নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানো প্রয়োজন -সোহেল রানা
১০ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৩৬ পিএম | আপডেট: ১১ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৪ এএম
এক ব্যক্তি রাতে সানগ্লাস পরে বাড়ি ফিরছিল। পথিমধ্যে ঘটতে থাকে নানা ঘটনা। উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধও। এমন এক গল্পে সিনেমা বানিয়েছেন বিশিষ্ট চিত্রনায়ক সোহেল রানার ছেলে মাশরুর পারভেজ। সিনেমাটির নাম ‘গোয়িং হোম’। এটি তার ক্যারিয়ারের ২য় সিনেমা। যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার ১১ আগস্ট দেশে মুক্তি পেতে যাচ্ছে সিনেমাটি। একঝাঁক নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রী নিয়ে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। নির্মাতা হিসেবে ছেলের আরও এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করছেন সোহেল রানা। ছেলের সিনেমায় দুটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোহেল রানা ও তার স্ত্রী ডা. জিনাত পারভেজ। সম্প্রতি সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হয় সোহেল রানার সাথে। সিনেমা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যখন সিনেমা তৈরি করতাম, তখন তিনটা জিনিস দিয়ে সিনেমা তৈরি করতাম। প্রথমত, আমার খুব নাম হবে। সোহেল রানা সিনেমায় অভিনয় করছে, টিকেট নিয়ে মারামারি-কাটাকাটি হবে। দ্বিতীয়ত, অনেক টাকা কামাব, তৃতীয়ত সেই টাকা-পয়সা দিয়ে আমি বাড়ি-গাড়ি কিনব। সেই সঙ্গে একজন নারী অর্থাৎ স্ত্রীও থাকবে। এই তিনটাই মূলত আমার স্বপ্ন ছিল। তিনি বলেন, আমার চলচ্চিত্র নিয়ে অনেক ধারণা ছিল। কারণ, আমি অনেক কিছু দেখেছি। পরবর্তীতে যখন আমি চলচ্চিত্র জগৎ থেকে দূরে সরে এসেছি, তখন দেখেছি, চলচ্চিত্রের দিন ভালো যাচ্ছে না। আজও খুব ভালো যাচ্ছে না। তারপরও যারা এখন সিনেমা করছে, তাদেরকে নিয়ে আমি অনেক আশাবাদী যে, একসময় তারাও ভালো সিনেমা করবে ইনশাআল্লাহ। এ ছাড়া অনেকের সিনেমাই দেশে-বিদেশে প্রশংসা কুড়িয়েছে। ছেলে চলচ্চিত্র নিয়ে একদিন কাজ করবে, এমন ইচ্ছা কি ছিলো, এমন প্রশ্নে সোহেল রানা বলেন, আমার যে ছেলে সে দেখতে মাশআল্লাহ ভীষণ সুন্দর। কিন্তু আমি তাকে কখনও সিনেমায় নামাইনি। আমি চাইনি কখনো সে চলচ্চিত্র জগতে আসুক। আমার যে তিনটা বোন তারাও কিন্তু চলচ্চিত্রে নেই। তাই আমার ছেলে টাকা-পয়সা কামানো কিংবা নাম কামানোর জন্য সিনেমা করে না। এমনকি সিনেমা চললে মেয়েরা তার পেছনে দৌঁড়াবে কিনা সে জন্যও সিনেমা করে না। তাহলে কিসের জন্য সিনেমা করে? আমি আসলে এখনও জানি না, কেন সিনেমা করে। ও বলে আমাকে বলে আমি নাকি একজন সাইন্টিস্ট, আমি সিনেমাকে ইনভাইট করি। আমরা সিনেমার ডিরেক্টর। কিন্তু আমার ছেলে ডিরেক্টর নয়, ও একজন ক্রিয়েটর। আমি আমার ছেলেকে বিশ্বাস করি, সে সত্যিকারের একজন সিনেমা মেকার। সিনেমায় শুধু নাচ-গান দেখলেন আর বুঝে গেলেন বিষয়টা মোটেও এমন নয়। সিনেমা দেখার পর যেন চিন্তা আপনার মাথায় ঢুকে যায়, এ ধারণা থাকতে হবে। ছেলের নির্মিত ‘গোয়িং হোম’ নিয়ে তিনি বলেন, এই সিনেমা নিয়ে বলতে গেলে বলব, এটি একটি ভিন্ন ধাঁচের সিনেমা। এই সিনেমায় আপনি বিনোদন খুঁজতে আসলে আমি বলব আপনি অনেকটাই আশাহত হবেন। এটা বিনোদিত করার মত সিনেমা নয়। তবে এই সিনেমা আপনাকে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিবে। এই সিনেমায় আপনার স্ত্রী অভিনয় করেছেন। নিজের স্ত্রী অভিনয়ে এসেছেন এ ব্যাপারে কি বলবেন? আমার বউকে আমি অন্য কাউকে দেখতে দেব না। আমার যে স্ত্রী হবে, সে শুধু আমার জন্যই থাকবে। হাজার জন তাকে দেখবে রাতে ঘুম হবে না। ঘুমের মধ্যে চলে আসবে, কি কি করবে, এটা আমার কাছে সহ্য হয় না। আর সহ্য হয় না বলেই, আমার আত্মীয় স্বজনের মধ্যে দুই-একজন এসেছে। কিন্তু আমার কাছে কোনোদিন অনুমতি পায়নি। আমার স্ত্রী চিকিৎসক হিসেবে কাজ করে। যদি চিকিৎসক না হতো তাহলে চাকরিও করতে দিতাম না। এখন আমার ছেলে যখন ওর মাকে নিয়ে নিয়েছে, এখানে আমার কিছু করার ছিল না। ছেলে বলে, দশ মাস দশ দিন মায়ের পেটে ছিলাম, আমি মাকে নেব। তখন বললাম নাও বাবা। আসলে একটা সময় চলে আসে, যখন ছেলেরা যা বলে বাবাকে তাই শুনতে হয়। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বর্তমানে সময়ে খুব বেশি সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে না, এর কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, স্বাধীনতার সংগ্রামের উপর আগে গল্প লিখতে হবে। স্বাধীনতার পর কয়টা উপন্যাস বাংলাদেশে লেখা হয়েছে? ৫০টি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাসের নাম যদি না বলা যায়, সেক্ষেত্রে সিনেমা হবে কিভাবে? যারা সিনেমা নির্মাণ করবেন, তারাতো পকেটের টাকা খরচ করে সিনেমা নির্মাণ করবেন না। এ জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা নির্মাণ করা বেশ কঠিন। যুদ্ধের সময়ের অনেক সরঞ্জাম পাওয়া যাবে না। যুদ্ধকালীন সেই পরিবেশ তৈরি করাও কঠিন। আমি মনে করি, এজন্য শতভাগ মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা নির্মাণ করা অসম্ভব। আপনি প্রথম মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা ‘ওরা ১১ জন’ নির্মাণ করেছিলেন। আপনার প্রাপ্তি কি? এমন প্রশ্নের জাবাবে সোহলে রানা বলেন, আমি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সিনেমা ও মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা নির্মাণ করলাম। কিন্তু আজ পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে একটা ধন্যবাদপত্র পাইনি। আমার জন্য এটা দুঃখের বিষয় না। আমি আমার জায়গা থেকে তা করেছি। কিন্তু পরবর্তীতে যারা নির্মাণ করবেন, তারা যদি সরকারের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা না পায়, তাহলে কেন করবে? তিনি বলেন, সরকার চলচ্চিত্রের জন্য যে অনুদান দিচ্ছে, তা দিয়ে একটি ভালো সিনেমা নির্মাণ সম্ভব নয়। আর যারা অনুদান পাচ্ছে তারা কারা? তারা কি চলচ্চিত্রের কেউ? ২০ জনের মধ্যে দেখা যায় ৫ জন চলচ্চিত্রে নিয়ে জ্ঞান রাখে। বাকিদের আমি চিনিই না। আমার ৫০ বছরের ক্যারিয়ারে তাদের আমিই দেখি নাই। চলচ্চিত্রের সাথে তাদের কোন স¤পৃক্ততা নেই। তাহলে তারা কি সিনেমা বানাবে? আর সরকার যে অর্থ দিচ্ছে, তা দিয়ে সিনেমা হয় না। প্রযোজকরা তখন বাড়তি লগ্নি করছে। তখন দেখা যায়, সিনেমার ব্যাবসায়ীক লাভের কথা চিন্তা করে সিনেমায় অপ্রয়োজনীয় গান ও দৃশ্য রাখা হচ্ছে, যা সিনেমার গল্পকে নষ্ট করছে। তাহলে কিভাবে আমরা ভালো সিনেমা আশা করব আপনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, রাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধাদের কতটা সম্মান দিয়েছে বলে মনে করেন? সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দিচ্ছে, সেটা ঠিক আছে। আমি মনে করি, এটি একটি ছোট পদক্ষেপ। এটাকে যদি ভাতা দিয়ে মূল্যায়ন করা হয়, তাহলে আমার কাছে ভাল দেখায় না। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এমন কিছু করে দিতে হবে, তাদের দেখলে যেন সরকারী কর্মকর্তারা সম্মান দেখায়। অসুস্থ হলে চিকিৎসাসেবা যেন ভিআইপি মর্যাদায় পায়। নতুন প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস স¤পর্কে জানা প্রয়োজন। আমি মনে করি, নতুন প্রজন্ম এখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানে না। কিন্তু তাদেরকেই এখন এটা খুব বেশি জানা প্রয়োজন। কেন দেশ স্বাধীন হয়েছে? এটা না হলে, একটা সময় স্বাধীনতার ইতিহাস হারিয়ে যাবে।
বিভাগ : বিনোদন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আওয়ামী ফ্যাসিস্ট রাজনীতিকে চূড়ান্তভাবে কবর দিতে হবে: হাসনাত
বিজয়নগরে দুইটি দোকান পুড়ে ছাই
সব দল, সব ধর্ম একত্রিত হয়ে দেশটাকে ফুলের বাগান বানাতে চাই: ডা. শফিকুর রহমান
সিসিইউতে চিত্রনায়িকা অঞ্জনা রহমান
মতলবে মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে ৩ টি ড্রেজার-বাল্কহেডসহ ১৩ জন আটক
মেহেরপুরের মুজিব নগরে যত্রতত্র অবৈধ ইটভাটা! নেই প্রশাসনের নজরদারী
‘বাংলাদেশ আজ রূপান্তরের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে’
নগরবাসিকে পানিতে কষ্ট দিতে সরকারবিরোধী চক্র সক্রিয়
বিপিএল সফল করার দায়িত্ব খেলোয়াড়দেরও: তামিম
এসিআই লিমিটেড ২০ শতাংশ নগদ এবং ১৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে
কক্সবাজারের পর্যটনকে প্রমোট করলে দেশের অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে
আফ্রিদি এখন ঢাকায়
বৃষ্টির বাধায় বুলাওয়ায়ো টেস্ট
হাটহাজারীতে ইটভাটায় অভিযান দুই লক্ষ টাকা জরিমানা
ইসলামী আন্দোলন নেতা আলতাফ হোসাইনের বড় ভাইয়ের ইন্তেকালে ঢাকা মহানগর নেতৃবৃন্দের শোক
রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফার মাধ্যমে আমরা একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে পারব : আমিনুল হক
ইসলামী আন্দোলন নেতা আলতাফ হোসাইনের বড় ভাইয়ের ইন্তেকালে ঢাকা মহানগর নেতৃবৃন্দের শোক
বিশ্বনাথে কানাডা প্রবাসীকে মোবাইল ফোনে চাঁদা দাবি : না দিলে হত্যার হুমকি
মেহেরপুর জেলা বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে বিভিন্ন গ্রামে ৩১দফা দাবি নিয়ে লিফলেট বিতরণ
সালথা উপজেলা পরিষদ কোয়ার্টারে দিন-দুপুরে দুর্ধর্ষ চুরি