শরীয়তের দৃষ্টিতে বাড়ি ভাড়ার নিয়মনীতি-১
২৩ মে ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৩ মে ২০২৪, ১২:০৩ এএম
বাসস্থান মানুষের মৌলিক প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত। জীবিকা উপার্জনের তাগিদে বহু মানুষ আজ শহরমুখী। তাই প্রয়োজন হয়েছে বিপুল পরিমাণ বাসস্থানের। জীবনের এই অপরিহার্য প্রয়োজন পূরণের তাগিদে শহরগুলোতে গড়ে উঠছে বহুতল ভবন ও বড় বড় অ্যাপার্টমেন্ট। তৈরি হচ্ছে বড় বড় কমার্শিয়াল স্পেস এবং শপিং মল। বসবাস বা ব্যবসার প্রয়োজনে বাড়ি বা দোকান ভাড়া নেয়া নতুন কোনো বিষয় নয়। এটি যুগ যুগ ধরে চলমান একটি ব্যবস্থা। ভাড়া বাসাতেই সারাটি জীবন পার করে দিচ্ছে এমন মানুষের সংখ্যাও অনেক। আজকের নাগরিক সভ্যতায় এটি খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা এবং বিধি-বিধান। ভাড়া দেয়া-নেয়াও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই শরীয়তে যেমন ভাড়াপ্রক্রিয়ার স্বীকৃতি রয়েছে তেমনি সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে এর বিধিবিধানসমূহ। কুরআন মাজীদ এবং হাদিস শরীফে ভাড়া তথা ইজারার বৈধতা এবং এর বিধান সম্পর্কে আলোচনা এসেছে। ফিকাহবিদগণ সেগুলোর আলোকে ইজারার বৈধ ও অবৈধ পন্থা, বৈধতার শর্তাবলি এবং অবৈধতার ক্ষেত্রসমূহ ও এক্ষেত্রে করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। সেগুলো মেনে চললে ভাড়া চুক্তিটি শরীয়তসম্মত হবে এবং উভয়পক্ষ ইহকাল ও পরকালে এর সুফল ভোগ করবে।
অবশ্য দুঃখজনক ব্যাপার হলো, অনেক ক্ষেত্রেই শরীয়তের ওইসব বিধানের বাস্তবায়ন হতে দেখা যায় না। ফলে কোনো ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালা কর্তৃক ভাড়াটিয়া নিগৃহীত হয়, আবার কোনো ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়ার দ্বারা বাড়িওয়ালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকের ক্ষেত্রে হয়ত এর কারণ এটাই যে, তারা এ সংক্রান্ত শরয়ী আহকাম জানে না। আবার কেউ হয়ত এটাকে শরীয়ত সংশ্লিষ্ট বিষয়ই মনে করে না; বরং আগাগোড়াই জাগতিক বিষয় মনে করে থাকে। তাই এ বিষয়ে শরীয়তের বিধান জানার চেষ্টা করে না। আর কেবল নিজের স্বার্থই সামনে রাখে। অন্যের ক্ষতি হলো কি না বা তার প্রতি জুলুম হলো কি না তা ভেবেও দেখে না।
তাই ভাড়া দেয়া-নেয়ার ক্ষেত্রে উভয়পক্ষের করণীয় ও সংশ্লিষ্ট বিধানাবলি সংক্ষিপ্তভাবে পেশ করা হলো। প্রথমেই মৌলিক কয়েকটি বিষয় : ১. ভাড়ার পরিমাণ অবশ্যই নির্দিষ্ট হতে হবে। ২. যে বাড়ি বা ফ্ল্যাট ভাড়া হবে এর সকল সুবিধা-অসুবিধা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলি ভাড়াটিয়াকে সুস্পষ্টভাবে অবগত করতে হবে।
বাড়িওয়ালার কর্তব্য : ১. বাড়ি ভাড়া কত তা নির্ধারিত করে জানানো। গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ বিল কি ভাড়ার অন্তর্ভুক্ত, না এর বাইরে তাও জানানো। তাছাড়া নাইট গার্ড ও বাড়ির দারোয়ানের বেতন, ময়লা ফেলার বিল কিংবা অ্যাপার্টমেন্টগুলোর সার্ভিস ফি ইত্যাদি মিলে প্রতি মাসে সাধারণত কত টাকা হয় তা চুক্তির সময়ই বলে দেয়া আবশ্যক। ২. প্রতি মাসের ভাড়া কত তারিখের মধ্যে দিতে হবে তা চুক্তির সময়ই জানিয়ে দিতে হবে।
৩. বাড়ির সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে ভাড়াটিয়াকে পূর্বেই অবহিত করা আবশ্যক। বিশেষত এমন ত্রুটি, যা জানতে পারলে সে হয়ত ভাড়াই নিবে না বা যেটির কারণে ভাড়া আরো কম হবে। যেমন- পানি নিয়মিত বা সার্বক্ষণিক না থাকা বা নিয়ম করে পানি দেয়া। গ্যাসের সমস্যা থাকা বা দারোয়ান না থাকার কারণে গেট নিয়ন্ত্রণের সমস্যা ইত্যাদি। কোনো কোনো বাসার লাইনে এক-দুই বার পানি ছাড়া হয় আর সকলে তখন নিজ নিজ পাত্রে জমা করে রাখে। এমন হলে ভাড়া চুক্তির সময়ই বলে দিতে হবে।
৪. বাড়ির মূল ফটক রাত কয়টায় বন্ধ করা হবে তা নির্ধারিত থাকলে চুক্তির সময়ই বলে দিতে হবে। যেন এ নিয়ে পরবর্তীতে দ্বন্দ্ব না হয়। ৫. প্রত্যেক ফ্ল্যাটে পৃথক পৃথক বিদ্যুৎ মিটার লাগানো উচিত, যেন প্রত্যেক পরিবার নিজ খরচ অনুযায়ী বিল পরিশোধ করতে পারে। কোনো কোনো বাড়িতে সকল ফ্ল্যাটের জন্য একটি মাত্র মিটার থাকে। ফলে সব ফ্ল্যাটের হিসাব একত্রে হয় এবং এক মিটারে অতিরিক্ত খরচ হওয়ার কারণে ইউনিট প্রতি খরচ অনেক বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে আরেকটি ত্রুটি হলো, মিটার একটি হওয়ার কারণে সকলের উপর সমহারে বিল চাপানো হয়। এতে করে বিদ্যুতের স্বল্প ব্যবহারের কারণে যাদের বাস্তব খরচ কম হয় তাদের উপর জুলুম হয়ে যায়। এজন্য প্রত্যেক ফ্ল্যাটে ভিন্ন ভিন্ন মিটার লাগানো দরকার।
তদ্রুপ পানির মিটারও ভিন্ন হওয়া উচিত ছিল। যেন যার যার খরচ অনুযায়ী বিল নেয়া যায়। শোনা গেছে যে, ওয়াসা এভাবে প্রতি ইউনিটের জন্য আলাদা মিটার দেয় না। তাই এক্ষেত্রে নি¤েœাক্ত দু’টি পদ্ধতির কোনো একটি অবলম্বন করা যেতে পারে। ১. প্রত্যেক মাসের পানির বিল সকল ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়াদের মাঝে বণ্টন করে দিবে। ২. বাড়িওয়ালা পানির বিল বাসা ভাড়ার অন্তর্ভুক্ত করে নিবে। পানির নামে ভিন্ন বিল নেবে না। এক্ষেত্রে বাড়িওয়ালা পূর্ণ ভাড়ার মালিক হবে। আর পানির বিল সেই আদায় করবে।
৬. বাড়ি ছেড়ে দিতে হলে কত দিন আগে জানাতে হবে তাও চুক্তির সময় জানিয়ে দিতে হবে। কেউ কেউ দুই মাস পূর্বে জানানোর শর্ত করে। চলতি মাসে বা পূর্বের মাসে জানানোর শর্ত করা দূষণীয় নয়। সুতরাং বাড়ি ছাড়ার সময় চূড়ান্ত করা হলে ভাড়াটিয়া এবং বাড়িওয়ালা উভয়ের জন্যই তা পালনীয় হবে।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইমনের সেঞ্চুরির পরও এগিয়ে খুলনা
টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে সরানো হলো প্রথম আলোর সামনে অবস্থানকারীদের
নাইমের ১৮০, মেট্রোর বড় সংগ্রহ
রাজার বোলিংয়ে অলআউট বরিশাল
দেশের টাকা পাচার করে হাসিনা ও তাঁর দোসররা দেশকে দেউলিয়া করে গেছে পাচারকৃত টাকা উদ্ধারে কাজ করতে হবে -মাওলানা ইমতিয়াজ আলম
এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’
বিএনপি’র প্রতিনিধি দলের সাথে ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেনের বৈঠক
৫ বছর পর আয়োজিত হতে যাচ্ছে আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৪
থিতু হয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারলেন না শাহাদাত
গণ-অভ্যুত্থানে ঢাবি ভিসির ভূমিকা কী ছিল? জানতে চান ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক
নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ হওয়া উচিত অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সাধারণ জনগণের আস্থা অর্জন করা : রিজভী
ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জনে দেশে এলো অ্যাপ ‘পারলো’
সীমান্তর লক্ষ্য এসএ গেমসের হ্যাটট্রিক স্বর্ণ জয়
বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান
নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান
লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন
১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক
পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল জিম্বাবুয়ে
মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সিকিউরিটি গার্ড নিহত
শরীয়তপুরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ কর্মী সভা