হরিরামপুরে কৃষিতে কাজ করছে কয়েক হাজার নারী শ্রমিক
১০ মার্চ ২০২৩, ০৮:০৭ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৩৯ পিএম
মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে কৃষি ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করছে কয়েক হাজার নারী শ্রমিক। পুরুষের পাশাপাশি আজ কৃষিকাজে নারীরাও সমানতালে এগিয়ে। তবে এক্ষেত্রে বিধবা এবং তালাকপ্রাপ্ত অসহায় নারীর সংখ্যাই বেশি।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফাল্গুনের ক্রান্তিকালে এসেও সকালের হালকা কুয়াশায় আবৃত এ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ফসলের মাঠ। ওপরে খোলা নীল আকাশ। গ্রামের দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। আস্তে আস্তে সূর্যের প্রখরতায় রৌদ্রের তাপ অনেকটা শরীরকে স্পর্শ করছে। উপজেলার বাল্লা ইউনিয়নের ঝিটকা এলাকার এমনি এক রৌদ্রের উষ্ণ তাপে ফসলের মাঠে ইরি ক্ষেতে আগাছা পরিস্কার করছেন ষাটোর্ধ বিধবা নারী শ্রমিক কুলসুম বেগম। তিনি শিবালয়ের নয়াকান্দি গ্রামের মৃত শহীদের স্ত্রী। স্বামীর জমিজমা পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেলে বাল্লা ইউনিয়নের বাল্লা গ্রামে ইছামতী নদীর পাড়ে ঘর তুলে বসবাস করছেন। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাদের দাম্পত্য জীবন। মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছেলে রিক্সা চালায়। প্রায় ১৫ বছর আগে গাছ থেকে পড়ে মারা যান স্বামী শহীদ। ছেলের আয়ে সংসার চলে না কুলসুম বেগমের। বাধ্য হয়ে নিজেই শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। কখনও রাস্তায় মাটি কাটার কাজ আবার কখনও কৃষি জমিতে। তিনি জানান, “স্বামী হারিয়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে খুব কষ্ট আছি। তাই প্যাটের দায়ে বাধ্য হইয়া ক্ষেতে নামছি। জিনিসপত্রের যে দাম, তাতে পোলার কামাইতে সংসার চলে না। এ কাজে দিন প্রতি সে চার শো টাকা মজুরি পান। “
তার সাথে পাশেই আরেক ত্রিশরোর্ধ নারী হাসনা বেগম । গালা ইউনিয়নের গালা গ্রামের সেকেন মিয়ার সাথে বিয়ে হয় হাসনার। দাম্পত্য জীবনে তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। কিন্তু স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় ছয় মাস আগে তালাক নিয়ে বাবার চলে আসেন । ছেলে ও মেয়ে নিয়ে রাস্তার পাশে ঘর তুলে বসবাস করছেন। ছেলেমেয়েদের খরচ চালাতে কৃষি শ্রমিক হিসেবে দিন মজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। হাসনা বেগম জানান, স্বামীর অত্যাচার সহ্য করবার না পাইরা চইলা আইছি। ছোট দুইডা বাচ্ছা। কি করুম। বাধ্য হইয়া দিন মজুরের কামে আাইছি।”
তাদের সাথেই কাজ করছিলেন জবেদা বেগম (৬৫)। সে আরুয়া ইউনিয়নের বাউলিকান্দা গ্রামের কছের আলীর স্ত্রী। জমিজমা হারিয়ে বসবাস করছেন বাল্লা গ্রামে। স্বামী বার্ধক্য জনিত কারণে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। একমাত্র ছেলে অন্যের বাড়ি কামলা দেয়। ছেলের আয়ে সংসার না চলায় জবেদা বেগমও মাটি কাটার কাজসহ অন্যের কৃষি জমিতে দিন মজুরের কাজ করেন। তিনি বছর দেড়েক যাবৎ বয়স্ক ভাতার কার্ড পেলেও সংসারের অভাব অনটনে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি জানান, স্বামী অসুস্থ কামাই রোজগার নাই। পোলায় কামলা দিয়া যা পায়, তাতে তারই বৌ পোলাপান নিয়া চলে না। তাই বাধ্য হয়েই দিন মজুরের কাম করছি। ক্ষেত খামারের কাজ না থাকলে রাস্তায় মাটি কাটার কামও করতে অয়।
জানা যায়, এ উপজেলায় মোট নারী শ্রমিকের সংখ্যা সঠিকভাবে জানা না গেলেও উপজেলার চরাঞ্চল আজিমনগর, সুতালড়ী ও লেছড়াগঞ্জ এই তিন ইউনিয়নেই প্রায় সহস্রাধিক নারী শ্রমিক কৃষি কাজের সাথে জড়িত রয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলার ৩৬৩ জন নিবন্ধিত নারী শ্রমিক অতি দরিদ্রের কর্মসংস্থান ৪০ দিনের কর্মসূচিতে কাজ করেন। এ ছাড়াও এ উপজেলায় দুটি ইট ভাটায় প্রায় ৪০ জন নারী শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মানিকুজ্জামান বলেন, পুরুষের পাশাপাশি বর্তমানে নারীরাও বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সহযোগিতা করছেন।
উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা আব্দুল গাফ্ফার জানান, আদিকাল থেকেই কৃষিতে নারীদের ভূমিকা ছিল। তারা ঘরের কাজের পাশাপাশি কৃষি কাজেও সহযোগিতা করে আসছে। আগে গ্রামীণ পটভূমিতে একমাত্র পুরুষরাই মাঠে কৃষি কাজ করতো। বর্তমানে নারীরা প্রত্যক্ষভাবে কৃষিকাজে এগিয়ে এসেছে। তারা পুরুষের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। এতে খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি উৎপাদন বিশেষ করে রবিশস্য উৎপাদন, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি পালন, সবজি ও মৎস্য চাষসহ বিভিন্ন পেশায় নারীরা পুরুষদের পাশাপাশি সমান অবদান রাখছে।
বিভাগ : অভ্যন্তরীণ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি
ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা
সিলেটে মাজিদের ফিফটি
অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন
মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে
সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স
ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না
দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক
সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম
বৈষম্যের শিকার কুমিল্লার ১৫ হাজার এতিম শিশু
দালালচক্রে জিম্মি রোগীরা
ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই সাটুরিয়ার শিশু শিক্ষার্থীদের ভরসা
পঞ্চগড়ে চিকিৎসক পদায়নের দাবিতে সড়ক অবরোধ
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক ধর্ম উপদেষ্টা ড.খালিদ হোসেন
কুয়াকাটায় এক ইলিশ ৬ হাজার টাকা
পবিত্র কুরআনের পর সত্য হিসেবে মানুষ সংবাদপত্রকে মনে করতো
পঞ্চগড়ে সিন্ডিকেট ভাঙতে তেঁতুলিয়ায় ৫৫ টাকায় আলু বিক্রি