সালাম : ইসলামের অনুপম অভিবাদন পদ্ধতি-২
০১ মে ২০২৪, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ০১ মে ২০২৪, ১২:০৯ এএম
আল্লাহ তাআলা হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করে সর্বপ্রথম তাঁকে সালামের শিক্ষাদান করেছেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে : আল্লাহ তাআলা হযরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করলেন। তাঁর দেহের দৈর্ঘ্য ছিল ষাট হাত। সৃষ্টি করার পর তাঁকে নির্দেশ দিয়ে বললেন, তুমি যাও এবং ফিরিশতাগণের ওই জামাতটিকে সালাম দাও। তারা তোমার সালামের জবাব কী দিয়ে দেন তা তুমি মনোযোগ দিয়ে শুনবে। এটাই হবে তোমার ও তোমার বংশধরের অভিবাদন-পদ্ধতি। তিনি গিয়ে ফিরিশতাগণকে সালাম দিলেনÑ ‘আসসালামু আলাইকুম’। তাঁরা জবাবে বললেনÑ ‘আসসালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ’। তাঁরা ‘ওয়া রহমাতুল্লাহ’ বাক্যটি বৃদ্ধি করেন। (সহীহ বুখারী : ৩৩২৬-৬২২৭)।
এ হাদিস থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল, সালাম শুধু মুসলমানদের পারস্পরিক অভিবাদন পদ্ধতিই নয়; বরং মানবজাতির প্রথম অভিবাদনের ভাষাও সালাম। জান্নাতে জান্নাতীরা একে অপরকে অভিবাদন জানাবে সালামের মাধ্যমে। আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে ইরশাদ করেছেন : জান্নাতে জান্নাতীদের পারস্পরিক অভিবাদনের ভাষা হবে ‘সালাম’। (সূরা আহযাব : ৪৪)।
হাদিসের ভাষ্য মতে, আল্লাহ তাআলা উম্মুল মুমিনীন খাদিজাতুল কুবরা (রা.)-এর প্রতি বিশেষ সম্মানার্থে তাঁকে সালাম শব্দে সম্ভাষিত করেছেন। ফিরিশতাগণের পারস্পরিক অভিবাদনের ভাষাও সালাম। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সা.) উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন : এ হলেন জিবরীল, তিনি তোমাকে সালাম বলেছেন। -সহীহ বুখারী, হাদিস ৩২১৭; সহীহ মুসলিম, হাদিস ২৪৪৭; জামে তিরমিযী, হাদিস ৩৮৮২।
নবীজী (সা.) প্রবর্তিত সালামের এ সর্বজনীন বিধানটি ইসলামের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ শিআর বা নিদর্শন। সালামের মাধ্যমেই মুসলিম ও অমুসলিমের মধ্যে তথা মুমিন ও কাফেরের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারিত হয়। কুরআন কারীমে ইরশাদ হয়েছে : কেউ তোমাদেরকে সালাম দিলে পার্থিব জীবনের সম্পদ লাভের প্রত্যাশায় তাকে বলো না- তুমি মুমিন নও। (সূরা নিসা : ৯৪)। এ আয়াতাংশ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়, সালাম মুমিনের অন্যতম শিআর বা নিদর্শন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : পরিচিত-অপরিচিত নির্বিশেষে প্রতিটি মুসলিমকে সালাম দাও। (সহীহ বুখারী : ১২)। শুধু পরিচিত মুখ দেখে সালাম দেয়া অসঙ্গত। পরিচিত-অপরিচিত সকলকেই আমরা সালাম দেব।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : তোমরা দয়াময় আল্লাহর ইবাদত কর, মানুষকে আহার করাও এবং সালামের বিস্তার ঘটাও, নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (জামে তিরমিযী : ১৮৫৫)। আলোচ্য হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) তিনটি নেক আমল বা সৎকর্মের উপদেশ দিয়েছেন। উক্ত তিনটি আমল যে কাজে পরিণত করবে তার জন্য জান্নাতের মহা সুসংবাদ রয়েছে। ক. আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদত করা। আল্লাহ তাআলার যে বিশেষ হক বা অধিকার বান্দার ওপর আরোপিত হয়েছে, যে জন্য তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, তা হলো বান্দা শুধু তাঁরই ইবাদত করবে। শুধু তাঁকেই উপাস্যরূপে গ্রহণ করে নেবে। জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাঁর হুকুম ও বিধানের সামনে আত্মসমর্পণ করবে।
খ. অপরকে আহার করানো। নিঃস্ব-দরিদ্র, অসহায়-অভাবগ্রস্ত ও ক্ষুধা-পিপাসাক্লিষ্টকে ইখলাস ও একনিষ্ঠতার সাথে আহার দান করবে। বন্ধুবান্ধব, আপনজন, আত্মীয়-স্বজন ও আল্লাহর নেক বান্দাদেরকে সামর্থ্য অনুযায়ী আন্তরিকতাপূর্ণ মেহমানদারি করবে। এর মাধ্যমে মানুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপিত হবে, পারস্পরিক সম্প্রীতি ও ভালবাসা গভীর থেকে গভীরতর হবে। সংকীর্ণ মানসিকতা ও কৃপণতার ন্যায় ঘৃণিত মনোবৃত্তি দূরীকরণে এটি একটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ ব্যবস্থা।
গ. পারস্পরিক সাক্ষাতকালে সালাম বিনিময় করা। সালাম ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন, আল্লাহ তাআলা নির্দেশিত একটি সারগর্ভ দুআও এটি। উল্লিখিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) পারস্পরিক সালাম বিনিময়ের এ বিধানটি সমাজ জীবনে ব্যাপকভাবে বিস্তার ঘটানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যে পর্যন্ত না তোমরা পূর্ণাঙ্গ মুমিন হবে। তোমরা পূর্ণাঙ্গ মুমিন হবে না, যে পর্যন্ত না তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টি হবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি আমলের কথা বলব না, যা করলে তোমাদের পরস্পরের মাঝে ভালবাসা সৃষ্টি হবে। তা হলো, তোমরা সালামের বিস্তার ঘটাবে। (সহীহ মুসলিম : ৫৪)।
এ হাদিস থেকে স্পষ্টভাবে জানা গেল, পূর্ণাঙ্গ মুমিন হওয়ার জন্য মুসলমানদের পারস্পরিক মহব্বত ও ভালবাসা অতি আবশ্যক। রাসূলুল্লাহ (সা.) আলোচ্য হাদিসে অত্যন্ত গুরুত্ব ও দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, দুই মুসলমান পারস্পরিক সাক্ষাতকালে একে অপরকে সালাম দেয়া ও সালামের জবাব দানের মাধ্যমে এ মহব্বত ও ভালবাসা সৃষ্টি হয়। আর পারস্পরিক মহব্বত ও ভালবাসা সৃষ্টির ফলেই ঈমান পূর্ণতায় পৌঁছে।
মোটকথা, মুসলমানদের পারস্পরিক সম্ভাষণে ব্যবহৃত ‘আসসালামু আলাইকুম’ বাক্যটি এমন এক সর্বজনীন ও পবিত্রতম বাক্য, যা দ্বারা আল্লাহ তাআলা, তাঁর ফিরিশতাকুল এবং আদিপিতা আদম (আ.) অভিবাদন জানিয়েছেন। জান্নাতে জান্নাতীদেরও পারস্পরিক সম্ভাষণের ভাষা হবে সালাম।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত
কুরস্ক অঞ্চলের ৪০ ভাগ খোয়ানোর স্বীকারোক্তি ইউক্রেনের
মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ চীনের সাথে কাজ করতে আগ্রহী: বাণিজ্য উপদেষ্টা
হাজীদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ধর্ম উপদেষ্টা ড. খালিদ হোসেন
শরীয়তপুরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ কর্মী সভা
মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সিকিউরিটি গার্ড নিহত
পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল জিম্বাবুয়ে
১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক
লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন
নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটিতে অচেনা ৭ জন
মৌলভীবাজারে কৃষি ও প্রযুক্তি মেলা শুরু
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মডেল উদ্ভাবন
ব্রহ্মপুত্রে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু ব্যবসা
বাঘায় কৃষি শ্রমিককে গলা কেটে হত্যা
কেশবপুরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ
হামলার শিকার হয়েও মুখ খুলতে পারছে না বোয়ালমারীর বহু পরিবার
ইসলামী আন্দোলনের গণসমাবেশে আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবি
বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান
সাগরে মিলছে না আশানুরূপ ইলিশ হতাশায় মীরসরাইয়ের জেলেরা