ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১
ভয়াবহ জলবায়ূ পরিবর্তন শেষ

প্রতিরক্ষা, খাদ্য ও অর্থাভাবে সৃষ্টি হচ্ছে নাব্যসঙ্কট

Daily Inqilab দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স

০৪ আগস্ট ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৪ আগস্ট ২০২৩, ১২:০২ এএম

প্রাচীন মোসোপটেমিয়া তথা ইরাকের বিশাল স্রোতস্বী নদী এবং গভীর সেচ খালগুলি একসময় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাতে কৌশলগত বাধা প্রধানের হাতিয়ার ছিল। এগুলি পাড়ি দিতে বেগ পেতে হতো দেশটির বর্হি-শত্রæদের। এখন ইরাকের প্রধান শত্রু খরা। এটি শুধু ইরাকিদের জীবিকাই নয়, তাদের নিরাপত্তাকেও বিঘ্ন্তি করছে। ১৯৭০-এর দশকের পর থেকে ইরাকে প্রবাহিত পানি ইউফ্রেতিস থেকে প্রায় ৫০ শতাংশ এবং তাইগ্রিস থেকে প্রায় এক তৃতীয়াংশ কমেছে। দেশটির পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় অনুসারে, ১৯৯৬ সালে তাইগ্রিসের বার্ষিক প্রবাহ ছিল ৫হাজার ৩শ’ ৩০ ঘন মিটার, যা ২০২২ সালে এসে ছিল ৩হাজার ২শ’ ৩০ ঘন মিটারে ঠেকেছে। নাব্যতার অভাব অঞ্চলটিতে নতুন করে প্রতিরক্ষা সঙ্কট তৈরি করেছে এবং অবিরামভাবে আইএস চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে অব্যাহত যুদ্ধকে কঠিন করে তুলেছে। বিশ্বব্যাংক বলেছে যে, ইতিমধ্যেই ইরাকের চাহিদা মেটানোর মতো পর্যাপ্ত পানি নেই, এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে এর পানির ঘাটতি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে, যা দেশটির নিজস্ব খাদ্য সরবরাহে এবং সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে আঘাত করবে। দেশটির বেশিরভাগ নদী শুকিয়ে বিস্তৃত মরুভূমির বালি চাষের জমিগুলি গ্রাস করে নিয়েছে, মানুষকে শহরে ভিড় করতে বাধ্য করছে। এই সুযোগে ইরাকের ইরান সীমান্তে অবস্থান করা ইসলামিক স্টেট (আইএস) চরমপন্থীরা, যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পিছু হটে ছিল, তারা সহজেই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে শুকনো নদী ও খালগুলি অতিক্রম করে গ্রাম ও নিরাপত্তা চৌকিগুলিতে আক্রমণ চালাচ্ছে। ২০০৫ সালে আল কায়েদা যখন ইরাকের পূর্বাঞ্চলের উপজাতিদের জমিগুলি দখল করে, তখন তারা আদাইম নদীর সাথে যুক্ত সেচ খালগুলি পার হতে পাথর ব্যবহার করেছিল এবং অনেক কৃষককে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছিল।

শেখ মুহাম্মদ ধাইফান, যিনি তার গোত্রকে বাগদাদের উত্তর-পূর্বে ৪৪টি গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়া ঠেকাতে আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন, যেখানে তারা বহু প্রজন্ম ধরে কৃষিকাজ করেছেন, বলেছেন যে, আল কায়েদার পরাজয়ের পর তিনি তার গোত্রের বেশিরভাগকে ফিরে আসতে রাজি করেছিলেন। কিন্তু এরপর ২০১২ সালে ইসলামিক স্টেটের উত্থান শুরু হলে, তার গোত্র আবার চলে যেতে বাধ্য হয়। অবশেষে, তার প্রায় পাঁচ বছর পর আইএসআইএস পরাজিত হয় এবং গ্রামবাসীরা ফিরে আসতে শুরু করে। এখন, আবার চরমপন্থীরা কখনও হেঁটে, কখনও কখনও মোটরবাইক চালিয়ে জলাশয়গুলি পার হয়ে আসছে।

গত বছর ইসলামিক স্টেট সদস্যরা রাতে পায়ে হেঁটে নদী অতিক্রম করে এবং তীরবর্তী ইরাকি সেনা ফাঁড়িতে ঘুমন্ত ১১ সৈন্যকে হত্যা করে। এই বছর তারা ইরাকের আরও প‚র্ব দিকে অগ্রসর হয়েছে এবং দিয়ালা নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলিতে আক্রমণ করেছে। ২০২৩ সালের প্রথম পাঁচ মাসে এলাকাটিতে ৫০ জনেরও বেশি বেসামরিক লোক আইএসআইএস’র হাতে নিহত হয়েছে। প্রায় ৬০ বছর আগেও অঞ্চলটি পশ্চিম ইউরেশিয়ার বৃহত্তম জলাভ‚মি ছিল। হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ সেখানে বসবাস করে আসছে। আজ, পরিবারগুলি আবার জান বাঁচানোর তাগিদে তাদের বাস্তভিটা ছেড়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এই জলাভ‚মির বিশাল অংশ শুকিয়ে মাটিতে ফাটল ধরেছে এবং মারা যাচ্ছে গবাদি পশু। এখানে শেষ বিকেলে ঘন মেঘ জড়ো হয়, কিন্তু তারপর এক ফোঁটাও বৃষ্টি না ঝরিয়ে চলে যায়।

ইরাকের পূর্বদিকের মহাসড়ক থেকে মরুভ‚মির আরও গভীরে আল-নাজিম মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়া একটি গ্রাম। ত্রিশ বছর আগে এখানে ৫হাজার লোক ছিল। আজ মাত্র ৮০জন রয়ে গেছে। গ্রীষ্মে এখানকার ঝলসানো তাপমাত্রা ১২২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাড়ায়। এর মূল ভবনটি অর্ধেকটা বালুর নিচে চাপা পড়েছে। নাজিম গোত্রের প্রধান শেখ মুহম্মদ আজিল ফালঘুস বলেন, ‹২০০০ এর দশকের গোড়ার দিকে আমরা গম ও বার্লি, ভুট্টা ও লবঙ্গ চাষ করতাম। এখন আর কোনও কৃষি নেই, চাষাবাদ আর সম্ভবপর নয়। এটিই শেষসীমা, জীবনের শেষ পরিণতি। আমরা সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে বা ভালো মানুষদের কাছ থেকে সমাধান আসার অপেক্ষায় আছি।’ (সমাপ্ত)


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হামাস-ইসরাইল
যে সব শর্তে গাজায় যুদ্ধবিরতি
১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত
শেষ তিন মাসে রেকর্ড বাজেট ঘাটতি যুক্তরাষ্ট্রের
বিশ্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একত্রে কাজ করলেই সফল হবে জাতিসংঘ
আরও

আরও পড়ুন

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হামাস-ইসরাইল

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হামাস-ইসরাইল

যে সব শর্তে গাজায় যুদ্ধবিরতি

যে সব শর্তে গাজায় যুদ্ধবিরতি

এনসিটিবির সামনে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ২

এনসিটিবির সামনে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ২

নোয়াখালীর সদর উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু আটক

নোয়াখালীর সদর উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু আটক

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

ধূমপানকে না বলুন

ধূমপানকে না বলুন