ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১০ পৌষ ১৪৩১

আফ্রিকান নেতারা ইউক্রেনে শান্তি আনতে পারবেন?

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

১৭ জুন ২০২৩, ০৯:৩৭ পিএম | আপডেট: ১৮ জুন ২০২৩, ১২:০২ এএম

ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ থামানোর লক্ষ্য নিয়ে সাতটি আফ্রিকান দেশের নেতা মিলে এক শান্তি মিশন শুরু করেছেন। প্রথমে ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং পরে ভøাদিমির পুতিনের সাথে তারা দেখা করছেন। এ মিশনের প্রথম পর্বে তারা একটি ট্রেনে করে পোল্যান্ড হয়ে পৌঁছেছেন কিয়েভে। প্রশ্ন এটাই, তারা এ উদ্যোগে কতটা সাফল্য পেতে পারেন?

এই প্রতিনিধিদলে আছেন দক্ষিণ আফ্রিকা, মিশর, সেনেগাল, কঙ্গো-ব্রাজাভিল, কমোরোস, জাম্বিয়া আর উগান্ডার নেতারা। এমন এক সময় এ সফর হচ্ছে যখন ইউক্রেন সবেমাত্র তাদের বহুল-আলোচিত পাল্টা অভিযান শুরু করেছে - যার লক্ষ্য পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনের যেসব ভ‚মি এতদিনের যুদ্ধে রুশ নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে সেগুলো পুনরুদ্ধার করা। এমন এক সময়ে এই মিশনের পক্ষে কী অর্জন করা সম্ভব - সেটা একটা প্রশ্ন। তারা যখন ইউক্রেনে পৌঁছান, ঠিক তখনই দেশটির রাজধানী কিয়েভে বিমান হামলার সতর্ক সংকেত দিতে সাইরেন বেজে ওঠে এবং বেশ কিছু ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়।

ইউক্রেনের বিমান বাহিনী বলেছে, কৃষ্ণসাগর থেকে বেশ কয়েকটি রুশ কালিব্র ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। শহরের পডিলস্কি এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। পরে কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎস্কো টেলিগ্রামে এক বার্তায় বলেন, তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে এবং শহরের কোন আবাসিক ভবনের ক্ষতি হয়নি। ইউক্রেনের বিমান বাহিনী বলেছে তারা মোট ১২টি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা বলেন এসব ক্ষেপণাস্ত্র ছিল ‘আফ্রিকার প্রতি রাশিয়ার বার্তা’ যে পুতিন ‘আরো যুদ্ধ চান, শান্তি নয়’। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা গত মাসে যখন এই আফ্রিকান শান্তি মিশনের কথা ঘোষণা করেছিলেন , তখন তিনি কোন সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব বা সময়সীমার কথা বলেননি। বরং দেখা যাচ্ছে এরকম সম্ভাব্য শান্তি-স্থাপনকারীদের ময়দানে ইতোমধ্যেই অনেক লোকের ভিড় জমে গেছে। চীন ও তুরস্কের নেতারা এবং পোপ ফ্রান্সিস - এরকম অনেকেই আছেন সেখানে। দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ক‚টনীতিক ও বিশ্লেষক কিংসলে মাখুবেলা প্রশ্ন তোলেন, আফ্রিকান নেতাদের এই উদ্যোগের ‘কৌশলগত কেন্দ্রবিন্দুটা কী? এটা স্পষ্ট নয়। এটা কি আফ্রিকান রাষ্ট্রপ্রধানদের একটা ফটো-অপ?’

আন্তর্জাতিক সংঘাতের ক্ষেত্রে সাধারণত আফ্রিকার নেতাদের এরকম সক্রিয়তা দেখা যায়না। সেদিক থেকে এই উদ্যোগ একটা বিরল ঘটনা। কারণ ইউক্রেন সংকটকে সাধারণত দেখা হয় রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যেকার একটা সংঘাত হিসেবে। গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রæপের (আইসিজি) আফ্রিকা বিষয়ক পরিচালক মুরিথি মুথিগা বলছেন, আফ্রিকা মহাদেশের বাইরে ঘটনা নিয়ে এ ক‚টনৈতিক উদ্যোগকে তিনি স্বাগত জানান, কারণ আফ্রিকা অনেক দিন ধরেই জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে আরো জোরালো ভ‚মিকা পাবার জন্য দাবি জানিয়ে আসছে। এ উদ্যোগের ভিত্তি স্থাপন করেছেন ব্রাজাভিল ফাউন্ডেশন নামে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান জঁ-ইভেস অলিভিয়ের। তিনি অবশ্য খুব বেশি বড় কোন লক্ষ্যের কথা বলছেন না। তার মতে লক্ষ্যটা হচ্ছে একটা সংলাপ শুরু করা, তা ছাড়া রুশ ও ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দী বিনিময়ের জন্য কাজ করা।

বিবিসির বিশ্লেষক অ্যারন আকিনিয়েমি বলছেন, আফ্রিকান নেতাদের এই ইউক্রেন শান্তি মিশন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন আফ্রিকান দেশগুলোর অনেকে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে সংশয় প্রকাশ করছেন যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ওপর প্রভাব ফেলার মতো কোন ক্ষমতা বা সুবিধা এই নেতাদের আছে কিনা। অন্য অনেকে বলছেন, এই সংকটের ক্ষেত্রে আফ্রিকার দেশগুলো যে অবস্থান নিয়েছে তা ‘অস্পষ্ট বা ধোঁয়াটে’, এবং তা এ মিশনের কোন অর্থপূর্ণ প্রভাব ফেলার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে না। অনেকে সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন, যখন সুদানসহ আফ্রিকার নানা স্থানে সংঘাত চলছে, এবং মহাদেশ জুড়ে চলছে অর্থনৈতিক সংকট - তখন এই রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি উদ্যোগের পেছনে সম্পদ ব্যয় করাটা কতটা যৌক্তিক। একজন উগান্ডার বিশ্লেষক অবশ্য বলেছেন, আফ্রিকার ভুমিকা ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের সমাধান সম্ভব নয়।

ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর পর গত বছর মার্চ মাসে জাতিসংঘের যে জরুরি অধিবেশন হয়েছিল - তাতে ৫৪টি আফ্রিকান দেশের মধ্যে ২৮টি বা ৫১% রাশিয়ার নিন্দা করে নেয়া প্রস্তাবকে সমর্থন করেছিল। ১৭টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে। অন্যদিকে আফ্রিকা মহাদেশের বাইরের দেশগুলোর ৮০ শতাংশেরও বেশি ওই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। অলিভিয়ের আরো একটি লক্ষ্যের কথা বলছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পুরো আফ্রিকা মহাদেশ জুড়েই জীবনযাত্রার মানের ওপর গুরুতর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় আছে যা আফ্রিকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এর মধ্যে আছে খাদ্যশস্য এবং সার। যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন থেকে যে শস্য এবং রাশিয়া থেকে যে সার রপ্তানি হতো - তা ভীষণভাবে সীমিত হয়ে পড়েছে। সারা বিশ্বেই এর ফলে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বেড়ে গেছে। এর জন্য সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে আফ্রিকাকে - কারণ তারা ইউক্রেনের শস্য এবং রাশিয়ার সার এ দুটিরই ওপর নির্ভরশীল ছিল। অলিভিয়ের বলছেন, আফ্রিকান নেতারা চাইছেন রাশিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগ করতে যেন তারা সেই চুক্তিটির মেয়াদ বাড়ায় - যার মাধ্যমে কৃষ্ণসাগরের ভেতর দিয়ে ইউক্রেন জাহাজে করে খাদ্যশস্য পাঠাতে পারে। তাছাড়া এই নেতারা কিয়েভের প্রতিও আহŸান জানাবেন যেন তারা তাদের বন্দরগুলোতে রুশ সারের যে চালান আটকে আছে - তার ওপর থেকে বিধিনিষেধ শিথিল করার একটা উপায় বের করে। আফ্রিকার নেতাদের এই প্রতিনিধিদলটি তৈরি করা হয়েছে ব্যাপ্তি এবং ভারসাম্যের কথা মাথায় রেখে। এখানে আছেন আফ্রিকার বিভিন্ন প্রান্তের দেশগুলোর নেতারা - যাদের এই সংকট সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গীও ভিন্ন। এতে আছেন চারজন প্রেসিডেন্ট, মিশরের প্রধানমন্ত্রী, আর উগান্ডা ও কঙ্গো-ব্রাজাভিলের দু জন প্রতিনিধি। এখানে দক্ষিণ আফ্রিকা ও উগান্ডাকে দেখা হয় রাশিয়ার প্রতি নমনীয় হিসেবে। অন্যদিকে জাম্বিয়া ও কমোরোস হচ্ছে অপেক্ষাকৃত পশ্চিমা-ঘনিষ্ঠ। মিশর, সেনেগাল ও কঙ্গো-ব্রাজাভিল মোটামুটি নিরপেক্ষ ভ‚মিকা নিয়েছে। তবে সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু ঘটনাবলী এই উদ্যোগের ওপর প্রভাব ফেলেছে। সূত্র : বিবিসি।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

হাসিনাকে কি বাংলাদেশে নির্বাসিত করা হবে?
সিরিয়ায় বিমান চলাচল স্থগিত করল ইরান
যুক্তরাষ্ট্রে খুন মাদক পাচারকারী সুনীল যাদব, দায় নিল বিষ্ণোই গ্যাং
ট্রাম্পের জয়ে ইউক্রেনের সংঘাতে পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে: উপদেষ্টা
বাংলাদেশসহ ২০টিরও বেশি দেশ ব্রিকসে আগ্রহী: পুতিনের সহকারী
আরও

আরও পড়ুন

শেখ হাসিনাসহ ৬৩ জনের নামে মামলা

শেখ হাসিনাসহ ৬৩ জনের নামে মামলা

দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক সচিব ইসমাইল হোসেন

দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক সচিব ইসমাইল হোসেন

ভোলায় আমার দেশ পত্রিকার সাংবাদিকের উপর হামলা

ভোলায় আমার দেশ পত্রিকার সাংবাদিকের উপর হামলা

ভাবনার দিক দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যবধান ঘটে গেছে

ভাবনার দিক দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যবধান ঘটে গেছে

ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিমানের মাসিক বিক্রয় ৯০০ কোটি টাকা ছাড়ালো

ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিমানের মাসিক বিক্রয় ৯০০ কোটি টাকা ছাড়ালো

ফরিদপুরের বাড়িতে এসে পৌঁছেছে মামা-ভাগ্নের লাশ

ফরিদপুরের বাড়িতে এসে পৌঁছেছে মামা-ভাগ্নের লাশ

সিরাজদিখানে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ৩ জন টেটা বৃদ্ধ, আহত ১০

সিরাজদিখানে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ৩ জন টেটা বৃদ্ধ, আহত ১০

হাসিনাকে কি বাংলাদেশে নির্বাসিত করা হবে?

হাসিনাকে কি বাংলাদেশে নির্বাসিত করা হবে?

জকিগঞ্জে উপজেলা প্রশাসনের সেবা সহজীকরণ অনুষ্ঠান

জকিগঞ্জে উপজেলা প্রশাসনের সেবা সহজীকরণ অনুষ্ঠান

লাকসামে বিএনপির আজিম-কালাম গ্রুপ মুখোমুখি: ককটেল বিস্ফোরণ, অস্ত্রের মহড়া

লাকসামে বিএনপির আজিম-কালাম গ্রুপ মুখোমুখি: ককটেল বিস্ফোরণ, অস্ত্রের মহড়া

ভুয়া পেইজে ঢাবি প্রশাসনসহ অনেকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, এডমিন ঢাবি ছাত্রদল নেতা

ভুয়া পেইজে ঢাবি প্রশাসনসহ অনেকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, এডমিন ঢাবি ছাত্রদল নেতা

ইটনায় বিএনপির স্বাধীনতার বিজয় উৎসবে নেতাকর্মী ও জনতার ঢল এই মুহূ‌র্তে নির্বাচন হ‌লে বিএন‌পি ৯০ শতাংশ ভোট পা‌বে: ফজলুর রহমান

ইটনায় বিএনপির স্বাধীনতার বিজয় উৎসবে নেতাকর্মী ও জনতার ঢল এই মুহূ‌র্তে নির্বাচন হ‌লে বিএন‌পি ৯০ শতাংশ ভোট পা‌বে: ফজলুর রহমান

ব্যান্ড সঙ্গীত ও বাইকপ্রেমীদের জন্য সুজুকি ও আর্টসেলের নতুন মিউজিক ভিডিও

ব্যান্ড সঙ্গীত ও বাইকপ্রেমীদের জন্য সুজুকি ও আর্টসেলের নতুন মিউজিক ভিডিও

বিএনপি সকল ধর্ম -বর্ণ-গোত্রের দল : প্রিন্স

বিএনপি সকল ধর্ম -বর্ণ-গোত্রের দল : প্রিন্স

বিয়ের করার সময় যে সমস্ত খেয়াল রাখা প্রসঙ্গে।

বিয়ের করার সময় যে সমস্ত খেয়াল রাখা প্রসঙ্গে।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সূচি প্রকাশ, বাংলাদেশের প্রথম প্রতিপক্ষ ভারত

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সূচি প্রকাশ, বাংলাদেশের প্রথম প্রতিপক্ষ ভারত

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা

`আগামী নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করতে হবে'

`আগামী নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করতে হবে'

সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য ও তার স্ত্রী তন্দ্রা ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য ও তার স্ত্রী তন্দ্রা ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

‘বিক্ষোভ আর কালো পতাকায়’ রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস বরণ!

‘বিক্ষোভ আর কালো পতাকায়’ রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস বরণ!