মাথাব্যথার কষ্ট
২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম
জীবনে মাথাব্যথা হয়নি এমন মানুষ একটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমাদের দেশে এবং অন্যান্য দেশেও মাথাব্যথা হচ্ছে প্রাচীনতম ও প্রধান একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। মানুষ এই মাথাব্যথার জন্য প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা খরচ করে চিকিৎসা নেয় ও ওষুধ কিনতে বাধ্য হয়। ডাক্তারদের অহরহ এই ধরনের রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়।
প্রত্যেকেরই মাথাব্যথার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু কখন আপনি বুঝবেন যে, আপনাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে :
খুব সম্প্রতি শুরু হওয়া মৃদু, মধ্যম বা তীব্র মাথাব্যথা। সাথে যদি থাকে বমি বমিভাব বা বমি।
প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটি সময়ে বা প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট একটি দিনে যদি মাথাব্যথা হয়।
মাথাব্যথা যদি এত তীব্র হয়, যাতে আপনার চিন্তার বা কাজের ব্যঘাত ঘটে। শিশুরা স্কুলে যেতে যদি না পারে।
যদি মাথাব্যথা উপশম করার জন্য উচ্চ ক্ষমতাম্পন্ন ব্যথানাশকের প্রয়োজন পড়ে।
মাথাব্যথার সাথে যদি জ্বর থাকে এবং তা এক বা দুইদিন ধরে চলতে থাকে।
মাথাব্যথা কীভাবে নির্ণয় করা যায় : ডাক্তার জানতে চাইবেন আপনার মাথাব্যথা কতটা তীব্র, ঠিক কোন জায়গাটিতে ব্যথা বেশি, সাথে অন্য উপসর্গ আছে কিনা এবং কী কী করলে ব্যথা তীব্রতর হয়। শারীরিক পরীক্ষা দিয়ে কয়েক ধরনের মাথাব্যথা শনাক্ত করা যায়। প্রয়োজনবোধে প্যাথলজি পরীক্ষা, এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, এমআরআই এবং মস্তিষ্ক তরঙ্গের পরীক্ষাও করতে হয়। সচরাচর এসব পরীক্ষা করতে বলেন নিউরোলজিস্ট।
অ্যালার্জির কারণেও কিছু মাথাব্যথা হয়ে থাকে। তবে সব মাথাব্যথার কারণ অ্যালার্জি নয়। তাই মাথাব্যথার জন্য অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার পূর্বে আপনাকে যেতে হবে একজন জেনারেল প্রাকটিশনারের কাছে। তিনিই নির্ধারণ করে দিতে পারবেন যে, উচ্চতর চিকিৎসার জন্য আপনি কোন বিশেষজ্ঞের কাছে যাবেন। খুব ভালভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে ঠিক কোন অ্যালার্জেনের জন্য মাথাব্যথা হচ্ছে তা শনাক্ত করা সম্ভব।
অ্যালার্জির কারণে কোন ধরনের মাথাব্যথা হয়ে থাকে : তিন ধরনের মাথাব্যথার কারণ অ্যালার্জি। সাইনাস হেডএইক, মাইগ্রেইন এবং ক্লাস্টার হেডএইক।
সাইনাস হেডএইকের উপসর্গ ঃ
মাথায় চার গ্রুপের সাইনাস রয়েছে, এগুলোর মূল শেষ হয় নাকে। এগুলো মিউকাস এবং কম্পনের বিনিময়ে কাজ করে। প্রত্যেক গালের হাড়ের পেছনে একটি করে দুুইটি, কপালে একটি এবং নাকের পেছনে এগুলি অবস্থিত। সাইনাসের গর্ত থেকে যা কিছু নির্গত হয়, সেগুলি নাকের মাধ্যমে সচরাচর বেরিয়ে যায়।
এদের নিঃসরণের পথ বন্ধ হয়ে গেলে তখন আর নিঃসরণ ঘটতে পারে না। ভেতরের চাপ বাড়তে থাকে, সাইনাস ফুলে যায়, ফলে মাথাব্যথা ও সাইনাস ব্যথা শুরু হয়। এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সাইনাসের ব্যথা মাথাব্যথার চাইতেও বেশি হয়ে থাকে। যেমন গালের পেছনের সাইনাসে আক্রান্ত হলে গালে স্পর্শ করলেই ব্যথা অনুভূত হয় এবং এই ব্যথা দাঁতে ছড়িয়ে পড়ে। কপালের সাইনুসাইটিসের কারণে ব্যথা হয় কপালে। সাইনাসের ব্যথা খুব তীব্র হয়ে থাকে। সকালে শুরু হয়। শোয়া অবস্থা থেকে সোজা হয়ে উঠে দাঁড়ালে ব্যথার তীব্রতা কমে।
নাকের কনজেশন বা নাসারন্ধ্র বন্ধের কারণে একই ধরনের ব্যথা হতে পারে। বিশেষ করে নাকের মধ্যপ্রচীরে আঘাতের ফলে স্পার তৈরি হলে এটি ঘটে। এই ক্ষেত্রে মুখে বা নাকে ডিকনজেস্টান্ট স্প্রে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ তেমন কার্যকরী নয়। তবে এন্টিবায়োটিক দিতে হবে প্রয়োজন মতো।
আপনার মাথাব্যথা বা ফেস পেইনের সাথে যদি চুলকানি, হাঁচি, সর্দি থাকে তবে ধারণা করা যায় আপনার মাথাব্যথার কারণ অ্যালার্জি। বাতাসে ভাসমান পুষ্পরেণু, ধুলিকণা, প্রাণীর মৃতকোষ অ্যালার্জি উৎপাদক খাদ্য প্রভৃতির কারণে সাইনাস পথে বাধার সৃষ্টি হতে পারে। সেক্ষেত্রে অন্তর্নিহিত কারণ খুঁজে চিকিৎসা করলে দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাওয়া যায়। এই ধরনের অ্যালার্জিজনিত মাথাব্যথায় ব্যবহৃত হয় এন্টিহিস্টামিন, স্টেরয়েড এবং ক্রোসেবালিন। কিছু ক্ষেত্রে অ্যালার্জেন ইমিউনোথেরাপী (অ্যালার্জি সট্স) দেয়া হয়। যেসব বস্তুর দ্বারা অ্যালার্জি সৃষ্টি হয়, সেগুলি থেকে দূরে থাকলে সবসময় উপকার পাওয়া যায়।
মাইগ্রেন ঃ
এই মাথাব্যথা মৃদু থেকে তীব্র (এমন কী মানুষকে অচল করে দেবার মতো) হতে পারে। এটি হয় মাথার একদিকে। সূর্যের আলোতে এলে বেড়ে যায়। এটি পারিবারিকও হতে পারে। রোগীদের ডাক্তারের শরণাপন্ন না হয়ে পথ থাকে না। এটি দুই ধরনের। ক্লাসিক এবং কমন বা সাধারণ।
কøাসিক মাইগ্রেনের তীব্রতা বেশি এবং দীর্ঘস্থায়ী। ব্যথা শুরুর পূর্বে কিছু শারীরিক ইঙ্গিত থাকে। যেমন ভিন্ন রকম গন্ধ পাওয়া, আংশিকভাবে চোখে কম দেখা ইত্যাদি।
কমন মাইগ্রেন সংখায় বেশি দেখা যায়। আক্রমণের তীব্রতা কম। কোনো পূর্ব সংকেত থাকে না। তবে ব্যথার আক্রমণ খুব ঘন ঘন হওয়ার কারণে রোগী অচল হয়ে পড়তে পারে।
এই ধরনের মাথাব্যথায় অ্যালার্জির ভূমিকা :
বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে খাদ্য অ্যালার্জির কারণে কিছু লোক মাইগ্রেন আক্রান্ত হয় (সবক্ষেত্রে নয়)। এসব রোগী যদি এই ধরনের খাদ্য এড়িয়ে চলেন তাহলে মাইগ্রেনের তীব্রতা কম হবে, ওষুধ কম লাগবে। দেখা গেছে মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (প্যাকেটকৃত খাদ্যে এবং এশীয় রান্নায় ব্যবহৃত হয়) ফিনাইল থাইল অ্যামাইন (চকলেটে ব্যবহৃত) এবং অ্যালকোহল রোগীদের মাইগ্রেনের ঝুঁকি বাড়ায়। কৃত্রিম মিষ্টির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস
অ্যালার্জি ও অ্যাজমা রোগ বিশেষজ্ঞ
দি অ্যালার্জি অ্যান্ড অ্যাজমা সেন্টার
মোবাইল- ০১৭২১৮৬৮৬০৬
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ডেনমার্ক সরকারের আইএফইউ কর্তৃক একেএস খান ফার্মাসিউটিক্যালসে ১২.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ
রাশিয়ার জনগণকে ভালোবাসেন ট্রাম্প!
বিমানবন্দরে রাতভর তল্লাশিতে মেলেনি কিছুই : শাহজালালে ফের বোমা হামলার হুমকি বার্তা
বিপুল কর্মী ছাঁটাই করতে যাচ্ছে সংবাদমাধ্যমগুলো
ইএফডি মেশিনের আগে সব ব্যবসায়ীদের ভ্যাটের আওতায় আনুন
বিএনপিতে চাঁদাবাজ অত্যাচারী ও দখলবাজের কোনো জায়গা নেই : আমান উল্লাহ আমান
নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ইসলাম-ই কার্যকর পন্থা শীর্ষক জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত
বিশ্বনাথে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সুইট গ্রেফতার
সোনারগাঁওয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রধান কার্যালয় উদ্বোধন
রূপগঞ্জে শীতার্তদের ঘরে ঘরে কম্বল পৌঁছে দিলেন এসিল্যান্ড
চরনিখলা উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
ধামরাইয়ে ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ঝুলছে তালা
মাদক চাঁই রুবেল দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেফতার
দুর্নীতির মামলায় খুলনার সাবেক এমপি মিজানুর রহমান কারাগারে
সাধন চন্দ্র মজুমদারের আয়কর নথি জব্দ
জুলাই বিপ্লবে প্রত্যেকটি খুনের বিচার হতে হবে
এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৫ম ওয়ার্ল্ড ফেয়ার অ্যান্ড ফেস্ট ট্যাম্পা বে-২০২৫
নারায়ণগঞ্জে কিউলেক্স মশার উপদ্রবে নাজেহাল নগরবাসী
স্বতন্ত্র বিধিমালা ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান
নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করুন : নবীন পুলিশদের আইজিপি