আজীবন সম্মাননা প্রাপ্তি এবং আমার একান্ত অনুভূতি
১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১০ এএম
এবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ‘আজীবন সম্মাননা’ প্রদান করা হয়েছে বিশিষ্ট চলচ্চিত্র অভিনেতা কামরুল আলম খসরু। যিনি খসরু নামেই পরিচিত। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি। উন্নত চিকিৎসার জন্য সেসময় তিনি স্ত্রীসহ যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। দেশে ফিরে তিনি এই পুরস্কার নিয়ে একটি লেখা লিখেন। তার লেখায় মুক্তিযুদ্ধ ও তার চলচ্চিত্রে আগমন এবং বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘ওরা ১১ জন’-এর নির্মাণের নেপথ্য কাহিনী তুলে ধরাসহ মুক্তিযুদ্ধ ও তার নিজের কথা তুলে ধরেন। তার লেখাটি নিম্নে তুলে ধরা হলো।
কোনো কিছু প্রাপ্তির আনন্দ কিংবা সুখ ভাষায় প্রকাশ করা অনেক সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। এই অনুভূতি ভাষাহীন। উঞ্চ কিছু শব্দের নিবিড় আলিঙ্গনে কিংবা অলঙ্কৃত বর্ণগুচ্ছের সন্নিবেশিত বাক্যবিন্যাসে এ অনুভূতি বলে বোঝানো আমার পক্ষে অসম্ভব। শুধু একটি কথা বলতে পারি, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়া নিঃসন্দেহে আনন্দের এবং সম্মানেরও বটে। সেই অর্থে, হয়তোবা নিশ্চয়ই আমি সম্মানীত। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সবাই সম্মানীত হতে চায়, সাফল্যের দেখা পেতে চায়; কিন্তু, ক’জনইবা পারে সাফল্যের সেই স্বর্ণতোরণে পৌঁছতে? কোনো অর্জনই সহজ নয়। সেইজন্য এ অর্জন ছোট নাকি অনেক বড়, তা পরিমাপ করতে চাই না। যে কোনো অর্জনই উদযাপন করা উচিত। তবে সুদীর্ঘ সময়ের অন্তহীন অপেক্ষার কষ্ট, প্রতিকূলতা আর ঘাতপ্রতিঘাত পেরিয়ে এ অর্জন। এটা আমার আজীবন কষ্টের সার্থকতা কিনা, তা জানি না! প্রসঙ্গটা আনন্দের হলেও অপেক্ষা কিন্তু কষ্টের, তুমুল কষ্টের! যে ভুক্তভোগী, সেই শুধু জানে, তাঁর কষ্টের তীব্রতা! যাক সেসব কথা। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য প্রদত্ত বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা সম্মানীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ‘আজীবন সম্মাননা’ পদকে আমাকে ভূষিত করা হয়েছে সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরি প্যানেল ও এই আয়োজন এবং উদ্যোগে জড়িত সংশ্রিষ্ট সবাইকেই আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি এবং আমার স্ত্রী উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে সুদূর আমেরিকায় অবস্থান করায় পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারিনি। তাই আমার পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন জনপ্রিয় নায়ক আলমগীর। আমার স্নেহের এবং প্রিয় আলমগীরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি আমার এই পুরস্কারটি উৎসর্গ করছি সেইসব দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধাদেরকে যারা স্বাধীনতা ও সশস্ত্র সংগ্রামে আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশের জন্য তাঁদের মূল্যবান জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমি মনে করি, যারা স্বাধীনতার আগে থেকে এখন পর্যন্ত চলচ্চিত্র শিল্পে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন, তাঁদের প্রত্যেককেই ক্রমান্বয়ে এই সম্মাননায় ভূষিত করা উচিৎ। আর সেই মূল্যায়নটিও হতে হবে যথাপোযুক্ত কাজের ভিত্তিতে। আমি প্রথমে আপাদমস্তক একজন বিপ্লবী ও গেরিলা যোদ্ধা এবং তারপর অভিনয়শিল্পী কিংবা জনপ্রিয় নায়ক। প্রজন্মকে আমাকে এভাবেই চিনতে হবে, জানতে হবে। তবে অভিনয় করবো এমন ইচ্ছে মনে মনে পোষণ করতাম। আমার সেই ইচ্ছের কথা জানতেন আমার নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি প্রায়ই আমাকে অনুপ্রাণিত করে বলতেন, ‘তুই অভিনয় করবি, একদিন অনেক জনপ্রিয় অভিনেতা হবি!’ আক্ষরিক ভাষায় আমার অন্তরের গভীরের সেই অনুভূতি এ মুহূর্তে প্রকাশ করতে আমি ব্যর্থ!
আমার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’-এর মূল ভাবনা আমার মাথায় এসেছিলো একাত্তরে রণাঙ্গনে যুদ্ধ চলাকালীন। তখনই ভেবে রেখেছিলাম, দেশ স্বাধীন হবার পর যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করে সেই চলচ্চিত্রে অভিনয় করবো। দেরাদুনের তান্ডুয়ার মিলিটারি একাডেমির ক্যা¤েপ প্রশিক্ষণের সময় আমি যে অভিনয় করতে চাই, সেই ইচ্ছের অনুভূতিটুকু প্রকাশ করেছিলাম আমার সেকেন্ড ইন কমান্ড মুরাদকে। মনের গহীনের সেই সুপ্ত ভাবনা থেকেই স্বাধীনতা ও সশস্ত্র যুদ্ধের প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’-এ আমার অভিনয় করা।
আমার অভিনীত স্বাধীনতা ও সশস্ত্র যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘সংগ্রাম’-এ স্বয়ং অভিনয় করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুশেখ মুজিবুর রহমান। সিনেমাটির দৃশ্য ছিলো এমন, যুদ্ধ শেষে সদ্য স্বাধীন দেশের সামরিক বাহিনী বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের নায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্যালুট করছে। শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি ছিলো বঙ্গবন্ধুর ব্যাপক আগ্রহ। অভিনয়শিল্পীসহ সকল ধরনের সাংস্কৃতিককর্মীদের সবসময় উৎসাহ দিতেন বঙ্গবন্ধু। আমি আমার নেতা বঙ্গবন্ধুর আদেশ ও নির্দেশ পালনের জন্য, তাঁকে ভালোবাসার জন্য নিজের জীবনও বিসর্জন দিতে চেয়েছি। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসেছি বলে তাঁর মৃত্যুর পর আমাকেও বিশ্বাসঘাতকের হাতে বুলেট বিদ্ধ হতে হয়েছে। আজও বয়ে বেড়াচ্ছি বুকের ভেতর গেঁথে থাকা স্পিøন্টারের যন্ত্রণা। এতো যন্ত্রণা বয়ে বেড়ানোর পরও যদি বাংলদেশের মানুষ, আমার প্রজন্ম আমাকে শুধুমাত্র একজন জনপ্রিয় নায়ক কিংবা অভিনেতা হিসেবে চেনে-জানে, তাহলে এটা তো আমার জন্য তুমুল কষ্টের। আর এই কষ্ট তো হবে আমার জন্য চৌদ্দ বছর জেলের হুলিয়া মাথায় বয়ে বেড়ানো, পলাতক জীবন কাটানো কিংবা ইকবাল হলে পানির ট্যাঙ্কিতে এগারো ঘন্টা শ্বাসরোধ হয়ে বন্দী থাকার চেয়ে বেশি শ্বাসরুদ্ধকর। কারণ, আমি তো শুধুমাত্র একজন খ্যাতিমান অভিনেতা কিংবা জনপ্রিয় নায়ক নই, আমি একজন বিপ্লবী ও গেরিলা বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমি প্রত্যাশা করবো, বাঙালি জাতি আমাকে আমার সঠিক পরিচয়ে চিনবে, জানবে। সবাইকে আবারও অসংখ্য ধন্যবাদ। জয় বাংলা! জয় বঙ্গবন্ধু! আমার প্রাণের সোনার বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক! উল্লেখ্য, কামরুল আলম খান খসরু মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা সিটির গেরিলা ইউনিটের প্রধান ছিলেন।
বিভাগ : বিনোদন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
খুশদীলের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে রংপুরের আটে আট
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক দেশের ভিসা
মেডিকেল কলেজে শিক্ষক বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার
ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি আজ
গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে ইইউ
ভারতের উদ্বেগের মধ্যে হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান
সান্ত¡না খুঁজে পাচ্ছেন না, দুই দেশে কলঙ্কিত টিউলিপ
দুর্নীতির মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির কারাদণ্ড
বিদেশে টাকা পাচারের রাজনীতি মানুষ চায় না : পীর সাহেব চরমোনাই
শেখ পরিবারের রক্তের জন্যই দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন টিউলিপ -রিজভী
নামাজ মু’মিনের জন্য মেরাজস্বরূপ
ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে বাংলাদেশিদের লেনদেন কমেছে
স্বনির্ভর অর্থনীতির পথে দেশ
বগুড়ার বিমানবন্দর দ্রুত চালুর দাবি
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশকে মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করতে হবে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
হাজারীবাগের ট্যানারির গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
জুলাই বিপ্লব ঘোষণাপত্র দেওয়া জরুরি : নুরুল হক নুর
গণঅভ্যুত্থানের ইশতেহারে বিএনপির ভূমিকা লিখতে হবে : জয়নুল আবদিন
নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতাদের পরিবেশ রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে