তাকওয়া অর্জন ও গুনাহ থেকে পরিত্রাণের মাস রমজান
১৫ মার্চ ২০২৫, ১২:২২ এএম | আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১২:২২ এএম

হে মুমিনগণ তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমন তোমাদের পূর্বসূরীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল। এই পবিত্র আয়াতে মিন ক্ববলিকুম বাক্যটি পূর্বের সমস্ত শরীয়তে রোজা ফরজ ছিল বলিয়া ঘোষণা করা হয়েছে। যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। রোজা এমন একটি ইবাদত, যা শুধু উম্মতে মুহাম্মদীর উপর ফরজ করা হয়নি। বরং এটি পূর্ববর্তী শরীয়ত, পূর্ববর্তী উম্মতের ও নবীদের উপরও রোজা ছিল। হযরত আদম,হযরত মুসা, হযরত দাউদ আলাইহিস সালামের যুগেও রোযা ছিল। কিন্ত ধরন ছিল ভিন্ন। আর তা এজন্য দিয়েছেন যাতে করে বান্দা দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে তাকওয়াবান হতে পারে। আর এই তাকওয়ার এতই গুরুত্ব যে তাকওয়া ছাড়া তিনি বান্দার আমলের দিকে তাকাবেন না। অর্থাৎ বান্দা নামাজ পড়েছে, রোজা রেখেছে, কিন্তু এর পিছনে তাকওয়া ছিলনা।ছিল বাহ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি মানুষকে দেখাবার চিন্তা। এজন্য তার কষ্ট করে হজ্জ করা, নামাজ পড়া, রোজা রাখা, যাকাত দেয়া সব বিফলে যাবে। আর তাকওয়া থাকে, দিলে যা শরীরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বিশ্ব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সম্পর্কে আগেই আমাদেরকে বলেছেন, মানুষের শরীরের মধ্যে একটি গোস্ত পি- রয়েছে, যতক্ষণ তা ভালো থাকবে সমস্ত দেহ ভালো থাকবে। আর যখন তাতে পচন ধরবে সমস্ত দেহেই পচন ধরে যাবে। শুনে রাখ সেই গোশতের টুকরাই হচ্ছে ক্বলব। আর এই ক্বলবকে সুস্থ রাখার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে রোজা। আর এজন্যই আমরা যেন আমাদেরকে পরিশুদ্ধ করতে পারি তাই দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা দান করেছেন। আর আল্লাহ তাই বলেছেন তাক্বওয়া সম্পর্কে... আল্লাহর নিকট পৌঁছেনা কুরবানীর জন্তুর গোশত ও রক্ত।
বরং তার কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। একটি হাদীসে এসেছে : আল্লাহ পাক তোমাদের বাহ্যিক অবয়ব বা ধন ঐশ্বয্যের দিকে দৃষ্টিপাত করেন না। তাহার দৃষ্টি তোমাদের অন্তরসমূহ আর আমলসমূহের উপর হয়ে থাকে। এছাড়াও কুরআনের বিভিন্ন স্থানে তাকওয়া সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, মুক্তাকিরা শীতল ছায়া ও ঝরনা বিশিষ্ট উদ্যানে নিজেদের পছন্দ মত ফল-মুলের মাঝে থাকবে। আর তোমরা যে সমস্ত আমল করেছ, তাহার বদৌলতে পানাহার করো। এমনিভাবে আমি মুত্তাকীদেরকে প্রতিদান দেই। অন্যত্র ঘোষণা হয়েছে, নিশ্চয়ই মুত্তাকীরা সফল। তাদের জন্য আছে বাগ বাগিচা এবং আঙ্গুর আর পরিচ্ছন্ন সমবয়সী এবং উপচাইয়া পড়ে এমন পানীয় পেয়ালা। তাহারা তথায় অর্থহীন ও মিথ্যা কথা শুনতে পাবে না।
আর এই রমজান মাসই হলো তাকওয়া অর্জনের শ্রেষ্ঠ মাস। কেননা রমজান মাসের প্রথম ভাগে আল্লাহর পক্ষ হইতে একজন ঘোষণাকারী ঘোষনা করে বলেন, অথ্যাৎ হে নেকীর প্রত্যাশী অগ্রসর হও। এবং খুব নেকীর কাজ কর। আর হে পাপের অবিলাসি এখন থেকে বিরত থাকো। অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন। অর্থাৎ রমজানে বেহেশতের দরজা সমূহ খুলে যায়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ হয়ে যায়। এবং শয়তানকে কারাগারে আবদ্ধ করা হয়। রমজানের রোজার প্রতি উদ্বুদ্ধ করিয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন। যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাসের সাথে রমজানে রোজা পালন করে, তাহার পূর্বের সমুদয় পাপ মার্জনা করা হয়।
রমজান আগমনের পূর্বেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে এ মাস সম্পর্কে বলেন, হযরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, শাবান মাসের শেষ দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দানকালে বলেন, হে লোক সকল তোমাদের নিকট উপস্থিত, একটি মর্যাদাপূর্ণ এবং বরকতপূর্ণ মাস। এতে রয়েছে এমন এক রাত যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এ মাসে আল্লাহ সওম ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি এই মাসে একটি নেক কাজ করলো সে যেন অন্য কোন মাসে ফরজ কাজ করলো। যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল। সে যেন অন্য কোন মাসে ৭০ টি ফরজ কাজ আদায় করল। এ মাস ধৈর্য্যের মাস। আর ধৈয্যের বিনিময় হচ্ছে জান্নাত। সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস। (মেশকাত)। সাওমের পুরস্কার ক্ষমা। (বুখারী -মুসলিমের) হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলন, যে ব্যক্তি ঈমান ও আত্মবিশ্লেষণের সাথে রমজানের সাওম আদায় করল, সে তার অতীতের গুনাহ সমূহ মাফ। করে নিল। আর যে ব্যক্তি ঈমান ও আত্মবিশ্লেষণের সাথে রমজানে দীর্ঘ সালাত আদায় করল। সে অতীতের গুনাহ মাফ করে নিল (বুখারী)।
রোযা ও কোরআন একত্রে সুপারিশ করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সিয়াম বলবে হে রব আমি এই ব্যক্তিকে দিনে খাবার ও অন্যান্য কামনা-বাসনা থেকে ফিরিয়ে রেখেছি।আপনি আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। আল কুরআন বলবে আমি এই ব্যক্তিকে রাতের নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি। আপনি আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। দুর্ভাগা রোজাদারদের সম্পর্কে হাদিসে এসেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এমন কত রোজাদার আছে যারা তাদের রোজার দ্বারা ক্ষুৎপিপাসার কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পায় না। এমন কত নামাজে দন্ডায়মান অবস্থায় রাত জাঘরন কারি আছে, যারা শুধুমাত্র জাগরণ ছাড়া আর কিছুই পায় না।
কিছু মানুষ শুধু শুধু কষ্ট করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা এবং মিথ্যার উপর আমল করা ছাড়তে পারেনি তার খাবার ও পানীয় দ্রব্য বর্জন করাতে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। (বুখারী)।
পাপের কাফফারা হবে নামায, রোযা ও যাকাত। হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, মানুষ তার পরিবার, সম্পদ এবং প্রতিবেশীর ব্যাপারে যে ভুল ত্রুটি করে, তার সালাত সাওম এবং সদকা দ্বারা সেগুলোর কাফফারা হয়ে যায়। (বুখারী)। ইফতারে বিলম্ব না করার কথ হাদীসে এসেছে, হযরত সাহল বিন সা’দ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, লোকেরা যতদিন তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন ভালো অবস্থায় থাকবে। (বুখারী)।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

কালো সোনায় রঙিন স্বপ্ন পঞ্চগড়ের কৃষক মানিকের

নোয়াখালীতে আইন মন্ত্রণালয় কর্মচারীর কাছে যুবদলনেতার ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি

‘শেখ পরিবারের কি এক্টাবস্থা!’

নেইমার ছিটকে গেলেন আবারও

ফ্যাক্ট চেকিংয়ের পরিবর্তে আসছে ‘কমিউনিটি নোটস’

ভূরুঙ্গামারী সীমান্তে ভারতীয় অস্ত্রের চালান আটক ভারত থেকে বাংলাদেশ পাচারের চেষ্টা

হাসিনাকে ফেরাতে জাহাঙ্গীরের ষড়যন্ত্র, অডিও ভাইরাল

মানবতাবিরোধী অপরাধে আইসিসি-তে দুতার্তের বিচার, ভিডিও কনফারেন্সে শুনানি

ডাকাতের কবলে তরমুজের ট্রলার, আহত ৮

বাউফলে উত্ত্যক্তের শিকার স্কুলছাত্রীর চিরকুট লিখে আত্মহত্যা

সিরাজদিখানে অজ্ঞাত গাড়ির ধাক্কায় অটোরিকশা খাদে, প্রাণ গেল কৃষকের

খুলনায় জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন

মামলা দেয়ার কথা বলে টাকা চাইবার কারবার করবেন না : ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন

আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভুটানসহ ৪৩টি দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে ট্রাম্প

ঈদগাঁওতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত-১, আহত-৫

বিভিন্ন দাবিতে শাহবাগে অবস্থান নিয়েছে ‘ইনকিলাব মঞ্চ’

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আহত সাংবাদিক আলা হাশিমের মৃত্যু

ঝিকরগাছায় সংখ্যালঘু গৃহবধূকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার ১

গুলশানে ইউএন হাউজ উদ্বোধন করলেন জাতিসংঘ মহাসচিব

বাবা খ্রিস্টান, মা হিন্দু তবু কেন মুসলিম পদবী ব্যবহার করেন দিয়া!