কন্যাসন্তান লালন করা, জান্নাতে প্রবেশের মাধ্যম-২
১৬ আগস্ট ২০২৩, ১১:০৩ পিএম | আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২৩, ০৯:৫২ পিএম
ইসলাম-পূর্ব জাহেলি আরবে নিয়ম ছিল, যদি তাদের কন্যা জন্মলাভ করত, তাহলে তারা কন্যা হওয়াকে নিজের জন্য অমঙ্গল ও অপমানের কারণ মনে করত। সন্তান জন্মের কিছুদিন পূর্ব থেকেই তারা মানুষের আড়াল হয়ে যেত, মানুষের কাছ থেকে লুকিয়ে বেড়াত যে, জানা নেই আমার ঘরে কী সন্তান জন্মলাভ করবে। পরে যদি ছেলে সন্তান হতো এটাকে তার জন্য সম্মানের বিষয় মনে করত। আর যদি মেয়ে সন্তান হতো তাহলে তারা সেটাকে অমঙ্গল ও অপমানের কারণ মনে করত।
আল্লাহ তাআলা সূরায়ে নাহলে তাদের বর্ণনা এভাবে দিয়েছেনÑ তাদের কাউকে যখন কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন তার মুখম-ল কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনোস্তাপে ক্লিষ্ট হয়। তাকে যে সুসংবাদ দেয়া হয়, তার গ্লানি হেতু সে নিজ সম্প্রদায় হতে আত্মগোপন করে; সে চিন্তা করে যে, হীনতা সত্ত্বেও সে তাকে রেখে দিবে, না মাটিতে পুঁতে দিবে। লক্ষ করো, সে কত নিকৃষ্ট সিদ্ধান্ত স্থির করেছিল। (সূরা নাহল : ৫৮-৫৯)।
কন্যাসন্তান ‘সুসংবাদ’ লক্ষ করুন, আয়াতে কন্যাসন্তানের জন্মের সংবাদকে ‘সুসংবাদ’ বলা হচ্ছে। তাদের জাহেলি কর্মকা- ও মানসিকতার শুধু নিন্দাই করা হয়নি বরং তারা যেটাকে দুঃসংবাদ মনে করছে সেটাকে ব্যক্তই করা হয়েছে ‘সুসংবাদ’ বলে।
সাথে সাথে মুমিনদের মাঝেও যেন এ জাহেলি মানসিকতার লেশমাত্র না থাকে সেজন্য আল্লাহ আয়াতের শেষে বললেন, ‘লক্ষ করো সে কত নিকৃষ্ট সিদ্ধান্ত স্থির করেছিল।’ একটি শিক্ষণীয় ঘটনা জাহেলি যুগে অনেকে নিজের দশ দশটি কন্যাসন্তানকেও জীবিত কবর দিয়েছে। ইসলাম এই জুলুম-প্রথার অবসান ঘটিয়েছে। তাই এ প্রথার সাথে মুসলমানের কোনোরূপ সামঞ্জস্য থাকা উচিত নয়। কন্যাসন্তান হলে কোনোরূপ অসন্তুষ্ট হওয়া উচিত নয়। মুসলমানদের এ কাজ পরিহার করা উচিত।
রাসূলুল্লাহ সা. যেমনিভাবে কন্যাসন্তান হওয়াকে আল্লাহর রহমত বলেছেন এবং কন্যাসন্তানের সাথে তিনি যে ভালোবাসা, মহব্বত ও স্নেহের প্রকাশ ঘটিয়েছেন- এ আমাদের আদর্শ। আমাদের উচিত রাসূলুল্লাহ সা.-এরই অনুসরণ করা। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কর্মপন্থা রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজ কন্যাদের সাথে অত্যন্ত মহব্বত ও সস্নেহের আচরণ করতেন। তাঁর চারজন কন্যাসন্তান ছিলেন। হযরত ফাতেমা (রা.), যয়নব (রা.), রুকাইয়া (রা.), উম্মে কুলসুম (রা.)।
প্রথম তিন মেয়ের ইন্তিকাল আগে হয়ে যায়। হযরত ফাতেমা (রা.)-এর ইন্তেকাল রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের ছয় মাস পরে হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন কোনো সফরে যেতেন, সবশেষে ফাতেমা (রা.)-এর সাথে দেখা করে যেতেন। আবার যখন সফর থেকে ফিরে আসতেন, সর্বপ্রথম ফাতেমা (রা.)-এর সাথে দেখা করতেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজের আমলের মাধ্যমে কন্যাসন্তানের সম্মান, তার প্রতি সস্নেহ ও মহব্বতের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
যেন আমরাও তাঁর অনুসরণের মাধ্যমে নিজের কন্যাসন্তানের সাথে তেমন আচরণ করতে পারি, যেমনটি তিনি তাঁর কন্যাদের সাথে করে দেখিয়েছেন। কন্যার লালন-পালন জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম রাসূলুল্লাহ (সা.) কন্যাসন্তানের লালন-পালনের যে পরিমাণ ফজিলতের কথা বলেছেন, পুত্রসন্তান লালন-পালনের ক্ষেত্রে সে পরিমাণ বলেননি। হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাযিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : যে ব্যক্তির তিনটি কন্যাসন্তান বা তিনজন বোন আছে। আর সে তাদের সাথে উত্তম আচরণ করেছে তাদের নিজের জন্য অসম্মানের কারণ মনে করেনি সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। (জামে তিরমিযী : ১৯১২)।
দেখুন, এ ফজিলতের কথা পুত্রসন্তানের বেলায় বলা হয়নি। বরং কন্যাসন্তানের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে। এ জন্য আমাদের উচিত কন্যাসন্তানের লালন-পালন সন্তুষ্টচিত্তে করা। কন্যাসন্তান জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায় হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তিকে কন্যা সন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সে ধৈর্যের সাথে তা সম্পাদন করেছে সেই কন্যাসন্তান তার জন্য জাহান্নাম থেকে আড় হবে। (জামে তিরমিযী : ১৯১৩)।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গী হওয়া দেখুন! জান্নাতে প্রবেশ করার মাধ্যমও হলো কন্যাসন্তানের লালন-পালন করা। আবার জাহান্নাম থেকেও মুক্তি মিলবে কন্যাসন্তানের উত্তমরূপে প্রতিপালন করার দ্বারা। এর চেয়ে বড় আরেকটি ফজিলত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
হযরত আনাস রাযিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : যে ব্যক্তি দুইজন কন্যা সন্তানকে লালন-পালন ও দেখাশুনা করল (বিয়ের সময় হলে ভালো পাত্রের কাছে বিবাহ দিলো) সে এবং আমি জান্নাতে এরূপ একসাথে প্রবেশ করব যেরূপ এ দুটি আঙুল। তিনি নিজের দুই আঙুল মিলিয়ে দেখালেন। (জামে তিরমিযী : ১৯১৪)।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান