ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কবিতা যখন শরীর খোঁজে

Daily Inqilab উত্তম কুমার দাস

০৩ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৫১ পিএম | আপডেট: ০৪ আগস্ট ২০২৩, ১২:১০ এএম

কবিতা হোক বা মানুষ সবটাই সাজানোর দায়িত্ব থাকে স্রষ্টার ওপর। বসন ভূষণ ছাড়া বাহ্যিক আবরণ খুঁজে বের করা কঠিন, পোশাকেই সৌন্দর্য তাৎক্ষণিক তবুও একই রাস্তায় অযথা যানজট। পোশাক জরুরি কিন্তু তা স্বাভাবিক ও শোভনীয় হওয়া চাই। ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়টা অবশ্য আলাদা। বক্তব্য বিষয়ের সঙ্গে পোশাকি আবরণ ব্যক্তিগত পছন্দের সঙ্গে সাহিত্যের যাত্রাপথ বিষয়টা একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়। প্রশ্ন থেকেই যায় তাহলে কাব্য বা সাহিত্যের বিষয় কি হবে... কেমন হবে? বক্তব্য প্রধান, রূপক ,কল্পনাময় নাকি বিষয়গত। তবে প্রত্যেককেই একটা পৃথক রাস্তা অবলম্বন করতে হবে। বর্তমানে আমরা প্রায় সকলেই একই পথে যাত্রা করেছি শতবর্ষ পূর্বেও ঠিক এমনটাই হয়েছিল। বেশ কিছু কবি রবীন্দ্র আবর্তে হারিয়ে গেল, রবীন্দ্র বিমুখ নতুন পথে হাঁটলেন। প্রেমেন্দ্র মিত্র জীবনানন্দ দাশ ,বুদ্ধদেব বসু, অজিত দত্ত, বিষ্ণুদে, সমর সেন প্রমুখ তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। নজরুল তার জীবন দর্শনকে কাজে লাগালেন কবিতার ক্ষেত্রে। তবে পশ্চিম বাংলার পঞ্চাশের দশক মানে আধুনিক কবিতার বিকাশ কাল। বুদ্ধদেবের ‘কবিতা’ পত্রিকা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কৃত্তিবাস’ আলোক সরকারেরশত ভাষা উল্লেখযোগ্য।
আমরা সমীক্ষা করার কেউ নই একটা যুগ সমীক্ষা করবে পূর্ববর্তী যুগকে। যেই কারণে জীবনানন্দ দাশের কবিতাগুলোর মূল্যায়ন সমকালে হয়নি। পাঠকের মধ্যেই কবি বা সাহিত্যিক বেঁচে থাকেন। তবে পাঠকের ও কয়েকটি ভাগ আছে। বোদ্ধা পাঠক, যোদ্ধা পাঠক, এবং নিষ্ক্রিয় পাঠক।
বর্তমানে নিষ্ক্রিয় পাঠকের সংখ্যা সব থেকে বেশি। তারা সব পড়ে তারা এত বেশি পরে যে কিছুই মনে রাখতে পারে না। বোদ্ধা পাঠকের সংখ্যা কম তারা নিঃশব্দে পরে। আর আমরা সকলেই হচ্ছি যোদ্ধা পাঠক। যতটা বুঝি তার চেয়ে বেশি বিচার করতে বসি। শরীরের আরাম আয়েস খুঁজি কবিতায়, সম্পর্কের টানাপোড়েন খুঁজি কবিতায়, কিন্তু কবিকে তার সৃষ্টির মধ্যে খুঁজে পাই না।
কবিতা বোঝার আগে কবিকে বোঝা চাই। একটি বা দুটি কবিতা দিয়ে একজন কবির মূল্যায়ন করা যায় না। বাস্তবটা বড় কঠিন। সাজানো শরীরের ভেতর যেমন একটা শরীর থাকে ঠিক তেমন সাজানো কবিতার ভিতরেও একটা কবিতা থাকে। আর সেখানেই কবির মূল্যায়ন হয়। তাই যোদ্ধা পাঠকের কাছে এটা দুঃসাহস ছাড়া আর কিছু নয়। বর্তমানে কবিতার বিষয়গত ভাবনাকে অক্ষত রেখে সহজ সরল ভাষায় বক্তব্য বিষয় পরিবেশিত হচ্ছে। দুর্বোধ্য ভাষা ক্লাসিক্যাল দৃষ্টিভঙ্গির বদলে একটা সহজ সরল চিত্র কবিতায় পাঠক প্রত্যাশা করছেন। এখন ব্যস্ততার মাঝে ইন্টারনেটে যুগে মানুষ এমন লেখা পড়তে চান যা সহজ সরল, সহজে বোধগম্য হয়। বর্তমানে সম্ভ্রান্ত উচ্চশিক্ষিত পরিবারের বেশিরভাগ ছেলেমেয়েরাই ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করেন। বাংলা ভাষার প্রতি তাদের টানটাও কমে গেছে। তাই কবিতাকে সর্বজন স্বীকৃত হতে হবে। সমাজে শিক্ষার উপযোগী হতে হবে। একটা কথা মনে রাখতে হবে ব্যক্তিগত ভাব কবিতার মধ্যে দিয়ে যখন সর্বজনীন হয় তখন তা গীতি কবিতা হয়ে ওঠে। তাই বর্তমানে যুগের প্রেক্ষাপটে কাব্য,সাহিত্য ,নাটক প্রভৃতি প্রতিটি ক্ষেত্রেই একটা নতুন পথ খুলে গেছে। যাকে আমরা বলতে পারি একটা সহজ সরল নতুন পথ বা নতুন ধারা। ভাব গভীরতা থাক কিন্তু পরিবেশনা হবে সর সহজ সরল। জটিলতা থাকবে না, সম্পর্কগুলো হবে মানবিক বা আত্মীয় বাচক, একটা গতি থাকবে পরিণতি পর্যন্ত। ব্যক্তিগত সমস্যা রাজনীতি ,ধর্ম, শিক্ষা ,মূল্যবোধ, প্রেম সকল উপাদানই সমৃদ্ধ হবে এই নতুন পথ বা নতুন ধারা। আঞ্চলিক ভাষা কবিতা বা গদ্যে প্রাধান্য পাবে। কবিতা উপন্যাস বা নাটকের চরিত্রগুলি নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রাখবে।
গতি নদীর পরিচয় আর কাজে মানুষের পরিচয় তাই সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে যদি এগিয়ে চলার গতি না থাকে তাহলে কিন্তু একটা সময় পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। সময় এসে গেছে সহজ সরল ভাবে কবিতা,গল্প প্রবন্ধ, নাটক লেখার যা সাধারন মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করতে পারে। আর তবেই সৃষ্টির পথে বাংলা সাহিত্যের উন্নতির পথ সুগম হবে।


বিভাগ : সাহিত্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্প
গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪ : সাহিত্য সংস্কৃতি ভাবনা
প্রার্থনার মূল কাজ সংযোগ স্থাপন
গ্রাফিতি বাংলাদেশ
তোমাকে
আরও

আরও পড়ুন

বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

মুসলিম চিকিৎসক

মুসলিম চিকিৎসক

শীর্ষে দিল্লি

শীর্ষে দিল্লি

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান