালোচনা শুরু করেছে। অবশ্য সমালোচনা হওয়াটাই স্বাভাবিক। সতেরো বছর ক্রিকেট খেলার পর অভিজ্ঞ খেলোয়ার হিসেবে তাদের এমন হতশ্রী পারফরমেন্স মানা যায়না। দুজনে অবশ্য ২৩ বিশ্বকাপ শেষ অবসরে যেতে পারতেন। কিন্তু তারা তা করবেন কেনো? যাই হোক, অবসরের সিদ্ধান্ত তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। আমার মনে হয়, দেশের ক্রিকেটে নতুন করে তাদের কিছু দেয়ার বা পাওয়ার নাই। মুশফিক শুধু টেস্ট ক্রিকেটে কিছু দিতে পারেন, এর বেশিকিছু না। দুজনে অবসরে যাক বা তাদের অবসরে পাঠানো হোক, তাদের অধ্যায় মোটামুটি শেষই বলা যায়। দুজনের যা বয়স তাতে বেশিদিন যে তারা নেই সেটা একরকম নিশ্চিত। কথা হচ্ছে, মুশফিক রিয়াদের মতো সতেরো বছর দলকে সার্ভিস দেবে, এমন সম্ভাবনাময় খেলোয়ার কতজন আছে আমাদের? নতুনদের মধ্যে কে সেই দায়িত্ব নেবে? হয়তো সময়ই সব বলে দেবে, কিন্তু আমাদের পাইপলাইনে যে সেরকম ক্রিকেটারের বড্ড অভাব, সেটা বুঝতে ক্রিকেটবোদ্ধা হওয়ার দরকার পরেনা। মুশফিক বা রিয়াদের পারফরমেন্স যদি দেখা হয়, বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে মুশফিকের গড় প্রায় ৩৫/৩৬-এর মতো, যদিও বিশ্ব ক্রিকেটে তা লিজেন্ডারি পর্যায়ের না, তবে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে তা অন্যতম সেরা হিসেবে মানতে হবে। রিয়াদের বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের গড় অবশ্য ৫০ ছুঁই ছুঁই। তার টোটাল ক্যারিয়ারের থেকেও যা অনেক বেশি। তাই রিয়াদ বড় টুর্নামেন্টের খেলোয়ার, তাতে সন্দেহ নেই। বিশেষ করে বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে তার ৪ টা শতক অনেকদিন আমাদের প্রেরণা হয়ে থাকবে। তিনিই একমাত্র বাংলাদেশী ক্রিকেটার যার বিশ্বকাপে ৩ টি সেঞ্চুরি আছে।
বিশ্বের সব ক্রিকেট টিমে দেখা যায় ওপেনার, পজিশন থ্রী ও পজিশন ফোরে বেস্ট ৪ জন ব্যাটার খেলেন। আধুনিক ক্রিকেটে র্যাংকিংয়ের প্রথম ৮টি দলের টপ অর্ডারদের ব্যাটিং গড় ও স্ট্রাইক রেট দুর্দান্ত। আমাদের গত কয়েক বছরে এই টপ অর্ডার পজিশনে খেলছেন তানজিদ তামীম, নাইম শেখ, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, মেহেদী মিরাজ, নাজমুল শান্ত। প্রশ্ন হচ্ছে, এই ৫/৬ জনের মধ্যে কে ধারাবাহিক? সৌম্য-লিটন কেবল একটা জায়গায় ধারাবাহিক, সেটা হল তারা তাদের দশ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ধারাবাহিকভাবে ‘অধারাবাহিক’। লিটন অবশ্য টেস্টে দুর্দান্ত, তবে সাদা বলে যেন দশ বছর ধরেই নিজের ছায়া হয়ে আছেন। নবাগত তানজিদ তামীম যাকে ভবিষ্যত তারকা ধরা হত, তার ২০/২৫ ওডিয়াই খেলার পরও এভারেজ মোটে ২০! ক্রিকেট খেলুড়ে অন্যকোনো দেশের কোনো ওপেনারের হয়তো এতো দুরাবস্থা নেই। তানজিদ তামীমের ট্যালেন্ট নিয়ে আমাদের সন্দেহ নেই, তবে সে যেন আরেকজন লিটন দাস হওয়ার পথেই এগিয়ে যাচ্ছে! শান্ত চরম অধারাবাহিক, মিরাজ হয়তো ৬/৭ পজিশনে ঠিক আছে, কিন্তু ৩/৪ চারে তাকে খেলানো বোকামি ছাড়া কিছু নয়। নাইমও জাতীয় দলে চরম ব্যর্থ। মাঝে মধ্যেই কিছু ঝলক দেখিয়ে দলে আসেন মুনিম শাহরিয়ার কিংবা রনি তালুকদার। তবে দু একটা সিরিজের পর তাদের খুঁজে পাওয়া যায়না। প্রতি টুর্নামেন্টেই দেখা যায়, খেলতে নামার সাথে সাথে আমাদের ২/৩ উইকেট নাই। তাহলে, খেলবে কে? লিটন-সৌম্যদের সাথের ক্রিকেটাররা বিশ্ব ক্রিকেটে এখন লিজেন্ড, জুনিয়র তামীমের সাথের ক্রিকেটার জসওয়াল কিংবা ইব্রাহীম জাদরানরাও লিজেন্ড হওয়ার পথ ধরেছেন। কিন্তু আমাদের সবাই কেবল ‘ট্যালেন্ট’ তকমা নিয়ে খেলেন! তুলনামূলক ধারাবাহিক বলা যায় মিডল অর্ডার যেখানে হৃদয় এবং জাকের কিছুটা ভরসা দিচ্ছে। কিন্তু এই ১-৪ পজিশন যেভাবে টালমাটাল অবস্থা, তাতে ভালো কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছেনা। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, গত তিন-চার বছরে বিভিন্ন ফরম্যাট মিলে শুধু ওপেনিং পজিশনে প্রায় ১০ জনকে খেলানো হলেও টপ অর্ডারের ব্যর্থতা আর কাটানো যায়নি।
আগামী দিনে আমাদের ক্রিকেট যে আরো খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাবে, তা বর্তমান পারফরমেন্স দেখলেই বোঝা যায়। সুন্দর গোছানো একটি দলকে হাতুরোসিং যেভাবে ওলট পালট করে দিয়েছেন, সেখান থেকে ঘুরে দাড়ানো কঠিন। তবে সবকিছুকেই নতুনভাবে সাজানো জরুরী। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে আমরা অবশ্যই ভালোকিছুর জন্য আশাবাদী, তবে সর্বশেষ বিপিএল টুর্নামেন্টও আমাদের হতাশ করেছে। বরাবরের মতই আলোচিত-সমালোচিত এই আসরে ছিলনা তেমন কোনো আলাদা আকর্ষণ। বিপিএল এর হারানো গৌরবও তাই আমাদের জন্য এখন অতীত। আমাদের লীগগুলোর উপরে ম্যানেজমেন্টেরই ভরসা নেই। এর বড় উদাহরণ এনামুল বিজয়। প্রতি সিজনে রানের রেকর্ড গড়লেও জাতীয় দলে দেয়া হয়না পর্যাপ্ত সুযোগ। তাহলে, জাতীয় দলে খেলার জন্য নবীনরা কোথায় পারফর্ম করবে? আবার কোথাও পারফর্ম না করেও হাতুরের পছন্দে দলে ঢুকে যেতেন সৌম্য সরকার! এরকম ঘটনাগুলো উঠতি ক্রিকেটারদের কাছে ভুল বার্তা দেয়। আরেকটা বিষয় খুব হতাশার, বয়সভিত্তিক দলগুলোতে দুর্দান্ত পারফর্ম করলেও এসব খেলোয়ার জাতীয় দলে নিজেদের সেভাবে মেলে ধরতে পারেন না। এসব দুর্বলতা নিয়ে কাজ করা উচিত। সমস্যাগুলো চিহৃতি করা উচিত।
আমাদের আপসোসের যায়গা ছিলো ফাস্ট বোলার আর রিস্ট ¯িপনার। তবে দুর্দান্ত কিছু পেসার এবং রিশাদের মত লেগী আছেন বর্তমান দলে। তাই বোলিং ইউনিটই ভরসা দিচ্ছে আমাদের। অবাক লাগে, অবকাঠামোগত কিছু না থাকার পরেও আফগানরা বৈশ্বিক আসরের সেমিফাইনাল খেলে, বড় দলগুলোকে রেগুলার হারায় আর বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে আমাদের ম্যানেজমেন্ট দুটো ছোট দলকে হারাতে পারলেই তৃপ্তির ঢেকুর তোলে! মানসিকতায় আমরা কতটা পিছিয়ে! এই মানসিকতা পরিবর্তন করতে না পারলে আমাদের চিরাচরিত প্রবাদ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে ‘পুরস্কার না, অংশগ্রহণ করাটাই বড় কথা’! একটা সময়ে কেনিয়াও বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিলো, তবে দিন দিন তাদের ক্রিকেট এতটাই পিছিয়েছে যে, তারা এখন আর বৈশ্বিক কোনো টুর্নামেন্টেও অংশ নিতে পারছেনা। আমাদের ক্রিকেট গ্রাফ যেভাবে নিন্মমুখী, তাতে একটা ভয় কিন্তু থেকেই যায়।
লেখকঃ কলামিস্ট ও ব্যাংক কর্মকর্তা।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ভারতে আবাসিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, যেভাবে নাটকীয়ভাবে বেঁচে গেল একটি পরিবার

অবশেষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেন উখিয়ার ১৩ এসএসসি পরীক্ষার্থী

পবিপ্রবি শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে আহত হওয়ার পরে চিকিৎসা অবহেলার মৃত্যুর অভিযোগ

শেরপুর জেলা উপজেলায় নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

নববর্ষ উদযাপনে মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আনন্দ শোভাযাত্রা

মাজারের বার্ষিক ওরসের মেলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল স্বামী

কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পৌনে দুই কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত

সরকার নয়, আমরা একটি দেশ হিসেবে কাজ করছি: জ্বালানি উপদেষ্টা

মতলবে উপজেলা বিএনপির বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

ফিলিস্তিনবাসীদের শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিল

বর্ণাঢ্য ‘ড্রোন শো’ দেখে মুগ্ধ লাখো মানুষ

নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক : মঞ্জু

বুধবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পুরোনো পদে ফিরলেন গাঙ্গুলি

আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল

রূপায়ণ সিটিতে শতকন্ঠে বর্ষবরণ

বর্ষবরণকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরে জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা

আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি: ফারুকী

ভারতীয়দের হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমাল সৌদি

চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে ঢাকার আকাশে ব্যতিক্রমী ড্রোন শো