ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ

মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই

Daily Inqilab ইনকিলাব

১০ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৪১ পিএম | আপডেট: ১১ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৪ এএম

আগস্ট মাসের প্রথম সাত দিন নিরাপদ মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ। ১৯৯০ সালে ইতালির ফ্লোরেন্সে ইনোসেনটি গবেষণা কেন্দ্রের ঘোষণার সম্মানে ১৯৯২ সাল থেকে বিশ্ব স্তন্যপান সপ্তাহ সারা বিশ্বে মায়েদের বুকের দুধ খাওয়ানোর বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং উৎসাহিত করতে একটি বৈশ্বিক প্রচারাভিযান। মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহর প্রথম দিন ১ আগস্টকে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ দিবস হিসেবে সনাক্ত করা হয়েছে। ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে বিভিন্ন দেশের সরকার, ইউনিসেফ, ডব্লিউএইচওসহ অন্যান্য সংস্থা। ১৯৯১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সেই ঘোষণাপত্র সমর্থন করে প্রতিষ্ঠিত হয় ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর ব্রেস্টফিডিং অ্যাকশন (ডব্লিউএবিএ) নামের একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক। জাতিসংঘের দুই সংস্থাসহ সরকারি উদ্যোগে ১ থেকে ৭ আগস্ট বিশ্বের ১৭০টির বেশি দেশে পালিত হয় সপ্তাহটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মাতৃদুগ্ধ পানে শিশু যেমন সুস্থ–সবল হয়ে বেড়ে ওঠে, তেমনি উপকৃত হন প্রসূতি নিজেও।

শুধুই মাতৃদুগ্ধ পান করালে বছরে আট লাখের বেশি শিশুর জীবন রক্ষা পাবে। যে শিশুদের বেশির ভাগেরই বয়স ছয় মাসের কম। শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর কোন বিকল্প নেই। জন্মের ১ ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ দিলে মায়ের গর্ভফুল তাড়াতাড়ি পড়ে, সহজে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়, ফলে মা রক্তস্বল্পতা থেকে রক্ষা পায়। জন্মবিরতিতে সাহায্য করে, স্তন ও জরায়ুর ক্যান্সার এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়। শিশুর সর্বোচ্চ শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ডায়রিয়া হওয়ার প্রবণতা এবং এর তীব্রতার ঝুঁকি কমায়, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ এবং কানের প্রদাহ কমায়, দাঁত ও মাড়ি গঠনে সহায়তা করাসহ অনেক উপকারিতা আছে।

মায়ের দুধ না খাওয়ালে- নিউমোনিয়াজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৫ গুণ বৃদ্ধি পায়, ডায়রিয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১১ গুণ বৃদ্ধি পায়, শিশুদের অপুষ্টি ও অন্যান্য কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৪ গুণ বৃদ্ধি পায়, জন্ডিস, কানপাকা ও পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণসহ ডায়রিয়া হওয়ার আশংকা বৃদ্ধি পায়। শারীরিক বৃদ্ধি ও বুদ্ধির বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয়। বয়সের তুলনায় ওজন অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায়; দীর্ঘস্থায়ী রোগের (ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্থুলতা) ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ ২০২৩ উপলক্ষ্যে জাতীয় পুষ্টি সেবা, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি, বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশন সারাদেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে যা মাসব্যাপী পালিত হবে।

বিশ্বে প্রতি পাঁচটি শিশুর তিনজনই জন্মের প্রথম ঘণ্টায় মাতৃদুগ্ধ পায় না। দুই বছর পর্যন্ত স্তন্যপান করাতে পারলে বছরে ৮ লাখ ২০ হাজার শিশুর জীবন বাঁচানো সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, জন্মের প্রথম ঘণ্টাতেই নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। প্রথম ৬ মাস শুধুমাত্র বুকের দুধই খাবে শিশু, এমনকি পানিও খাওয়ানো যাবে না। এরপর পরিপূরক খাদ্যের সঙ্গে অন্তত দুই বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ চালিয়ে যেতে হবে। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ’ পালিত হয়ে আসছে সেই ১৯৯২ সাল থেকে। কিন্তু এখনও জন্মের প্রথম ছয় মাস শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো হয় বিশ্বের মাত্র ৪১ শতাংশ শিশুকে। এই হারকে ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলি। আর আমাদের দেশে এখন হাজার হাজার মা নিজের বুকে দুধ পান করার পরিবর্তে বাজারে কৃত্রিম দুধ পান করান বাচ্চা দুধ পায়না, কান্না কওে, স্বাস্থ্য ভাল হচ্ছে না নামের বিভিন্ন বাহানায়। এতে লাভের চেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে। মায়ের দুধ হচ্ছে শিশুর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট খাবার এবং পানীয়। মায়ের দুধ হচ্ছে শিশুর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট খাবার এবং পানীয়। মাতৃদুগ্ধ বঞ্চিত শিশুরা বিভিন্ন রোগে সহজে আক্রান্ত হয় এবং কখনও কখনও অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

মায়ের দুধ শিশুর জন্য শুধুমাত্র শ্রেষ্ঠতম পুষ্টিকর ও সঠিক খাদ্য নয় বরং তা যে কোন রোগপ্রতিরোধক টিকার চেয়ে অধিক শক্তিশালী ও কার্যকর। ডায়রিয়া, ইনফ্লুয়েন্জ্ঞা, অটাইটিস মিডিয়া, হারপিস ইনফেকশন, শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশন, নেক্রোটাইজিং এন্টারোপ্যাথি ইত্যাদি রোগের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়া ছাড়াও কৃত্রিম ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। ফর্মূলা বা কৃত্রিম শিশু খাদ্যে লালিত শিশুদের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি মার্তৃদুগ্ধে লালিত শিশুর চেয়ে অনেক অনেক বেশি। এসকল রোগ শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধিকে ব্যহত করে এবং শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকগুন বৃদ্ধি করে।

শিশুখাদ্য হিসেবে মাতৃদুগ্ধ পরিবারের খরচ ও সময় দুটোর সাশ্রয় করে থাকে।
১. ব্রেস্টফিডিং বা স্তন্যদানে সবচেয়ে প্রথম এবং প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মায়ের সুস্বাস্থ্য (শারিরিক ও মানসিক দুটোই)। গর্ভবতী মায়ের দেহে বিভিন্ন হরমোনের আধিক্য দেখা যায়, বলা যায় গর্ভবতীর শরীরে চলে হরমোনের উৎসব। যার ফলে তিনি শারিরিক ও মানসিকভাবে ভীষণ প্রভাবিত হন। শিশুর জন্মের পর এই প্রভাব কিছুটা কমে এলেও তিনি শারিরিক ভাবে দুর্বল এবং অনেক ক্ষেত্রে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকেন। শিশুর লালন পালনে আর সব কিছুর মতো মাতৃদুগ্ধ দানে মায়ের পাশাপাশি পিতার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুকে স্তন্যদান করাবেন মা আর সেই মায়ের যতœ, তাঁর পুষ্টি, বিশ্রাম নিশ্চিত করবেন পিতা।

২.এসময় মায়ের যথাযথ খাদ্যগ্রহন ও পুষ্টি জরুরী। মায়ের পুষ্টিহীনতা মতৃদুগ্ধ উৎপাদনে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। এসময় সাধ্য অনুযায়ী দুধ, ডিম, সব্জিসহ পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করা জরুরী।

৩. স্তন্যাদানকারী মায়েদের হাইড্রেশন বা পর্যাপ্ত পানি পান নিশ্চিত করতে হবে।
৪. মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতার লক্ষ্যে পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ঘুম (প্রতিদিন নুন্যতম ৮ ঘন্টা) প্রয়োজন।

> পজিশন:-স্তন্যদানের যথাযথ পজিশনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্নঃ-১. ক্র্যডেল:- সাধারন কোলে নেবার ভঙ্গীতে যে প্রচলিত পজিশনে স্তন্যদান করা হয়, তা সব চেয়ে জনপ্রিয় ও কার্যকর।
২.বল হোল্ডিং:- সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেবার পর প্রচলিত পদ্ধতি বা ক্র্যাডেল পজিশনে স্তন্যদান অনেক ক্ষেত্রে মায়ের জন্য কষ্টকর, মাঝে মাঝে প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠে। এক্ষেত্রে “বল হোল্ডিং” অত্যন্ত কার্যকর। একটি বলকে পাশে একহাতে ধরার মতো করে শিশুকে স্তন্যদান করায় মায়ের তলপেট বা সিজিরয়িান সেকশনের ক্ষতস্থানে শিশুর ভার পড়েনা।

৩. ক্রস ক্র্যাডেল:- প্রিম্যাচিউর শিশুর ক্ষেত্রে অধিক সহায়ক।
৪. লাইং বা শায়িত:- মায়েদের জন্য কিছুটা রিল্যাক্সিং হলেও শিশুর জন্য অনেক ক্ষেত্রেই বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

> কর্মজীবি মায়েদের জন্য: আন্তরিক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে কাজে ফেরার পর অনেক মায়ের সন্তানকে কৃত্রিম খাবার বা বেবিফুড, গরুর দুধ বা পাউডার দুধের আশ্রয় নিতে হয়, যা মোটেও কাম্য নয়। এ সমস্যা সমাধানে কর্মজীবি মায়েদের জন্য প্রায় বন্ধু সম একটি যন্ত্র ব্রেস্ট পাম্প। কাজের সময় শিশুকে স্তন্য দান সম্ভব না হলে তাঁরা এই পাম্পের সাহায্যে মতৃদুগ্ধ সংগ্রহ করে তা যথাযথ উপায়ে সংরক্ষণ করতে পারেন। যা তাঁদের অনুপস্থিতিতে পরিবারের অন্য কেউ বোতলের মাধ্যমে শিশুকে খাওয়াতে পারেন। ফলে মায়ের অনুপস্থিতিতেও শিশুটি মাতৃদুগ্ধের উপকারিতা থেকে বঞ্চিত হয়না। নতুন মায়েদের ক্ষেত্রে স্তন্যদানের শুরুতেও ব্রেস্টপাম্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্রেস্ট পাম্প বিভিন্ন দামের আছে তবে ইলেক্ট্রিক পাম্প সবচেয়ে কার্যকর ও কিছুটা ব্যয়বহুল।

> পোশাক:-স্তন্যদানের উপযোগী আরামদায়ক ও স্বস্তিকর পোশাক মায়েদের জন্য জরুরী। এবিষয়েও ল্যাক্টেশন সেন্টার সহায়তা করে থাকে।
> প্রস্তুতি:-একজন পুরুষের কাছে স্তন্যদান যতোখানি অপরিচিত ব্যাপার, প্রথমবার সন্তানলাভ করা মায়ের কাছেও অনেকটা তেমনি। তই, গর্ভবতী অবস্থা থেকে এব্যাপারে মানসিক প্রস্তুতি জরুরী। পরিবারের মুরুব্বী এবং স্বামী উৎসাহ দান করে এই প্রস্তুতিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে পারেন।

> আধুনিকতা ও স্তন্যদান: সময়ের সাথে সাথে মানুষ যত আধুনিক ও শিক্ষিত হচ্ছে উন্নত বিশ্বের মায়েরা ফিরে যাচ্ছেন ব্রেস্ট ফিডিং বা স্তন্যদানে। শিক্ষা, মাতৃদুগ্ধের উপকারিতা এবং শিশুর জন্য এর গুরুত্ব অনুধাবন তাঁদের এবিষয়ে উৎসাহিত করছে। হাজারও ব্যস্ততার মাঝে শিশু সন্তানকে মাতৃদুদ্ধ থেকে বঞ্চিত করছেননা। স্তন্যদানে অন্যতম সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, মা ও শিশুর মানসিক নৈকট্য বা বন্ধন দৃঢ় করায় এর কোন বিকল্প নেই।

> স্তন্যদুগ্ধের ঘাটতি হলে তার লক্ষণগুলি: স্তন্যদুগ্ধের সঠিক সরবরাহ আছে কিনা তা জানার শ্রেষ্ঠ উপায় আপনার শিশুর ওজন পরীক্ষা করে দেখা। আপনার শিশুর সঠিক উন্নতি ও স্বাস্থ্যবৃদ্ধি হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে নিয়মিত তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া এবং শিশুর ওজন পরীক্ষা করে দেখা উচিত। তবে, শিশুর জন্মের পরে পরেই ওজন হ্রাস পাওয়া একটি সাধারণ ঘটনা। প্রথম পাঁচ বা ছয় দিনের মধ্যেই এই পরিস্থিতি ঠিক হতে থাকবে এবং চৌদ্দ দিনের মধ্যে আপনার বাচ্চাটি তার জন্মের সময়কার ওজন ফিরে পাবে।

আপনি যদি আপনার শিশুর ওজনের বিষয়ে নিশ্চিত না হন, তবে আপনার যথেষ্ট স্তন্যদুগ্ধ তৈরি হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখুন:
* বুকের দুধ খাওয়ানো আপনার জন্য সুখকর এবং যন্ত্রণাহীন।* আপনার শিশু বারংবার খেতে পছন্দ করবে। * স্তন্যদুগ্ধ দ্রুত হজম হয় এবং আপনার শিশু বার বার তা পান করতে চাইবে। এর অর্থ এই নয় যে আপনি পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদন করছেন না। * বেশিরভাগ শিশু ১.৫ থেকে ২ ঘন্টা অন্তর বুকের দুধ খেয়ে থাকে।* আপনার স্তন প্রতিবার দুধ পান করানোর পর নরম, ওজনে হালকা এবং খালি হয়ে যাবে।* খাওয়ার সময় আপনি আপনার শিশুর গিলতে থাকা লক্ষ্য করতে পারেন।* খাওয়া শেষ হওয়ার পর আপনার বাচ্চা নিজেই বুক থেকে সরে আসতে চাইবে। *আপনার শিশুর প্রতিদিন সাতবার বা তার বেশী প্রস্রাব হবে। * মল হালকা হলুদ রঙের হবে যাতে কিছু দলা বা পিন্ডের মতো থাকবে। * শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো হয় এমন বাচ্চারা দিনে বেশ কয়েকবার বা কখনো কেবল সপ্তাহে ২বার মলত্যাগ করতে পারে। উভয় ধরনের পরিস্থিতিই স্বাভাবিক বলে মনে করা হয় এবং আপনার এই সম্পর্কে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

নিম্নে বর্ণিত লক্ষণগুলির অর্থ স্তন্যদুগ্ধ কমে যাওয়া নয়, যদিও আপনার মনে হতে পারে যে সেগুলি কোনো গুরুতর সমস্যার নির্দেশক :

* সন্ধ্যায় তাড়াহুড়ো করে স্তন্যপান
* খাওয়ার সময়কাল হ্রাস পাওয়া
* বারংবার খাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া
* আপনার স্তন থেকে দুধ না গড়ানো
* চাপ দিয়ে বের করতে গেলে সামান্য পরিমাণ বা একেবারেই দুধ নেই এমন।

> বুকের দুধের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আপনি যা করতে পারেন তা এখানে দেওয়া হল:
* আপনার বাচ্চাকে সঠিক পদ্ধতিতে দুধ খাওয়ানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিছু শারীরবৃত্তীয় সমস্যার কারণে সঠিকভাবে খাওয়ানো ব্যাহত হতে পারে। সঠিক পদ্ধতিতে খাওয়ালে আবার দুধ তৈরী হয়।
* পর্যাপ্ত স্তন্যদুগ্ধ উৎপাদিত হওয়ার জন্য স্তন খালি হওয়া প্রয়োজন। ঘন ঘন খাওয়াতে থাকলে স্তনের দুধ খালি করে ফেলা যাবে। ১.৫ বা ২ ঘণ্টা অন্তর আপনার বাচ্চা যতক্ষণ চায় তাকে খাওয়ানো উচিৎ।
* আপনার এবং আপনার শিশুর সুবিধা মতো দুই থেকে তিন দিন সময় দিয়ে একটি খাওয়ানোর নিয়ম তৈরি করুন।

* খাওয়ানোর সময় দুটি স্তনই ব্যবহার করুন। এক পাশেরটি খাওয়া হলে অন্যটি এগিয়ে দিন।
* যথাসম্ভব চুষনি এবং দুধ খাওয়ানোর বোতল এড়িয়ে চলতে হবে।
* আপনার শিশুকে শুধুমাত্র বুকের দুধই দিতে হবে এবং অন্য যে কোনো ধরনের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
* নিজের প্রতি যতœ নিন নিজের জন্য পর্যাপ্ত পানীয় ও পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া সুনিশ্চিত করতে হবে এবং আপনাকে শিশুর সাথে সাথে পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহণ করতে হবে।

পরিশেষে বলতে, মায়ের দুধ মহান আল্লাহর একটি বিশেষ নিয়ামত। কারণ, অনেক মায়ের সন্তান হওয়ায় পরও শিশুকে পান করানোর মতো পরিমাণ দুধ হয় না। বিশ্বব্যাপী শিশুকে মায়ের দুধ পান করানোর হার এখনো অনেক কম। বাংলাদেশে জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ পান করানোর হার ৬৯ শতাংশ। মাত্র ৬৫ শতাংশ ক্ষেত্রে শিশুকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ পান করানো হয়। আমাদের সবার শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব এই অবস্থার জন্য দায়ী। তাই স্তন্যপান করানোর উপকারিতার ব্যাপারে সবাইকে শিক্ষিত ও সচেতন করে তুলতে হবে। আর আজকের শিশু আগামী দিনের উজ্জ্বল ভবিষ্যত। শিশুদের শারীরিক মানসিক বিকাশের জন্য মায়ের বুকের দুধ খাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। এটা শিশুর জন্য মায়ের কাছে অধিকার।

মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।
কলাম লেখক ও গবেষক
ইমেইল: [email protected]
মোবাইল: ০১৮২২৮৬৯৩৮৯


বিভাগ : স্বাস্থ্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

কাঁচকলার উপকারিতা
অপরিণত নবজাতকরাও ফিরবে স্বাভাবিক জীবনে
বিমান ভ্রমণে জেট ল্যাগ
চোখ ওঠা রোগের কারণ ও প্রতিকার
ডায়াবেটিস রোগীর হৃদরোগের ঝুঁকি
আরও

আরও পড়ুন

বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

মুসলিম চিকিৎসক

মুসলিম চিকিৎসক

শীর্ষে দিল্লি

শীর্ষে দিল্লি

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান