আল্লাহ ‘রব্বুল আলামীন’-১
০৮ মে ২০২৪, ১২:১২ এএম | আপডেট: ০৮ মে ২০২৪, ১২:১২ এএম
পবিত্র কুরআনে কারীম আল্লাহ তা‘আলার কালাম। শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর উপর নাযিল হওয়া এ কুরআন মানবজাতির হেদায়েতের জন্যে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে আগত সর্বশেষ আসমানী গ্রন্থ। অকাট্য শাশ্বত এ গ্রন্থের পুরোটা জুড়েই ছড়িয়ে আছে মানবজাতির হেদায়েতের পয়গাম। আসমানী এ হেদায়েত ও পথনির্দেশনা কখনো আদেশ-উপদেশের সুরে, কখনো ঘটনা বর্ণনার মধ্যদিয়ে কিংবা অন্য কোনো আঙ্গিকে বিবৃত হয়েছে। হেদায়েতের একটি বড় দিক, বলা যায়Ñ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দিক, আল্লাহ তা‘আলার পরিচয় লাভ।
আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান- এর ওপরই নির্ভর করে একজন মুমিনের অন্য সকল বিষয়। এ ঈমানের জন্যে প্রয়োজন পরিচয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা নিজেই নিজের কিছু পরিচয় উল্লেখ করেছেন। এ পরিচয়ের বিবরণ এতোটাই সরল ও সাদামাটা, যা পড়াশোনার আলোবঞ্চিত একজন অতি সাধারণ মানুষও খুব সহজেই বুঝতে পারে। আবার এ বিবরণ এতোটাই গভীর, যা একজন উচ্চশিক্ষিত গবেষক ব্যক্তিকে ভাবনায় বিভোর রাখতে পারে বছরের পর বছর। বিবরণের এ মোজেযা অবশ্য পুরো কুরআনেই ছড়িয়ে আছে।
পবিত্র কুরআনের সর্বপ্রথম বাক্যটিতেই বর্ণিত হয়েছে আল্লাহ তা‘আলার একটি পরিচয়- তিনি ‘রব্বুল আলামীন’। রব অর্থ প্রতিপালক। যিনি প্রতিটি মুহূর্তে প্রয়োজনীয় সবকিছুর ব্যবস্থা করে দেন, তিনিই ‘রব’, তিনিই প্রতিপালক। আর রব্বুল আলামীন তিনি, যিনি সমগ্র সৃষ্টিজগতের প্রতিপালক। জগৎজুড়ে যতো কিছু রয়েছে, যতো কাল ধরে রয়েছে, যতো কাল ধরে থাকবে, যতো জায়গা জুড়ে রয়েছে, তিনি সবকিছুরই প্রতিপালক। আমরা যারা পৃথিবীতে বেঁচে আছি, স্থূল দৃষ্টিতে আমরা নানা জিনিস দেখি।
নিজেদের বাইরে গাছপালা পশুপাখি পাহাড়-পর্বত নদীনালা কীটপতঙ্গ আকাশ-জমিন চাঁদ-সূর্য ইত্যাদি কতো কিছু দেখি! একেকটি প্রজাতির মধ্যে কতো বৈচিত্র্য! এক মানুষেরই কতো ধরন! নারী-পুরুষ, শিশু-যুবক-বৃদ্ধ, সাদা-কালো, লম্বা-খাটো, চিকন-মোটা, ধনী-গরিব, উঁচু বংশীয় আর নিচু বংশীয়, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, শাসক-শাসিত- বৈচিত্র্যের আরও কতো দিক! একেকজনের প্রয়োজন একেকরকম। চাহিদা সবার একরকম নয়। কিন্তু যিনি রব ও প্রতিপালক, তিনি যেমন বৈচিত্র্যপূর্ণ এ মানবজাতি সৃষ্টি করেছেন, মানবজাতির এ বিচিত্রতাও তাঁরই সৃষ্টি। জগতের শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্যবিধানের জন্যে এ বিচিত্রতা অবধারিতও ছিল।
বৈচিত্র্য সৃষ্টি করে তিনিই জানিয়ে দিয়েছেন : আমিই পার্থিব জীবনে তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করি এবং একজনকে অপরের ওপর মর্যাদায় উন্নীত করি, যেন একজন আরেকজনকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে পারে। (সূরা যুখরুফ : ৩২)। কথা হলো, মহান আল্লাহ মানবজাতির এ বৈচিত্র্য রক্ষা করেই সকলের চাহিদা পূরণ করে চলছেন। সৃষ্টির সূচনা থেকেই তিনি মিটিয়ে যাচ্ছেন বিচিত্র মানুষের বিচিত্র চাহিদা। এখনো মেটাচ্ছেন। মেটাবেন আগামী দিনেও, যতদিন পৃথিবী টিকে থাকে ততদিন এবং পরকালেও। সেখানেও তো তিনিই রব, তিনিই প্রতিপালক।
পৃথিবীর শুরু থেকে এ পর্যন্ত কত মানুষ জন্ম নিয়েছে এর প্রকৃত হিসাব কি কারও পক্ষে করা সম্ভব? আর কত মানুষ জন্ম নেবে ভবিষ্যতে, এর কল্পনাও তো কারও পক্ষে সম্ভব নয়। আগে-পরের সব হিসাব একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার কাছেই আছে। প্রতিটি মানুষের জন্ম, জন্মের পর নানা বয়সের নানা ধাপ পেরিয়ে অবশেষে মৃত্যু- সবকিছুর হিসাবই তাঁর কাছে রয়েছে। শুধুই কি হিসাব, বরং এসব তো তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন। এভাবে জগতের এক দুর্বল ও ক্ষুদ্র সদস্য মানুষকে নিয়ে ভাবতে থাকলেও আল্লাহ তা‘আলার রবুবিয়্যাত ও প্রতিপালন গুণের সীমা-পরিসীমার কল্পনায় অক্ষমতা স্বীকার করতে হয় আমাদের। পাশাপাশি অকপটে স্বীকার করতে হয় তাঁর কুদরত শক্তি ও প্রতিপালনের অসীমতাকে। তিনিই আমাদের রব, তিনি রব্বুল আলামীন।
এ তো গেল এক মানুষের কথা। এর বাইরে আরও কত শত সহস্র প্রজাতি ছড়িয়ে আছে আমাদের চারপাশে। অনেক কিছু আমরা দেখি। খোলা চোখে দেখি। প্রাণীজগৎ নিয়ে যাদের গবেষণা, তারা যান্ত্রিক চোখে দেখেন আরও অনেক কিছু। আল্লাহ তা‘আলা সেসব প্রাণীরও রব, প্রতিপালক। সেগুলোকে তিনি সৃষ্টি করেন। মানুষের মতোই সেসব প্রাণীরও খাদ্যের প্রয়োজন হয়। মানুষের মতো ওসবের জীবনেও রয়েছে নানান ধাপ- বাচ্চা থেকে বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত। ওদের কোনোটা থাকে মানুষের অধীন হয়ে। সেসবকে আমরা গৃহপালিত পশু বা পাখি বলে থাকি। গৃহপালিত পশুপাখির খাদ্য আবাস চিকিৎসা-এসব বাহ্যত মানুষই ব্যবস্থা করে থাকে। কিন্তু হাতে গোনা কয়েকটি প্রাণী- হাস-মুরগি আর গরু-ছাগলের বাইরে রয়ে গেছে বিশাল প্রাণীজগৎ। সেসব মানুষের অধীন নয়।
ওগুলোর বেঁচে থাকার কোনো উপকরণের ব্যবস্থা করার দায়িত্বও মানুষের নয়। কথা হল, এ ব্যবস্থাপনা কার দায়িত্বে? কার কাঁধে অর্পিত প্রাণীকুলের জীবিকা সরবরাহের দায়িত্ব? কে নিয়েছেন আশরাফুল মাখলুকাত মানুষ থেকে শুরু করে তুচ্ছ কীটপতঙ্গ পর্যন্ত সকল প্রাণীর সকল প্রয়োজন মেটানোর ভার? এ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই- মহান আল্লাহ তা‘আলাই এসবের ব্যবস্থা করে থাকেন। তিনি একাই করেন।
জগতের পরিচালনা, জগতের সকলের এবং সবকিছুর প্রতিপালনে তাঁর কোনো শরীক নেই, যেমন শরীক নেই তাঁর মাবুদ হওয়ার ক্ষেত্রেও। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহর ঘোষণা লক্ষ্য করুন : ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী সকলের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই। তিনি সকলের স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থিতি সম্পর্কে অবহিত। (সূরা হূদ : ৬)।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত
কুরস্ক অঞ্চলের ৪০ ভাগ খোয়ানোর স্বীকারোক্তি ইউক্রেনের
মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ চীনের সাথে কাজ করতে আগ্রহী: বাণিজ্য উপদেষ্টা
হাজীদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ধর্ম উপদেষ্টা ড. খালিদ হোসেন
শরীয়তপুরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ কর্মী সভা
মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সিকিউরিটি গার্ড নিহত
পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল জিম্বাবুয়ে
১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক
লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন
নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটিতে অচেনা ৭ জন
মৌলভীবাজারে কৃষি ও প্রযুক্তি মেলা শুরু
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মডেল উদ্ভাবন
ব্রহ্মপুত্রে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু ব্যবসা
বাঘায় কৃষি শ্রমিককে গলা কেটে হত্যা
কেশবপুরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ
হামলার শিকার হয়েও মুখ খুলতে পারছে না বোয়ালমারীর বহু পরিবার
ইসলামী আন্দোলনের গণসমাবেশে আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবি
বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান
সাগরে মিলছে না আশানুরূপ ইলিশ হতাশায় মীরসরাইয়ের জেলেরা