ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

একটি আয়াত : কিছু শিক্ষা কিছু বার্তা

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ মাসুম

১৩ আগস্ট ২০২৩, ১১:০১ পিএম | আপডেট: ১৪ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম

সূরা বাকারার ১৮৮ নম্বর আয়াত : তোমরা পরস্পরে সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না এবং বিচারকের কাছে সে সম্পর্কে এই উদ্দেশ্যে মামলা রুজু করো না যে, মানুষের সম্পদ থেকে কোনো অংশ জেনে-শুনে পাপের পথে গ্রাস করবে। (সূরা বাকারা : ১৮৮)।

আয়াতের প্রথমাংশে তো সকল অন্যায় পন্থায় অন্যের সম্পদ ভক্ষণ করার ব্যাপারে নিষেধ করা হয়েছে। সেখানে রয়েছে সুদ-ঘুষ, জুলুম-আত্মসাৎ, চুরি-ডাকাতিসহ সবকিছু। কিন্তু দ্বিতীয়াংশে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, ‘তোমরা এই উদ্দেশ্যে মামলা রুজু করো না যে, মানুষের সম্পদ থেকে কোনো অংশ জেনে-শুনে পাপের পথে গ্রাস করবে’। এখান থেকেই আমরা কুরআনি আলো ও হেদায়েত গ্রহণের চেষ্টা করবÑ ইনশাআল্লাহ।

আলোচ্য আয়াতে আমরা স্পষ্ট বার্তা পাইÑ বাকপটুতা, কৌশলী যুক্তি-তর্ক এবং মিথ্যাসাক্ষী, ক্ষমতার প্রভাব বা অন্য কোনো কারণে প্রভাবিত হয়ে বিচারক অন্যের হক যদি আমাকে দিয়েও দেয়, বা আমার পক্ষে ভুল রায় এসে যায়, শরিয়তের দৃষ্টিতে এই রায় আমার জন্য গ্রহণ করা হালাল ও বৈধ নয়; সেটি হারাম বলেই বিবেচিত। কারণ মিথ্যা মিথ্যাই। অন্যায় অন্যায়ই। বিচারিক ফয়সালার মাধ্যমে মিথ্যা সত্য হয় না, অন্যায় ন্যায় হয়ে যায় না!

আল্লামা ইবনে কাসীর (রাহ.) এই আয়াতের তাফসিরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চমৎকার একটি হাদিস উল্লেখ করেছেন। হযরত উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : আমি একজন মানুষ। আর তোমরা আমার নিকট বিভিন্ন বিবাদের ফয়সালার জন্য আস। হতে পারে, তোমাদের কেউ অপর থেকে অধিক বাকপটু ও প্রমাণ উপস্থাপণে বেশি পারঙ্গম। তাই হতে পারে, আমি তার কথা শুনে সে অনুযায়ী ফয়সালা করে দিলাম। অতএব, এভাবে যদি আমি কারো জন্য তার ভাইয়ের কোনো হক দিয়ে দেই, সে যেন তা গ্রহণ না করে। কারণ আমি (তার অন্যায্য দাবি ও বাকপটুতার ভিত্তিতে) তাকে যা দেই, সেটা (পরিণতির বিচারে) আগুনের একটি টুকরো। (সহিহ বুখারী : ৭১৬৮)।

আল্লামা ইবনে কাসীর (রাহ.) আয়াতের তাফসিরে উপরোক্ত হাদিস উপস্থাপন করার পর বললেন : এই আয়াত ও হাদিস নির্দেশ করে, বিচারকের বিচার কোনো বিষয়কে মূল থেকে পরিবর্তন করতে পারে না। কাজেই (বিচারকের বিচার) আদতে কোনো হারামকে প্রকৃতভাবে হালাল করতে পারে না এবং কোনো হালালকেও হারাম করতে পারে না। বরং সে’টি কার্যকর হয় কেবল বাহ্যিকভাবে। এই বাহ্যিকতা যদি বাস্তবতার সাথে মিলে যায়, তবে তো সোনায় সোহাগা। অন্যথায় বিচারক (তার সাধ্য মাফিক ন্যায় বিচারের কারণে) পুরস্কার পাবে, কিন্তু নিজের পক্ষে কৌশলে রায় আদায়কারীর জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।

এজন্য আল্লাহ তায়ালা বলেছেন : ‘তোমরা পরস্পরে সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না এবং বিচারকের কাছে সে সম্পর্কে এই উদ্দেশ্যে মামলা রুজু করো না যে, মানুষের সম্পদ থেকে কোনো অংশ পাপের পথে গ্রাস করবে জেনে-শুনে। অর্থাৎ, তোমার জানা আছে যে, তুমি যা দাবি করছ তা অন্যায়; কিন্তু বাকপটুতার মাধ্যমে অন্যায়কেই প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছ। (তাফসিরে ইবনে কাসীর ১/৫২১)।

অর্থাৎ, মানবরচিত আইনগুলোর সক্ষমতা যেখানে গিয়ে থেমে যায়, ইসলামের এই ঐশী নীতি সেখানেও তার কার্যকরিতা ও সক্ষমতার স্বাক্ষর রাখতে পারে। তাই দুয়ের মাঝে পার্থক্যের দেয়াল স্পষ্ট। কারণ মানবরচিত আইন কোনো বিষয়ের শুধু বাহ্যিক দিকটাই ধরতে পারে।

ইরাকের সমকালীন আরব দাঈ ড. আবদুল কারীম যাইদান (রাহ.) উপরোক্ত হাদিস সংশ্লিষ্ট আলোচনায় বলেন : এই পুরো হাদিসে ইসলামী সমাজব্যবস্থায় নাগরিকদের পারস্পরিক সম্পর্কের চমৎকার ব্যবস্থাপনা এবং হকদারের হকের সুরক্ষার নিশ্চয়তার বিষয়টি বিদ্যমান। পক্ষান্তরে মানবরচিত ব্যবস্থায় এটি পাওয়া সম্ভব নয়। সেখানে ব্যাপারটি শুধু আদালতকতৃর্ক রায় প্রদানের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। এরপরে তার আর কিছু করার নেই। কারণ মানবরচিত আইনের আখেরাত ও পরকালীন বিষয়ে হস্তক্ষেপের সক্ষমতাই নেই। (উসূলুদ দাওয়াহ, পৃ. ৫৩)।

আজ ‘সততা’ শব্দটি যখন বেমালুম ভুলে যাওয়া হচ্ছে, ‘ন্যায়’ শব্দটিও যখন বিলুপ্ত হতে চলেছে, ‘ইনসাফ’ শব্দটি ব্যবহার হচ্ছে অপাত্রে, কেমন যেন সততা এখন বোকাদের গুণ, চালাক মানুষ সৎ হয় কী করে! আইনের হাত যখন শক্তিমানদের ছুঁতে অসহায়, ‘ন্যায় বিচার’ যখন সোনার হরিণের মতো, যার শক্তি আছে তাকে ফলটি পেড়ে দেয়াই যেন বিচার! ক্ষমতা যার, তাকে সুরক্ষা দেয়াই যেন বিচারের কাজ, হতাশার এই ক্ষণেও কুরআন কারীম আমাদের হাতছানি দিয়ে যায়! আমরা কুরআন কারীমের যত কাছাকাছি যাব ততই আলো পেতে থাকব।

আসুন, আলো নিই কুরআন থেকে! আশ্রয় গ্রহণ করি ইসলামের ছায়াতলে! অন্ধকার ঘুঁচে ন্যায় ও ইনসাফের পতাকা উড়বে আমাদের সমাজে, ইনশাআল্লাহ।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-১
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-২
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-১
কে অন্ধ, কে চক্ষুষ্মান
সে-ই স্বাধীন যে সিজদা করে এক আল্লাহকে
আরও

আরও পড়ুন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমীরের কুশল বিনিময়

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমীরের কুশল বিনিময়

সিঙ্গেল সিটের দাবিতে গভীর রাতেও হলের বাইরে ছাত্রীরা

সিঙ্গেল সিটের দাবিতে গভীর রাতেও হলের বাইরে ছাত্রীরা

ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করলো

ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করলো

ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন অ্যার্টনি জেনারেল পাম বন্ডি

ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন অ্যার্টনি জেনারেল পাম বন্ডি

‘আ.লীগকে রাজনীতিতে সুযোগ দেওয়া মানে শহীদদের সঙ্গে গাদ্দারি করা’

‘আ.লীগকে রাজনীতিতে সুযোগ দেওয়া মানে শহীদদের সঙ্গে গাদ্দারি করা’

বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের