ভালো কাজে দেরি করা উচিত নয়-২
১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ এএম
গত নিবন্ধে আমরা আলোচনা করেছিলামÑ যে মানুষ নেক আমল করতে চায়, দান সদকা করতে চায়। কিন্তু তারা মনে করে তাদের হাতে অঢেল সময় আছে। একটা সময় তারা দেখতে পায় তাদের সময় ফুরিয়ে গেছে। তখন আক্ষেপ করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।
এ আক্ষেপ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে আজকের দান আজকেই করতে হবে। আজকের নেক আমল আজকেই করতে হবে। আগামীকালের অপেক্ষায় রেখে দেয়া যাবে না কিছুই। পবিত্র কুরআনে কারীমে আল্লাহ তায়ালার ইরশাদÑ ‘তোমরা তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং এমন জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও, যার প্রশস্ততা হবে আকাশসমূহ ও জমিনসম। তা মুত্তাকিদের জন্যে প্রস্তুত করা হয়েছে।’ (সূরা আলে ইমরানÑ১৩৩) আরেক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেনÑ ‘তোমরা কল্যাণকর কাজে প্রতিযোগিতা করো।’ (সূরা বাকারা-১৪৮) হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, যখন যে অবস্থাতেই থাকো, নেক কাজ করতে থাকো। নেক কাজের জন্য নিজের অবস্থা পরিবর্তনের অপেক্ষায় থাকা মূলত শয়তানের ধোঁকা। এ অপেক্ষায় যারা থাকে, নেক কাজের সুযোগ তাদের আর হয়ে ওঠে না।
উপরোক্ত হাদিসে বর্ণিত দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, এমন সচ্ছলতা, যা একজন মানুষকে দাম্ভিক ও অহংকারী করে তোলে এবং আল্লাহর হুকুম-আহকাম ভুলিয়ে দেয়। অনেককে বলতে শোনা যায়Ñ আরো কিছু টাকা-পয়সা কামিয়ে নিই, এরপর সবকিছু ছেড়ে দেব! অথবা ‘ঢাকায় মাথা গোঁজার মতো একটি বাড়ি করতে পারলেই আমার আর কোনো চিন্তা নেই। তখন কেবলই আল্লাহকে ডাকব!’
আসলে এমনটা যারা ভাবেন, তারা মানুষের একটি স্বভাবজাত চাহিদার কথা ভুলে যান। হাদিস শরীফে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আদমসন্তানের যদি দুই উপত্যকা ভর্তি সম্পদ থাকে, তাহলে সে তৃতীয় আরেকটি তালাশ করবে। আদমসন্তানের পেট তো (কবরের) মাটি ছাড়া আর কিছুই ভরিয়ে দিতে পারবে না।’ (সহিহ বুখারী-৬৪৩৬)
তাই অঢেল টাকা-পয়সা উপার্জন করার পর আল্লাহ তায়ালার বন্দেগিতে মনোনিবেশ করার যে প্রতীক্ষা, তা কেবলই শয়তানের ধোঁকা। অল্প সম্পদ হাতে নিয়ে যে আল্লাহকে ডাকতে পারে না, সম্পদ বেশি হলে তার ইবাদত করার সুযোগ কোথায়? তখন তো বরং সম্পদের নেশা বেড়ে যাবে আরো বহুগুণে। তাই কম-বেশি সম্পদ এখন যাই আছে, তা নিয়েই ইবাদতে মনোনিবেশ করো, দানসদকা করতে থাকো। এর পাশাপাশি যদি কেউ সম্পদ বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করে যায়, তাহলে তা নিন্দিতও নয়।
হাদিসে বর্ণিত শয়তানের পরবর্তী ধোঁকা-সুস্থতা। মানুষ ভাবে, এখন তো সুস্থই আছি। যে কোনো সময় চাইলেই যে কোনো ইবাদত করতে পারি। হাত সচল, তা দিয়ে যা ইচ্ছা ধরতে পারি। পা সচল, তা দিয়ে যেখানে ইচ্ছা যেতে পারি। তাই মন চাইলেই যে কোনো ইবাদত যে কোনো মুহূর্তে করে নিতে পারব। তাড়াহুড়োর কিছুই নেই। কিন্তু এ সুস্থতার নিশ্চয়তা দেবে কে?
আগামীকাল সে অসুস্থ হয়ে পড়বে না, এর কি গ্যারান্টি আছে? অপেক্ষা কি তাহলে এ অসুস্থতার, যা শরীর নষ্ট করে দেবে, যাবতীয় শক্তি শেষ করে দেবে? এ অপেক্ষা তো তাহলে নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ রোগব্যাধিতে শিকার হলে তখন আর ইবাদতের সুযোগ থাকবে না।
অনেকে তো বলে কয়েই বার্ধক্যের অপেক্ষা করে। তাদের ভাবনা-ইবাদত-বন্দেগি তো বুড়ো বয়সের কাজ। যৌবনের স্বাদ ভোগ করে নিই। এরপর আল্লাহকে ডাকা যাবে। অনেকে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যৌবনে হজ করে না, পাছে আবার হজের পর গোনাহ হয়ে যায় কি না। তাই হজ করার জন্য তারা বার্ধক্যকেই বেছে নেয়, যেন তখন একনাগাড়ে কেবল আল্লাহর ইবাদত করা যায়। তাদের দৃষ্টিতে, যারা যৌবনে আল্লাহর ইবাদত করে, তারা একপ্রকারের বোকা। কারণ যৌবনের কোনো স্বাদই তারা ভোগ করতে পারে না। তারুণ্যের উচ্ছলতায় নিজেকে ভাসিয়ে দেয়াই তাদের দৃষ্টিতে বুদ্ধিমানের কাজ।
অথচ হাদিস শরীফে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন যখন আল্লাহ তায়ালার আরশের ছায়া ব্যতীত অন্য কোনো ছায়া থাকবে না, তখন সাত প্রকারের মানুষ সেই আরশের ছায়ায় স্থান পাবে। তাদের একজন হলো, ‘অর্থাৎ এমন যুবক, যে তার প্রভুর ইবাদতে বেড়ে উঠেছে।’ (সহিহ বুখারী-৬৬০)
প্রিয় নবীজী (সা.)-এর হাদিসের প্রতি যাদের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে, তাদেরকে তাই স্বীকার করতেই হবে, উদ্যম তারুণ্যে গা ভাসিয়ে দেয়ায় নয়, বরং আল্লাহ তাআলার ইবাদতে যৌবনের সময়টুকু কাটানোই প্রকৃত বুদ্ধিমানের কাজ। ইবাদতের যে স্বাদ ও তৃপ্তি যৌবনে পাওয়া যায়, বুড়ো বয়সে কি তা পাওয়া যাবে! তাই বার্ধক্যের অপেক্ষা নয়, যৌবন থেকেই ইবাদত করতে শুরু করুন।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান
ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল
অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের
গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা
রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি
বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান
২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭
প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু
কী আছে তৌফিকার লকারে?
ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা
অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা
শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা
৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি
৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ