ইসলামে সততার পুরস্কার
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১১ এএম | আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১১ এএম
ইসলাম সততা, নৈতিকতা এবং নিষ্কলঙ্ক জীবনযাপনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। সততা শুধু ব্যক্তি জীবনে নয়, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সাফল্য এবং শান্তির এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়। কোরআন ও হাদিসে সততার গুরুত্ব, এর মূল্য এবং এর জন্য যে পুরষ্কার রয়েছে, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই কলামে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে সততার পুরষ্কার সম্পর্কে আলোচনা তুলে ধরা হবে। ১. সততার গুরুত্ব কোরআন ও হাদিসে, সততা একটি মৌলিক নৈতিক গুণ, যা ইসলামে অত্যন্ত প্রশংসিত। এ সম্পর্কে পবিত্র আল কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এবং সত্যই, তুমি যদি সৎ থাকো, আল্লাহ তোমাদের জন্য একটি পথ খুলে দেবেন এবং তোমাদের অবস্থা ভাল করে দেবেন।’ (সূরা আত-তাহরিম : ২)। এ আয়াতে কারিমার মাধ্যমে জানা যায় যে, সততা ঈমানের অঙ্গ এবং আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য বিভিন্ন আশীর্বাদ প্রদান করেন।
কোরআনে আল্লাহ রব্বুল আলামীন সততার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন এবং সততার মাধ্যমে একাধিক পুরষ্কার পাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যেমন হাদিসে এসেছে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সততা পুরুষকে ন্যায় এবং ন্যায় পুরুষকে জান্নাতে পৌঁছায়।’ (সহীহ মুসলিম : ২৬৪২)। এ হাদিসের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, সততা এমন একটি গুণ যা একে অন্যের বিশ্বাস অর্জন করতে সহায়ক এবং একদিন এটি জান্নাতে পৌঁছানোর পথ উন্মুক্ত করে।
২. সততার পুরষ্কার : ইসলামে সততার জন্য বহু পুরষ্কারের কথা বলা হয়েছে, যা শুধু দুনিয়াতেই পাওয়া যায় না, বরং পরকালেও তার পুরষ্কার রয়েছে। সততার কিছু প্রাপ্তির দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো : ক) দুনিয়ায় শান্তি, সহায়তা ও সম্মান। কোরআন ও হাদিসে সততা অর্জনকারী ব্যক্তিদের জন্য দুনিয়াতে শান্তি এবং সম্মান পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। সততা আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ রহমত হিসেবে কাজ করে। একাধিক ক্ষেত্রে, সত্য কথা বলার কারণে মানুষের বিশ্বাস অর্জিত হয় এবং তার জীবন সহজ হয়। তাছাড়া, সততা একজন মানুষকে তার সম্মান এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করতে সহায়ক। যেমন হাদিসে এসেছে রাসুল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সৎ থাকে, আল্লাহ তাকে দ্বীনে সফলতা প্রদান করবেন।’ (তাবরানি, হাদিস নং ৭৫৪১)।
খ) জান্নাত লাভ : ইসলামে যেহেতু জান্নাতই একজন মুমিনের চূড়ান্ত লক্ষ্য, সেখানে সততার জন্য পুরষ্কার উল্লেখযোগ্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সততা অবলম্বন করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৪০৩)। এ হাদিসে বলা হয়েছে, সততার কারণে একজন মুমিন জান্নাতে প্রবেশ করবে, কারণ সততা ঈমানের অংশ এবং এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উপায়।
গ) আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন : সততা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ। যেমন পবিত্র আল-কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা সত্য কথা বলো, আল্লাহ তোমাদের জন্য একদম সৎ পথ নির্দেশ করবেন।’ (সূরা আহযাব : ৭৫)। এ আয়াতের দ্বারা বোঝা যায় যে, যখন একজন ব্যক্তি সততা অবলম্বন করে, তখন আল্লাহ তাকে নিজের দয়া ও রহমত দিয়ে পুরষ্কার দেন, যা তার অন্তরে শান্তি এবং জীবনে সফলতা এনে দেয়।
ঘ) দোয়া ও ক্ষমা : সততা যে আল্লাহর কাছে দোয়া কবুল করার এবং ক্ষমা লাভের এক মাধ্যম হতে পারে, তা অনেক হাদিসে বলা হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, তিনি তোমাদের জন্য রহমত এবং দোয়া কবুল করবেন।’ (সহীহ বুখারি, হাদিস নং ৬৮৭৪)। এভাবে, সততা একটি ব্যক্তিকে আল্লাহর কাছে সঠিক দোয়া এবং ক্ষমা লাভের পথ তৈরি করে দেয়, যা তার পরকালীন জীবনে অনেক বড় পুরষ্কার হিসেবে পরিণত হয়। এটি প্রমাণ করে যে, সততা ব্যক্তি জীবনে শুধু একধরনের নৈতিক অবস্থা সৃষ্টি করে না, বরং তাকে দ্বীনে সফলতা এবং সমাজে একটি উজ্জ্বল স্থান দান করে।
৩. সততার দৃষ্টান্ত : ইসলামের ইতিহাসে সততার বহু উদাহরণ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন। নবীজী ছিলেন ‘আল-আমিন’ (বিশ্বাসযোগ্য), যা তার সততার প্রমাণ। এমনকি মক্কায় যখন তিনি ইসলাম প্রচারের জন্য উঠেছিলেন, তখন মক্কার কাফিররা তার সততার কারণে তাকে বিশ্বাস করতেন। আরেকটি উদাহরণ হল, সাহাবী আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি সত্যের জন্য প্রতিটি কঠিন পরিস্থিতিতে সততা অবলম্বন করেছিলেন, এবং ইসলামের প্রথম খলিফা হিসেবে তার জীবন ছিল সততার একটি জীবন্ত উদাহরণ। তারা সততার কারণেই হজরত আবু বকর রা. কে সিদ্দিক উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
ইসলামে সততার গুরুত্ব অপরিসীম, এবং এটি একমাত্র একটি নৈতিক গুণ নয়, বরং একে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। কোরআন ও হাদিসে সততার জন্য অসংখ্য পুরষ্কারের কথা বলা হয়েছে, যা দুনিয়া এবং পরকালে দু’জায়গাতেই একজন মুমিনের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে। সত্য এবং সততা মানুষের আধ্যাত্মিক অগ্রগতি এবং সামাজিক শান্তির মূল উপাদান। তাই, একজন মুসলিমের জন্য সততা অনুসরণ করা একটি বাধ্যতামূলক গুণ, যা তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবে। সুতরাং আমাদের সকলের উচিত জীবনের সকল ক্ষেত্রে সততা বজায় রেখে দুনিয়াবি জীবন পরিচালনা করা।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামোর বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে: আমিনুল হক
পিরোজপুর প্রেসক্লাব নির্বাচন শামীম সভাপতি ও তানভীর সম্পাদক
বিরক্তিকর সময়কে গুডবাই বলুন! এন্টি ডোট হিসেবে সেরা অ্যাপ (পর্ব-১)
দেশের বিরাজমান সংকট উত্তরণে জাতির আস্থা তারেক রহমান : মীর হেলাল
টোল প্লাজায় দুর্ঘটনা: বাসের ব্রেকে সমস্যা ছিল, চালক নেশা করতেন
পাবনার আমিনপুরে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে আগুন, শঙ্কিত পরিবার
দেশে এলো ভিভোর নতুন ফ্ল্যাগশিপ এক্স২০০
বিএনপির দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত হলে কাউকে ছাড় নয়: শাহ সুলতান খোকন
সচিবালয়ে অস্থায়ী প্রবেশ পাসের জন্য বিশেষ সেল গঠন
যুদ্ধের দামামা, তালেবানের পাল্টা হামলায় ১৯ পাকিস্তানি সেনা নিহত
ফিরে দেখা ২০২৪: ফুটবলে ঘটনাবহুল বছর
বড় চমক অ্যাপলের, জ্বর ও হার্ট অ্যাটাকের আগেই সতর্ক করবে ইয়ারবাডস
রাস্তাটি সংস্কার করুন
থার্টি ফাস্ট নাইট এবং প্রাসঙ্গিক কথা
ইসলামী শক্তির সম্ভাবনা কতটা
কিশোরগঞ্জে দুই নারীর রহস্যজনক মৃত্যু, গ্রেফতার-১
সাধারণ মানুষের স্বস্তি নিশ্চিত করা জরুরি
দেশের পরিস্থিতি ঠিক না হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
অনুপ্রবেশকারীদের টার্গেট নরসিংপুর সীমান্ত!
রাউজানে বিএনপিপন্থী পরিবারের ওপর হামলা