রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কাম্য নয়
২৪ মার্চ ২০২৫, ০১:০৫ এএম | আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৫, ০১:০৫ এএম

নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ গত ২০ মার্চ রাতে তার এক ফেসবুক পোস্টে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, সেনাসদরের এক বিবৃতিতে তাকে ‘হাস্যকর ও অপরিপক্ক গল্পের সম্ভার’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নেত্র নিউজকে একজন মুখপাত্রের মাধ্যমে দেয়া ওই বিবৃতির স্বীকার করা হয়েছে, সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে ১১ মার্চের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে বিবৃতিতে হাসনাত আবদুল্লাহকে ডেকে নিয়ে যাওয়া এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের বিষয়ে প্রস্তাব বা চাপ প্রয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্য প্রকাশের পর আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের বিষয়টি রাজনৈতিক মহলসহ বিভিন্ন মহলে অনিবার্য আলোচ্যে পরিণত হয়। এ ব্যাপারে সেনাসদরের বক্তব্য সঙ্গতকারণেই আশা করা হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানে মাফিয়া সরকার উৎখাত হয়ে গেলে ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগ পুনরায় এদেশে রাজনীতি করতে পারবে কিনা, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠে। সরকারিভাবে দলটি নিষিদ্ধ নয় বটে; তবে তার রাজনৈতিক কর্মকা- চালানো ব্যাপক গণবিরোধিতার মুখে পড়তে পারে, এমন আশংকা অমূলক নয়। গত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগ হত্যা, সন্ত্রাস, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট, পাচার ইত্যাদির সঙ্গে এমনভাবে জড়িত যে, এ সবের বিচার ছাড়া, ক্ষমা চাওয়া ছাড়া তার রাজনীতি করার অধিকার থাকতে পারে না। এটাই সাধারণ জনমত। জনগণ উপযুক্ত প্রতিবিধান ব্যতীত আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন চায় না। অথচ, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহল ‘ইনক্লুসিভ’ নির্বাচনের নামে আওয়ামী লীগের আশু পুনর্বাসন চাইছে। ভারত এই এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নেমেছে। তার লবি আন্তর্জাতিকভাবে যেমন কাজ করছে, বাংলাদেশে তার ও আওয়ামী লীগের অনুগত, উপকারভোগীরা তৎপর হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, এমনকি জাতিসংঘও ইনক্লুসিভ নির্বাচনের কথা বলেছে। লক্ষ্য করার বিষয়, যারা ইনক্লুসিভ নির্বাচনের কথা বলেছে, তারা আওয়ামী লীগের অপকর্ম ও ঘৃণ্য অপরাধের উপযুক্ত বিচার ও শাস্তির কথা এড়িয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি বিচার্য ও রাজনৈতিক। গণহত্যাকারী, সন্ত্রাসী ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অপরাধী ব্যক্তিরই শুধু নয়, দলেরও বিচার হওয়া উচিৎ। এরকম একটি দল রাজনীতি করতে পারে কিনা, সেটা সম্মিলিত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেরও ব্যাপার। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ ব্যাপারে কিছু মতপার্থক্য আগে থাকলেও এখন সবাই একমত যে, এমন কাজ করা যাবে না, যাতে ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার ফিরে আসতে পারে।
সেনাবাহিনী জাতীয় সম্পদ। জাতীয় প্রতিরক্ষার প্রধান স্তম্ভ। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় অখ-তা রক্ষা তার প্রধান দায়িত্ব। বহিঃশক্তির যে কোনো আক্রমণ থেকে দেশ ও মানুষকে সুরক্ষা দেয়া তার অপরিহার্য কর্তব্য। মোটকথা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাই তার মূল কাজ। এছাড়া সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা করা, দুর্যোগ-দুর্বিপাকে জনগণের পাশে দাঁড়ানো ইত্যাদিও সেনাবাহিনী করে থাকে। ‘সেনাবাহিনী’ শব্দটি উচ্চারণের আগে ‘দেশপ্রেমিক’ শব্দটি যুক্ত করার রেওয়াজ আছে আমাদের দেশে। বলা বাহুল্য, সেনাবাহিনী যে দেশপ্রেমিক, তা উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না। দেশের জন্য জীবন দেয়ার পণ করেই প্রতিটি সেনাসদস্য সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। কেবল স্বাধীনতা যুদ্ধ নয়, পরবর্তী প্রতিটি ক্রান্তিকালে সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। দুঃখজনক হলেও স্বীকার করতে হচ্ছে, স্বৈরাচারের সাড়ে ১৫ বছর সেনাবাহিনীর মুষ্টিমেয় উচ্চ পদাধিকারী স্বৈরাচারের দোসর হিসাবে ভূমিকা পালন করে সেনাবাহিনীর মর্যাদাকে ক্ষুণœ করেছেন। তিন তিনটা ভুয়া নির্বাচনে তারা ভারতের দাসী হাসিনাকে সমর্থন করে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেছেন। বিডিআর গণহত্য, শাপলা চত্বরের গণহত্যা, হাসিনার গুম, খুন, আয়নাঘর ইত্যাদির সঙ্গে তাদের অনেকের সংযুক্ততার অভিযোগ আছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানেও তাদের সবার ভূমিকা স্বচ্ছ ছিল না। শেষ পর্যন্ত সেনাসদস্য এবং বিভিন্ন পর্যায়ের সেনাকর্মকর্তাদের ভূমিকায় সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানকারীদের পক্ষে অবস্থান নেয়। এর ফলেই স্বৈরাচারের পতন ও পালিয়ে যাওয়া তরান্বিত হয়। সেনাবাহিনীর ভাবমর্যাদা ইতোমধ্যেই অনেকটা ফিরে এসেছে। মাঠে কর্মরত সেনাসদস্য ও কর্মকর্তাদের আচার-ব্যবহার মানুষের প্রশংসা পাচ্ছে। দেশের মানুষ একান্তভাবেই আশা করে, সেনাবাহিনী রাজনীতিমুক্ত থাকবে, রাজনৈতিক পরিম-লে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা থেকে বিরত থাকবে। নতুন রাজনৈতিক দল গঠন, কোনো গণধীকৃত দলের পুনর্বাসন ইত্যাদি সেনাবাহিনীর কাজ নয়। অতীতে ডিজিএফআই, এনএসআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান এবং শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা যেভাবে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করেছেন, সেটা আর চলবে না। যারা স্বৈরাচারের দোসর হিসাবে ভূমিকা পালন করেছেন, গুম, খুন ও আয়নাঘরের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট, তাদের খোঁজ, গ্রেফতার ও বিচার হওয়া জরুরি। কোনো অজুহাতেই তাদের রেহাই পাওয়ার সুযোগ নেই। তাদের যথা বিচার ও সাজা হলে ভবিষ্যতে অনুরূপ অপকর্ম ও অপরাধ করার সাহস কেউ পাবেন না।
পতিত-দূষিত অওয়ামী লীগকে সাফ ও শুদ্ধ করে পুনর্বাসন করার প্রসঙ্গ হঠাৎ সামনে এলো কেন, অনেকের মনেই সে প্রশ্ন উঠতে পারে। এর একটা উত্তর এই হতে পারে, নির্বাচন যদি ডিসেম্বরেই হয়, তবে আওয়ামী লীগের কী হবে। ভারত ও তার লবি চায় আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। এভাবে তার পুনর্বাসন হয়ে যাক। এখনই তার উপযুক্ত সময় প্রসঙ্গটি সামনে আনার। দ্বিতীয় কারণ এই হতে পারে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস কদিন বাদেই চীন সফরে যাবেন। এই সফরকে বাংলাদেশের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। এসময় জুলাই অভ্যুত্থানের সহযোদ্ধা ছাত্র-জনতা, রাজনৈতিক দল ও সেনাবাহিনীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে দেশকে অস্থির করা গেলে চীন-বাংলাদেশের নয়, ভারতেরই লাভ হবে। কারণ যাই হোক, এটা যে দেশের ও দেশের বাইরের যৌথ উদ্যোগ, তাতে সন্দেহ নেই। আশার কথা, এই উদ্যোগ ব্যর্থ হতে বসেছে। গণঅভ্যুত্থানের স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে বিরোধ-সংঘাত সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের মতলব আর সফল হচ্ছে না। বিএনপি, জামায়াত, নাগরিক পার্টিসহ সব রাজনৈতিক দল, যারা গণঅভ্যুত্থানের অংশীদার, যে কোনো পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ থাকার পক্ষে অভিমত দিয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান পরিষ্কার বলেছেন, রাজনীতিতে ভিন্নমত থাকলেও দেশ ও দেশের মানুষ এবং গণতন্ত্রের প্রশ্নে ফ্যাসিবাদবিরোধী সবাই একমত। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভিন্ন মত হলে সমস্যা সৃষ্টি হলে আলোচনায় বসবো। তার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, ফ্যাসিবাদ রুখতে সব রাজনৈতিক দল একাট্টা। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, দেশের সবচেয়ে বৃহৎ দল বিএনপি, যার তৃণমূল পর্যায়ে রয়েছে শক্ত সংগঠন ও বিপুল জনসমর্থন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে রাজনৈতিক দলগুলোকে তিনি ডাক দিতে পারেন, আলোচনায় বসতে পারেন এবং সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন। এরকমটা হলে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রকারী ও মতলববাজরা শামাল হয়ে যাবে ও আপনা আপনিও রুখে যাবে। তা দেশের জন্য হবে সবচেয়ে মঙ্গলজনক এবং ক্রান্তিকাল উত্তরণে সহায়ক। বিদ্যামান পরিস্থিতিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করতে পারেন। তাদের পরামর্শ ও সমর্থন নিয়ে পদক্ষেপ নিতে পারেন। মনে রাখতে হবে, ঐক্যই শক্তি। ঐক্যবদ্ধ হলে কোনো অপশক্তিই সফল হতে পারবে না।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ভারতে আবাসিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, যেভাবে নাটকীয়ভাবে বেঁচে গেল একটি পরিবার

অবশেষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেন উখিয়ার ১৩ এসএসসি পরীক্ষার্থী

পবিপ্রবি শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে আহত হওয়ার পরে চিকিৎসা অবহেলার মৃত্যুর অভিযোগ

শেরপুর জেলা উপজেলায় নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

নববর্ষ উদযাপনে মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আনন্দ শোভাযাত্রা

মাজারের বার্ষিক ওরসের মেলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল স্বামী

কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পৌনে দুই কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত

সরকার নয়, আমরা একটি দেশ হিসেবে কাজ করছি: জ্বালানি উপদেষ্টা

মতলবে উপজেলা বিএনপির বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

ফিলিস্তিনবাসীদের শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিল

বর্ণাঢ্য ‘ড্রোন শো’ দেখে মুগ্ধ লাখো মানুষ

নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক : মঞ্জু

বুধবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পুরোনো পদে ফিরলেন গাঙ্গুলি

আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল

রূপায়ণ সিটিতে শতকন্ঠে বর্ষবরণ

বর্ষবরণকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরে জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা

আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি: ফারুকী

ভারতীয়দের হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমাল সৌদি

চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে ঢাকার আকাশে ব্যতিক্রমী ড্রোন শো