মিথ্যারোপকারীদের পরিণতি
৩১ আগস্ট ২০২৪, ১২:২৯ এএম | আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০২৪, ১২:২৯ এএম

মিথ্যা বলা আর অন্যের ওপর মিথ্যা আরোপ করা উভয় গুনাহের কাজ এবং কবীরাহ গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। আল কুরআনে মিথ্যারোপকারীদেরকে ভয়াবহ ধ্বংসের সংবাদ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন : এদেরকে বলো, পৃথিবীর বুকে একটু চলাফেরা করো. তারপর দেখো মিথ্যারোপকারীদের পরিণতি কেমন ছিল। (সুরা আন’আম : ১১)। যে সব শক্তিশালী জাতি ও মানবগোষ্ঠী পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে তাদের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ ও ঐতিহাসিক কাহিনীসমূহ একথার সাক্ষ্য যে, সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবার এবং বাতিলের অনুসৃতি ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করার কারণে কিভাবে তারা শোচনীয় পরিণতির সম্মুখীন হয়েছিল।
আল কুরআনের বিভিন্নভাবে স্থানে এই মিথ্যাবাদী বা মিথ্যারোপকারীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনে : শেষ পর্যন্ত আমি তাদেরকে মার দিয়েছি এবং দেখে নাও মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের কি পরিণাম হয়েছে। (সুরা যখরুফ : ২৫) আল্লাহ বলেন : তাদের প্রত্যেককে আমি দৃষ্টান্ত দিয়ে বুঝিয়েছি এবং শেষ পর্যন্ত প্রত্যেককে ধ্বংস করে দিয়েছি। আর সেই জনপদের ওপর দিয়ে তো তারা যাতায়াত করেছে যার ওপর নিকৃষ্টতম বৃষ্টি বর্ষণ করা হয়েছিল। তারা কি তার অবস্থা দেখে থাকেনি? প্রকৃতপক্ষে এরা পরকালে ফিরে যেতে হবে তা চিন্তা করে না। (সুরা ফুরকান : ৩৯-৪০ )। আমরা আল কুরআন থেকে ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিদের ইতিহাস বিস্তারিত জানতে পারি। ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিগুলোর মধ্যে আদ, সামুদ, লুত আ. এর জাতি, আহলে মাদইয়ান, সাবা জাতি, তুব্বা জাতি, বনী ইসরাইল জাতি, আসহাবুল উখদুদ, আসহাবুল কারিয়াহ, আসহাবুস সাবত, আসহাবু রাস ও আসহাবে ফীল উল্লেখযোগ্য। এদের অধিকাংশের ধ্বংসের কারণ হিসাবে জানা যায় যে, তারা তাদের নবীদের অস্বীকার ও তাঁদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। যেমন : আদ জাতিতে প্রেরিত হয়েছিলেন হযরত হুদ আ.। তার সম্প্রদায়ের লোকেরা বললো, ‘আমরা তো তোমাকে নির্বুদ্ধিতায় লিপ্ত মনে করি এবং আমাদের ধারণা তুমি মিথ্যুক।’ (সুরা আরাফ : ৬৬)
সামুদ জাতির কাছে প্রেরিত হয়েছিলেন হযরত সালেহ আ.। তারাও তাদের নবীর সাথে যেই আচরণ করেছিল তা আল কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত সালেহ আ. একটি উষ্ট্রিকে হত্যা করতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু তারা তা অমান্য করলো। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক লোকেরা তা অস্বীকার করল এবং উটটি হত্যা করল। ফলে তারা ভুমিকম্পের দ্বারা পাকড়াও হলো। আল্লাহ তা’আলা বলেন : তার সমপ্রদায়ের স্বঘোষিত প্রতাপশালী নেতারা দুর্বল শ্রেনীর মু’মিনদেরকে বললো : তোমরা কি সত্যি জানো, সালেহও তার রবের প্রেরিত নবী? তারা জবাব দিলো : নিশ্চয়ই, যে বানী সহকাওে তাঁকে পাঠানো হয়েছে আমরা তা বিশ্বাস করি। দাম্ভিক লোকেরা বললো : তোমরা যে বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করেছো, আমরা সেটিকে অস্বীকার করি। অতপর তারা উটটিকে হত্যা করল এবং পূর্ণ দাম্ভিকতা সহকাওে স্বীয় প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করল এবং সালেহকে বললো ‘হে সালেহ্ নিয়ে এসো সেই আযাব,যার হুমকী তুমি আমাদের দিয়ে থাকো, যদি সত্যিই তুমি নবী হয়ে থাক। অবশেষে একটি প্রলয়ংকর দুর্যোগ তাদেরকে গ্রাস করলো এবং তারা নিজেদের ঘরের মধ্যে মুখ থুবড়ে পড়ে রইলো।’ (সুরা আরাফ : ৭৬-৭৮)।
আসহাবুল কারিয়্যাহদের কাছে একে একে তিনজন রাসুল প্রেরণ করা হয়েছিল। তারা সকলকেই অস্বীকার ও মিথ্যা প্রতিপন্ন করলো। ফলে আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন, জনপদবাসীরা বলল : তোমরা আমাদের মতো কয়েকজন মানুষ ছাড়া আর কেউ নও এবং দয়াময় আল্লাহ মোটেই কোন জিনিস নাযিল করেননি। তোমরা স্রেফ মিথ্যা বলছো। (সুরা ইয়াসিন : ১৩-১৫)। এরপর তার সম্প্রদায়ের ওপর আমি আকাশ থেকে কোন সেনাদল পাঠাইনি, সেনাদল পাঠাবার কোন দরকারও আমার ছিল না। ব্যস, একটি বিস্ফোরণের শব্দ হলো এবং সহসা তারা সব নিস্তব্ধ হয়ে গেল। বান্দাদের অবস্থার প্রতি আফসোস, যে রসুলই তাদের কাছে এসেছে তাকেই বিদ্রুপ করেছে। (সুরা ইয়াসিন : ২৮-৩০)।
এমনিভাবে মাদইয়ানবাসীর কাছে পাঠানো হয়েছিল তাদের ভাই হযরত শো’আইব আ. কে। তারা মেপে দেয়ান সময় কম দিতো এবং মেপে নেয়ার সময় বেশী নিতো। হযরত শো’আইব আ. এ কাজ থেকে বিরত থাকতে বললেন। কিন্তু তাঁর সম্প্রদায়ের লোকেরা তাঁকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করলো। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘তার সম্প্রদায়ের প্রধানরা, যারা মেনে নিতে অস্বীকার করল, পরস্পরে বলল : যদি তোমরা শো’আইবের আনুগত্য মেনে নাও, তাহলে তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু সহসা একটি প্রলয়ংকারী বিপদ তাদেরকে পাকড়াও করে এবং তারা নিজেদের ঘরের মধ্যে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে, যারা শো’আইবকে মিথ্যা বলেছিল তারা এমনভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় যেন সেই সব গৃহে কোনদিন তারা বসবাসই করতো না। শো’আইবকে যারা মিথ্যা বলেছিল অবশেষে তারাই ধ্বংস হয়ে যায়।’ (সুরা আরাফ : ৯০-৯২)।
মিথ্যা বলা কবীরা গুণাহ এবং সুষ্পষ্ট জুলুম। রাসুল সা. বলেছেন : আমি কি তোমাদেরকে সর্ববৃহৎ করীরা গুনাহ সম্পর্কে বলবো না ? তাঁরা বলেন, হাঁ। তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে শিরক করা ও মা-বাপের নাফরমানী করা। তারপর তিনি ঢেঁস দিয়ে বসে বলেন, ওহো! মিথ্যা কথা। তিনি বার বার তা বলতে লাগলেন আর আমরা ইচ্ছা করেছিলাম যদি তিনি চুপ হতেন। (বুখারী-মুসলিম)। অথচ এ মিথ্যাই আজ মানুষের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। সমাজের নি¤œস্তর থেকে শুরু করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব মিথ্যা রোগে আক্রান্ত। মৌখিক মিথ্যায় মন ভরে না, তাছাড়া এটি কষ্টকর বিধায় কোটি কোটি টাকা খরচ করে মিডিয়া স্থাপন করে মিথ্যাকে আরো ব্যাপাকাকারে ছড়িয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। যুগ যুগ ধরে যে মিঠিয়া ছিল নীতি ও নৈতিকতার সূতিকাগার, সেখানে এখন অধিকতর মিথ্যুক ও হলুদ সাংবাদিকতায় যারা পটু তাদেরকেই নিয়োগ দেয়া হয়। এ সব মিডিয়ার মাধ্যমে সকলেরই জানা একটি জ্যান্ত মিথ্যাকে বার বার প্রচারের মাধ্যমে সত্যে পরিণত করে।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ভারত ও পাকিস্তানকে আলোচনায় বসার আহ্বান সউদীর

শামির রেকর্ডের ম্যাচে ঘরের মাঠে ধরাশয়ী চেন্নাই

সিরিয়ায় আসাদ যুগ শেষ, জাতিসংঘে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শাইবানীর ঘোষণা

আজ ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জামায়াতের বৈঠক

বার্সার বিপক্ষে ফাইনাল বর্জনের গুঞ্জন নিয়ে রিয়ালের বিবৃতি

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের ৫ মন্ত্রী

ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে ফের গোলাগুলি

পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনা প্রশমনে মধ্যস্থতার প্রস্তাব ইরানের

সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেমের বিষয়ে দুদককে তদন্তের অনুরোধ করলেন উপদেষ্টা আসিফ

কুয়েট ভিসি-প্রোভিসিকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি

সউদীর কাছে ১০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করবে যুক্তরাষ্ট্র, শিগগিরই চুক্তি

‘গাজার পর বিশ্বের আরেক উন্মুক্ত কারাগার কাশ্মীর’

অনুষ্ঠিত হলো ‘হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিয়িং মার্কেটিং ফেস্ট ২.০’

এক্সপ্রেসওয়েতে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত হলো মোটরসাইকেল আরোহী

পাকিস্তানি নাগরিকদের ফেরত পাঠাতে রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিলেন অমিত শাহ

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে নিহত ৮৪, মানবিক সংকট চরমে

মুক্তির দ্বিতীয় সপ্তাহেও যুক্তরাষ্ট্রে 'বরবাদ' ঝড়

সৌদির পবিত্র নগরীতে কনসার্ট আয়োজন,মুসল্লিদের ক্ষোভ প্রকাশ

পাবনায় চররে জমি দখল নিয়ে সংর্ঘষে গুলবিদ্ধি ৫

আইএমএফের ঋণের কিস্তি নিয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ