দুনিয়ার মোহাবিষ্ট অবিশ্বাসীদের জীবন
০১ জুন ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০১ জুন ২০২৪, ১২:০৪ এএম
যারা আখিরাতের কথা ভুলে গিয়ে শুধু দুনিয়ার জীবন নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে, তাদের সকল চিন্তা-চেতনা, বিশ^াস ও কাজ-কর্ম দুনিয়ার জীবনকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। তারা যা কিছু করে আল্লাহর সাথে সম্পর্কহীন হয়ে এবং আখিরাতের চিন্তা না করে শুধু দুনিয়ার জন্যই করে। এই জীবনকেই তারা আসল জীবন মনে করেছে। ফলে দুনিয়ার সাফল্য ও সচ্ছলতাকেই নিজেদের উদ্দেশ্যে পরিণত করেছে। আল্লাহর অস্তিত্ব মেনে নিলেও তাঁর সন্তুষ্টি বা অসন্তুষ্টির ধার ধারেনি। দুনিয়ার জীবন শেষে তাঁর সামনে দাঁড়াতে হবে এ চিন্তা কখনো করেনি। বরং নিজেদেরকে শুধুমাত্র সেচ্ছাচারী ও দায়িত্বহীন বুদ্ধিমান জীব মনে করতো, যার কাজ দুনিয়ার এ চারণ ক্ষেত্র থেকে কিছু লাভ হাতিয়ে নেয়া ছাড়া আর কিছু নয়। আল কুরআনে তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে : (হে মুহাম্মদ!) এদেরকে বলো, আমি কি তোমাদের বলবো নিজেদের কর্মের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্থ কারা? তারাই, যাদের দুনিয়ার জীবনের সমস্ত প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম সবসময় সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত থাকতো এবং যারা মনে করতো যে, তারা সবকিছুর সঠিক করে যাচ্ছে। (সুরা কাহাফ : ১০৩-১০৪)।
এ সমস্ত দুনিয়াদারীদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা পরের আয়াতে বলেন : এরা এমন সব লোক যারা নিজেদের রবের নিদর্শনাবলী মেনে নিতে অস্বীকার করেছে এবং তাঁর সামনে হাযির হবার ব্যাপারটি বিশ^াস করেনি। তাই তাদের সমস্ত কর্ম নষ্ট হয়ে গেছে, কিয়ামতের দিন তাদেরকে কোন গুরুত্ব দেবো না। (সুরা কাহাফ : ১০৫)। অর্থাৎ এ সমস্ত লোক দুনিয়াতে যত বড় কৃতিত্বের অধিকারীই হোক না কেন, মানুষ তাদেরকে যত বড় লোকই গণ্য করুক না কেন, মানুষের মুখে মুখে তার নাম-ডাক ছড়িয়ে পড়–ক, হোক সে প্রভাবশালী রাজা-বাদশা, দুনিয়া শেষ হবার সাথে সাথে সেগুলোও শেষ হয়ে যাবে। নিজেদের সুরম্য অট্রালিকা ও প্রাসাদ, নিজেদের বিশ^খ্যাত বিশ^বিদ্যালয় ও সুবিশাল লাইব্রেরী, নিজেদের সুবিস্তৃত রাজপথ ও রেলগাড়ী, নিজেদের আবিস্কার ও উদ্ভাবনসমূহ, নিজেদের শিল্প ও কলকারখানা নিজেদের জ্ঞান বিজ্ঞান ও আর্ট গ্যালারী এবং আরো অন্যান্য যেসব জিনিস নিয়ে তারা গর্ব করে তার মধ্য থেকে কোন জিনিসও তারা আল্লাহর তুলাদ-ে ওজন করার জন্য নিজেদের সাথে নিয়ে আল্লাহর দরবারে হাযির হতে পারবে না। সেখানে থাকবে শুধুমাত্র কর্মের উদ্দেশ্য এবং তার ফলাফল।
যদি কারো সমস্ত কাজের উদ্দেশ্য দুনিয়ার জীবন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থেকে থাকে, ফলাফলও সে দুনিয়াতেই চেয়ে থাকে এবং দুনিয়ায় নিজের কাজের ফল দেখেও থাকে, তাহলে তার সমস্ত কার্যকলাপ এ ধ্বংসশীল দুনিয়ার সাথে সাথেই ধ্বংস হয়ে গেছে। আখিরাতে যা পেশ করে সে কিছু ওজন পেতে পারে তা অবশ্যি এমন কোন কর্মকান্ড হতে হবে যা সে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য করেছে, তাঁর হুকুম মোতাবেক করেছে এবং যেসব ফলাফল আখিরাতে প্রকাশিত হয় সেগুলোকে উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করে করেছে। এ ধরনের কোন কাজ যদি তার হিসেবের খাতায় না থাকে তাহলে দুনিয়ায় সে যা করেছিল সবই নি:সন্দেহে বৃথা যাবে।
আল্লাহ তা’আলা বলেন : আসলে পৃথিবীতে যা কিছু সাজ সরঞ্জামই আছে এগুলো দিয়ে আমি পৃথিবীর সৌন্দর্য বিধান করেছি তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য যে, তাদের মধ্যে থেকে কে ভালো কাজ করে। সবশেষে এসবকে আমি একটি বৃক্ষ লতাহীন ময়দানে পরিণত করবো। (সুরা কাহাফ : ৭-৮)।
আখিরাত অস্বীকারকারীদেরকে সরাসরি সম্বোধন না করেই এ কথা শুনানো হচ্ছে যে, পৃথিবী পৃষ্ঠে তোমরা যেসব সাজ সরঞ্জাম দেখছো এবং যার মন ভুলানো চাকচিক্যে তোমরা মুগ্ধ হয়েছো, এতো নিছক একটি সাময়িক সৌন্দর্য, নিছক তোমাদের পরীক্ষার জন্য এগুলোর সমাবেশ ঘটানো হয়েছে। এসব কিছু আমি তোমাদের আয়েশ আরামের জন্য সরবরাহ করেছি, তোমরা এ ভুল ধারণা করে বসেছো। তাই জীবনের মজা লুটে নেয়া ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যের প্রতি তোমরা কোন ভ্রক্ষেপই করছো না। এ জন্য কি তোমরা কোন উপদেশদাতার কথায় কান দিচ্ছো না। কিন্তু আসলে তো এগুলো আয়েশ আরামের জিনিস নয় বরং পরীক্ষার উপকরণ। এগুলোর মাঝখানে তোমাদের বসিয়ে দিয়ে দেখা হচ্ছে, তোমাদের মধ্যে তার নিজের আসল স্বরূপ ভুলে গিয়ে দুনিয়ার এসব মন মাতানো সামগ্রীর মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে এবং কে তার আসল মর্যাদার (আল্লাহর বন্দেগী) কথা মনে রেখে সঠিক নীতি অবলম্বন করছে। যেদিন এ পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে সেদিনই ভোগের এসব সরঞ্জাম খতম করে দেয়া হবে এবং তখন এ পৃথিবী একটি লতাগুল্মহীন ধু ধু প্রান্তর ছাড়া আর কিছুই থাকবে না।
মহান আল্লাহ বলেন : আর হে নবী! দুনিয়ার জীবনের তাৎপর্য তাদেরকে এ উপমার মাধ্যমে বুঝাও যে, আজ আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করলাম, ফলে ভু-পৃষ্ঠের উদ্ভিদ খুব ঘন হয়ে গেলো আবার কাল এ উদ্ভিদগুলোই শুকনো ভুষিতে পরিণত হলো, যাকে বাতাস উড়িয়ে নিয়ে যায়। আল্লাহ সব জিনিসের ওপর শক্তিশালী। এ ধন সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের একটি সাময়িক সৌন্দর্য শোভা মাত্র। আসলে তো স্থায়িত্ব লাভকারী সৎকাজগুলোই তোমার রবের কাছে ফলাফলের দিক দিয়ে উত্তম এবং এগুলোই উত্তম আশা –আকাঙ্খা সফল হবার মাধ্যম। (সুরা কাহাফ : ৪৫-৪৬)। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই জীবন দান করেন এবং তিনিই আবার মুত্যু ঘটান। তিনি উত্থান ঘটান আবার পতনও ঘটান। তাঁর নির্দেশে বসন্ত আসে এবং পাতাঝরা শীত মওসুমও তাঁর নির্দেশেই আসে। আজ যদি কেউ সচ্ছল ও আয়েশ আরামের জীবন যাপন করে থাকে তাহলে এ অহংকারে মত্ত হয়ে যেন না থাকে যে এ অবস্থার পরিবর্তন নেই। যে আল্লাহর হুকুমে আজ সে এসবকিছু লাভ করেছে তাঁরই হুকুমে কাল তার কাছ থেকে ছিনিয়েও নেয়া যেতে পারে।
মহান আল্লাহ তা’আলাই বিত্ত- বৈভব, প্রাচুর্য ও ক্ষমতা দান করেন আবার তিনিই দারিদ্য, অভাব,অনাহারে জর্জরিত জীবন দান করতে পারেন। তিনি একদিকে উন্নতি উৎকর্ষতা দান করতেই থাকেন আবার অন্যদিকে একের পর এক বিপদ অপাদ, মুসিবত ও দু:খ-দুর্দশা দান করেন। তিনি য়ৌবনের শক্তিমত্তা দান করেন এবং পরে থাকে বার্ধক্য দান করেন। যৌবনের দৈহিক সৌষ্ঠব, চিন্তা, চেতনা ও বুদ্ধি দান করেন। আর বার্ধক্যে এনে তার শক্তিমত্তা ও চিন্তাশক্তি কেড়ে নেন। সুতরাং সুসময়ে যেন কেউ অহংকারে লিপ্ত না হয়। জীবন যৌবন যিনি দান করেছেন, তিনিই এগুলো যে কোন সময় নিস্তেজ করে দিতে পারেন। সুতরাং তাঁকে ভয় করুন।
সুতরাং মানুষ যাতে দুনিয়ায় প্রত্যেকটি অবস্থানে আল্লাহকে ভুলে গিয়ে অহংকার লিপ্ত না হয় এ জন্য তিনি উত্থান-পতনের এই ব্যবস্থা করে রেখেছেন। যারা আল্লাহকে বিশ^াস করেন তারা প্রতিটি অবস্থায় অর্থাৎ উত্থান-পতনে কখনো আল্লাহকে ভুলে যান না বরং আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতা আরো বেশী বেড়ে যায়। তারা বিশ^াস করে যে, আল্লাহ আলিমুল গায়েব, তিনি রাকিব, তিনি সামিউম বাছির, তিনি তাঁর দয়ায় আমাকে সারাক্ষণ তাঁর পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। সুখ, দু:খ, বেদনায়, বিপদ মুসিবতে আমাকে ভুলে যাননি। বিপদের অর্থেই সাগর থেকে তিনি আমাকে রক্ষা করবেন। বিশ^াসীরা এটিকে সাময়িক পরীক্ষা মনে করেন এবং ধৈর্যের পাথরে নিজেকে বেঁেধ কষ্টের এ নদী পাঁড়ি দেন। পক্ষান্তরে দুনিয়া পূজারীরা উত্থান ও সমৃদ্ধির সময় অহংকারে লিপ্ত হয়। তারা তাদের ধন-সম্পদকে নিজেদের রক্ষা কবজ মনে করে। এগুলোকে নিজের যোগ্যতার ফসল মনে করে অহংকারে লিপ্ত হয়। আর যখন আল্লাহর ফয়সালা তাদের উপর কার্যকর হয় তখন সেই অবস্থাকে গযব মনে করে হা-হুতাশ শুরু করে দেয়। কিন্তু যখন তারা অহংকার করে বলতো যে, আমাদের কোন ধ্বংস নাই, সে কথা তখন আর তার মনে থাকে না। তার উদ্ধাত বা দুর্বিনীত স্বভাবের কথা ভুলে যায়।
যারা আখিরাতকে বিশ^াস করে না বা আখিরাতের ব্যাপারে নির্ভিক বা আখিরাত বিস্মৃত তাদের দুনিয়ার জীবন হবে বেপরোয়া। সবচেয়ে মারাত্মক হলো, যারা আখিরাতকে অস্বীকার করে, তারা মূলত: আল্লাহকেও বিশ^াস করে না। পক্ষান্তরে যারা আল্লাহ ও আখিরাত বিশ^াসী তাদের কাছে আল্লাহর মেহেরবানীতে যদি ধন-সম্পদ এসেই যায়, সেই সম্পদের মোহ তাকে অন্ধ করতে পারে না। আল্লাহর নির্দেশিত পথেই সে সম্পদ আকাতরে দান করে যায়। এ সমস্ত ধন-সম্পদ আল্লাহর স্মরণ থেকে কখনো বিচ্ছিন্ন করতে পারে না বরং আল্লাহর স্মরণ আরো বেশী বাড়িয়ে দেয়।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রামু সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত
এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া
জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল
মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন
'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
দেশের বাজারে ফের বাড়ল সোনার দাম