মহররম হিজরি বর্ষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাস : গুরুত্ব ও তাৎপর্য
২৮ জুলাই ২০২৩, ০৮:৩৬ পিএম | আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম
আল্লাহ তাআলা কিছু দিনকে কিছুদিনের উপর, কিছু মাসকে কিছু মাসের উপর এবং কিছু সময়কে সময়ের উপর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। আর প্রতিটি ফজিলতমন্ডিত মাস,সময়, দিনে কিছু আমল নির্ধারণ করেছেন। এবং নাফরমানি থেকে বেঁচে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন।মাস সমূহের মধ্যে মহররম মাস সম্মানিত মাস।এল হিজরি নববর্ষ ১৪৪৫ সন। ইসলামের বিভিন্ন বিধিবিধান হিজরি সন আরবি তারিখ ও চান্দ্রমাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। ধর্মীয় আচার–অনুষ্ঠান, আনন্দ-উৎসবসহ সব ক্ষেত্রেই মুসলিম উম্মাহ হিজরি সনের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও মুসলিম জীবনে হিজরি সনের গুরুত্ব অপরিসীম। হিজরি সনের সঙ্গে মুসলিম উম্মাহর তাহজিব-তামাদ্দুনিক ঐতিহ্য সম্পৃক্ত।
মহরম কি? আক্ষরিক অর্থে ‘নিষিদ্ধ’, মহররম হল চারটি পবিত্র মাসের একটি (যুলহজ্জ, যুল কা’দাহ এবং রজব)। ইসলামি শিক্ষা অনুসারে, মহররম মাসটি এত পবিত্র যে এর পবিত্রতা লঙ্ঘন করার কারণে কিছু কাজ এই সময়ে নিষিদ্ধ হয়ে যায়। আপনি ইসলামে মহররমের তাৎপর্য আরও ভালভাবে বুঝতে পারবেন কারণ আল্লাহর ঘর (আল মসজিদ আল হারাম) এবং মহররম-উল-হারাম মাস উভয়ের নাম একই আরবি মূল থেকে এসেছে। উভয়ই পবিত্র স্থান (বা মাস) হিসাবে পরিচিত হতে পারে যেখানে প্রতিটি কাজ- ভাল বা খারাপ- দাঁড়িপাল্লায় ভারী।
এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মহররমকে একটি বিশেষ মাস করে তোলে কারণ আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) এটিকে বেছে নিয়েছেন। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) আমাদেরকে পবিত্র মাসে ‘নিজের প্রতি অন্যায় না করার’ এবং সৎ আচরণ ও বিশুদ্ধ উদ্দেশ্য রাখার নির্দেশ দেন। আর পবিত্র কোরআনুল কারিম ও হাদিস শরিফে এ মাসকে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ বলা হয়েছে। কোরআনের ভাষায় এটি সম্মানিত চার মাসের (‘আরবাআতুন হুরুম’) অন্যতম। এ মাসে বেশি বেশি নফল রোজা ও তওবা ইস্তিগফারের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহররম মাসকে ‘শাহরুল্লাহ’ বা আল্লাহর মাস বলছেন। জানা কথা, সকল মাসই আল্লাহর মাস। এরপরও এক মাসকে আল্লাহর মাস বলার রহস্য হলো, এই মাসের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। তাই একে আল্লাহর মাস বলা হয়েছে। যেমন দুনিয়ার সব ঘরই আল্লাহর ঘর। কিন্তু সব ঘরকে বাইতুল্লাহ বলা হয় না। ‘আল্লাহর মাস’ বলে মহররম মাসকে আল্লাহর সাথে সম্বন্ধিত এর মর্যাদা তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া এই হাদিসের মাধ্যমে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহররম মাসে অধিক রোজা রাখার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেছেন।
আশুরা কী : মহররম মাসের ১০ম দিনকে আশুরা বলা হয়। এ দিন আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালাম এবং তাঁর জাতিকে ফেরাউনের জুলুম থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এ উপলক্ষ্যে ইসলামের আগমনের আগে থেকেই ইয়াহুদিরাও রোজা রাখতেন।
আশুরার রোজা পালন : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় হিজরতের পর দেখেন ইয়াহুদিরা এদিন রোজা পালন করছে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমরা হজরত মুসা আলাইহিস সালামের অনুসরণ করার ব্যাপারে তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার। তিনি নিজে সেই (আশুরার) দিনের রোজা পালন করলেন এবং সাহাবাদেরকেও (এই আশুরার দিন রোজা) নির্দেশ দিলেন।’ (বুখারি)।
আশুরার রোজার ফজিলত : আশুরার রোজা রাখার ফজিলত অনেক বেশি। এ দিনের রোজা রাখার ফজিলত বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহর কাছে আশা করি তিনি বিগত এক বছরের গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (মুসলিম)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়াহুদিদের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। আশুরা উপলক্ষে ইয়াহুদিরা ১ দিন (আশুরার) রোজা রাখতো। সে কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়াহুদিদের ব্যতিক্রম করতে বলেছেন। যেহেতু এ দিন ইয়াহুদিরাও রোজা রাখে সে কারণে তাদের ব্যতিক্রমস্বরূপ ৯ মুহররমও রোজা পালন করা উচিত। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে ৯ এবং ১০ মহররম দুই দিনই রোজা রাখবো।’ (মুসলিম)।
আশুরায় বর্জনীয় আমল : এ দিনটিকে কেউ কেউ শুধু কারবালার মাতক ও শোকানুষ্ঠান হিসেবে উদযাপন করে থাকে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় নাতি হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর হৃদয়বিদারক শাহাদাত দিবস হিসেবে শরীরে আঘাত করতে থাকে; শরীর রক্তাক্ত করতে থাকে; তাজিয়া মিছিল তথা যুদ্ধের সাজ সাজ পোশাকে ঘোড়া সাজিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে; হজরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু কৃত্রিম মাজার তৈরি করে রাস্তায় প্রদর্শণীতে নেমে পড়ে; আশুরা উপলক্ষ্যে এসব আয়োজন ও আমল বর্জন করা। এ সব আমলের ব্যাপারে ইসলামের কোনো অনুমোদনই নেই। তবে এদিন ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্মরণে তার জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা হতে পারে। কারবালার প্রান্তরে শাহাদাতবরণকারীদর জন্য দোয়ার অনুষ্ঠানও করা যেতে পারে। ইসলামের বিজয়ের জন্য তাদের ত্যাগ ও অবদান তুলে ধরা এবং মুসলিম উম্মাহর মাঝে অনুপ্রেরণা জাগিয়ে তোলা দোষণীয় নয়। পরিশেষে বলতে চাই, ইতিমধ্যে ১৪৪৪ হিজরি শেষ। ২০ জুলাই ২০২৩ শুরু হয়েছে ১৪৪৫ হিজরির মহররম মাস। গেল হিজরি বছরের শেষ দুই মাস জিলকদ ও জিলহজ ছিল মুমিন মুসলমানের জন্য সম্মানিত মাস। আর এ সম্মানিত মাসের মাধ্যমেই নতুন বছর শুরু হয়েছে।মুমিন মুসলমানের উচিত, নতুন হিজরি বছরের প্রথম মাস মহররমে দুনিয়ার যাবতীয় অনাচার থেকে বিরত থাকা। মাসটির সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখা। কোরআন-সুন্নাহর ওপর যথাযথ আমল করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সম্মানিত মাস মহররমে যাবতীয় পাপাচার থেকে হেফাজত করুন। মহররম জুড়ে নামাজ, রোজা ও ভালো কাজে অংশগ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। এ মাসজুড়ে ভালো কাজের মাধ্যমে ডেঙ্গু সহ সব মহামারি ও বিপদ থেকে বিশ্ববাসীকে মুক্ত হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
যশোরে একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জাহিদুল
ইমনের সেঞ্চুরির পরও এগিয়ে খুলনা
টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে সরানো হলো প্রথম আলোর সামনে অবস্থানকারীদের
নাইমের ১৮০, মেট্রোর বড় সংগ্রহ
রাজার বোলিংয়ে অলআউট বরিশাল
দেশের টাকা পাচার করে হাসিনা ও তাঁর দোসররা দেশকে দেউলিয়া করে গেছে পাচারকৃত টাকা উদ্ধারে কাজ করতে হবে -মাওলানা ইমতিয়াজ আলম
এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’
বিএনপি’র প্রতিনিধি দলের সাথে ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেনের বৈঠক
৫ বছর পর আয়োজিত হতে যাচ্ছে আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৪
থিতু হয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারলেন না শাহাদাত
গণ-অভ্যুত্থানে ঢাবি ভিসির ভূমিকা কী ছিল? জানতে চান ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক
নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ হওয়া উচিত অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সাধারণ জনগণের আস্থা অর্জন করা : রিজভী
ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জনে দেশে এলো অ্যাপ ‘পারলো’
সীমান্তর লক্ষ্য এসএ গেমসের হ্যাটট্রিক স্বর্ণ জয়
বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান
নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান
লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন
১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক
পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল জিম্বাবুয়ে
মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সিকিউরিটি গার্ড নিহত