বিশ্বসাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের অবসান, বিদায় মারিও বার্গাস ইয়োসা
১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫৮ পিএম | আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০০ পিএম

বিশ্বসাহিত্যে আরেকটি যুগ শেষ হলো। স্প্যানিশ ভাষার কালজয়ী লেখক, নোবেলজয়ী সাহিত্যিক ও পেরুর জাতীয় গর্ব মারিও বার্গাস ইয়োসা আর নেই। তাঁর লেখা শুধু পাঠকদের হৃদয় ছুঁয়েছে তাই নয়, সমাজ, রাজনীতি ও ব্যক্তিসত্তার গভীর বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গিও উপহার দিয়েছেন তিনি। সাহিত্যের সীমা পেরিয়ে রাজনৈতিক জগতে সাহসী পদক্ষেপ নেওয়া এই লেখকের মৃত্যুতে বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
স্থানীয় সময় রোববার (১৩ এপ্রিল ২০২৫) পেরুর রাজধানী লিমায় পরিবারের সদস্যদের সান্নিধ্যে ৮৯ বছর বয়সে মারা যান মারিও বার্গাস ইয়োসা। পরদিন সোমবার (১৪ এপ্রিল) তার ছেলে আলভারো বার্গাস ইয়োসা সামাজিক মাধ্যম এক্সে এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানান, যা পরে সিএনএনসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো নিশ্চিত করে। বার্গাস ইয়োসা মূলত স্প্যানিশ ভাষায় লেখালেখি করতেন এবং তার সাহিত্যিক সৃষ্টির পাশাপাশি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণমূলক লেখাগুলোও আন্তর্জাতিক মহলে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জনের মাধ্যমে তিনি বিশ্বসাহিত্যের শিখরে পৌঁছান।
১৯৫২ সালে তার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। সেটা ছিল ‘লা গাইড দেল ইনকা’ নামের একটি নাটক। ১৯৬৩ সালে প্রকাশ পায় তার প্রথম উপন্যাস ‘লা সিউদাদ ই লস পেররোস’। ইংরেজিতে এটি ‘দ্য টাইম অব দ্য হিরো’ নামে পরিচিত, যা পাঠকদের কাছে বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। পরবর্তীতে এক ডজনেরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয় এই গ্রন্থটি।বার্গাস ইয়োসার স্মরণীয় উপন্যাসের মধ্যে আছে ‘কনভারসেশন ইন দ্য ক্যাথেড্রাল (১৯৬৯)’, ‘দ্য ওয়ার অব দ্য অ্যান্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড (১৯৮১)’ এবং ‘আন্ট জুলিয়া অ্যান্ড দ্য স্ক্রিপ্টরাইটার (১৯৭৭)’। আন্ট জুলিয়া অ্যান্ড দ্য স্ক্রিপ্টরাইটার বইয়ের কাহিনী অনুসারে ১৯৯০ সালে নির্মিত হয় ‘টিউন ইন টুমরো’ নামের সিনেমা।
বার্গাস ইয়োসার মৃত্যুতে তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং বিশ্বের অগণিত পাঠক শোক প্রকাশ করছেন। তাঁর তিন সন্তান এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “আমাদের মতো অনেকেই নিশ্চয়ই স্বস্তি পাবেন এটা জেনে যে তিনি একটি দীর্ঘ, ঘটনাবহুল এবং অর্থবহ জীবনযাপন করেছেন এবং অগণিত সাহিত্যিক সৃষ্টি রেখে গেছেন যা তাঁকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে।” পেরুর প্রেসিডেন্ট ও প্রেসিডেন্টের কার্যালয় সামাজিক মাধ্যমে পৃথকভাবে শোকবার্তা প্রকাশ করে তার প্রতি সম্মান জানায়। বার্গাস ইয়োসা ছিলেন পেরুর আরেকিপায় জন্ম নেওয়া এক প্রতিভাবান মানুষ, যার শৈশব কেটেছে বলিভিয়ার কোচাবাম্বায়, দাদার কনস্যুলেট পদমর্যাদার সান্নিধ্যে। তিনি সামরিক স্কুল থেকে সান মার্কোস বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাজীবন অতিক্রম করেন, পরে প্যারিস, মাদ্রিদ, লন্ডন, ওয়াশিংটন ও বার্সেলোনায় বসবাস করেন। ১৯৯০ সালে তিনি পেরুর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেন, তবে দ্বিতীয় দফায় হেরে যান আলবের্তো ফুজিমোরির কাছে। পরে তিনি স্পেনে অভিবাসন গ্রহণ করেন এবং ১৯৯৩ সালে সে দেশের নাগরিক হন। ১৯৯৪ সালে স্পেনের মর্যাদাপূর্ণ সেরভান্তেস পুরস্কার পান।
২০১০ সালের নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তি তার সাহিত্যজীবনের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি হলেও, তার অনুপ্রেরণা ছিলেন ফরাসি লেখক গুস্তাভে ফ্লবার্ত—এ কথা তিনি নিজেই জানিয়েছিলেন আয়োজকদের দেওয়া সাক্ষাৎকারে। তিনি ছিলেন সেই দুর্লভ সাহিত্যিকদের একজন, যিনি সাহিত্যের কলমকে ব্যবহার করেছেন সমাজের চোখে চোখ রেখে সত্য তুলে ধরতে। আজ যখন তিনি আর আমাদের মাঝে নেই, তখন তার লেখাগুলোই হয়ে রইল জীবন্ত চিহ্ন—যা শুধু একটি সাহিত্যিক মননের সাক্ষ্য নয়, বরং এক বিস্তৃত মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির অমূল্য ভাণ্ডার। তথ্যসূত্র : সিএনএন
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

পাবনায় চররে জমি দখল নিয়ে সংর্ঘষে গুলবিদ্ধি ৫

আইএমএফের ঋণের কিস্তি নিয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ

মার্কিন উচ্চশিক্ষার চরম পতন

পরিশুদ্ধ-পরিবর্তিত বিএনপিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনতে হবে-সাহাদাত হোসেন সেলিম

গাজায় ইহুদী হামলায় ৬০ ফিলিস্তিনি শহীদ

জাতিসংঘের দুটি আঞ্চলিক সংস্থায় নির্বাচিত হলো বাংলাদেশ

রাজনৈতিক দল গঠন এখন ছেলেখেলা!

সাভারে অজ্ঞাত নারীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার

নর্থ সাউথে ভর্তি পরীক্ষা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ

কোরআনবিরোধী নারী সংস্কার প্রস্তাবনা দেশের জন্য হুমকি স্বরূপ

পাকিস্তান-ভারতকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখাতে বলল জাতিসংঘ

‘সর্বাত্মক যুদ্ধের’ হুঁশিয়ারি পাকিস্তানের

নারী কমিশনের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে

তারেক রহমান ‘নিয়তির সন্তান’

অতিদারিদ্র্য বৃদ্ধির শঙ্কা

২৪ ঘন্টায় গ্রেফতার ১০৭২ আ’লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৫ নেতা গ্রেফতার

পারভেজ হত্যা মামলায় প্রধান আসামি মেহেরাজ রিমান্ডে

আ.লীগের ধর্ম বিষয়ক উপকমিটির সদস্য সন্তোষ কুমার রিমান্ডে

চট্টগ্রামে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ মহিলার মৃত্যু

রাজধানীর প্রধান সড়কে ব্যাটারি রিকশা বন্ধের দাবি মোটরসাইকেল চালকদের