শীতে হাঁপানী রোগীদের কষ্ট বাড়ে
২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম
শীত আসলেই বাড়ে হাঁপানির সমস্যা। পরিবেশ দূষনের কারনে দিন দিন এই রোগটির হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে একই সঙ্গে বেড়েছে রোগ সম্পর্কে সচেতনতাও। আর হাঁপানি রোগীদের জন্য শীতল আবহাওয়া, সর্দি-কাশি-ফ্লু বা ঠান্ডা জ্বর প্রচন্ড কষ্ট আর বিপদের কারণ হতে পারে। প্রতি বছর শীতে শিশুদের ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ এবং বড়দের ৪০ শতাংশ হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের তীব্রতা বেড়ে যায়। এর প্রধান কারণগুলো হলো: এই সময়ে ঠান্ডা, জ্বর বা ফ্লুর প্রকোপ, ঠান্ডা-শুষ্ক বাতাস যা শ্বাসতন্ত্র সংকুচিত করে, শীতে বেড়ে যাওয়া ধুলাবালু ও ধোঁয়ার পরিমাণ, কুয়াশা ও বদ্ধ গুমোট পরিবেশ ইত্যাদি। এসবই শ্বাসতন্ত্রের সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে দেয়, ফলে হাঁপানি রোগীর কষ্ট বাড়ে। তাই এই সময় অবশ্যই হাঁপানি রোগীদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
অনেকেই হাঁপানি সমস্যায় ভুগে থাকেন। হাঁপানি হচ্ছে একটি ক্রনিক সমস্যা যা শ্বাসপ্রশ্বাসে অসুবিধা তৈরি করে। এটি এমন একটি সমস্যা যা প্রাণঘাতীও হয়। এক একজনের ক্ষেত্রে হাঁপানির সমস্যা এক একরকমের হতে পারে। হাঁচি, কাশি, বুকে চাপা ভাব, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া ইত্যাদি হাঁপানির অন্যতম লক্ষণ। হাঁপানি, ক্রনিক ব্রংকাইটিস, আইএলডি ইত্যাদি দীর্ঘমেয়াদী রোগে ভুগছেন যাঁরা, তাঁদের শ্বাসতন্ত্র নাজুক থাকে। করোনাভাইরাসে যারা সংক্রমিত হয়েছিলেন তাঁদের জটিলতার আশঙ্কা বেশি। এ ধরনের রোগীর তীব্র নিউমোনিয়াই শুধু নয়, অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিন্ড্রোমও (এআরডিএস) হতে পারে। এআরডিএসে ফুসফুসের টিস্যু পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না।
আর গত ৫ বছর করোনা ও ২ বছর যাবৎ ডেঙ্গু ভাইরাসটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। হাঁপানি দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রীয় রোগে ভুগছেন- এমন ব্যক্তিদের করোনাভাইরাসে সংক্রমণজনিত জটিলতার ঝুঁকি অনেক বেশি। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রায় ৬ দশমিক ৩ শতাংশের শ্বাসতন্ত্রীয় সমস্যা ছিল। যেসব ফুসফুসীয় রোগ করোনা জটিলতার উচ্চ ঝুঁকি বহন করে, তা হলো অ্যাজমা ও ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি)। সিওপিডির মধ্যে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস ও এল্ফিম্ফসেমা উভয়ই রয়েছে। সিওপিডির প্রধান কারণ হচ্ছে ধূমপান। তাই যারা বছরের পর বছর ধরে ধূমপান করে আসছেন, তাদের করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে সৃষ্ট জটিলতার বাড়তি ঝুঁকি রয়েছে।
এজমা হচ্ছে ক্রনিক এবং জীবনসংশয়ী মারাত্মক একটি ফুসফুসের রোগ, আমাদের দেশে হাঁপানি রোগ হিসাবে পরিচিত। এই রোগে সাধারণত কাশির সাথে বুকে ঘড়ঘড় শব্দ এবং শ্বাসকষ্ট অনুভূত হয়ে থাকে। পাক-ভারত উপমহাদেশে এটি অতি প্রাচীন রোগ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে এই রোগটি সম্পর্কে প্রথম ধারনা পাওয়া যায়। বর্তমানে একবিংশ শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে এসে পর্যাপ্ত গবেষণা ও পরিক্ষা নিরীক্ষার পরও হাঁপানীর কোন স্থায়ী চিকিৎসা আজও আবিস্কৃত হয়নি। আমাদের দেশের হাঁপানির সঠিক কোন পরিসংখান জানা না থাকলেও আমেরিকায় প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষ অ্যাজমায় ভুগছেন। তাদের মধ্যে ১০ মিলিয়নই (এর মধ্যে তিন মিলিয়ন শিশুও আছে) ভুগছেন অ্যালার্জিজনিত অ্যাজমায়। তাই বলা যায় আমাদের দেশেও অ্যাজমার প্রকোপ কম নয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিক ও নিয়মিত চিকিৎসা ও পরিকল্পিত জীবনযাপনের মাধ্যমে এ রোগীরা অ্যাজমার তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
হাঁপানী এমন একটি দুরারোগ্য ব্যাধি যাতে একবার আক্রান্ত হলে দু:সহ যন্ত্রণা নিয়ে রোগীকে সারা জীবন কাটাতে হয়। হাঁপানী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি মাঝে মধ্যেই সামাজিক বা পারিবারিক আনন্দ উল্লাসে যোগদান করতে পারে না। পারে না কোন পরিশ্রমের কাজে অংশ নিতে, তাকে অনেক সময় গৃহবন্দী অবস্থায় দিন কাটাতে হয়। অধিকাংশ রোগীর ক্ষেএেই ঠান্ডা আবহাওয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক। বর্ষার ঠান্ডায়, শীতের ঠান্ডায় রোগ বৃদ্ধি পায়। শীতকালে নাকে একটুখানি ঠান্ডা বাতাস বা কুয়াশা প্রবেশ করলেই প্রথমে হাঁচি, নাকঝরা ও পরে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। বর্ষা কালে দু এক ফোটা বৃষ্টির পানি গায়ে পড়লে, খোলা জানালার পাশে রাতে ঘুমালে, ভেজা বাতাসে ভ্রমণ করলে রোগ লক্ষণ বৃদ্ধি পায়।
কারণ: এ্যাজমা সাধারণত কোন এলার্জেন বা এন্টিজেন নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে ঢুকলে আমাদের ইমিউন সিস্টেম-এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। যেমন- ফুলের রেণু, বিভিন্ন প্রাণীর লোম, মাইট ও ধুলাবালি ইত্যাদি। ফলশ্রুতিতে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস বাধাগ্রস্ত হয় ও হাঁপানী দেখা দেয়। একে এটোপিক এ্যাজমা বা এলার্জিক এ্যাজমাও বলা হয়। ধূমপান, রাসায়নিক দ্রব্য, জীবাণুর সংক্রমণ, মানসিক চাপ, অট্টহাসি, অধিক ব্যায়াম, এস্পিরিন জাতীয় ঔষধ সেবন, খাদ্য সংরক্ষণকারী উপাদান, পারফিউম, অত্যাধিক ঠান্ডা, গরম, আর্দ্র ও শুষ্ক বাতাসের কারণে দেখা দেয়।
রাত্রিকালীন এ্যাজমা:-এ ধরনের হাঁপানি রাতের বেলা, বিশেষত: রাত ২ টা থেকে ৪ টার মধ্যে আক্রমণ করে। রাত্রিকালীন এ্যাজমা গুরুত্বের সহিত নেয়া উচিত কারণ এ ক্ষেত্রে রেসপিরেটরী এরেস্ট হয়ে রোগীর মৃত্যু ঘটে।
এ্যাজমা রোগীর প্রাথমিক লক্ষণ: বুকে সাঁই সাঁই বা বাঁশির মত শব্দ হওয়া। শ্বাস কষ্ট হওয়া, বুকে চাপ অনুভব করা। দীর্ঘ মেয়াদী কাশিতে ভুগতে থাকা। ব্যায়াম করলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া। শীতকালে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া। ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া, কাশির সাথে কফ নির্গত হওয়া। গলায় খুসখুস করা ও শুষ্কতা অনুভব করা। রাতে কাশি বেড়ে যাওয়া, নাড়ীর গতি দ্রুত হওয়া। কথা বলতে সমস্যা হওয়া। সর্বদা দুর্বলতা অনুভব করা। দেহ নীল বর্ণ ধারণ করা।
> এ্যাজমা রোগীকে কিছু পরামর্শ মেনে চলতে হবে: বিছানা ও বালিশ প্লাস্টিকের সিট দিয়ে ঢেকে নিতে হবে বা বালিশে বিশেষ ধরনের কভার লাগিয়ে নিতে হবে। ধুলো ঝাড়াঝাড়ি করা চলবে না। ধোঁয়াযুক্ত বা খুব কড়া গন্ধওয়ালা পরিবেশে থাকা চলবে না। আলো-হাওয়া যুক্ত, দূষণমুক্ত খোলামেলা পরিবেশ থাকা দরকার। কারণ স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় ফাঙ্গাল স্পোর অনেক সময় হাঁপানির কারণ হয়। হাঁপানি রোগীর আশেপাশে ধূমপান বর্জনীয় ও মশার কয়েল জ্বালানো যাবে না। অতিরিক্ত পরিশ্রমের জন্যও হাঁপানি রোগীরা শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তাই নিজের শরীরের অবস্থা বুঝে পরিশ্রমের ঝুঁকি নেয়া উচিত। যে খাবারে এ্যালার্জি আছে তা বর্জন করে চলতে হবে। প্রয়োজনে স্থান ও পেশা পরিবর্তন করতে হবে। শুধু নিয়ম মেনে চললেই এই ধরনের রোগীর শতকরা পঞ্চাশ ভাগ ভাল থাকেন।
এ্যাজমা রোগী যেই সব জামা কাপড় পরিধানও ব্যবহার করবে: কটন জাতীয় নরম ঢিলে-ঢালা পোশাক পরিধান করতে হবে। সিল্ক, সিনথেটিক, পশমি কাপড় পরিধান না করাই উত্তম। পাতলা বালিশ ও নরম বিছানায় শোয়া উচিত। বাসস্থান শুষ্ক ও পর্যাপ্ত সূর্যের আলো-বাতাস সম্পন্ন হওয়া উচিত।
চিকিৎসা: আক্রান্ত হলে বা লক্ষন দেখা দিলেই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। রোগের তীব্রতা বাড়লে মৃত্যু ঝুঁকিও বাড়ে। তীব্র শ্বাস কষ্টের রুগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
পরিশেষ বলতে চাই, শীতকালে শুধু অসংক্রামক রোগ বা শ্বাসকষ্ট হয় তা নয়, অন্যান্য আরও নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি হয়ে থাকে এবং তাতে মৃত্যুও হয়। এগুলোর মধ্যে শ্বাসনালির সংক্রমণ, শৈত্যপ্রবাহজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যু, বাহকজনিত রোগ, অপুষ্টি, ডায়রিয়া অন্যতম। শীতকালে নানা ধরনের শ্বাসনালির সংক্রমণ হয়ে থাকে। একদিকে যেমন ঊর্ধ্ব শ্বাসনালির সংক্রমণ হয় তেমনি নিম্ননালির সংক্রমণ বা নানা ধরনের নিউমোনিয়া হয়ে থাকে। এই নিউমোনিয়া নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসে সংঘটিত হয়। এই সময়ে কোনো কোনো অঞ্চলে মহামারি আকারে নবজাতকদের মধ্যে নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব ঘটে থাকে।
মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
কলাম লেখক ও গবেষক
অংকার শপিং কমপ্লেক্স চট্টগ্রাম।
মোবাইল: ০১৮২২-৮৬৯৩৮৯
ইমেইল: [email protected]
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ডেনমার্ক সরকারের আইএফইউ কর্তৃক একেএস খান ফার্মাসিউটিক্যালসে ১২.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ
রাশিয়ার জনগণকে ভালোবাসেন ট্রাম্প!
বিমানবন্দরে রাতভর তল্লাশিতে মেলেনি কিছুই : শাহজালালে ফের বোমা হামলার হুমকি বার্তা
বিপুল কর্মী ছাঁটাই করতে যাচ্ছে সংবাদমাধ্যমগুলো
ইএফডি মেশিনের আগে সব ব্যবসায়ীদের ভ্যাটের আওতায় আনুন
বিএনপিতে চাঁদাবাজ অত্যাচারী ও দখলবাজের কোনো জায়গা নেই : আমান উল্লাহ আমান
নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ইসলাম-ই কার্যকর পন্থা শীর্ষক জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত
বিশ্বনাথে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সুইট গ্রেফতার
সোনারগাঁওয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রধান কার্যালয় উদ্বোধন
রূপগঞ্জে শীতার্তদের ঘরে ঘরে কম্বল পৌঁছে দিলেন এসিল্যান্ড
চরনিখলা উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
ধামরাইয়ে ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ঝুলছে তালা
মাদক চাঁই রুবেল দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেফতার
দুর্নীতির মামলায় খুলনার সাবেক এমপি মিজানুর রহমান কারাগারে
সাধন চন্দ্র মজুমদারের আয়কর নথি জব্দ
জুলাই বিপ্লবে প্রত্যেকটি খুনের বিচার হতে হবে
এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৫ম ওয়ার্ল্ড ফেয়ার অ্যান্ড ফেস্ট ট্যাম্পা বে-২০২৫
নারায়ণগঞ্জে কিউলেক্স মশার উপদ্রবে নাজেহাল নগরবাসী
স্বতন্ত্র বিধিমালা ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান
নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করুন : নবীন পুলিশদের আইজিপি