প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ
২৭ মার্চ ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৫, ১২:০২ এএম

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন। প্রায় ৩৫ মিনিটের ভাষণে তিনি গত সাড়ে ৭ মাসে সরকারের অর্জনগুলো জাতির সামনে তুলে ধরেছেন। সেই সাথে চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের টাইমলাইন পুনরুল্লেখ করেছেন। সরকার প্রধানের ভাষণ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গণে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত ও বক্তব্য থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো বক্তব্য পাওয়া না গেলেও এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেটিজেনদের মন্তব্য, বক্তব্য এবং জনমত অনেকাংশে রাজনৈতিক মতামতকেও প্রকাশ করে অথবা এসব জনমতের মধ্যেই রাজনৈতিক দলসমূহের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের প্রতিফলন ঘটে। প্রধান উপদেষ্টার এই ভাষণে সঙ্গতকারণেই তার সরকারের অর্জনগুলো তুলে ধরা হয়েছে, এটাই স্বাভাবিক। সেই সাথে গত সাড়ে ৭ মাসে সরকারের কিছু ব্যর্থতাও রয়েছে। সে সব ব্যর্থতার পেছনে পতিত স্বৈরাচারের দোসর ও নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার দায়ও থাকতে পারে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে সে সব ব্যর্থতা নিয়ে তেমন কিছুই বলেননি। এ কারণে কেউ কেউ ড. ইউনূসের ভাষণকে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ভাষণের মতো বলে মন্তব্য করেছেন, যেখানে নিজের সরকারের সাফল্যের বাইরে ব্যর্থতাগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। জাতির সামনে প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরার ক্ষেত্রে এটা একটা ব্যত্যয় হিসেবেই গণ্য হচ্ছে। সামগ্রিক বিবেচনায় জাতির চরম ক্রান্তিকালে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ হতাশা কাটিয়ে জাতিকে আশার আলো দেখানোর প্রয়াস লক্ষ করা গেছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ১৬ বছরের আওয়ামী স্বৈরশাসনের পতন ও ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর স্বৈরাচারের দোসরদের নানাবিধ ষড়যন্ত্র সরকারের কর্মকাÐকে ব্যাহত করছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জননিরাপত্তায় বড় ধরনের সংকটের পেছনে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের ভূমিকা থাকলেও এ বিষয়ে সরকারের করণীয় ও অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে কোনো জোরালো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মনে রাখা দরকার, যে কোনো রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সাফল্য ও অগ্রগতি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে মূল্যস্ফীতি হ্রাস, নতুন নতুন বিনিয়োগের সম্ভাবনা, ইলন মাস্কের স্টারলিঙ্ক কানেক্টিভিটি, মধ্যপ্রাচ্যের বিনিয়োগে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ, চলমান চীন সফর এবং আগামী বিনিয়োগ সামিটে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে ব্যাপক আশাবাদ তুলে ধরা হয়েছে। বিগত সরকারের দোসরদের লুটপাট ও অর্থপাচারে ভেঙ্গে পড়া ব্যাংকিং ব্যবস্থার উপর মানুষের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, রফতানি প্রবৃদ্ধি এবং রের্কড পরিমাণ রেমিটেন্স প্রবাহ এবং রোহিঙ্গা সংকট ও আসিয়ানের সদস্যপদ লাভের জন্য মালয়েশিয়ার সাথে দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগের বিষয়ে আশাবাদী হওয়ার মতো বার্তা পাওয়া গেছে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে। বিদ্যুৎখাতে বিগত সরকারের বল্গাহীন দুর্নীতি-লুটপাটের পরও এই খাতে সংকট, লোডশেডিং থেকে দেশের মানুষ মুক্তি না পেলেও নতুন কোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা না করেও এবারের রমজান মাসে লোডশেডিংয়ের বিড়ম্বনামুক্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রবাহ নিশ্চিত করা এই সরকারের অনেক বড় অর্জন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রধান উপদেষ্টার ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব, আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও গ্রহণযোগ্যতা নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে উত্তরণে মাইলফলক অর্জন হিসেবে বিবেচিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে বরাবরের মতো নির্বাচনের টাইনলাইন হিসেবে ডিসেম্বর-জুনের কথা বলা হলেও নির্বাচন নিয়ে জনমনে এক ধরনের সংশয়-সন্দেহ দেখা যাচ্ছে। এ বিষয়ে আশঙ্কা অপনোদনের প্রয়াস প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে প্রত্যাশিত ছিল। তবে নানা ক্ষেত্রে প্রবাসী কর্মীদের দুর্ভোগ লাঘব, পাসপোর্ট প্রাপ্তিসহ আইনগত প্রতিকার লাভের ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগ এবং সরকারি অফিস-আদালতে দুর্নীতি কমিয়ে আনতে ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ার আওতাবৃদ্ধির উদ্যোগও প্রশংসনীয়। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে এসব বিষয় উঠে আসলেও নির্বাচন, দেশের নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ, অস্থিতিশীলতা এবং সংকট নিরসনে সরকারের ভূমিকা ও সম্ভাব্য করণীয় সম্পর্কে তেমন কিছু না থাকা হতাশাজনক। গুজব, মিথ্যা তথ্য ও ডিজইনফর্মেশনের বিরুদ্ধে সরকারের নতুন কর্মকৌশল সম্পর্কে জাতিকে আশ্বস্ত করতে পারেননি প্রধান উপদেষ্টা। আমরা আশা করব, সরকার এ বিষয়ে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। রাষ্ট্র সংস্কার, জুলাই বিপ্লবের চার্টার এবং সম্ভাব্য দ্রæততম সময়ে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পথকে অবারিত করাই সরকারের মূল কাজ বলে গণ্য করা হচ্ছে। এসব কাজে সময় ক্ষেপণের কোনো সুযোগ নেই। শুধু প্রধান উপদেষ্টাই শেষ কথা নয়। অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টার অবস্থান নির্বাচন এবং প্রত্যাশিত সংস্কারের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক অভিলাষ না থাকলেও ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করার প্রবণতা লক্ষ্যযোগ্য বলে অনেকের কাছেই প্রতীয়মান হয়েছে। এটা কোনো ভালো কথা নয়। হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার জাতির স্বপ্ন ও প্রত্যাশা বাস্তবায়নে তার সামর্থ্য ও পূর্ণ মনোযোগ নিবদ্ধ করবেন, এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা। ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে বিপুল সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করেছেন, যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন তার বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকাররের অগ্রণী ভূমিকা ও অপরিহার্যতা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু সরকারের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো, যত দ্রæত সম্ভব অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। এটা জনদাবিও বটে। কিন্তু সরকার এখনো নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণা করেনি। সরকারের তরফে একই কথা বার বার বলা হচ্ছে, এ বছরের ডিসেম্বর, না হয় আগামী বছর জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। বলা যায়, নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এ ধোঁয়াশা অপনোদন করতে হবে। সেটা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেই করতে হবে। সবাই আশা করে, অবিলম্বে নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণা করা হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

নববর্ষ উদযাপনে মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আনন্দ শোভাযাত্রা

মাজারের বার্ষিক ওরসের মেলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল স্বামী

কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পৌনে দুই কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত

সরকার নয়, আমরা একটি দেশ হিসেবে কাজ করছি: জ্বালানি উপদেষ্টা

মতলবে উপজেলা বিএনপির বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

ফিলিস্তিনবাসীদের শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিল

বর্ণাঢ্য ‘ড্রোন শো’ দেখে মুগ্ধ লাখো মানুষ

নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক : মঞ্জু

বুধবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পুরোনো পদে ফিরলেন গাঙ্গুলি

আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল

রূপায়ণ সিটিতে শতকন্ঠে বর্ষবরণ

বর্ষবরণকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরে জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা

আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি: ফারুকী

ভারতীয়দের হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমাল সৌদি

চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে ঢাকার আকাশে ব্যতিক্রমী ড্রোন শো

নাসিরনগর প্রশাসনের বর্ষবরণে উপস্থাপক ছাত্রলীগ কর্মী, সাংবাদিককে এসিল্যান্ড বললেন কিছু হবে না!

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আহমাদ মারা গেছেন

পহেলা বৈশাখ আমাদের সংস্কৃতি, ভালোবাসা আর আনন্দের প্রতীক : সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা

নববর্ষে আইন শৃঙ্খলা সুরক্ষায় প্রশংসনীয় ভূমিকায় র্যাব - ৯